জামায়াত দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে: মির্জা ফখরুল
Published: 10th, November 2025 GMT
জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন অজুহাত তুলে দেশকে একটা অস্থিতিশীল অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার বিকেলে সদর উপজেলার বরদ্বেশ্বরী বাজার ও রুহিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে থানা বিএনপির আয়োজনে ইউনিয়নবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটি দেশ তখনই উন্নয়নে যেতে পারে, যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়। যখন জনগণ চায়, আমরা উন্নতি করব। জনগণের মধ্যে সারাক্ষণ দ্বন্দ্ব-বিবাদ, ফেতনা, ঝগড়াঝাঁটি যদি থাকে, তাহলে কি উন্নতি হতে পারে? যখন গণ-অভ্যুত্থান হলো, তখন আমরা ভেবেছিলাম, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারব। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা দেখলাম কিছু কিছু দল বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, আজকে জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন অজুহাত তুলে দেশকে একটা অস্থিতিশীল অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। আমরা মনে করি, সমস্যা তৈরি করে গণতন্ত্রকে ব্যাহত করার চেষ্টা, নির্বাচনকে ব্যাহত করার চেষ্টা জনগণ কোনোভাবেই বরদাশত করবে না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১৫ বছর আমরা ভোট দিতে পারিনি। ভোট দেওয়ার সুযোগ এসেছে। যেভাবে দেশের উন্নতি হয়, আমরা সেভাবে ভোট দেব। আমরা যদি সরকারে যেতে পারি, তাহলে কৃষক ভাইদের যে সমস্যাগুলো আছে—বীজের সমস্যা, সারের সমস্যা, পানির সমস্যা—এগুলো সমাধান করব। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করব।’ রুহিয়া থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হবে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘রুহিয়া থানা হয়েছে, কিন্তু উপজেলা হয়নি। আমরা যদি ক্ষমতায় যেতে পারি, তবে আমাদের প্রথম কাজ হবে রুহিয়াকে উপজেলায় উন্নীত করা।’
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বিএনপির এই নেতা বলেন, একটা রাজনৈতিক দল যাকে দেশের মানুষ কোনো দিনই সঠিক পথে পায়নি। যখন দেশের সব মানুষ পাকিস্তানের পক্ষে আন্দোলন করেছে, তখন তারা পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছে। আবার ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো, তখন তারা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি, পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গেই ছিল। এই যাদের কাজ, যারা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর পক্ষে কখনোই থাকেনি, তাদের কি আমরা সমর্থন করতে পারি?’
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমীন, সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সাবেক সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, আব্দুল হালিম, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক, রুহিয়া থানা বিএনপির সভাপতি আবদুল জব্বার প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র উপজ ল সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত না পাল্টালে কঠোর কর্মসূচি: বাম গণতান্ত্রিক জোট
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জনগণ মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি শাহ আলম। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চট্টগ্রাম নগরের পুরোনো রেলস্টেশন চত্বরে আয়োজিত গণসমাবেশে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের মতামত উপেক্ষা করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চাইছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই।
রাজনৈতিক দলগুলোকে বন্দর ইজারা দেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য পরিষ্কার করার আহ্বান জানান শাহ আলম। তিনি বলেন, এনসিপি ও জামায়াতকে তাদের বক্তব্য পরিষ্কার করতে হবে। তারা বন্দর ইজারা দেওয়ার ব্যাপারে কী ভাবছে, তা জনগণ জানতে চায়। এখন পর্যন্ত তারা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি।
বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার উদ্যোগে এই গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। ‘জনমত উপেক্ষা করে লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়া চলবে না’, এমন ব্যানারে কর্মসূচি পালিত হয়।
সমাবেশে সিপিবি নেতা শাহ আলম আরও বলেন, ‘দেশবিরোধী চক্রান্ত চলছে। মিয়ানমারে করিডর দেওয়ার আলোচনা আমরা শুনেছি। এখন বন্দর দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বুকের রক্ত দিয়ে হলেও বন্দর রক্ষা করব।’
চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ ও পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে শুরু হওয়া সেই নিয়োগপ্রক্রিয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও এগিয়ে নিচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সরকারের চুক্তি করার কথা রয়েছে।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে চলেছে বিভিন্ন সংগঠন। গত ২২ অক্টোবর ইজারা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।
আজ আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার ডিসেম্বরের মধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। বন্দর বিদেশিদের হাতে গেলে দেশীয় শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা রয়েছে। সরকার যেন আগেভাগেই দায় এড়াতে পারে, সে জন্যই বন্দরের মাশুল ৪১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
সমাবেশ থেকে জানানো হয়, কাল রোববার থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। এ সময়ের মধ্যে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত না পাল্টালে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করা হবে। তাতেও সফল না হলে হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।
‘তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশিদ বলেন, সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ইজারার সিদ্ধান্তও তারই অংশ। এখনই এ সিদ্ধান্ত থেকে না ফিরলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, সরকার নির্বাচন, সংস্কার ও বিচারের অঙ্গীকার থেকে সরে গিয়ে দেশবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে। বন্দরের লাভজনক টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। ডিপি ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে কার্যক্রম পরিচালনায় বদনাম আছে।
গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন নাসু বলেন, ‘জনগণের মত ছাড়া কোনোভাবেই বন্দর ইজারা দেওয়া যাবে না। কিন্তু সরকার জনগণের মতের তোয়াক্কা না করেই সরকার বিভিন্ন চুক্তি করেছে। এই সরকার এনজিওবাদী সরকার। এরা সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে কাজ করছে।’
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বাসদ (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সেক্রেটারি শেখ নুরুল্লাহ বাহার প্রমুখ। সমাবেশ শেষে রেলস্টেশন চত্বর থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত মশালমিছিল করেন অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীরা।