যারা বলছে গণভোটের বিধান সংবিধানে নেই, তারা ফ্যাসিজমকে সমর্থন করে: জামায়াত নেতা আযাদ
Published: 10th, November 2025 GMT
গণভোটের বিধান বিদ্যমান সংবিধানে নেই বলে যাঁরা বিভিন্ন কথা বলছেন, তাঁরা ফ্যাসিজমের অবস্থানকেই সমর্থন করেন বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে হামিদুর রহমান আযাদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, গণভোটের বিধান বিদ্যমান সংবিধানে নেই। পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে গণভোটের বিধান সংবিধানে ছিল। ফ্যাসিবাদ আমলে যে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, সেটা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। চূড়ান্ত রায় এলে বোঝা যাবে, সেটা কোথায় গিয়ে ঠেকে। এখন যদি কোনো রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলে, তাহলে তারা ফ্যাসিজমের অবস্থানকেই সমর্থন করে।
জুলাই সনদ ও এর বাস্তবায়ন আদেশ দুটো আলাদা বিষয় হলেও বিএনপি দুটো বিষয়কে এক করে ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন হামিদুর রহমান আযাদ। তিনি বলেন, নয় মাস ধরে ঐকমত্য কমিশনে সব দল মিলে যে কাজ করল, সেখানে তাদের কারণে দীর্ঘসূত্রতা হয়েছে। এখন সনদের বাস্তবায়নে একটা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সে জন্য বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হয়েছিল জামায়াতের পক্ষ থেকে। সে আলোচনায় বিএনপি সাড়া দেয়নি। তারা জামায়াতের ডাকে সাড়া দেবে না বলে জানিয়েছে। এটা অতীতের মতো খারাপ রাজনৈতিক সংস্কৃতি। তারপরও জামায়াত বলছে, বিএনপি আলোচনার জন্য ডাকলে তাদের ডাকে সাড়া দেবে।
দেশ ও জাতির স্বার্থে বিএনপি ‘ইতিবাচক হবে’ এবং ‘দলীয় স্বার্থ ত্যাগ করে’ আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য জুলাই সনদ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন জামায়াতের এই নেতা।
সংবিধানের কথা বলে ওবায়দুল কাদের, শেখ হাসিনা বারবার জাতিকে বিপদের মধ্যে ফেলেছে উল্লেখ করে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘এর মাধ্যমে তাদের অপশাসন চাপিয়ে দিয়েছে। এখন অনেকে এই সংবিধান নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন।’ যারা এসব প্রশ্ন তুলছে, তাদের কাছে তিনি প্রশ্ন রাখেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে কি না?
একটি পক্ষ সংবিধানের প্রসঙ্গ টেনে পরিস্থিতি জটিল করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, সংবিধানের প্রসঙ্গ টেনে কেউ জটিলতা তৈরি করলে, সমাধানের পথ রুদ্ধ করে দিলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন তারা চায় কি না, সে প্রশ্ন উঠতে পারে।
সংকট নিরসনে আলোচনার দরজা সব সময় খোলা আছে উল্লেখ করে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সরকার বা রাজনৈতিক দলগুলো এই উদ্যোগ নিতে পারে। তবে জুলাই জাতীয় সনদে হাত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে সনদের বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংকট উত্তরণের রাস্তা বের করে আনা উচিত।
কালকের সমাবেশ মহাসমাবেশে রূপ নেওয়ার আশা
ব্রিফিংয়ের আগে জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও উক্ত আদেশের ওপর গণভোট আয়োজন’সহ ৫ দফা দাবিতে বৈঠক করে। ব্রিফিংয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এই আট দলের সমাবেশের প্রস্তুতির বিষয়ে জানান হামিদুর রহমান আযাদ।
আগামীকালের সমাবেশ মহাসমাবেশে রূপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন হামিদুর রহমান আযাদ। তিনি বলেন, যেভাবে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, মানুষের আগ্রহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে, এটা একটা বিশাল মহাসমাবেশে রূপান্তরিত হবে।
সমাবেশে হাজার হাজার নয়, লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের এই নেতা। তিনি বলেন, পল্টন মোড়ের দক্ষিণ পাশে সমাবেশের মূল মঞ্চ করা হবে। সেখানে নেতারা থাকবেন। পল্টন মোড় থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন, নাইটিঙ্গেল মোড়, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, কাকরাইল পর্যন্ত বিস্তৃত জায়গা আছে। রাজধানী ও তার আশপাশের এলাকা থেকে জনগণ এ ধরনের সমাবেশে অংশ নিয়ে থাকে। আগামীকালও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে এই সমাবেশে আসবে।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, এই সমাবেশেই একটা বড় ধরনের মতামত উঠে আসবে বলে আশা করা যায়। জাতির উদ্দেশে একটা নির্দেশনা ও জনমত এখানে তৈরি হতে পারবে। এর মাধ্যমে সরকার পাঁচ দফা দাবি মেনে নেবে বলে আশা করা যায়।
সমাবেশের কারণে সম্ভাব্য জনদুর্ভোগ বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, দলগুলো সব সময় জনদুর্ভোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। এটা হলো আন্দোলনের একটা চলমান কর্মসূচি। সেটা একটা মূল কারণ। বেলা দুইটা থেকে চারটার মধ্যে কিছুটা হলেও ‘রিল্যাক্স’ (সড়কে মানুষের চলাচল কম) সময় থাকে। এটা অফিস ছুটির আগের, আবার লাঞ্চের (দুপুরের খাবারের) পরের সময়। ফলে এখানে জনদুর্ভোগ এড়িয়ে যাওয়া অনেকাংশে সম্ভব। সে কারণে সমাবেশের সময় দীর্ঘায়িত না করার পরিকল্পনা আছে। ট্রাফিক সিস্টেম ঠিক থাকলে বড় ধরনের দুর্ভোগ হবে না।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হাক্কানি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সহসভাপতি মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারি, জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কাজী নিজামুল হক প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণভ ট র ব ধ ন ব এনপ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন থেকে আয়কর কাটার নির্দেশ
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দিষ্ট বেতনসীমা অতিক্রম করলেই মাসিক বেতন থেকে উৎসে আয়কর কর্তন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চলতি আয় বছর থেকেই বেতন বিল থেকে উৎস আয়কর কর্তনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের (সিজিএ) কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের অতিরিক্ত হিসাব ও পদ্ধতি শাখা থেকে জারি করা পত্রে বলা হয়েছে, আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী চলতি আয় বছরে যেসব পুরুষ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাসিক মূল বেতন ২৬ হাজার ৭৮৫ টাকা এবং নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাসিক মূল বেতন ৩০ হাজার ৩৫৭ টাকা বা তার বেশি, তাদের আয়ের পরিমাণ করমুক্ত সীমা অতিক্রম করেছে। ফলে তাদের বেতন বিল প্রস্তুতের সময় উৎসে আয়কর কর্তন করতে হবে।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বিল হতে আয়করসহ অন্যান্য কর্তনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ট্রেজারি রুলস এসআর ১২৫ অনুযায়ী উত্তোলনকারীর ওপর বর্তাবে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেশের সব চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসার, বিভাগীয় ও জেলা হিসাব নিয়ন্ত্রক, উপজেলা হিসাব কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাটি অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে সচিবের মাধ্যমে, যার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বাজেট-১ অনুচ্ছেদে কর্মরত যুগ্ম-সচিবের প্রতি।
এ নির্দেশনায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে গত ৭ অক্টোবর জারি করা আধা-সরকারি চিঠির উল্লেখ রয়েছে, যেখানে সরকারি বেতনভোগীদের উৎসে কর কর্তনের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ঢাকা/নাজমুল/মেহেদী