গানের সুরে, মেজবানের ঘ্রাণে—সিডনি যেন এক দিনের চট্টগ্রাম
Published: 10th, November 2025 GMT
একদিকে মেজবানের ঘ্রাণে মাতোয়ারা পরিবেশ, অন্যদিকে মঞ্চে নকীব খানের কণ্ঠে সুরের ঝংকার-দুয়ের মেলবন্ধনে গত রোববার সিডনির ফেয়ারফিল্ড শোগ্রাউন্ড যেন পরিণত হয়েছিল এক টুকরা বাংলাদেশে। ‘বৃহত্তর চট্টগ্রাম সমিতি অস্ট্রেলিয়া’ আয়োজিত ‘চট্টগ্রাম উৎসব–২০২৫’ ছিল প্রবাসী বাঙালিদের এক দিনের আনন্দমেলা, যেখানে একদিকে মেজবানি মাংসের স্বাদে ভরে উঠেছে পেট আর অন্যদিকে নকীব খানের কালজয়ী গানে ভরে গেছে মন।
চট্টগ্রামের ঘ্রাণে সিডনি
৩০ বছরের রান্নার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাবুর্চি আবুল হোসেনকে বিশেষভাবে বাংলাদেশ থেকে আনা হয় এই উৎসবের মূল আকর্ষণ হিসেবে। দুপুর থেকেই ফেয়ারফিল্ড শোগ্রাউন্ডে শুরু হয় অতিথিদের ভিড়। প্রায় তিন হাজার মানুষের জন্য সাজানো হয়েছিল পাঁচটি পরিবেশন কর্নার, টেবিল আর সুশৃঙ্খল বসার ব্যবস্থা। কেউ বলছিলেন, ‘এ যেন বাংলাদেশের কোনো শিল্পপতির বাড়ির জমকালো বিয়ের অনুষ্ঠান।’ প্রবাসীদের একাধিকবার লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নিতে দেখা যায়। কেউ কেউ বলছিলেন, ‘সিডনিতে বসে আবুল বাবুর্চির মেজবানি খেতে পারব, ভাবতেই পারিনি। মনে হচ্ছিল, চট্টগ্রামের কোনো পাড়ার উৎসবে বসে আছি।’
সুরে সুরে নকীব খান
খাবারের পর শুরু হয় মঞ্চে সুরের আসর। সন্ধ্যা নামতেই আলো-রঙে মুখর মঞ্চে ওঠেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নকীব খান—রেনেসাঁ ব্যান্ডের প্রাণপুরুষ। ৬০ পেরিয়েও তাঁর কন্ঠে যেন সেই পুরোনো দীপ্তি ও সেই পরিচিত আবেগ। গানের শুরুতেই দর্শকেরা উঠে দাঁড়ালেন, কেউ মুঠোফোন হাতে ভিডিও করছেন, কেউবা মুগ্ধ হয়ে গলা মিলাচ্ছেন তাঁর সঙ্গে।
নকীব খান একে একে গেয়ে শোনান ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘আর দেশে যাইও তুই’, ‘ভালো লাগে না’, ‘এমনই একটা দিন’—প্রতিটি গানেই দর্শকেরা কণ্ঠ মিলিয়েছেন। মঞ্চে ছিলেন স্থানীয় শিল্পীরা। তাঁদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী তরুণী আদিলা নূর গেয়ে শোনান সুপরিচিত গান।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় গীতিকার আবদুল্লাহ আল মামুন, যিনি ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’ ও ‘মুখরিত জীবন’—এর মতো বিখ্যাত গানের গীতিকার। তিনি এক পর্যায়ে মঞ্চে উঠে গলায় ধরেন নিজের লেখা গান, নকীব খানের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান তিনিও।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বর্ণিল আয়োজনে ‘ইয়ামাহা বাইক কার্নিভ্যালে’
বর্ণাঢ্য আয়োজন ও হাজারো রাইডারের অংশগ্রহণে শনিবার অনুষ্ঠিত হলো ‘ইয়ামাহা বাইক কার্নিভ্যাল’। ঢাকার পূর্বাচলের বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এ আয়োজন দেশের বাইকপ্রেমীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
২০১৬ সালে ইয়ামাহার সঙ্গে এসিআই মটরসের পথচলা শুরু। ১১ নভেম্বর এই যাত্রা ৯ বছরে পদার্পণ করবে। এ উপলক্ষে ইয়ামাহা বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত দিনব্যাপী উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রাইডাররা উপভোগ করেন টেস্ট রাইড, জিমখানা, স্টান্ট শোসহ নানা রোমাঞ্চকর বাইকিং কার্যক্রম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এসিআই মটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক আরাফাত হোসেনসহ অন্য কর্মকর্তারা।
আয়োজনটি নিয়ে সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা দিবসটিকে উদ্যাপন করি। এবার বড় পরিসরে আয়োজন করছি। সারা দেশের সাত হাজারের বেশি রাইডার এখানে অংশ নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধু মোটরসাইকেল বিক্রি নয়, বাইক-সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতে এ আয়োজনকে আন্তর্জাতিক মানের করার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে দেশের বাইরের বাইকাররাও অংশ নেবে। আর ইয়ামাহা এখন তরুণদের স্বপ্নের প্রতীক—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এ ধারাবাহিকতায় আমরা বাইক ইন্ডাস্ট্রিকে নেতৃত্ব দিচ্ছি।’
এসিআই মটরসের মহাব্যবস্থাপক আরাফাত হোসেন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ইয়ামাহা শুধু একটি ব্র্যান্ড নয়, এটি এক বিশাল পরিবার। সামনে আরও উদ্ভাবন, আরও সেবা ও আরও ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।’
মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রিতে ইয়ামাহা একটি জনপ্রিয় নাম, তরুণ প্রজন্মের কাছে যা ‘স্বপ্নের বাইক’ হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বাজারে বিক্রির শীর্ষেও রয়েছে ইয়ামাহা। জনপ্রিয় এই ব্র্যান্ডের সফলতার পেছনে রয়েছে এর অনুমোদিত পরিবেশক এসিআই মটরস্। যাত্রার শুরু থেকেই নতুন নতুন মডেল ও বিক্রয়োত্তর সেবার মাধ্যমে বাইকপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে ইয়ামাহা ও এসিআই মটরস্, যাদের সব কার্যক্রমই হয় গ্রাহকের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে।
অনুষ্ঠানে আসা কুমিল্লা ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের সদস্য ইভা সরকারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ইভা বলেন, ‘শখ করেই বাইক রাইড করি। এটা আমাদের বাইকারদের একটি মিলনমেলা। এখানে এসে ভালো লাগল।’
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের সদস্য কামারুজ্জামানও এসেছিলেন এ আয়োজনে। তিনি বলেন, ‘ইতিপূর্বে অনেক অনুষ্ঠানে এসেছি। এবারের আয়োজন একেবারেই ভিন্ন। দেশের আর কোনো বাইক কোম্পানি নেই, যারা এভাবে রাইডারদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিন্তা করে। এ জন্য এ কমিউনিটির সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত।’
ইয়ামাহা বাইক কার্নিভ্যাল আয়োজনে বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি ছিল ইয়ামাহার বিভিন্ন সামগ্রীর প্রদর্শনীও। সন্ধ্যায় বিশেষ আকর্ষণ ছিল কণ্ঠশিল্পী কনা ও ‘নগরবাউল’ জেমসের পরিবেশনা, যা উপস্থিত বাইকপ্রেমীদের মধ্যে উৎসবের উচ্ছ্বাস আরও বাড়িয়ে দেয়।
বর্ণাঢ্য এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে গ্রাহক ও রাইডারদের সঙ্গে বন্ধন আরও সুদৃঢ় করল ইয়ামাহা ও এসিআই মটরস্—এমনই মতামত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।