কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা ১৩ নভেম্বর ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচির আগে নানা ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে বিভ্রান্তিকর নানা দাবিও করা হচ্ছে। পুরোনো কর্মসূচির ভিডিও নতুন দাবি দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, আবার ভিন্ন প্রসঙ্গের ঘটনাকেও আওয়ামী লীগের কর্মসূচি হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১০ নভেম্বর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, রাস্তায় উত্তেজিত মানুষের সমাবেশ এবং সড়কের পাশে পড়ে থাকা একাধিক মোটরসাইকেল, যার কয়েকটিতে আগুন জ্বলছে।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ‘বরিশালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি শুরু।’ অপর এক ফেসবুক আইডিতে একই ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘বরিশালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচীর বিক্ষোভ শুরু’

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ভিডিওটিতে একটি দোকানের ব্যানার দেখা যায়, যাতে লেখা রয়েছে ‘Classic & Rock, Barishal’। এই নামটি গুগলে সার্চ করলে হাসপাতাল রোড, বরিশাল ৮২০০ ঠিকানায় একটি দোকানের অবস্থান পাওয়া যায়। দোকানটি বাদ্যযন্ত্র বিক্রি ও মেরামত করে।

লিংক: এখানে

ঠিকানা ধরে ক্লাসিক অ্যান্ড রক-এর মালিক ফয়সাল আলম চৌধুরী মিন্টুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়। এটি গত বছরের জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের সময়, ৪ আগস্ট দুপুরের পর ধারণ করা।’

ফয়সাল আলম চৌধুরী আরও বলেন, ‘তখন আমার দোকান ক্লাসিক এন্ড রক ছিল করিম কুটি মসজিদের উল্টো পাশে, এম এ জলিল সড়কে (নবগ্রাম)। ভিডিওটিতে যে বাইকগুলো পুড়তে দেখা যাচ্ছে, সেগুলো আমার দোকানের সামনে ছিল।’

প্রথম আলোর বরিশাল প্রতিনিধি জানান, ঘটনার ওই স্থান বরিশাল নগরের এম এ জলিল সড়কের (নবগ্রাম সড়ক) করিম কুটির এলাকায়। ঘটনাটি বরিশালের সাবেক সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়ি বেগম ভিলার ফটকের সামনে।

জুলাই আন্দোলনের সময় গত বছরের ৪ আগস্ট বরিশালে ছাত্র–জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এক পর্যায়ে জাহিদ ফারুক শামীমের বাসভবন বেগম ভিলার সামনে থাকা একাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। পরে উত্তেজিত জনতা সেই বাইকগুলোতে আগুন দেয়।

বরিশালের স্থানীয় মুদিদোকানি হারুন অর রশিদও ভিডিওটি দেখে একই কথা বলেন,‘এটা এই বছরের ঘটনা না, গত বছরের আগস্টের শুরুতে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময়কার ঘটনা।’

২০২৪ সালের ৪ ও ৫ আগস্টের সংঘর্ষ নিয়ে বেসরকারি টিভি চ্যানেল যমুনা টিভি ও মাছরাঙা টিভি যথাক্রমে ‘বরিশালে ব্যাপক সংঘর্ষ; পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বাসভবনে আগুন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রচার করে।

লিংক: এখানে, এখানে

এ ছাড়া প্রথম আলো, সমকাল, বাংলানিউজ২৪সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমও তখন সংবাদ প্রকাশ করেছিল, ‘বরিশালে প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি ভাঙচুর, ২০টি মোটরসাইকেলে আগুন।’

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে

প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ৪ আগস্ট বরিশালের বটতলা নবগ্রাম রোড এলাকায় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বাসায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানে থাকা ২০–২৫টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় নগরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। পরে পুলিশ এসে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সুতরাং ভিডিওটি বরিশালে আওয়ামী লীগের নতুন কোনো কর্মসূচির নয়, বরং গত বছরের ৪ আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানকালীন সংঘর্ষের দৃশ্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গত বছর র ৪ আগস ট স ঘর ষ বর শ ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

যারা সংস্কারের বিপক্ষে, তাদের সঙ্গে জোট সম্ভব নয়: হাসনাত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘যারা সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যারা দেশের সংস্কার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করেছে, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে যে কারণে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, সেই জনআকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছে, তাদের সঙ্গে এনসিপির জোট বা নির্বাচনী ঐক্য সম্ভব নয়।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিবি রোডে জেলা ও মহানগর এনসিপির কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ইতিমধ্যে স্পষ্ট করেছেন, এনসিপি সংস্কারের পক্ষে, বাংলাদেশের পক্ষে, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে থাকা রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করতে পারে। কিন্তু যারা সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তাদের সঙ্গে এনসিপির জোট বা নির্বাচনী ঐক্য সম্ভব নয়।’ আগামী নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা প্রসঙ্গে বলেন, প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘গত দুই দিনের কার্যক্রমে বুঝে যাওয়া উচিত, আওয়ামী লীগ কখনো গণমানুষের দল ছিল না। এই যে আগুন সন্ত্রাস, অতীতে কারা করেছিল, এটি সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে গত দুই দিনের কার্যক্রমে। যারা এখন তাদের বৈধতা দিতে চাচ্ছেন, তারা মূলত ফ্যাসিবাদ ও আগুন সন্ত্রাসের বৈধতা তৈরি করছেন।’

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যে পতন, সেটি কিন্তু কোনো নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়নি। আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে একটি গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। গণ–অভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট হচ্ছে জনতার ম্যান্ডেট। এই ম্যান্ডেট হচ্ছে সর্বজনীন ম্যান্ডেট। গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে রাজনৈতিক দলের পতন হয়, সেই রাজনৈতিক দলের উপযোগিতা ফুরিয়ে যায় বলেই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। যেহেতু গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, এই দলটিকে যারা ফিরিয়ে আনার বৈধতা উৎপাদন করছেন, মূলত তারা আগুন সন্ত্রাসের পক্ষে বৈধতা উৎপাদন করছে।’

সাংবাদিকের আরেক প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আমাদের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দিকে যেতে হবে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব ও নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়কারী আবদুল্লাহ আল আমিন সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ