ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হসিনার সরকারের পতনের প্রায় পাঁচ মাস পর ভারতে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। শুক্রবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পত্রিকাটি আ ক ম মোজাম্মেল হক, নাহিম রাজ্জাক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, পঙ্কজ দেবনাথ, সাইফুজ্জামান শিখর, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও মাহবুবুল আলম হানিফের সঙ্গে কথা বলেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের আমলে শাসনপ্রক্রিয়া ও রাজনীতিতে ভুল করার কথা স্বীকার করেছেন তারা। নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তারা বলেন, তাদের দল এখন 'ছিন্নভিন্ন ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে' রয়েছে। তবে বাংলাদেশে ফিরে আসার ইচ্ছার কথাও জানান তারা।

তাদের অনুমান, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের এক তৃতীয়াংশ কারাগারে, এক তৃতীয়াংশ দেশের বাইরে আত্মগোপনে এবং বাকি নেতারা দেশের ভেতরেই লুকিয়ে রয়েছেন।

সাবেক মক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী এখন তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। তাদের অনেকের খাবার কিনে খাওয়ার মতো টাকাও নেই.

.. তবুও, তৃণমূল কর্মীদের মনোবল শক্ত আছে। বিদেশে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত গঠনে সাহায্য করার জন্য আমরা ভারতের দিকে তাকিয়ে আছি।'

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, 'সিনিয়র নেতারা মনে করেন আমাদের সবার ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া উচিত।'

নাহিম রাজ্জাক বলেন, 'এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো বিচারিক অধিকার নেই। কেউ জামিন পাচ্ছেন না। আমরা জানি, যদি দেশে ফিরে নির্বাচনের দাবি জানাই, তাহলে আমাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হবে। আওয়ামী লীগ আলোচনায় বসতে এবং নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে প্রস্তুত, কিন্তু এর জন্য কোনো পরিবেশ নেই। এখনই আমাদের পক্ষে মাঠে থাকা বা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়।'

বেশ কয়েকজন নেতা দাবি করেন, ভারতে থাকাকালীনও শেখ হাসিনা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দলের নেতাদের সঙ্গে 'নিয়মিত' যোগাযোগ রাখেন। এরকম কিছু গ্রুপে শেখ হাসিনা 'আপা' নামে যুক্ত আছেন।

সাবেক এমপি পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, বাংলাদেশে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন শেখ হাসিনা।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, '২০২৪ সালের আগস্টের আগেও আওয়ামী লীগ বহু বছর ধরে বিরোধী দলে ছিল। কিন্তু দলটি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে কখনো হয়নি।'

'সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট' এর প্রতিক্রিয়া

পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে 'সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট'। তারা বলেছে, সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের অংশ হিসেবে, পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের কথার ওপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। পত্রিকাটি যাদের বক্তব্য প্রকাশ করেছে তারা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী ও গণহত্যায় অভিযুক্ত। সাংবাদিকতার মৌলিক নিয়ম অনুসরণ না করে প্রকাশিত এসব প্রতিবেদন মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যে পরিপূর্ণ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ন ত র জন ত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে হবে নির্বাচিত সংসদ থেকে: তারেক রহমান

করিডর দেওয়া না–দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জনগণের কাছ থেকে আসতে হবে বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মহান মে দিবসে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে ‘করিডর’ নিয়ে কথা বলেন তারেক রহমান। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর জন্য ‘মানবিক করিডর’ স্থাপন নিয়ে চলমান আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ মনে করে, করিডর দেওয়া না–দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে। সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশে দেশে এটাই নিয়ম, এটাই রীতি।’

জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এই সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে লিপ্ত মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশকে করিডর হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার নাকি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু জনগণকে জানায়নি। এমনকি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কোনো আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেনি।

দেশের জনগণকে না জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না কিংবা নেওয়া উচিত কি না, এই মুহূর্তে সেই বিতর্ক তুলতে চান না উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট—বিদেশিদের স্বার্থ নয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে সবার আগে দেশের জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।

ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর এ বছর রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে সহনীয় থাকায় অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানান তারেক রহমান। তবে তিনি বলেন, রমজান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার চাল ও তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চাল–তেলের দাম বেড়েছে কিন্তু মানুষের আয় বাড়েনি। তাহলে জনগণ এখন তাদের এমন ভোগান্তির কথা কার কাছে, কোথায় কীভাবে বলবে?

নয়াপল্টনে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে সমাবেশে নেতা-কর্মীদের একাংশ। ঢাকা, ১ মে

সম্পর্কিত নিবন্ধ