ভারতে আসা আ.লীগ নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া উচিত: শুভেন্দু অধিকারী
Published: 16th, February 2025 GMT
ভারতে আসা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী।
রোববার সন্ধ্যায় কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে এবিসি অডিটোরিয়ামে ‘খোলা হাওয়া’ নামক সংগঠন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইন ক্রাইসিস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার সাইডলাইনে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিজেপি নেতা বলেন, আমি একজন নাগরিক হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আবেদন জানাব, আওয়ামী লীগের যে সব নেতাকর্মী, সমর্থকরা প্রাণ বাঁচাতে ভারতে এসেছেন, তাদের কারাগারে না পাঠিয়ে যেন রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধসহ বাংলাদেশে যে সমস্ত সংখ্যালঘু মানুষরা রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এবং আওয়ামী লীগের যারা পরিচিত মানুষ তাদেরকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া উচিত। কারণ এরা কেউ রোহিঙ্গা মুসলিম, উগ্রপন্থী বা সন্ত্রাসী নয়।
তিনি বলেন, চার সপ্তাহ আগে ৮৫ বছরের এক হিন্দু নারীকে দুই মাসের কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ মহকুমা আদালত। তার অপরাধ হলো ওই নারীসহ তিনজন প্রাণ বাঁচানোর জন্য অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েছিলেন। পরে তাকে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জে ৬ জন, নদীয়া জেলার রানাঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে ৫১ জন, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার খড়দহ পুলিশ ছাত্র লীগের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু সকলের তো আর এই দেশ ঘুরে আবার অন্য দেশে যাওয়ার আর্থিক সক্ষমতা নেই।
বিজেপি বিধায়ক বলেন, এ রাজ্যে আশ্রয়কারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রেপ্তার করা হয় না। জাভেদ মুন্সী, জাদ সেখের মতো জঙ্গিদের অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। আবার সেই রাজ্যে প্রাণ বাঁচাতে অন্য দেশ থেকে রাজনৈতিক কিংবা সাধারণ মানুষ পালিয়ে এসে আশ্রয় নিলে রাজ্য পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতে হয়। তাই এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার উভয়েরই দৃষ্টিপাত করা উচিত।
একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে শুভেন্দুর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেন, অতীতে বাংলাদেশ থেকে যেসব শরণার্থী ভারতে এসেছেন তাদের এদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই বর্তমানেও যদি এরকম পরিস্থিতি হয় এবং ভারত সরকারের কাছে তারা আর্জি জানায়, তবে সরকারের সহায়তা করা উচিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান চাই। আমরা বাংলাদেশের শান্তি চাই, আমরা চাই সেখানে গণতন্ত্র ফিরে আসুক। একইসঙ্গে সেখানে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশের প্রবৃদ্ধি ঘটুক তাও চাই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ র জন ত গ র প ত র কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অপ্রত্যাশিত এই মুহূর্ত কি বিবিসির শীর্ষ পর্যায়ের বিভাজনকে তুলে ধরছে
ভূকম্পনের মতোই এটি আকস্মিক এক ঘটনা। বিবিসি নিউজের মহাপরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা—দুজনকে একই সময়ে হারানোর এমন ঘটনা আগে কখনো দেখা যায়নি। এটা বিবিসির ইতিহাসে এক অস্বাভাবিক মুহূর্ত।
এ ঘটনাকে ছোট করে দেখলে চলবে না।
আপাতদৃষ্টে টিম ডেভির পদত্যাগকে কিছুটা যৌক্তিক মনে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছিল, এত চাপের এই দায়িত্বে তিনি আর কত দিন থাকতে চান, তা নিয়ে হয়তো ভাবাভাবি করছিলেন।
একের পর এক বিতর্ককে কেন্দ্র করে চলতি বছর আমি যখনই তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তখন তাঁকে আগের মতো প্রাণবন্ত মনে হয়নি।
নিজের পদত্যাগসংক্রান্ত বিবৃতিতে টিম ডেভি অনেক বছর ধরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ব্যক্তিগত ও পেশাগতভাবে প্রবল চাপের মধ্যে থাকার কথা উল্লেখ করেছেন।
আমার ধারণা, একের পর এক সংকটের পর সর্বশেষ বিতর্কটি তাঁর সহ্যের সীমারেখা ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে তিনি গাজা-সংক্রান্ত দুটি তথ্যচিত্র ও বব ভিলেন-গ্লাস্টনবারির ইস্যুসহ একাধিক সংকট সামলেছেন। কিন্তু এবার আরেকটি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট মনোবল আর তাঁর মধ্যে অবশিষ্ট ছিল না।
বিবিসির যোগাযোগ বিভাগের সাবেক প্রধান জন শিল্ড আমাকে বলেছেন, ‘মহাপরিচালকের পদটা পেশাগত জীবনের অন্যতম কঠিন দায়িত্ব।’
মনে হচ্ছে, বিবিসি বোর্ড ও সংবাদ বিভাগের মধ্যে বিরোধ আছে। কেউ কেউ বলছেন, বিবিসি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পক্ষপাত মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, যা ঘটেছে তা কি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো পরিকল্পিত ও রাজনৈতিক অভিযান কি না, যার হাত ধরে দুটি বড় পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে।শিল্ডের মতে, টিম অনবরত চাপের মধ্যে ছিলেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষ একজন নেতা, যিনি বাস্তব পরিবর্তন এনেছেন। কিন্তু একটা সময়ের পর এই অবিরাম চাপ সহ্য করা সম্ভব হয় না।
আমাকে বলা হয়েছে, সপ্তাহান্তে টিম ডেভি যখন সহকর্মীদের তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানান, তখন সত্যিকারের ধাক্কাটা লেগেছিল।
ডেবোরাহ টারনেসের বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, তিনি (টারনেস) নৈতিক কারণে পদত্যাগ করেছেন।
প্যানোরামা অনুষ্ঠানে প্রচারিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প–সংক্রান্ত তথ্যচিত্রটি নিয়ে বিতর্ক চলছে। ওই বিতর্কের কারণে বিবিসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার বিষয়ে টারনেস বলেছেন, ‘চূড়ান্ত দায়টা আমার এবং আমি গত রাতে মহাপরিচালকের কাছে পদত্যাগের প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’
কিন্তু যেকোনো পদত্যাগের ঘটনায়, বিশেষ করে একই সময়ে দুটি পদত্যাগের ঘটনায় মনে হচ্ছে খালি চোখে যা দেখা যাচ্ছে শুধু তা নয়, এর পেছনে আরও কিছু আছে। এ ছাড়া বিবিসি বোর্ডের কার্যক্রম ও গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি গল্পও সামনে আসছে। যা ঘটেছে, তাতে বোর্ডের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
মনে হচ্ছে, বিবিসি বোর্ড ও সংবাদ বিভাগের মধ্যে বিরোধ আছে। কেউ কেউ বলছেন, বিবিসি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, যা ঘটেছে, তা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো পরিকল্পিত ও রাজনৈতিক অভিযান কি না, যার হাত ধরে দুটি বড় পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে।
সর্বপ্রথম টেলিগ্রাফে এ–সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছিল। আমি বুঝতে পারছি না, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী এমন শিরোনাম দেখার পরও বিবিসি কেন চুপ করে ছিল। প্রাতিষ্ঠানিক পক্ষপাতের অভিযোগের বিষয়ে তারা কেন কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি?
অভিযোগগুলোকে দুটি আলাদা ঘটনা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আলাদাভাবে সামাল দেওয়ার দরকার ছিল।
আরও পড়ুনবিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও বার্তাপ্রধান ডেবোরাহ টারনেসের পদত্যাগ১২ ঘণ্টা আগেপ্রথমে আসি প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের ভাষণ সম্পাদনার বিষয়ে। দ্রুত ক্ষমা প্রার্থনা করে হোক অথবা যথাযথভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে হোক, তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা প্রয়োজন ছিল। ভুল না হয়ে থাকলে বিবিসি বলতে পারত, তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথাগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করেনি।
এর মধ্য দিয়ে বিবিসি তাদের নিজেদের সাংবাদিকতা চর্চার পক্ষে আরও দৃঢ় অবস্থান দেখানোর সুযোগ পেত। বিবিসির বিরুদ্ধে এখন অভ্যন্তরীণ পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে। নিরপেক্ষতার অভাবের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ তাদের সংবাদসংক্রান্ত কার্যক্রমের মূল জায়গায় আঘাত করছে।
একই সময়ে দুটি পদত্যাগের ঘটনায় মনে হচ্ছে খালি চোখে যা দেখা যাচ্ছে শুধু তা নয়, এর পেছনে আরও কিছু আছে। এ ছাড়া বিবিসি বোর্ডের কার্যক্রম ও গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি গল্পও সামনে আসছে। যা ঘটেছে, তাতে বোর্ডের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।প্যানোরামা–সংক্রান্ত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা অথবা দৃঢ় প্রতিবাদ জানানোর পর বিবিসি প্রাতিষ্ঠানিক পক্ষপাতসহ অন্য অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যানের চেষ্টা করতে পারত।
বিবিসি বলতে পারত, তারা সম্পাদকীয় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।
তা না করে বিবিসি অভিযোগগুলো অমীমাংসিত অবস্থায় ফেলে রেখেছিল। আর তাতে আমরা এমন পরিস্থিতিতে পৌঁছেছি, যেখানে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বিবিসিকে ‘ফেক নিউজ’ বলে অভিহিত করছে এবং তাতে মানুষ সায় দিচ্ছে।
বিবিসির অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে আমি জানতে পেরেছি, প্যানোরামা–সংক্রান্ত বিতর্কের বিষয়ে কয়েকদিন আগেই একটি বিবৃতি প্রস্তুত করা হয়েছিল।
ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পাদনাসংক্রান্ত বিতর্কটির বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি। তারা তাদের ব্যাখ্যায় বলতে চেয়েছিল, জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার কোনো উদ্দেশ্য বিবিসির ছিল না। তবে বক্তব্যটি পর্যালোচনা করার পর মনে হয়েছে, দর্শকদের বোঝানোর জন্য সেখানে একটি সাদা ফ্ল্যাশ বা ওয়াইপ ব্যবহার করা উচিত ছিল। তাতে পরিষ্কার বোঝা যেত, সেটি বক্তৃতার দুটি পৃথক অংশ।
প্যানোরামা অনুষ্ঠানে প্রচারিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প–সংক্রান্ত তথ্যচিত্রটি নিয়ে বিতর্ক চলছে