ভোলায় সংঘর্ষ-ভাঙচুরের পর বাস ও অটোরিকশার চালকদের ধর্মঘট, যাত্রীদের ভোগান্তি
Published: 5th, May 2025 GMT
ভোলায় বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের পর এবার ধর্মঘট শুরু করেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক সমিতি। আজ সোমবার ভোর থেকে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ। অটোরিকশা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ ও তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে অটোরিকশার চালকেরা আন্দোলনে নেমেছেন।
এর আগে গতকাল রোববার ভোলার পাঁচ রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয় বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন। গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় যানজটে আটকে পড়াকে কেন্দ্র করে বাসশ্রমিক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি, হাতাহাতি ও সংঘর্ষ হয়। এরপর সাড়ে পাঁচটার দিকে ওই কর্মসূচির ডাক দেয় বাস শ্রমিক ইউনিয়ন।
এদিকে সড়কে বাস ও অটোরিকশা চলাচল না করায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। আজ সকালে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন থেকে চার গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে তাঁরা মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসে গন্তব্যে যাচ্ছেন। সরেজমিন দেখা যায়, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ মোতায়েন আছে। উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রাজ্জাক জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
অটোরিকশা শ্রমিক মালিক সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বাস মালিক সমিতির সন্ত্রাসীরা ৩০টি অটোরিকশার ওপর হামলা করেছে। সারা দেশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছে। আর ভোলায় চালাতে গেলে হামলা-ভাঙচুর করা হচ্ছে। গতকাল ও আজ ১১টি অটোরিকশা ভাঙচুর ও একটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তাঁরা ছয়জন চালককে পিটিয়ে জখম করেছেন। এর ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। হামলার সুষ্ঠু বিচারসহ মহাসড়কে অটোরিকশা চালানোর অনুমোদন চাই। এসব দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবে।’
এ সম্পর্কে ভোলা জেলা বাস, মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত ২৮ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে বাস মালিক সমিতি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক-মালিক সমিতির মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছিল অটোরিকশা তিনজনের বেশি যাত্রী টানতে পারবে না। ওই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করি। কিন্তু তাঁরা জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মানেননি। পাঁচজন নিয়ে দূরপাল্লায় অটোরিকশা চালাচ্ছেন। গতকাল একসঙ্গে পাঁচ স্থানে বাসচালকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এতে অন্তত চালক-শ্রমিকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। বাসও ভাঙচুর করা হয়েছে।’
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ডের ডিপোপ্রধান ও ভোলা বাস মালিক সমিতির সহসভাপতি মাগফার উদ্দীন বলেন, অটোরিকশার চালকেরা ৭টি বাস ভাঙচুর করেছেন, ২০ জন শ্রমিককে পিটিয়ে জখম করেছেন। বাসের নিরাপত্তা নেই, শ্রমিকদেরও নিরাপত্তা নেই। তাই ধর্মঘট চলবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, ‘দুই পক্ষকে নিয়ে সমঝোতায় বসার চেষ্টা করছি।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সংবাদমাধ্যম সরকারের চেয়ে জনগণের কাছে বেশি দায়বদ্ধ: তথ্য উপদেষ্টা
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, সংবাদমাধ্যম সরকারের চেয়ে জনগণের কাছে বেশি দায়বদ্ধ। জনগণের মধ্যে আস্থা ফেরাতে সংবাদমাধ্যমগুলোকে সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।
রোববার রাজধানীর তথ্য ভবনের ডিএফপি অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক পরিবার ও আহত এবং সাহসী সাংবাদিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
মাহফুজ আলম বলেন, মিডিয়ার ওপর জনগণের আস্থা ফেরাতে সংবাদমাধ্যমকে হতে হবে জবাবদিহিমূলক। সংবাদমাধ্যম যদি স্বাধীনতা চায়, তাকে জবাবদিহি করতেই হবে। যারা ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারের দালালি করেছে, তাদের কেউ জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কোনো হাউসকে (সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান) বাধ্য করিনি কিছু প্রচার করতে। তবে গত ছয় মাসে দেশের অনেকগুলো হাউস গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ও ঐক্যকে ভণ্ডুল করতে কাজ করেছে।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের ১২ দফা নিয়ে কাজ করছি। সাংবাদিক সুরক্ষা আইন, নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন—এসব নিয়ে এগোচ্ছি। আমরা আহত সাংবাদিকদের জন্য প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সম্প্রচার নীতিমালার কথা ভাবছি এবং অনলাইন নীতিমালাও তৈরি হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়িত হবে।’
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘কারফিউর সময়ে যে সাংবাদিকতা, বিশেষ করে টেলিভিশনের সাংবাদিকতা, আপনারা জানেন খুবই একপক্ষীয় ছিল। একটা রিলস বারবার দেখানো হচ্ছিল। বিটিভির ওখানে “পুড়ে গেছে সব”, “সব ধ্বংস”, “আগুন সন্ত্রাস”। হাসিনা যা বলত, ওই কথাগুলো বারবার টিভিতে দেখানো হচ্ছিল।’
তবে মাহফুজ আলম বলেন, ‘আন্দোলনের সময় কয়েকটি হাউস খুব ভালো ভূমিকা রেখেছে। অনেক সাংবাদিক ব্যক্তি হিসেবে সাহস দেখিয়েছেন। পুরো কৃতিত্ব হাউসের নয়, সাংবাদিকদের। কিন্তু এই সুযোগ বারবার আসবে না। বারবার মানুষ জীবন দিতে পারে না। প্রতি ২০ বছর পরপর রক্ত দেওয়ার কোনো মানে হয় না।’
তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এটা মাত্র শুরু। একটা নতুন বাংলাদেশের শুরু। কিন্তু নতুন বাংলাদেশ এক বছরেই বা দুই বছরে সম্ভব নয়। বরং এটা যদি অব্যাহত লড়াই থাকে, তাহলে সম্ভব।’
অনুষ্ঠানে মাঠের সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই ছিল বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সেরা সময়। আবার গত বছরের জুলাইয়ে আমরা সবচেয়ে খারাপ সাংবাদিকতাও দেখেছি।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘মেহেদী হাসান, তাহের জামান, আবু তাহের মো. তুরাব—এঁরা মাঠে নেমে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অন্যদিকে কিছু সাংবাদিক গণভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানকে প্রশ্ন করেছেন, আপনি এখনো এদেরকে শায়েস্তা করছেন না কেন? খুন করছেন না কেন?’ এটি পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান, শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ভিডিও ধারণকারী সাংবাদিক তাওহীদুল হক সিয়াম ও দ্য ডেইলি স্টারের ফটো সাংবাদিক ইমরান হোসেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামূল কবীর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফায়জুল হক, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম।
অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পাঁচ সাংবাদিকের পরিবার এবং আহত ও সাহসী ১৯২ জন সাংবাদিককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননার পাশাপাশি আর্থিক সম্মানী হিসেবে মোট ৫৬ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।