জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থাকবে। কিন্তু, কিছু মৌলিক বিষয়ে আমাদের ঐকমত্যে আসতে হবে৷ এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ছাড় দেবে, তাদের কাছ থেকে কমিশন এটাই প্রত্যাশা করে।

বুধবার (৭ মে) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বর্ধিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড.

বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি জাতীয় সনদ তৈরির অভিপ্রায় ব্যক্ত করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করছে। কিন্তু, শুধু কমিশনের আলোচনা যথেষ্ট নয়; রাজনৈতিক দলগুলোরও তাদের সহযোগী এবং প্রতিপক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে একমত হয়ে জাতীয় সনদ তৈরির লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারের নেতৃত্বে দলটির ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রতিনিধিদলে ছিলেন— মোফাখ্খারুল ইসলাম নবাব, মঞ্জুর কাদির, শাহনাজ রানু, ফেরদৌসী আক্তার সুমি এবং সাকিব আনোয়ার।

সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এ কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়।

প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানতে সুপারিশগুলো স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত ৩৫টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ইতোমধ্যে নাগরিক ঐক্যসহ ২৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ করেছে কমিশন৷

ঢাকা/এএএম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য না হলে দেশে টালমাটাল অবস্থা তৈরি হবে

জুলাই সনদের ধারণাটাই একটা অভিনব ধারণা। সেটাকে সংবিধানে সংযুক্ত করা, আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করা—এগুলো একটা দীর্ঘ কাজের ব্যাপার, যা এর আগে বাংলাদেশে কখনো করা হয়নি। ফলে এই কাজে মতভিন্নতা স্বাভাবিক। তবে নাগরিক হিসেবে আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলো প্রজ্ঞার পরিচয় দেবে। যতটুকু ছাড় দিলে কোনো দলের বড় কোনো মৌলিক ক্ষতি হয় না, তার বিনিময়ে যদি একটা বৃহত্তর ঐক্য হয়; সেটা তারা বিবেচনা করবে বলে আমরা মনে করি।

আমাদের প্রত্যাশা, জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো প্রজ্ঞার পরিচয় দেবে, দল ও গোষ্ঠীর স্বার্থকে উপেক্ষা করে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কতগুলো ন্যূনতম জায়গায় শিথিলভাবে হলেও তারা একমত হবে। ঐকমত্য হলে হয়তো ১০০–এর বদলে ৮০ বা ৬০ মেনে নিতে হবে। যদি ঐকমত্য না হয়, এমন সম্ভাবনা আছে যে সবারই ১০০–ই হারাতে হবে। দেশ আরেকবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে, টালমাটাল অবস্থা তৈরি হবে।

আরও পড়ুনযেটা ৮ মাসে হয়নি, সেটা ৮ দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে৮ মিনিট আগে

গণভোট ও অধ্যাদেশ

গণভোট হয় আসলে নীতিনির্ধারণী বিষয়। ধরা যাক, আমরা জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চাই কি না, নির্বাচিত সরকার এসে সনদের বাস্তবায়ন কত দিনের মধ্যে করবে—এ রকম নীতিনির্ধারণী দু–চারটি প্রশ্ন হলে গণভোট ঠিক আছে। কিন্তু যদি জুলাই সনদের এই ধারা–ওই ধারা নিয়ে প্রশ্ন থাকে বা প্রশ্ন দু–চারটির বেশি হয়, তখন সেটা একটা দুরূহ ব্যাপার হবে। গণভোটের প্রশ্নপত্রের আদলে ব্যালট তা কে বা কারা তৈরি করবেন, বিশেষজ্ঞরা নিশ্চয়ই ভেবেছেন।

এই মুহূর্তে অধ্যাদেশ জারি করে গণভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। একটা পক্ষ বলছে, সনদে প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষর করবেন। কিন্তু বিদ্যমান আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা এটা পারবেন না। অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন কেবল রাষ্ট্রপতি।

কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্রপতি স্বৈরাচারের নিয়োগ দেওয়া এবং তাদের ধারা বহন করা ব্যক্তি। আবার এ কথাও সত্য যে এই রাষ্ট্রপতির কাছেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদকে শপথ নিতে হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর আমরা এমন কোনো বিপ্লবী সরকার গঠন করিনি, যারা এই সংবিধান রদ করেছে বা এই রাষ্ট্রপতিকে অস্বীকার করেছে।

এই রাষ্ট্রপতি যদি অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন, জুলাইয়ে প্রাণ দেওয়া ও আত্মত্যাগকারী এবং তাঁদের পরিবার, স্বজন ও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক পক্ষগুলোর জন্য এটা মেনে নেওয়া কঠিন। সব পক্ষের আলাপ–আলোচনার মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে একটা পথ বের করতে হবে। এটা খুঁজে দেখা যেতে পারে, পৃথিবীতে কোথাও এমন কোনো দৃষ্টান্ত আছে কি না, যেখানে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি ছাড়া অন্য কেউ অধ্যাদেশ জারি করেছেন। কিংবা এ–সংক্রান্ত এখতিয়ার রাষ্ট্রপতি কাউকে অর্পণ করতে পারেন কি না এবং তাঁর বদলে অন্য কেউ স্বাক্ষর করতে পারেন কি না।

তবে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির বিষয়টাকে জনগণের ক্ষমতার কাছে বিগত রেজিমের লিগ্যাসি বহনকারী রাষ্ট্রপতির মাথা নোয়ানো হিসেবেও দেখা যেতে পারে।

দলগুলোর সহযোগিতা সরকারের লাগবে

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য লাগবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় সহযোগিতা সরকারের লাগবে। অন্তত একটা কার্যকর আলাপ–আলোচনা সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর লাগবে।

মাঠে যে পুলিশ আছে, সেই পুলিশের ওপর এখনো জনগণের পুরোপুরি আস্থা নেই। পুলিশের মধ্যে বিগত রেজিমের অপচ্ছায়া আছে। সেই পুলিশ, সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীকে যখন মাঠে মোতায়েন করা হবে, ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকবে কি না—এই প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা যাতে নির্বাচনে অবাধে কাজ করতে পারেন, তা–ও নিশ্চিত করতে হবে।

একটা জাতীয় ঐকমত্য তৈরির ক্ষেত্রে যেন সরকার এখন থেকেই উদ্যোগী হয়—যাতে সব নাগরিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে উদ্দীপ্ত হন। জনগণ যদি ভাবেন যে ভোটকেন্দ্রে গেলে গোলাগুলি হবে, তাহলে তাঁরা কেন্দ্রে যাবেন না। জনগণের মনে আস্থা, সাহস ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সরকারকে কাজ করতে হবে। আমরা চাইব, সরকার সর্বতোভাবে একটা জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মতৈক্য হবে না, কারণ দলগুলো বিভিন্ন মহলের স্বার্থ দেখে: ফরহাদ মজহার
  • ঐকমত্যের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই: আমীর খসরু
  • জুলাই সনদ ও নোট অব ডিসেন্টের রাজনীতি
  • ঐকমত্য কমিশনের মোট ব্যয় ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা 
  • ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে
  • ‘জাতীয় ইস্যুতে সর্বদলীয় ঐকমত্য জরুরি’
  • ঐকমত্য না হলে দেশে টালমাটাল অবস্থা তৈরি হবে
  • ঐকমত্য কমিশনের আপ্যায়ন ব্যয় ৪৫ লাখ টাকা
  • ঐকমত্য কমিশন কী হলো না হলো কিছু আসে যায় না: আমীর খসরু
  • কমিশনে কী হলো না হলো কিছু আসে যায় না, ৩১ দফা বাস্তবায়ন হবে: আমীর খসরু