আঞ্চলিক দলগুলোর নিবন্ধনে শর্ত শিথিল চায় ইউপিডিএফ
Published: 10th, May 2025 GMT
আঞ্চলিক দলগুলোর নিবন্ধনের জন্য বিদ্যমান শর্ত শিথিল করার প্রস্তাব দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। দলটির সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের শর্তের কারণে ইউপিডিএফের নিবন্ধন পাওয়া সম্ভব না। তাই আঞ্চলিক দলের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা রাখার জন্য বলেছি।’
আজ শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান মাইকেল চাকমা। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মাইকেল চাকমা বলেন, ‘দেশে নতুন সংবিধান প্রণয়ন কিংবা সংস্কারের প্রক্রিয়া চলমান। এই প্রক্রিয়ায় একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি আমরা সবাই।’ তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।’
সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের প্রকৃত পথ খুঁজে বের করার তাগিদ দেন মাইকেল চাকমা। তিনি বলেন, ‘যদি ৫৩ বছর পরে এসেও আমরা ভুল করে বসি। তাহলে সেই সমস্যা থেকে যাবে। নতুন করে আরও সংকট তৈরি হবে।’
১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি বলেও অভিযোগ করেন ইউপিডিএফের এই নেতা। মাইকেল চাকমা বলেন, ‘এই চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি। শান্তিচুক্তির সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না। এটা দুর্বল চুক্তি। সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকায় যেকোনো সরকার চাইলে তা বাতিল করতে পারে।’
ইউপিডিএফকে অনেকেই ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে থাকে, এমন প্রশ্নের জবাবে মাইকেল চাকমা সরাসরি বলেন, ‘আমরা কী ধরনের সংগঠন, কী নিয়ে রাজনীতি করি, সেটা কাজের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটে। কে কী বলছে, এটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই।’
পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে মাইকেল চাকমা বলেন, নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব হওয়া দরকার। কালক্ষেপণ করার পক্ষে নয় ইউপিডিএফ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করে যেন নির্বাচন দেওয়া হয়। একটা গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে যেন ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।
আরও পড়ুনইউপিডিএফের লক্ষ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলা: মাইকেল চাকমা৩ ঘণ্টা আগেআজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আলোচনা চলে। পরে ইউপিডিএফ জানায়, আগামী ১৫ মে বিকেলে দলটির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আবারও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
মাইকেল চাকমার নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় অংশ নেয়। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন বৃহত্তর পার্বত্য চটগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও ইউপিডিএফের সদস্য জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফের সদস্য সুনয়ন চাকমা।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
আরও পড়ুনরাজনৈতিক দল ও জনগণকে ঐক্যে পৌঁছাতে হবে: আলী রীয়াজ০৮ মে ২০২৫আরও পড়ুনরাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যেকে কিছু কিছু ছাড় দেবে, প্রত্যাশা আলী রীয়াজের০৭ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত: জোনায়েদ সাকি
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, একজন ব্যক্তি এক জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, এমন একটি প্রস্তাব আলোচনায় এসেছে এবং এতে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল সম্মতি প্রকাশ করেছে।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকের পঞ্চম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন—এমন বিষয়ে একমত হয়েছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। তিনটি রাজনৈতিক দলের ভিন্ন প্রস্তাব ছিল এবং সবশেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দলগুলো তাদের নিজস্ব ফোরামে আলোচনা করে কিংবা পারস্পরিক আলোচনা করে আগামী বুধবার এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে।
বৈঠকের দ্বিতীয় পর্বে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, এই বিষয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো চূড়ান্ত ঐকমত্য হয়নি। বিভিন্ন দলের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মতামত থাকায় এখনই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে ঐকমত্য কমিশন এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রস্তাব তৈরি করে আবার উপস্থাপন করবে এবং সেটি নিয়ে পরবর্তী আলোচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তি ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও সেই সময়ের ঘোষণাপত্র। সেই ঘোষণায় সাম্য, মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল এবং সেটাই ছিল দেশের প্রথম সংবিধানের মূল ভিত্তি। এই মূল্যবোধকে সামনে রেখে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি নির্ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘ধর্ম, জাতি, বর্ণ কিংবা শ্রেণি—কোনো বৈষম্য চলবে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে সব নাগরিকের প্রতি সমান আচরণ নিশ্চিত করা এবং শোষণ ও নির্যাতনের অবসান ঘটানো।’
আগের অসমাপ্ত আলোচনা শেষ করার লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এ দিনের আলোচনায় অংশ নেয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।