ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত মাসে সংঘটিত হামলার প্রতিশোধ নিতে ভারত তার কথায় ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীরে হামলায় জড়িত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো, বিশেষ করে লস্কর–ই–তাইয়েবাকে সহযোগিতা করে পাকিস্তান—ভারতের এ অভিযোগ এসেছে আবারও আলোচনায়।

লস্কর–ই–তাইয়েবা কী

লস্কর–ই–তাইয়েবা (এলইটি) একটি দীর্ঘদিনের সশস্ত্র সংগঠন। এটি ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং অনেক দেশ এটিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ মনে করে। ২০০৮ সালে ভারতের মুম্বাই হামলায় এই সংগঠনকে দায়ী করেছিল নয়াদিল্লি। হামলায় ১৬৬ জন নিহত হন, যাঁদের মধ্যে বিদেশি নাগরিকও ছিলেন।

মারকাজ দাওয়াত–উল ইরশাদ নামক প্রচার ও ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রের সামরিক শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এলইটি। তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক জিয়াউল হকের ‘ইসলামীকরণ’ নীতির অংশ হিসেবে গড়ে তোলা হয় লস্কর–ই–তাইয়েবা। লক্ষ্য ছিল, পাকিস্তানকে একটি বৈশ্বিক ইসলামি রাজনীতির কেন্দ্রে পরিণত করা।

লস্কর–ই–তাইয়েবা একটি বিশ্বব্যাপী ইসলামি খিলাফতের দর্শন প্রচার করে, যেখানে ‘হারানো’ ইসলামি ভূমি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রচার ও সশস্ত্র সংগ্রাম—দুই প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মতে, ১৯৯৩ সাল থেকে এলইটি বহু হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০০৬ সালের মুম্বাইয়ে লোকাল ট্রেনে বিস্ফোরণ ও ২০০১ সালে ভারতের সংসদে হামলা।

এলইটির প্রধান হাফিজ মুহাম্মদ সাঈদ ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হন। সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের অভিযোগে পাকিস্তানে ৩১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তাদের সংগ্রাম শুধু কাশ্মীরে সীমাবদ্ধ নয়। তাদের লক্ষ্য ভারতের ভাঙন পর্যন্ত বিস্তৃত। মুম্বাই হামলার সময় একটি ইহুদি সেন্টারে হামলার মাধ্যমে এলইটির জোরালো ইহুদিবিদ্বেষও প্রকাশ পেয়েছে।

যদিও ভারত–সংশ্লিষ্টতার কারণে বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলেই নিজেদের অধিকাংশ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এলইটি, তবে তাদের বৈরিতা শুধু সেখানে সীমাবদ্ধ নয়, ভারতজুড়ে।

এলইটির প্রধান হাফিজ মুহাম্মদ সাঈদ ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হন। সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের অভিযোগে পাকিস্তানে ৩১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তাদের সংগ্রাম শুধু কাশ্মীরে সীমাবদ্ধ নয়। তাদের লক্ষ্য ভারতের ভাঙন পর্যন্ত বিস্তৃত। মুম্বাই হামলার সময় একটি ইহুদি সেন্টারে হামলার মাধ্যমে এলইটির জোরালো ইহুদিবিদ্বেষও প্রকাশ পেয়েছে।

জইশ–ই–মুহাম্মদ কী

মাওলানা মাসুদ আজহার ১৯৯৯ সালে ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জইশ–ই–মুহাম্মদ (জেইএম) নামের সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। পাকিস্তান সংগঠনটিকে ২০০২ সালে নিষিদ্ধ করে, কারণ এটি এলইটির সঙ্গে ২০০১ সালে ভারতের সংসদে হামলার জন্য অভিযুক্ত ছিল। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কথা অনুযায়ী, আল–কায়েদা ও তালেবানের সঙ্গে এ সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা ছিল।

পাকিস্তান কি লস্কর–ই–তাইয়েবা ও অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সমর্থন করে

এলইটি ও অন্যান্য ইসলামপন্থী সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে পাকিস্তানের, বিশেষ করে দেশটির সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স)–এর সম্পর্ক জটিল ও অনেকাংশে অস্পষ্ট।

আগে ইসলামাবাদ ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও আফগানিস্তানে প্রক্সি যোদ্ধা হিসেবে সশস্ত্র ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোকে সমর্থন করেছে, কিন্তু বর্তমানে এ সম্পর্ক অনেকটাই অস্পষ্ট হয়ে পড়েছে।

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, আশি ও নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান এমন সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে সমর্থন দেওয়াকে কৌশলগত সফলতা মনে করত, বিশেষ করে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত বাহিনীকে হটানোর পটভূমিতে।

শুরু থেকেই এলইটি পাকিস্তানের আস্থায় ছিল। কারণ, আফগানিস্তানে যুদ্ধ ও ভারতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, দুটিই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কৌশলগত উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর লক্ষ্য, পশ্চিমে আফগানিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ও পূর্বে ভারতকে চাপে রাখা। —অ্যাশলি টেলিস, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক

২০১২ সালে ‘কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর পিস’–এ এক প্রবন্ধে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যাশলি টেলিস লেখেন, ‘শুরু থেকেই এলইটি পাকিস্তানের আস্থায় ছিল, কারণ আফগানিস্তানে যুদ্ধ ও ভারতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম—দুটিই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কৌশলগত উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর লক্ষ্য, পশ্চিমে আফগানিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ও পূর্বে ভারতকে চাপে রাখা। দুই দশকের বেশি সময় এলইটির সঙ্গে আইএস গোপনে হলেও দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থায়ন ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে।’

এলইটির প্রধান মুম্বাই হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তবু হামলার আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা মার্কিন–পাকিস্তানি নাগরিক ও এলইটির সদস্য ডেভিড হেডলি স্বীকার করেছেন যে মুম্বাই হামলার বিষয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুনবিশ্বের প্রথম ‘ড্রোন যুদ্ধ’: ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে নতুন অধ্যায়ের উন্মোচন ঘটাল৬ ঘণ্টা আগে

তবে ওই হামলায় কতটা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছিল, তা পরিষ্কার নয়। এলইটি কি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করেছে, নাকি সীমিত পর্যায়ে হলেও অনুমতি পেয়েছিল, সে বিষয়ে দ্বিধা রয়েছে।

যদিও পাকিস্তান ভারতের দাবিকে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে, তথাপি এলইটির সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলোর প্রতি তার সহনশীলতা, যেমন জামাত–উদ–দাওয়া এর মাধ্যমে এলইটির দাতব্য সংগঠন হিসেবে আবারও আত্মপ্রকাশ, পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতি ও অস্বীকৃতিকে সন্দেহের মধ্যে ফেলে।

লস্কর–ই–তাইয়েবা ও জইশ–ই–মুহাম্মদ, দুই সংগঠনের প্রতি পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক সমর্থনের মাত্রা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, সাম্প্রতিক অস্থিরতা দেশটির সেনাবাহিনী ও আইএসআইয়ের কিছু সদস্যকে হয়তো এমন সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত করেছে। যেমনটা আগে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকি অনুভব করলে দেখা গেছে।

অস্ট্রেলিয়ার সরকার বলেছে, লস্কর–ই–তাইয়েবা ‘জামাত–উদ–দাওয়া’ নামে কার্যক্রম চালিয়েছে। ২০০২ সালে পাকিস্তান এলইটিকে নিষিদ্ধ করার ঠিক আগে ‘জামাত–উদ–দাওয়া’ প্রতিষ্ঠিত হয় হাফিজ সাঈদের মাধ্যমে একটি দাতব্য সংস্থা হিসেবে।

২০১৮ সালে মুম্বাই হামলার দশম বার্ষিকীতে ‘সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি’র স্টিফেন ট্যাঙ্কেল বলেন, পাকিস্তান এলইটি ও জেইউডির মধ্যে বাহ্যিক বিভাজন দেখায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ এগুলোকে একই ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।

আরও পড়ুনভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তের প্রশংসায় বিশ্বনেতারা১ ঘণ্টা আগেবর্তমান পরিস্থিতি

লস্কর–ই–তাইয়েবা ও জইশ–ই–মুহাম্মদ, দুই সংগঠনের প্রতি পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক সমর্থনের মাত্রা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, সাম্প্রতিক অস্থিরতা দেশটির সেনাবাহিনী ও আইএসআইয়ের কিছু সদস্যকে হয়তো এমন সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত করেছে। যেমনটা আগে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকি অনুভব করলে দেখা গেছে।

তবে ট্যাঙ্কেল আরও জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি এক প্রবণতার দিকে ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের ওপর ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখেন, এমন পর্যবেক্ষকেরা স্বীকার করেছেন, লস্কর–ই–তাইয়েবা শুধু পাকিস্তানের ভেতর হামলা চালানো থেকে বিরত থাকে, তা–ই নয়। তারা এমন গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধেও কাজ করে, যারা রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।’

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘লস্কর–ই–তাইয়েবা বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও অন্য অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও কখনো তাদের নির্মূল করতেও সহায়তা করেছে। এমনকি রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে একটি আদর্শিক ও ধর্মতাত্ত্বিক প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করেছে সংগঠনটি।’

আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতি ‘ভঙ্গ করা’ নিয়ে ভারত–পাকিস্তান বাহাস, শ্রীনগরে বিস্ফোরণের শব্দ৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সশস ত র স গঠন আফগ ন স ত ন সশস ত র স গ স ব ক র কর স গঠনগ ল র লক ষ য স গঠন র স গঠনট ইসল ম র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে নানাভাবে দোষারোপ করছে ছাত্র সংগঠনগুলো। সরাসরি নাম উল্লেখ না করে কেউ কাউকে কিছু না বললেও ছাড় দিতে নারাজ তারা।

গত ৩০ অক্টোবর জবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নেতারা জকসু নির্বাচনের বিধিমালা প্রণয়নে প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে বলে অভিযোগ করে।

আরো পড়ুন:

জবি প্রশাসনের কাছে ২০ দাবি জানাল ইউটিএল

পিএইচডি গবেষকদের জন্য বৃত্তি চালু করা হবে: জবি উপাচার্য

রবিবার (২ নভেম্বর) ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জকসু নির্বাচন পেছাতে নির্বাচন কমিশন ‘বিশেষ উদ্দেশ্যে’ কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন জবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম।

পরে সন্ধ্যায় একই স্থানে ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি অভিযোগ করে, জকসু নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাচ্ছে এবং আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাচ্ছে।

রবিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটি বিশেষ কারো ইশারায়, বাইরের প্রেসক্রিপশনে নির্বাচনের খসড়া প্রস্তুত করেছে। আমাদের দাবি, ২৭ নভেম্বরই শিক্ষার্থীদের নিয়ে জকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করা। নির্বাচন কমিশনের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশ। তারা ২৭ নভেম্বর নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি আগেই জানতো। কিন্তু তবু ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে খসড়া রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এতে একটি গ্রুপকে সুবিধা দিয়ে অন্যদের ভোটাধিকার হরণের চেষ্টা চলছে।”

তিনি বলেন, “প্রশাসন ও কমিশন আগে জানিয়েছিল, আইন প্রণয়নের পরই প্রস্তুতি কমিটি গঠনের কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা নতুনভাবে সব কাজ করতে চাচ্ছে—যেন নির্বাচন বিলম্বিত হয়। আলোচনার টেবিলে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে।”

তিনি আরো বলেন, “একটা পক্ষের সব কথা শোনা হচ্ছে। কিন্তু অন্যদের মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না। এতে স্পষ্ট, নির্বাচন পেছানোর মানসিকতা নিয়েই তারা আলোচনায় বসছে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষা বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবসের কর্মসূচির কারণে সে সময় নির্বাচন গ্রহণ করা সম্ভব নয়।”

“এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ১৬ ডিসেম্বরের পর ভোট আয়োজন করতে চাইছে। কিন্তু তখন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বা ছুটি শুরু হলে জকসু নির্বাচন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে,” যুক্ত করেন শিবির সভাপতি।

আপ বাংলাদেশের সঙ্গে প্যানল ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা ইনক্লুসিভ প্যানেল করতে চাচ্ছি। আমাদের প্যানেলে কারা থাকবেন সেটা এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। শিগগিরই এ বিষয়ে জানতে পারবেন।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল আলিম আরিফ, অফিস সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল ও বাইতুল মাল সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইছে, আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি।

অপরদিকে, ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি সদস্য সচিব শাহিন মিয়া বলেন, “একটি সংগঠন নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে, আরেকটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে দিতে চাইছে। আমরা চাই এমন একটি নির্বাচন, যেখানে শিক্ষার্থীরা অবাধভাবে অংশ নিতে পারবে এবং সবাই সমান সুযোগ পাবে। নির্বাচন কমিশন যেন প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি গ্রহণযোগ্য সময়সূচি ঘোষণা করে এবং কোনো পক্ষের প্রভাবে না পড়ে।”

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের যে সাহসী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখানোর কথা, আজকের মতবিনিময় সভায় আমরা তা দেখতে পাইনি।”

জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা সব সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। আমরা চাই না যে ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে হঠাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অন্যদিকে, ছাত্রশিবির দ্রুত নির্বাচন চায়, আর ছাত্রদল সেটি পেছাতে চায়—যা নির্বাচনী পরিবেশকে জটিল করে তুলছে। জাতীয় নির্বাচন ও জকসু নির্বাচন একই সময়ে পড়লে তা প্রশাসনিকভাবেও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।”

এর আগে, গত ৩০ অক্টোবর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেছিলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল প্রশাসন একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত জকসু নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে, যা হতাশাজনক।”

তিনি বলেছিলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবার জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা চাই এটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হোক—যাতে জকসু শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচনের মুক্ত মঞ্চে পরিণত হয়, কোনো দলীয় প্রভাবের শিকার না হয়।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর