শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেছেন, আমরা গত ১৫ বছরে নিজেদের যুক্তিসঙ্গত বিষয়গুলোকে নিয়ে নিজেদের দাবি তুলে ধরতে পারিনি। তাই সবাই মনে করছে রাজনৈতিক সরকার আসার আগেই তাদের দাবি দাওয়া পূরণ করে নিতে হবে। কিন্তু পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব না। আমাদের সম্পদ সীমিত। তাই সময় নিয়ে হলেও পরিবর্তনগুলো রাজনৈতিক সরকারকেই করতে হবে। 

রোববার সিনেট ভবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, অবশ্যই তোমরা বিশাল কিছু অর্জন করেছ। কিন্তু তোমাদের সঙ্গে সাধারণ জনগণ-শ্রমজীবী মানুষ তারাও এই অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। তাদের সমর্থন ছাড়া তোমরা এটা করতে পারতে না। তোমাদের এই সংগ্রামে বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠী এগিয়ে এসেছিল।

উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, শিক্ষকের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। তোমাদের হতাশা থাকতে পারে, তোমাদের কিছু দাবি দাওয়া থাকতে পারে কিন্তু তার জন্য জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা যাবে না।

শিক্ষক রাজনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষকদের যে ভূমিকা হবার কথা ছিল সেই ভূমিকা থেকে আমরা বিচ্যুত হয়েছি। আমাদের শিক্ষকদের যে মূল দায়িত্ব সেই দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে। আমাদের অবশ্যই রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকবে, রাজনৈতিক দলের সমর্থন থাকবে। কিন্তু এ রাজনৈতিক দলের নেতিবাচক প্রভাবগুলো আমরা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর ফেলতে পারি না।

প্রধান আলোচক অধ্যাপক এ কে এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে জীবনের ৬২ বছর আমার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেটেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৫৩ সালের এইদিনে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল আজকের দিন হলো সেই সম্ভাবনার মহীরূপ। আজকের এই দিনে আমরা সেলিব্রেশন করবো ঠিকই, একইসঙ্গে জ্ঞানও আহরণ করব। ঠিক যেসব কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি হয়েছিল, সে বিষয়ে জানবো এবং সেই জ্ঞানকে আমরা ছড়িয়ে দেবো।

আলোচনা সভায় উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান প্রমুখ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক ষ উপদ ষ ট ব শ বব দ য র জন ত ক উপদ ষ ট আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় শরৎ উৎসব উদ্‌যাপন

নানা আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শরৎ উৎসব-১৪৩২ উদ্‌যাপিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় এ অনুষ্ঠান হয়। চারুকলা অনুষদের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত, নৃত্যকলা, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহযোগিতায় এ উৎসব হয়।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখের সভাপতিত্বে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শরৎ উৎসব। পরে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা। তিনি বলেন, ‘চারুকলার প্রাঙ্গণে যখনই আমরা আসি, যেকোনো উৎসবে বা অনুষ্ঠানে আমরা একত্র হই, তখন সব সময় একধরনের ভিন্ন আবহ সৃষ্টি হয়। এখানে আমরা আমাদের লোকজ ও বাঙালি সাহিত্য-সংস্কৃতির একটি সুন্দর প্রকাশ দেখতে পাই।’

অধ্যাপক সায়মা হক আরও বলেন, ‘আজকের শরৎ উৎসবের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এ ধরনের উৎসব মানুষে-মানুষে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে। প্রতিযোগিতামূলক ও ব্যস্ত জীবনে আমরা প্রায়ই একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাই। এই উৎসবগুলো আমাদের পুনরায় একত্র করে, পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।’
এরপর চারুকলা অনুষদ, সংগীত, নৃত্যকলা এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে গান, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তি করা হয়।

সাংস্কৃতিক আয়োজনের অংশ হিসেবে চিত্রকলা প্রদর্শনী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী তিনজন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের ফারিয়া নওশিন আহমেদ ও সাজ্জাদুল ইসলাম এবং গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের ফরহাদ আলী।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘আমাদের বৈচিত্র্যময় ঋতুপ্রবাহ আমাদের মনোজগৎকে পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দুই এই চারুকলা অনুষদ। এখন দেখা যায়, ফাল্গুনে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমগ্র বাংলাদেশ ও বিশ্বের বাঙালিরা এই উৎসব উদ্‌যাপন করে।

চারুকলা অনুষদ ঐতিহ্যগতভাবেই সমৃদ্ধ। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এই তিনের সমন্বিত ধারাকে আমরা সব সময়ই স্বাগত জানাই। আমাদের চিত্রকলা যেমন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে, তেমনি সংগীত, নৃত্য ও নাটকেরও একই দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃষ্টিশীল চেতনা রয়েছে।’
শরৎ উৎসব নিজস্ব উৎসব উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা বহু বছর ধরে দেখেছি চারুকলার প্রাঙ্গণকে অনেক সময় বিভিন্ন মানুষের খেয়ালখুশিমতো ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, এখন আর সেটা হতে দেওয়া যাবে না এবং আমরা সেটি হতে দিচ্ছি না।’

সাদা দলের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম সরকার দেশের ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে নিয়মিতভাবে উদ্‌যাপনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্কা গোপ ও নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান তামান্না রহমান।

আরও পড়ুন‘অনেকের আপত্তিতে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শরৎ উৎসব স্থগিত, বাতিল নয়: চারুকলার ডিন  ১০ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ