রাজধানীতে শিশু গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ, গৃহকর্তা গ্রেপ্তার
Published: 11th, May 2025 GMT
রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার এক শিশু গৃহকর্মীকে (১২) ধর্ষণের অভিযোগে মাসুদ রানা (৪৫) নামে এক গৃহকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার (১১ মে) দুপুরে ভিকটিম গৃহকর্মীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে শনিবার রাতে মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
আরো পড়ুন:
মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ
কিশোরগঞ্জে লিচুর বিচি গলায় আটকে শিশুর মৃত্যু
তিনি বলেন, “খিলগাঁও থানার দক্ষিণ বনশ্রীর একটি বাসায় ১২ বছর বয়সী গৃহকর্মীকে ধর্ষণের ঘটনায় একটি মামলা করেছে ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা। এ ঘটনায় ওই বাসায় গৃহকর্তা মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে এবং গ্রেপ্তার মাসুদকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
ওসি আরো বলেন, “এ মাসের শুরুতে মাসুদ নামে ওই ব্যক্তির বাসায় কাজ করতে যায় শিশুটি। গত ২ মে রাতে ওই শিশুকে ধর্ষণ করে। পরে বিষয়টি পরিবারকে জানালে শনিবার রাতে মামলা করে শিশুটির বাবা।”
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, তিনি পেশা একজন রিকশাচালক। তার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় মাসুদ রানা নামের ওই ব্যক্তির বাসায় মেয়েকে কাজে দেন। পরে শাহ আলম তার মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাইলে ভিকটিম গৃহকর্মী জানায় সেখানে আর কাজ করতে চায় না। এরপর তাকে বাসায় নিয়ে এলে সে খাওয়া দাওয়া করে না ঠিকমতো। এরপর পাশের এক প্রতিবেশীর কাছে সে জানায় ওই বাসার মাসুদ রানা তার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে।
এ ঘটনায় গৃহকর্তা মাসুদ রানার বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। এ মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর গ হকর ম ক গ হকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসিয়ে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে: শফিকুল আলম
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক খুনির বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এই বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেপে করা হবে। কেউ যেন বলতে না পারে, যে নিয়ম না মেনে অবিচার করা হয়েছে।
অতীতে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসিয়ে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে দাবি করে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা বিদেশি কনসাল্ট্যান্ট রেখেছি, যাতে কেউ না বলতে পারে যে না উনারা এসে একটা ক্যাঙারু কোর্ট সেটআপ করেছে। আপনারা জানেন আমাদের হিস্ট্রি আছে ক্যাঙারু কোর্ট করার। কতজনকে তাঁরা ফাঁসি দিয়েছেন। আমরা চাই না বাংলাদেশে এ ধরনের ক্যাঙারু কোর্ট। সময় নিচ্ছি একটু। আপনারা ধৈর্য ধরেন, প্রত্যেক খুনির বিচার হবে। কেউ বাদ যাবে না। এটা শহীদদের সঙ্গে আমাদের ওয়াদা।’
উল্লেখ্য, ক্যাঙারু কোর্ট হলো এমন আদালত বা বিচারব্যবস্থা, যেখানে প্রচলিত আইন ও বিচারব্যবস্থার নিয়মকানুনকে উপেক্ষা করা হয় বা সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে না। সাধারণত পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে দ্রুত বিচারকাজ পরিচালনা করে।
আজ রোববার সাভারের আশুলিয়ায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শফিকুল আলম এসব কথা বলেন। জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানের আজ ছিল সমাপনী অনুষ্ঠান। সেখানে জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে স্মরণ করা হয়।
ন্যায়বিচার করতে হলে সত্যিকার অর্থে সময় দিতে হবে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৪টি বড় মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, ২৭টি মামলার তদন্ত চলছে। ১৮টি মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয়েছে। ন্যায়বিচার করতে হলে সত্যিকার অর্থে একটু সময় দিতে হবে। আমরা তাড়াহুড়ো করে যদি অন্যায়-অবিচার করি, তাহলে সেটি নিয়ে বাইরে কথা ওঠবে, যে উনারা জোর করে উনাকে (শেখ হাসিনা) ফাঁসি দিচ্ছেন। জোর করে ওনার প্রতি অন্যায় চাপিয়ে দিচ্ছে। আমরা এটা চাই না।’
বাংলাদেশ থেকে রাজতন্ত্রের ইতি টানতে জুলাই যোদ্ধারা শহীদ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা শেখ পরিবারের দাস-দাসী ছিলাম। সেখান থেকে আমাদেরকে মুক্ত করে একটা ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি (গণতান্ত্রিক দেশ) করার জন্য তাঁরা শহীদ হয়েছেন, আত্মদান করেছেন। আমরা সেই জায়গায় যেতে চাই।’
শফিকুল আলম বলেন, জুলাই যোদ্ধারা ভোটের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য শহীদ হয়েছেন। তিনি সবাইকে আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর হবে।
আজকের অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি ও জুলাই যোদ্ধা আবু সাদেক কায়েম। তিনি বলেন, এক বছর পরও বিপ্লবের প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়া, কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া ধীরগতির। এখনো শহীদ পরিবারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি, পুনর্বাসন ও যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘যাঁদের রক্তে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে—এটি রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক। আহত ও পঙ্গুদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।’ পাশাপাশি তিনি খুনি হাসিনার সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মতিউর রহমান আকন্দ।
জুলাই অভ্যুত্থানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ছাত্র শাকিল হোসেন পারভেজ ও ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহ শহীদ হন। আজ শহীদ শাকিলের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে চত্বর উদ্বোধনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। চত্বরটি উদ্বোধন করেন শাকিলের বাবা বেলায়েত হোসেন। এরপর আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর নামে লাইব্রেরি উদ্বোধন করবেন তাঁর মা আসিয়া খাতুন। দুপুর পৌনে ১২টায় দুই শহীদের স্মৃতিতে বৃক্ষরোপণ করা হয়।
১৮ জুলাই লক্ষ্মীপুরে শহীদ শাকিল হোসেন পারভেজের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে পক্ষকালব্যাপী এ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর ছিল টাঙ্গাইলে শহীদ আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর কবর জিয়ারত, শহীদ ও আহতদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পবিত্র কোরআন বিতরণ, জুলাই বিপ্লবে নারীদের অবদান শীর্ষক সেমিনার, পোস্টার ও রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রক্তদান কর্মসূচি এবং পৃথক ইন্ডোর গেমস প্রতিযোগিতা।