গর্ভপাত আইনের কারণে কেবল যন্ত্রের সাহায্যে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে ‘ব্রেন ডেড’ অন্তঃসত্ত্বা নারীকে
Published: 17th, May 2025 GMT
বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া অ্যাড্রিয়ানা স্মিথকে হাসপাতালে আনার পর পরীক্ষায় তাঁর মস্তিষ্কে একাধিক ‘ব্লাড-কল্ট’ ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা ৩০ বছর বয়সী এই নারীকে ‘ব্রেন ডেড’ ঘোষণা করেছেন। তারপর তিন মাস পেরিয়ে গেছে। লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে অন্তঃসত্ত্বা অ্যাড্রিয়ানাকে।
জর্জিয়ায় ছয় সপ্তাহ পর সব ধরনের গর্ভপাত নিষিদ্ধ। অ্যাড্রিয়ানার মা এপ্রিল নিউকির্ক বলেন, তাঁদের পরিবারের মতামত না নিয়েই তাঁর মেয়ে অ্যাড্রিয়ানা স্মিথকে জীবিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডব্লিউএক্সআইএ-টিভিকে তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আমাদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল।’
অ্যাড্রিয়ানার কী হয়েছিল—তা জানাতে গিয়ে তাঁর মা নিউকির্ক বলেন, তাঁর মেয়ে একজন নিবন্ধিত নার্স। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচণ্ড মাথাব্যথা নিয়ে অ্যাড্রিয়ানা হাসপাতালে যান। প্রাথমিকভাবে তাঁকে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সে সময় তিনি ৯ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা।
পরদিন সকালে অ্যাড্রিয়ানা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি যে হাসপাতালে কাজ করেন, সেখানেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তাঁর মস্তিষ্কে একাধিক স্থানে জমাট রক্ত (ব্লাড–কল্ট) দেখতে পান। চিকিৎসায় কোনো উন্নতি না হওয়ায় অ্যাড্রিয়ানাকে ‘ব্রেন ডেড’ ঘোষণা করা হয়।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচণ্ড মাথাব্যথা নিয়ে অ্যাড্রিয়ানা হাসপাতালে যান। প্রাথমিকভাবে তাঁকে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সে সময় তিনি ৯ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা।তবে জর্জিয়ায় অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ছয় সপ্তাহ পর গর্ভপাতসংক্রান্ত সব ধরনের চিকিৎসা নিষিদ্ধ, তাই ‘হার্টবিট’ আইনের ব্যত্যয় ঘটতে পারে আশঙ্কায় চিকিৎসকেরা অ্যাড্রিয়ানার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কারণ, অ্যাড্রিয়ানা ৯ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা।
তার পর থেকে অ্যাড্রিয়ানা লাইফ সাপোর্টে আছেন এবং তিনি এখন ২১ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা।
নিউকির্ক বলেন, ‘আমি এটা বলছি না যে আমরা তাঁর গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিতাম। আমি বলতে চাইছি, আমাদের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত ছিল।’
অ্যাড্রিয়ানাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে, যেন তাঁর গর্ভে থাকা শিশুটি পূর্ণ মেয়াদে পৌঁছাতে পারে। যদিও চিকিৎসকেরা নিশ্চিত নন যে এই গর্ভাবস্থা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে কি না বা কোনো স্বাস্থ্যগত জটিলতা ছাড়াই এটি শেষ হবে কি না।
নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা নীতিশাস্ত্র ও প্রজনন অধিকার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কেটি ওয়াটসন বলেন, অ্যাড্রিয়ানার মতো পরিস্থিতির ক্ষেত্রে গর্ভপাত আইন প্রযোজ্য নয়।
‘আমি এটা বলছি না যে আমরা তাঁর গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিতাম, আমি বলতে চাইছি আমাদের সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত ছিল।’ এপ্রিল নিউকির্ক, অ্যাড্রিয়ানা স্মিথের মাগতকাল শুক্রবার এএফপিকে কেটি ওয়াটসন বলেন, ‘জর্জিয়ার গর্ভপাতসংক্রান্ত আইন ব্রেন ডেড কোনো ব্যক্তির শরীর থেকে ভেন্টিলেশন সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে একেবারেই সম্পর্কিত নয়। এমনকি মৃত্যুর সময় যদি সেই ব্যক্তি অন্তঃসত্ত্বা থাকেন, তবু এই বিষয়ে আইনানুযায়ী কিছু বলা নেই।’
অ্যাড্রিয়ানার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যা বলেছে বলে তাঁর পরিবার জানিয়েছে, তা যদি সঠিক হয়, তবে জর্জিয়ার গর্ভপাত আইন সম্পর্কে হাসপাতাল থেকে একটি আশ্চর্যজনক ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলেও মনে করেন কেটি ওয়াটসন।
ওয়াটসন বলেন, ‘হাসপাতালের এই পদক্ষেপ আইনি দায়বদ্ধতার আশঙ্কা থেকেই নেওয়া হয়ে থাকতে পারে, যা এই ধরনের গর্ভপাতবিরোধী আইন নিয়ে ভয়ের একটি প্রভাব।’
জর্জিয়ার এমোরি হেলথ কেয়ারের একটি শাখায় অ্যাড্রিয়ানার চিকিৎসা চলছে। এএফপির পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু সাড়া মেলেনি।
এই ঘটনা ডেমোক্র্যাট ও গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া উসকে দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে জর্জিয়ার ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওমেন নিকিমা উইলিয়ামস বলেন, ‘নিজ পরিবার, ভবিষ্যৎ এবং জীবনের জন্য কী সবচেয়ে ভালো, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সবারই থাকা উচিত।’
‘অ্যাড্রিয়ানার মতো পরিস্থিতির ক্ষেত্রে গর্ভপাত আইন প্রযোজ্য নয়।’ কেটি ওয়াটসন, নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা নীতিশাস্ত্র ও প্রজনন অধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞউইলিয়ামসের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান কেম্প মানুষকে অকল্পনীয় যন্ত্রণার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। ট্রাম্প, কেম্প—দুজনই রিপাবলিকান নেতা।
সিস্টারসং-এর নির্বাহী পরিচালক মনিকা সিম্পসন বলেছেন, ‘যে অঙ্গরাজ্যে প্রজননসেবা সীমিত ও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্তঃসত্ত্বা হওয়া প্রাণঘাতী হতে পারে।’
আরও পড়ুনঅবৈধ গর্ভপাতের দায়ে তরুণী ও মায়ের কারাদণ্ড২৩ জুলাই ২০২৩সিস্টারসং নারী অধিকারকেন্দ্রিক প্রজনন ন্যায়বিচার নিয়ে কাজ করে।
২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে ফেডারেল সুরক্ষা প্রত্যাহার করার পর থেকে জর্জিয়াসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য কঠোর গর্ভপাতবিরোধী আইন গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুনগর্ভপাত আইন বাতিলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ২৬ জুন ২০২২আরও পড়ুনট্রাম্প জিতলে যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের গর্ভপাতের অধিকারের কী হবে৩১ অক্টোবর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।
পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি এখন সারানো হয়েছে।
ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।
ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে। পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’
ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’
ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে