বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া অ্যাড্রিয়ানা স্মিথকে হাসপাতালে আনার পর পরীক্ষায় তাঁর মস্তিষ্কে একাধিক ‘ব্লাড-কল্ট’ ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা ৩০ বছর বয়সী এই নারীকে ‘ব্রেন ডেড’ ঘোষণা করেছেন। তারপর তিন মাস পেরিয়ে গেছে। লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে অন্তঃসত্ত্বা অ্যাড্রিয়ানাকে।

জর্জিয়ায় ছয় সপ্তাহ পর সব ধরনের গর্ভপাত নিষিদ্ধ। অ্যাড্রিয়ানার মা এপ্রিল নিউকির্ক বলেন, তাঁদের পরিবারের মতামত না নিয়েই তাঁর মেয়ে অ্যাড্রিয়ানা স্মিথকে জীবিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডব্লিউএক্সআইএ-টিভিকে তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আমাদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল।’

অ্যাড্রিয়ানার কী হয়েছিল—তা জানাতে গিয়ে তাঁর মা নিউকির্ক বলেন, তাঁর মেয়ে একজন নিবন্ধিত নার্স। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচণ্ড মাথাব্যথা নিয়ে অ্যাড্রিয়ানা হাসপাতালে যান। প্রাথমিকভাবে তাঁকে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সে সময় তিনি ৯ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা।

পরদিন সকালে অ্যাড্রিয়ানা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি যে হাসপাতালে কাজ করেন, সেখানেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তাঁর মস্তিষ্কে একাধিক স্থানে জমাট রক্ত (ব্লাড–কল্ট) দেখতে পান। চিকিৎসায় কোনো উন্নতি না হওয়ায় অ্যাড্রিয়ানাকে ‘ব্রেন ডেড’ ঘোষণা করা হয়।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচণ্ড মাথাব্যথা নিয়ে অ্যাড্রিয়ানা হাসপাতালে যান। প্রাথমিকভাবে তাঁকে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সে সময় তিনি ৯ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা।

তবে জর্জিয়ায় অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ছয় সপ্তাহ পর গর্ভপাতসংক্রান্ত সব ধরনের চিকিৎসা নিষিদ্ধ, তাই ‘হার্টবিট’ আইনের ব্যত্যয় ঘটতে পারে আশঙ্কায় চিকিৎসকেরা অ্যাড্রিয়ানার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কারণ, অ্যাড্রিয়ানা ৯ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা।

তার পর থেকে অ্যাড্রিয়ানা লাইফ সাপোর্টে আছেন এবং তিনি এখন ২১ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা।

নিউকির্ক বলেন, ‘আমি এটা বলছি না যে আমরা তাঁর গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিতাম। আমি বলতে চাইছি, আমাদের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত ছিল।’

অ্যাড্রিয়ানাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে, যেন তাঁর গর্ভে থাকা শিশুটি পূর্ণ মেয়াদে পৌঁছাতে পারে। যদিও চিকিৎসকেরা নিশ্চিত নন যে এই গর্ভাবস্থা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে কি না বা কোনো স্বাস্থ্যগত জটিলতা ছাড়াই এটি শেষ হবে কি না।

নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‍চিকিৎসা নীতিশাস্ত্র ও প্রজনন অধিকার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কেটি ওয়াটসন বলেন, অ্যাড্রিয়ানার মতো পরিস্থিতির ক্ষেত্রে গর্ভপাত আইন প্রযোজ্য নয়।

‘আমি এটা বলছি না যে আমরা তাঁর গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিতাম, আমি বলতে চাইছি আমাদের সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত ছিল।’ এপ্রিল নিউকির্ক, অ্যাড্রিয়ানা স্মিথের মা

গতকাল শুক্রবার এএফপিকে কেটি ওয়াটসন বলেন, ‘জর্জিয়ার গর্ভপাতসংক্রান্ত আইন ব্রেন ডেড কোনো ব্যক্তির শরীর থেকে ভেন্টিলেশন সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে একেবারেই সম্পর্কিত নয়। এমনকি মৃত্যুর সময় যদি সেই ব্যক্তি অন্তঃসত্ত্বা থাকেন, তবু এই বিষয়ে আইনানুযায়ী কিছু বলা নেই।’

অ্যাড্রিয়ানার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যা বলেছে বলে তাঁর পরিবার জানিয়েছে, তা যদি সঠিক হয়, তবে জর্জিয়ার গর্ভপাত আইন সম্পর্কে হাসপাতাল থেকে একটি আশ্চর্যজনক ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলেও মনে করেন কেটি ওয়াটসন।
ওয়াটসন বলেন, ‘হাসপাতালের এই পদক্ষেপ আইনি দায়বদ্ধতার আশঙ্কা থেকেই নেওয়া হয়ে থাকতে পারে, যা এই ধরনের গর্ভপাতবিরোধী আইন নিয়ে ভয়ের একটি প্রভাব।’

অ্যাড্রিয়ানাকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে, যেন তাঁর গর্ভে থাকা শিশুটি পূর্ণ মেয়াদে পৌঁছাতে পারে। যদিও চিকিৎসকেরা নিশ্চিত নন যে এই গর্ভাবস্থা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে কি না বা কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা ছাড়াই এটি শেষ হবে।

জর্জিয়ার এমোরি হেলথ কেয়ারের একটি শাখায় অ্যাড্রিয়ানার চিকিৎসা চলছে। এএফপির পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু সাড়া মেলেনি।

এই ঘটনা ডেমোক্র্যাট ও গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া উসকে দিয়েছে।

এক বিবৃতিতে জর্জিয়ার ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওমেন নিকিমা উইলিয়ামস বলেন, ‘নিজ পরিবার, ভবিষ্যৎ এবং জীবনের জন্য কী সবচেয়ে ভালো, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সবারই থাকা উচিত।’

‘অ্যাড্রিয়ানার মতো পরিস্থিতির ক্ষেত্রে গর্ভপাত আইন প্রযোজ্য নয়।’ কেটি ওয়াটসন, নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‍চিকিৎসা নীতিশাস্ত্র ও প্রজনন অধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ

উইলিয়ামসের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান কেম্প মানুষকে অকল্পনীয় যন্ত্রণার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। ট্রাম্প, কেম্প—দুজনই রিপাবলিকান নেতা।

সিস্টারসং-এর নির্বাহী পরিচালক মনিকা সিম্পসন বলেছেন, ‘যে অঙ্গরাজ্যে প্রজননসেবা সীমিত ও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্তঃসত্ত্বা হওয়া প্রাণঘাতী হতে পারে।’

আরও পড়ুনঅবৈধ গর্ভপাতের দায়ে তরুণী ও মায়ের কারাদণ্ড২৩ জুলাই ২০২৩

সিস্টারসং নারী অধিকারকেন্দ্রিক প্রজনন ন্যায়বিচার নিয়ে কাজ করে।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে ফেডারেল সুরক্ষা প্রত্যাহার করার পর থেকে জর্জিয়াসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য কঠোর গর্ভপাতবিরোধী আইন গ্রহণ করেছে।

আরও পড়ুনগর্ভপাত আইন বাতিলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ২৬ জুন ২০২২আরও পড়ুনট্রাম্প জিতলে যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের গর্ভপাতের অধিকারের কী হবে৩১ অক্টোবর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র

এছাড়াও পড়ুন:

হালদায় এবার পরিপক্ব ডিমে ভর্তি মা মৃগেল মাছের মৃত্যু, শরীররে আঘাতের চিহ্ন

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদায় আবারও কার্পজাতীয় মা মাছ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা মাছটি মা মৃগেল বলে জানিয়েছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর। ময়নাতদন্তের পর মাছটিতে প্রচুর পরিমাণ পরিপক্ব ডিম দেখা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকা থেকে মাছটি উদ্ধার করেন নদীর স্বেচ্ছাসেবকেরা। মাছটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে স্বেচ্ছাসেবকেরা জানিয়েছেন।

উদ্ধার হওয়া মাছটির ওজন প্রায় ছয় কেজি বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। একই স্থান থেকে গত ৪ মে ৫ কেজি ওজনের আরেকটি মরা মা কাতলা মাছ উদ্ধার করেছিলেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। এ ছাড়া গত বছরের জুন ও জুলাই মাসে ১২ দিনে ৬টি বড় মা মাছ ও ৩টি ডলফিন মরে ভেসে ওঠার ঘটনা ঘটেছিল।

রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, মৃত মা মাছটির মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারালো কিছু দিয়ে এটির মাথায় আঘাত করা হয়েছে। ৪ মে উদ্ধার হওয়া মা মাছটির গায়েও ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।

উদ্ধারের পর আজিমের ঘাট এলাকায় মাছটির সুরতহাল করার পর মাটি চাপা দেওয়া হয় বলে জানান রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মৃত মা মাছটির পেটে প্রায় পৌনে এক কেজি ডিম ছিল। এই পরিমাণ ডিম থেকে দেড় লাখ রেণু উৎপন্ন হতে পারত।

মৎস্য অধিদপ্তর ও হালদার স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  বেশ কিছু দিন ধরে নদীতে একের পর এক মরা মা মাছ ভেসে যেতে দেখা যাচ্ছে। তবে ভেসে যাওয়া সব মা মাছ উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। কারণ, সব সময় স্বেচ্ছাসেবীরা থাকেন না। প্রায় সময় মৃত মাছ জোয়ারে ভেসে চলে যায়। হালদার মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হয়েছে। এ ছাড়া নদীর হাটহাজারীর রাম দাশ মুন্সিরহাট অংশে একটি নৌ পুলিশ ফাঁড়িও রয়েছে। তবে এরপরও মা মাছের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় লোকজন জানান নৌ পুলিশের তেমন তৎপরতা না থাকায় নদীতে জাল পাতা, মাছ শিকারসহ নানা অবৈধ কার্যক্রম চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাশ মুন্সিরহাটের হালদা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর সপ্তাহে কয়েকবার অভিযান চালায়। তারা নিরাপত্তা দিয়ে সহযোগিতা করেন। সিসিটিভি ফুটেজে কোনো অবৈধ কার্যক্রম চোখে পড়লে তাঁরা নদীতে নামেন। তবে শতভাগ হালদাকে সুরক্ষিত রাখতে গেলে স্পিডবোটের জালানি বরাদ্দ এবং জনবলে বাড়াতে হবে।

এদিকে হালদায় প্রজনন মৌসুমের শুরু হতে চলল গত প্রায় দেড় মাস। এর মধ্যে নমুনা ডিমও ছাড়েনি মা মাছেরা। তবে সরঞ্জাম নিয়ে কয়েক শ ডিম সংগ্রহকারী নদীতে দিন রাত অবস্থান করছেন মা মাছেরা কখন ডিম ছাড়ে সে অপেক্ষায় এর ভেতর নদীতে মা মাছ মরার এমন দুঃসংবাদে উদ্বিগ্ন নদী গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, প্রজনন মৌসুমের প্রায় এক মাস পার হয়ে গেল। এখনো নমুনা ডিমও ছাড়েনি মা মাছেরা। এর মধ্যে গত বছরের মতো একের পর এক মা মাছ মরা উদ্বেগের। কারণ, হালদার একেকটা মা মাছের ডিম থেকে কোটি টাকার মাছের উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রতিবছর।

হালদার ডিম সংগ্রহকারী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোশাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, নদীতে মা মাছ মরে ভেসে যেতে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। তবে সব মরা মাছ উদ্ধার করা যায় না। তাঁদের চোখে যেগুলো পড়ে সেগুলো তাঁরা উদ্ধার করে প্রশাসনকে জানান। এভাবে মা মাছ মরলে হালদায় ডিম ছাড়ার মাছই থাকবে কি না সেই সন্দেহ তাঁর।

নদী গবেষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এপ্রিল থেকে জুনের শেষ হালদার মা মাছের প্রজনন মৌসুম। এখন জো চলছে। জোতে মা মাছ ডিম ছাড়ার পরিবেশ পায়। বজ্রসহ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল হলে পুরোদমে ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ। তবে এর মধ্যে ১০ দিনের ব্যবধানে ২টি মা মাছ মরে ভেসে ওঠা দুশ্চিন্তার বিষয়। গত বছর প্রজনন মৌসুমেও একের পর এক মা মাছ মরে ভেসে উঠেছিল নদীতে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাসিক নিয়ে অসচেতনতা এসডিজি অর্জনে বাধা
  • হালদায় এবার পরিপক্ব ডিমে ভর্তি মা মৃগেল মাছের মৃত্যু, শরীররে আঘাতের চিহ্ন