‘মানুষ যদি শেখ মুজিবকে সম্মান জানাতে চায়, সেটা তাদের অধিকার’
Published: 17th, August 2025 GMT
চব্বিশের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ঘিরে তৈরি হওয়া মতপার্থক্য এখনো দূর হয়নি। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আদর্শিক দ্বন্দ্ব আরো গাঢ় হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলছে জোর চর্চা।
এ হাওয়া লেগেছে দেশের শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের মাঝেও। এ নিয়ে নিজের জোরোলো অবস্থান জানান দিলেন গণঅভ্যত্থানে অংশ নেওয়া অন্যতম অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন।
রবিবার (১৭ আগস্ট) বাঁধন তার ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে এই অভিনেত্রী বলেন, “মানুষের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? শেখ হাসিনার মতো আচরণ করার চেষ্টা করবেন না। তার কী পরিণতি হয়েছে, তা আপনি দেখেছেন। তার পতনের পর ভেবেছিলাম মানুষ অন্তত একটা শিক্ষা নেবে। কিন্তু না, ঔদ্ধত্য এখনো থামেনি!”
আরো পড়ুন:
‘মুজিব’ সিনেমা থেকে বাদ পড়ে হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন বাঁধন
৫ আগস্ট চিরদিনের জন্য আমার স্মৃতিতে খোদাই হয়ে গেছে: বাঁধন
১৫ আগস্ট উপলক্ষে শোবিজ অঙ্গনের অনেক তারকা শ্রদ্ধা জানিয়েছে। এ নিয়েও চর্চা কম হয়নি। ইঙ্গিতপূর্ণভাবে এ বিষয়ে বাঁধন বলেন, “মানুষ কাকে সমর্থন করবে বা করবে না, সেটা ঠিক করার আপনি কে? এটা একান্তই তাদের নিজের ব্যাপার, মানুষকে বাধ্য করা আপনার কাজ না। মানুষের হৃদয় আছে, তারা যদি শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মান জানাতে চায়, সেটা তাদের অধিকার, আপনি সেটা নির্ধারণ করার কেউ নন। শুধু আপনার মতের সঙ্গে মিলছে না বলে, মানুষকে খারাপ বানানোর চেষ্টা বন্ধ করুন।”
টাকার বিনিময়ে শোবিজ অঙ্গনের বেশ কজন তারকা শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এমন অভিযোগ এনে কে বা কারা ব্যাংক স্টেটমেন্টের একটি কপি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে বাঁধন বলেন, “এই ব্যাপারটা নিয়ে হাসি পায়। আপনারা এতটাই সস্তা যে সেটা খুবই লজ্জাজনক। প্রথমে গুজব রটে, আমি জুলাই বিদ্রোহের সময় ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ২০০ কোটি টাকা নিয়েছি। এখন আবার নতুন গুজব উড়ছে, আমরা শেখ মুজিব সম্পর্কে পোস্ট দেওয়ার জন্য মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়েছি! ২০০ কোটি থেকে ২০ হাজার— এটা সত্যি? এই সামান্য টাকার জন্য কেউ কি এমন ঝুঁকি নেয়? এটি একেবারেই সার্কাস।”
খানিকটা পরামর্শ দিয়ে বাঁধন বলেন, “একটি বিষয় ভালো করে বুঝে নেন, এখন আর মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। না মিথ্যা দিয়ে, না সস্তা গুজব দিয়ে, না ফাঁকা হুমকি দিয়ে। সময় বদলেছে। সোশ্যাল মিডিয়া আছে। বিশ্বায়ন হয়েছে। মানুষ এখন এসব নাটক খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারেন।”
মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার অনুশীলন থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বাঁধন বলেন, “সত্যিকারের একজন নেতা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে না, তারা অনুপ্রাণিত করেন। সত্যিকারের একজন নেতা কারো কণ্ঠরোধ করেন না—তারা শোনেন। সত্যিকারের একজন নেতা ভিত্তিহীন অপবাদ ছড়ান না—তারা বিশ্বাস গড়ে তোলেন। তাই আপনারা সেই ক্ষমতার ভ্রান্ত ধারনা থেকে বেরিয়ে আসেন। আপনি মানুষকে পুতুলের মতো নাড়াবেন, এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসেন। সেই সুতা তো অনেক আগেই ছিঁড়ে গেছে। ইতিহাস যতটা জোরে চড় মেরেছে, তার চেয়ে আরো বেশি জোরে থাপ্পড় মারার আগেই জেগে উঠুন।”
“সত্যিকারের একজন নেতা হোন। সত্যিকারের মানুষ হোন। না হলে আপনি শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আরেকটা ব্যর্থ কপি হিসেবেই ইতিহাসে থেকে যাবেন। বিশ্বাস করুন, আরেকটি ট্র্যাজেডি কেউ চায় না।” বলেন বাঁধন।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন বল ন র জন য আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
দিনাজপুরে মেতেছে বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা
দিনাজপুরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিজয়া দশমীতে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলা।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুর থেকে শহরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ও প্রতিমা বিসর্জন কেন্দ্রে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশু ও প্রবীণ সবাই অংশ নেন এই আনন্দঘন উৎসবে।
আরো পড়ুন:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন
বুড়িগঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন, সদরঘাটে ভক্তদের ঢল
শঙ্খধ্বনি, ঢাক-ঢোলের তালে প্রতিমার সামনে একে অপরের মুখে, কপালে ও গালে সিঁদুর লেপন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ভক্তরা। লাল রঙে রঙিন হয়ে ওঠে চারপাশ, সৃষ্টি হয় এক অনিন্দ্যসুন্দর পরিবেশ। সিঁদুর খেলাকে কেন্দ্র করে শহরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
দিনাজপুর শহরের বড় মণ্ডপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে একই দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতিমা বিসর্জনের আগে এভাবেই মা দুর্গাকে বিদায় জানান ভক্তরা।
পণ্ডিতদের মতে, বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা মূলত মা দুর্গাকে বিদায়ের আগে তাকে শুভকামনা ও আশীর্বাদ জানানোর একটি প্রতীকী রীতি। বিশেষত বিবাহিত নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে স্বামীর দীর্ঘায়ু ও পরিবারের মঙ্গল কামনা করেন।
দিনাজপুর শহরের রাজবাটি, কালীতলা, বড় মণ্ডপসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ছিল এই উৎসবের প্রাণবন্ত আয়োজন। ছোট-বড় সবাই লাল সিঁদুরে রঙিন হয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
শেষ বিকেলে ঢাক-ঢোলের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি শুরু হয়। দিনাজপুরে সিঁদুর খেলার এ উৎসব শুধু ধর্মীয় আবেগ নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণের এক রঙিন প্রকাশ।
স্থানীয় পূজারী সুবর্ণা রায় বলেন, “মা দুর্গাকে বিদায় জানাতে মন খারাপ লাগে। তবে সিঁদুর খেলা আনন্দের মধ্য দিয়ে সেই বিষাদকে কিছুটা কমিয়ে দেয়।”
অর্পিতা এক কলেজ ছাত্রী জানান, সারা বছর অপেক্ষা করি দুর্গাপূজার জন্য। আজকের দিনটা আবেগের, আবার আনন্দেরও। মা-কে বিদায় জানালেও সিঁদুর খেলায় মন ভরে যায়।
দিনাজপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, “সিঁদুর খেলা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এই খেলায় আমরা শুধু আনন্দই পাই না, বরং ঐক্যের বার্তাও ছড়িয়ে যায়।”
আরেক তরুণ ভক্ত রুবেল দেবনাথ বলেন, “সিঁদুর খেলা শুধু একটি আচার নয়, এটি আমাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও আনন্দ ভাগাভাগি করার এক বিশেষ উপলক্ষ।”
ঢাকা/মোসলেম/মেহেদী