বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনরত গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের আটটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় গিয়ে সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। 

বিবৃতিতে জানানো হয়, টিএনজেড শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও সার্ভিস বেনিফিট বিষয়ে শ্রম এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। টিএনজেড গ্রুপের ওয়াশিং প্লান্ট ও মহাখালীর ডিওএইচএসে মালিকের বাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনা আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। পাওনা পরিশোধের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে ঐকমত্য হওয়ায় শ্রম ভবন ঘেরাও কর্মসূচি শ্রমিক নেতারা প্রত্যাহার করবেন। টিএনজেড গ্রুপের মালিক বিদেশে থাকায় ইতোমধ্যে তাঁকে দেশে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া টিএনজেডের পরিচালক বা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের বিদেশ গমনেও দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। টিএনজেডের ডিরেক্টর ফিন্যান্স শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত সরকারের হেফাজতে থাকবেন।

এর আগে বকেয়া বেতনসহ নানা দাবিতে গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে বিজয়নগরে শ্রম ভবন থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি শুরু করেন টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা। কাকরাইল মসজিদসংলগ্ন মোড়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। শ্রমিকরা পরে রাস্তাতেই বসে পড়েন। এর পর দিনভর কাকরাইল মসজিদের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তারা। 
টিএনজেড গ্রুপের কয়েকশ শ্রমিক বকেয়া বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাসের দাবিতে ১১ দিন ধরে শ্রম ভবন অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছিলেন। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন আশুলিয়ার চেইন অ্যাপারেলস গার্মেন্টস লিমিটেডের শ্রমিকরা। 
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শ্রমিকদের আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যমুনায় প্রবেশ করে। রাত পৌনে ৮টায় শ্রমিক অবস্থানে আসেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ওমর ইমরুল মহসিন এবং শিল্প পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইম) আবুল কালাম সিদ্দিক। সরকারের পক্ষ থেকে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য দু-এক দিন সময় চান তারা। এ সময় শ্রমিকদের মধ্য থেকে ‘না না’ ধ্বনি আসে। 

এজাজকে অপসারণের আলটিমেটাম
নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীরের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। দাবি বাস্তবায়িত না হলে আগামী শনিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাওর হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি। গতকাল বিকেলে গুলশানে ডিএনসিসি নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন গণঅধিকার পরিষদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান। প্রাথমিক শিক্ষকদের অর্ধদিবস কর্মবিরতির ডাক
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তিন দফা দাবি আদায়ে টানা কর্মবিরতি পালন করছেন। আজ বুধবার থেকে তারা অর্ধদিবস কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ছয়টি সংগঠনের মোর্চা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ নেতাদের সঙ্গে গতকাল বৈঠকে বসেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি আবু নূর মো.

শামসুজ্জামান। রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠকে শিক্ষকরা তাদের দাবি তুলে ধরেন। তবে সরকারের তরফে দাবি পূরণের কোনো প্রতিশ্রুতি না মেলায় শিক্ষকরা অসন্তুষ্ট।

শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান ও বিক্ষোভ
শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল সকাল ৮টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর ১২টায় বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। 

রাজউক ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ
ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধনের দাবিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল সকালে এ সংগঠনের ব্যানারে কয়েকশ মানুষ রাজউক ভবনের সামনে ব্যানার নিয়ে দাঁড়ান। তারা রাজউকের ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির’ প্রতিবাদ এবং ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধনের দাবিতে নানা স্লোগান দেন। দাবি না মানলে চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।

২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মানববন্ধন
প্রশাসন ক্যাডার কর্তৃক বৈষম্যমূলকভাবে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলার প্রতিবাদসহ নানা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সিভিল সার্ভিসের ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ সময় তারা কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, ডিএস পুলের কোটা বাতিল ও সব ক্যাডারের সমতা বিধানেরও দাবি জানান। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট এনজ ড গ র প র র কর মকর ত সরক র র অবস থ ন র স মন পর শ ধ গতক ল র জউক স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ