খুনের মামলার আসামিকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা, দুজন গ্রেপ্তার
Published: 21st, May 2025 GMT
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম মহানগরের রাহাত্তারপুল এলাকা থেকে র্যাব-৫–এর একটি দল তাঁদের গ্রেপ্তার করে। আজ বুধবার সকালে তাঁদের বাগমারা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন খোরশেদ আলম (৪৫) ও ভুট্টু প্রামাণিক (৪২)। তাঁদের বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার গোয়ালবাড়ি গ্রামে।
র্যাবের পাঠানো একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমবার রাতে র্যাবের রাজশাহী ও চট্টগ্রামের সদস্যরা যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করেন। মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুল এলাকা থেকে তাঁদের আটক করা হয়। তাঁরা সেখানে প্রায় এক মাস ধরে অবস্থান করছিলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ৪ এপ্রিল বিকেলে বাগমারার রনশিবাড়ি বাজারে পূর্বশত্রুতার জেরে আত্রাইয়ের গোয়ালবাড়ি গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করেন একই গ্রামের আমিরুল ইসলাম নামের এক তরুণ। পালানোর সময় লোকজন ধরে একটি বাড়িতে আটকে রাখেন। রাত আটটার দিকে সেখান থেকে পুলিশ আমিরুল ইসলামকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসার প্রস্তুতি নেয়। এ সময় পুলিশ স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে আসামিকে প্রকাশ্যে ধরে লাঠি ও ইট দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেন তাঁরা। এ সময় ক্ষুব্ধ লোকজনের হামলায় বাগমারার ছয় পুলিশ আহত হন। তাঁদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশকে মারধর করে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার অভিযোগে বাগমারা থানার পুলিশ অজ্ঞাতনামা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করে। জোড়া খুনের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়। মামলার পর ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আত্মগোপনে যান। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ছায়াতদন্ত শুরু করে। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্তের পাশাপাশি গোপনে তদন্ত করে আসামিদের ধরার জন্য মাঠে নামে পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি নিহত আমিরুলকে ঘিরে ছিলেন। তাঁদের হাতে লাঠি দেখা যায়। পরে তাঁরা লাঠি দিয়ে আঘাত করেন আমিরুলকে।
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পুলিশের করা মামলায় এই দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ দুপুরে আদালতে তোলা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়নি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য আমদানি বন্ধ করায় দিল্লিকে চিঠি পাঠাচ্ছে ঢাকা। তবে, এখনো দেশটির সঙ্গে সই হওয়া কোনো চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
বুধবার (২১ মে) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
পুশইন বন্ধে দিল্লিকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা। এরপরও এটি থেমে নেই, সরকার এ বিষয়ে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, “দিল্লির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে এবং আমরা চেষ্টা করছি যাতে নিয়মের বাইরে যেন কিছু না ঘটে।”
আরো পড়ুন:
চিকেন নেক নিয়ে পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ মমতার
ভারতের ‘গোর্খা রেজিমেন্ট’ সম্পর্কে কতটা জানেন?
দিল্লি এ বিষয়ে রেসপন্স করেছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারা তাদের অবস্থান কিছুটা জানিয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি। এভাবে ঠেলে দেওয়াটা যে ঠিক না, এটা আমরা তাদের বুঝিয়েছি এবং আমরা তাদের বলেছি, আমাদের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) আছে, সেই প্রক্রিয়া অনুযায়ী আমরা যাব। তারা কিছু তালিকা দিয়েছে, আমরা সেই তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেকআপ করছি।”
ভারতীয় নাগরিক ও যারা রোহিঙ্গা তাদের পুশব্যাক করা হবে না কী, এখানে রাখছি এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কাছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা এখনো নেই। আমরা সাধারণত পুশ ব্যাক করি না। বিষয়টা হলো যারা ভারতীয় নাগরিক বলে প্রমাণিত হবে তাদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে।”
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের সঙ্গে বিগত সময়ে হওয়া চুক্তি যেগুলোতে বাংলাদেশ লাভবান হয়নি সেগুলো বাতিলের কথা ওঠে। এখন পর্যন্ত সরকার কোনো চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা বা পর্যালোচনা করেছে কিনা, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, “ছোট ছোট বিভিন্ন চুক্তি বিভিন্ন সময়ে হয়েছে, এমওইউ হয়েছে। সেগুলো কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে আপনাদের জানানো হয়েছে। তার মধ্যে চুক্তি যেগুলো সেগুলো কিন্তু দুই পক্ষের সম্মতিতে বাতিল করতে হবে অথবা প্রভিশন থাকে যে কোনো এক পক্ষ আপত্তি করলে বাতিল করা যাবে।”
তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা কোনটি বাতিল করিনি। আমরা চাই, নিয়ম অনুযায়ী যেন সব কিছু এগোয়। দেখা যাক, আমরা কি করতে পারি।”
ভারত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে কিনা, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “দেখুন, নিয়মকে এক্সটেন করা যায় বিভিন্নভাবে। এখন আপনি এটাকে ইতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন, কখনো কখনো নেতিবাচকভাবেও ব্যাখ্যা করতে পারেন। সব মিলিয়ে আমাদের সেভাবে এগোতে হচ্ছে। কেউ তো স্বীকার করে না সে নিয়মের বাইরে যাচ্ছে।”
ভারতের সঙ্গে শ’খানেকের বেশি চুক্তি আছে, এরমধ্যে কতগুলো পর্যালোচনা করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কোনোটাই এখনো বাতিল করার ব্যবস্থা করিনি। পর্যালোচনা বলতে আপনারা কী বোঝান? সব চুক্তিরই আমরা আমাদের অবস্থান যাচাই-বাছাই করার চেষ্টা করেছি। সময়মতো সেগুলো ভারতের সঙ্গে টেকআপ করা হবে।”
সম্প্রতি ভারত সরকার স্থলপথে বাংলাদেশি পণ্যে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কিনা এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি দিল্লিতে পাঠানোর কথা। এ বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “বাণিজ্য উপদেষ্টা বিষয়টা দেখছেন এবং আমরা এটা টেকআপ করছি। চিঠি যাচ্ছে দিল্লিতে।”
বুধবার (২১ মে) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে অস্ট্রেলিয়ার ৪১ এমপি-সিনেটর বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন চেয়েছেন। চিঠির কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটি সঠিক কিনা, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এটা আমার নজরে এখনো আসেনি। স্যোশাল মিডিয়াতে সবার আগে আসে। আসুক, সেটা আমরা দেখব পরে।”
ঢাকা/হাসান/মাসুদ