‘মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মায়, কিন্তু সর্বত্র সে শৃঙ্খলে আবদ্ধ।’ ফরাসি দার্শনিক জ্যঁ-জ্যাক রুশো তাঁর সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট বইটি এই উক্তি দিয়ে শুরু করেন। ‘মানুষের সম্মিলিত ইচ্ছার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কর্তৃত্বই প্রকৃত রাজনৈতিক বৈধতা পায়’—ধারণাটি প্রকাশ করতেই মূলত রুশো বইটি লেখেন। এখানে তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সমাজ ও রাষ্ট্রের শৃঙ্খলার সঙ্গে মিলেমিশে টিকে থাকতে পারে।

সিমোন দ্য বোভোয়ারের তাঁর সেকেন্ড সেক্স গ্রন্থে বলেন, ‘নারী জন্মগতভাবে হয় না, বরং সমাজ তাকে নারীতে পরিণত করে।’ এর মানে হলো—জৈবিক লিঙ্গ ও সামাজিক লিঙ্গ এক নয়। অর্থাৎ সমাজ জন্মের পর থেকেই নারীদের ওপর বিভিন্ন ভূমিকা, সীমাবদ্ধতা ও প্রত্যাশা আরোপ করে এবং তাদের একটি বিশেষ ‘নারীত্বের’ ছাঁচে গড়ে তোলে।

উল্লিখিত রুশোর বক্তব্য ও সিমোন দ্য বোভোয়ারের বক্তব্য যোগ করলে ইউনূস সরকারের উদ্যোগে গঠিত নারী সংস্কার কমিটির প্রস্তাবগুলো এবং প্রস্তাবের বিরোধিতাগুলো বুঝতে সুবিধা হবে।

সমাজের ও রাষ্ট্রের শৃঙ্খলে বাঁধা কেবল নারীর স্বাধীনতা নয়, বাঁধা পুরুষের স্বাধীনতাও। পেশিশক্তি ও কৌশল দিয়ে পুরুষ তাঁর স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পেরেছিল নারীর চেয়ে অনেক দ্রুত। স্বাধীন পুরুষ রাষ্ট্র, সমাজ ও আইন তৈরি করেছে নারীর মতামত ছাড়া।

স্বাধীন পুরুষ ‘নারীদের ওপর বিভিন্ন ভূমিকা, সীমাবদ্ধতা ও প্রত্যাশা আরোপ করেছে এবং তাদের একটি বিশেষ নারীত্বের ছাঁচে গড়ে তুলেছে।’ যখনই নারী সেই ছাঁচ ভাঙতে চেয়েছেন, তখনই পুরুষ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। একবিংশ শতাব্দীতেও পুরুষ নারীর স্বাধীনতা খর্ব করতে চান। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও পুরুষের কাছে, সমাজের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে নারীকে তাঁর স্বাধীনতার জন্য দেনদরবার করতে হয়। উল্লিখিত নারী সংস্কার কমিশন গঠন এই ‘দেনদরবারের’-ই বহিঃপ্রকাশ।

প্রস্তাবিত বেশ কিছু বিধান নিয়ে কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠী ও ব্যক্তি আপত্তি তুলেছেন। ১.

ধর্ম, বর্ণ বা সম্প্রদায় এবং নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উত্তরাধিকার আইন করা এবং বহুবিবাহের মতো প্রথা নিষিদ্ধ করা। ২. প্রতি নির্বাচনী এলাকায় সরাসরি ভোটে পূরণ করা একটি সাধারণ আসন ও নারীদের জন্য একটি সংরক্ষিত আসন; ৩. যৌনকর্মকে একটি বৈধ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে যৌনকর্মীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা প্রদান করা।

কাজী জেসিনের সঞ্চালনায় জি-টিভির এক অনুষ্ঠানে নারী নীতি সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে একটি আলোচনা হয়েছিল। সেখানে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার সারা হোসেন সহ-আলোচক জনৈক জামায়াত নেতার সামনে দর্শক-শ্রোতাকে সংস্কার প্রস্তাবের পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিলেন। তিনি বললেন, ‘আমাদের দেশ ইসলামি আইনে চলে না, আশা করি কখনো চলবেও না। এখানে নানা ধর্মের লোকের বসবাস। অন্য ধর্মের লোক ইসলামি আইনে বাধ্য নন। দেশ চলবে দেশের সংবিধান অনুসারে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই প্রতিটি সরকারই নারীর অধিকারকে এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং এই সর্বশেষ সংস্কার প্রস্তাব এরই ধারাবাহিকতা।’

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, যে সরকারে জামায়াতে ইসলামী ছিল, সেই সরকারও নারীর অধিকার এগিয়ে নিয়ে গেছে। যৌনকর্মীর পেশার বৈধতা প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সারা হোসেন জামায়াত নেতাকে কোর্টের রায় এবং বিচারপতিদের মন্তব্যগুলো পড়ে দেখতে পরামর্শ দেন। তিনি যোগ করেন, যৌনকর্মীর পেশার বৈধতার পক্ষে কোর্ট রায় দিয়েছেন।

আমার ধারণা, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটিসহ ৬৭টি নারী অধিকার, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংস্থার যে জোট, সেই জোটেরই মতের প্রতিফলন ঘটেছে ব্যারিস্টার সারা হোসেনের সেই বক্তব্যে। তার প্রমাণ পাওয়া গেল গত ১৬ এপ্রিল মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে নারীর ডাকে মৈত্রী-যাত্রার কর্মসূচি আয়োজনের মধ্যে। কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিক্রিয়াকে নারীবিদ্বেষী ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে নিন্দা জানিয়েছেন বক্তারা। তাঁরা সরকারকে কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে লিঙ্গসমতা ও মানবাধিকার সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বাংলাদেশের লিঙ্গসমতার পথে একটি বড় পদক্ষেপ হলেও আইনগত বিরোধ ও সামাজিক প্রতিরোধের কারণে এর বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।

এর আগে ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ৪৯টি প্রগতিশীল নারী-শ্রমিক-সাংস্কৃতিক-শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী সংগঠন। সেখানে বক্তারা বলেন, ইতিহাসবিচ্ছিন্ন কূপমণ্ডূকতার মাধ্যমে সহিংসতা ও বৈষম্য চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা প্রতিহত করা হবে।

তাঁদের ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘আমাদের সংস্কৃতি, ধর্ম ও ইতিহাস দারুণ বৈচিত্র্যময় ও সংবেদনশীল। সেই বিশালতাকে উপেক্ষা করে আমরা গুটিকয় মানুষের সংকীর্ণ ব্যাখ্যাকে সর্বজনীন হতে দেব না। আমরা অধিকার ও ধর্মের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে দেব না, মর্যাদা নিয়ে কোনো ধরনের দ্ব্যর্থকতা মেনে নেব না। যে ক্ষমতাকাঠামো এসব জুলুমবাজি জিইয়ে রাখে, আমরা সেই কাঠামোকে ভাঙব।’ ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্ন ও তা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নারীরা হাল ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

বাংলাদেশে নারী আন্দোলন এখন অনেক পরিপক্ব। এর প্রমাণ পাওয়া গেল যখন তাঁরা যখন শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথাও ঘোষণা করেন। বস্তুত, নারীর অধিকার, শ্রমিকের অধিকার, সংখ্যালঘুর অধিকার মানুষের অধিকারেরই ভিন্ন ভিন্ন রূপ এবং একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সমাজে যদি শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়, শ্রমিক তাঁর ন্যায্য পাওনা পান, নারীর অধিকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এই কথা বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি প্রযোজ্য। কারণ, পোশাকশিল্পে, গৃহকর্মে, এমনকি কৃষি ও অকৃষি খাতেও সর্বত্র নারীর উপস্থিতি।

অতীতের নারী আন্দোলন থেকে বর্তমান সময়ের নারীদের শিক্ষা নেওয়া দরকার। শিক্ষাটা হলো, হোলস্টিক তথা সর্বাত্মক আন্দোলনের শিক্ষা। জার্মানির ক্লারা জেটকিন, ব্রিটিশ নেত্রী এমেলিন পেট্রিক-লরেন্স, ব্রিটিশ শান্তিবাদী আন্দোলনের নেত্রী হেলেনা সনউইক, কার্ল মার্ক্সের কন্যা ইলিয়নোর মার্ক্স, লেনিনের জীবনসঙ্গিনী নাদেঝদা ক্রুপস্কয়া—সবাই যুক্ত থেকেছেন সমাজের খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার, মনোজাগতিক পরিবর্তনের সর্বাত্মক আন্দোলনের, বিপ্লবের। যে আন্দোলনে নারী, পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে শুধু নারীর জন্য নয়—সবার জন্য।  

আর একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, পুরুষ নারীর প্রতিপক্ষ নয়। পুরুষের স্বার্থ ও নারীর স্বার্থ—একে অপরের পরিপূরক। পুরুষের নিজের স্বার্থেই নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে আমার দাঁড়ানো দরকার। একটি দেশের মোটামুটি ৫০ শতাংশই নারী থাকেন। ক্ষমতায়নের একটি প্রধান উপাদান হলো, লেবারফোর্স পার্টিসিপেশন তথা কর্মে নিযুক্তি। এই হার যত বেশি হবে, দেশের উৎপাদন তত বেশি হবে। নিজের পরিবারের স্ত্রী, কন্যা বা ভগ্নির কর্মে নিযুক্তি থেকে সরাসরি যে উপকার আসবে, তার বাইরে, রাষ্ট্রের নিট গেইন তথা নিট লাভ থেকেও আমি উপকৃত হব।

নারী-পুরুষের সম্মিলিত আন্দোলন সম্ভব রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এবং আন্দোলনটি হতে হবে সাম্যবাদী আন্দোলন, কারণ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া, বিচ্ছিন্নভাবে শুধু নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।    

কবি শঙ্খ ঘোষ সাম্যের চেতনায় যখন বলেন, ‘আয় বেঁধে বেঁধে থাকি’, তখন তিনি আদতে নারী, পুরুষ—উভয়কেই মিনতি জানান এইভাবে:
‘আমাদের ডান পাশে ধস
আমাদের বাঁয়ে গিরিখাদ
আমাদের মাথায় বোমারু
পায়ে-পায়ে হিমানীর বাঁধ
আমাদের পথ নেই কোনো
আমাদের ঘর গেছে উড়ে
আমাদের শিশুদের শব
ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!
আমরাও তবে এইভাবে
এ-মুহূর্তে মরে যাব নাকি?
আমাদের পথ নেই আর।
আয় আরও হাতে হাত রেখে
আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি।

এন এন তরুণ অর্থনীতির অধ্যাপক, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। সাউথ এশিয়া জার্নালের এডিটর অ্যাট লার্জ। [email protected]
*মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স ব ধ নত র প রস ত ব য নকর ম আম দ র র জন য সরক র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ