‘কয়েকজন মিলে বাবাকে খুঁজতে বের হই। বৃষ্টির দিন, সড়কে ছিল অন্ধকার। হঠাৎ দেখতে পাই  থেঁতলানো পা ও হাত পড়ে আছে। আরেকটু দূরে গিয়ে দেখি নাড়িভুঁড়ি ছড়ানো ছিটানো। মাথা ও মুখমণ্ডল চেনা যাচ্ছে না। পরে কুড়িয়ে কুড়িয়ে বস্তায় ভরে নিয়ে আসি।’
বাবার মৃত্যুর এমন বর্ণনা দিতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন হাতির আক্রমণে নিহত এফিলিস মারাকের মেয়ে প্রিয়া হাদিমা (১৮)। জ্ঞান ফেরার পর বিলাপ করে প্রিয়া বলতে থাকেন, ‘হে সৃষ্টিকর্তা, বাবার এমন মৃত্যু যেন কোনো সন্তানকে দেখতে না হয়।’ প্রিয়া বলেন, ধান কাটার কাজ শেষে গত মঙ্গলবার রাতে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁর বাবা ও সঙ্গে থাকা লোকজন। গজনী তিন সড়কের মোড়ে আসার পর হাতির পালের সামনে পড়েন তারা। সহকর্মীরা দৌড়ে চলে গেলেও তাঁর বাবা দৌড়াতে পারেননি। হাতির পাল তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
নিহত এফিলিস মারাক শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বড় গজনী এলাকার বাসিন্দা। তাঁর মেয়ে প্রিয়া ময়মনসিংহে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নার্সিং প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ছেলে ঢাকায় চাকরি করেন।
কৃষি শ্রমিক এফিলিসের স্ত্রী টিটিনাস হাদিমা বলেন, ‘স্বামীর রোজগারে সংসার চলত। আমরা গরিব মানুষ, কিছুই নাই, এখন কিভাবে সংসার চলবে সৃষ্টিকর্তা জানেন।’
কথা হয় নিহত কৃষি শ্রমিকের ছোট বোনজামাই বানেন্দ্র ম্রংয়ের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তাদের সামনে পড়ে ৩০-৪০টি হাতি। সবাই দৌড়ে পালান। কিন্তু এফিলিসকে হাতি পা দিয়ে পিষে ও শুঁড় দিয়ে আছড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে।
এফিলিসের খালাতো ভাই ফরটিন হাগিদক জানান, এক সপ্তাহ ধরে লোকালয়ে হাতি। অথচ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ। হাতি ধানক্ষেত থেকে শুরু করে কাঁঠাল, লিচু, আম যেখানে যা আছে সেখানেই হানা দিচ্ছে।
একই দিন মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাতির আক্রমণে নিহত হন গান্ধীগাঁও গ্রামের যুবক আজিজুর রহমান আকাশ। তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবার লাশের পাশে বসে আহাজারি করছেন তাঁর তিন ছেলে ও স্ত্রী শিউলি আক্তার। দরিদ্র আকাশের বাড়িতে একটি মাটির ঘর ছাড়া কিছুই নেই। ছোট ছোট তিন সন্তানকে জড়িয়ে ধরে তাঁর স্ত্রী চিৎকার করে কাঁদছেন আর বলছেন, ‘আল্লাহ কেন তুমি আমারে এত বড় শাস্তি দিলা।’
নিহত দিনমজুর আকাশের বড় ছেলে সিহাব (১৫) জানায়, সবার সঙ্গে হাতি দেখতে দরবেশতলায় গিয়েছিলেন তার বাবা। কিন্তু হাতির তাড়া খেয়ে মাটিতে পড়ে যান। এ সময় তাঁকে আক্রমণ করে হাতি। বাবার কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে সিহাব। সে বলে, সম্ভবত তার আর পড়াশোনা হবে না। মা, ভাইদের দায়িত্ব নিতে হবে তাকে। তা না হলে পেটে ভাত জুটবে না।
সিহাবের মামা কাংশা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ দুলাল মণ্ডলের ভাষ্য, আকাশের তিন সন্তান। দিন আনে দিন খায়। এখন তাদের দায়িত্ব কে নেবে? তিনি জানান, গত ২৫ বছরে গারো পাহাড়ে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ তিনি ভারতের আসামে গিয়ে দেখেছেন, গ্রাম ভাগ করে হাতি ও মানুষের জন্য পৃথক আবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঝখান দিয়ে দেওয়া হয়েছে সোলার ফ্যান্সিং।
খবর পেয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে ভুক্তভোগী দুই পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তাদের বাড়িতে যান শেরপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা মাহমুদুল হক রুবেল। এ সময় তিনি কিছু আর্থিক সহায়তা তুলে দেন ভুক্তভোগী পরিবারের হাতে।
কথা হয় শেরপুর বন বিভাগের সদ্য বিদায়ী সহকারী বন সংরক্ষক ও প্রাণী গবেষক মঞ্জুরুল আলমের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, হাতি খুব শান্তিপ্রিয় প্রাণী। তারা সাধারণত কাউকে অযথা বিরক্ত করে না। যারা হাতি তাড়ায়, তারা হাতিকে আঘাত করেন। হাতি খুব স্পর্শকাতর প্রাণী, আঘাত করলে ভুলে না। পাল্টা আঘাত করে।
বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের রেঞ্জার আব্দুল করিম বলেন, নিহত দু’জনের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ইআরটি টিমকে কেরোসিন তেল দেওয়া হয়েছে। তারা হাতি তাড়াবেন। স্থানীয়দের ইআরটি টিমকে সহায়তা করতে বলা হয়েছে।
শেরপুর বন্য প্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ময়মনসিংহ বন বিভাগের অধীনে গারো পাহাড়ে ২০১৪ সাল থেকে এখন ৪৪ জন মানুষ হাতির আক্রমণে নিহত হয়েছেন। এই সময়ে হাতি মারা গেছে ৩৩টি।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ এফ ল স

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুতে এআই ব্যবহারে থাকবে শিথিলতা, তবে অপব্যবহার করা যাবে না: নির্বাচন কমিশন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে। তবে এর অপব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য জুলফিকার মাহমুদ।

রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫-এর আচরণবিধিবিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদের এক দাবির জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধির ৭–এর ঘ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করা যাবে না। আমরা যারা ছোট সংগঠন, আমাদের তহবিল সীমিত। আমরা নির্বাচনী প্রচারের জন্য এআই ব্যবহার করে দু-এক মিনিটের ভিডিও বানিয়ে প্রচার কার্যক্রম চালাতে চাই। আমাদের দাবি, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যেন শিথিল নীতি গ্রহণ করে।’

মুরাদ আরও বলেন, বিগত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কিছু ত্রুটি লক্ষ করা গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত রাখার জন্য যতগুলো ভোটকক্ষ থাকবে, সব কটি সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় রাখতে হবে। সবার জন্য সেই সিসিটিভি ফুটেজ উন্মুক্ত রাখতে হবে। ভোট গ্রহণকে স্বচ্ছ রাখার জন্য ভোটকক্ষের ভেতরে জাতীয় গণমাধ্যমকে সরাসরি সম্প্রচার করার অনুমতি দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জকসুর নির্বাচন কমিশনার জুলফিকার মাহমুদ বলেন, ‘এআই ব্যবহার করে বিভিন্নজনের চরিত্র হনন করা হয়, অপপ্রচার চালানো হয়। সেদিক থেকে চিন্তা করে এআই ব্যবহার নিষিদ্ধ রেখেছিলাম। তোমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এআই ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে প্রচার–প্রসারে, তবে অপব্যবহার করা যাবে না। আর সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আলোচনা করে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ