চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরে যুক্ত হচ্ছে আফগানিস্তান। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠকে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার একমত হয়েছেন, পাকিস্তানে চলমান চীনা অবকাঠামো প্রকল্প আফগানিস্তান পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে।

গতকাল বুধবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জাপানের বার্তা সংস্থা এনএইচকে জানায়, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) প্রকল্পটি আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তারের বিষয়ে তিন দেশ একমত হয়েছে। এটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বা অঞ্চল ও পথ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রমসহ নানা বিষয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েন থাকলেও উভয় দেশ দ্রুত পরস্পরের দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।

তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে আগ্রহী আফগানিস্তান। মুত্তাকিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করা হবে।

এদিকে ২০২১ সালে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা পুনরায় গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত চীন ও পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। তবে চীন ধীরে ধীরে সম্পর্ক গভীর করছে। ২০২৩ সালে তারা কাবুলে একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছে।

এ বৈঠক প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরে (সিপিইসি) আফগানিস্তানকে যুক্ত করার বিষয়ে চীন ও পাকিস্তান আবারও সম্মতি দিয়েছে। এ উদ্যোগ অঞ্চল ও পথ প্রকল্পের (বিআরআই) কাঠামোর আওতায় বাস্তবায়িত হবে।

ভৌগোলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে চীন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংযুক্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সন্ত্রাসবাদ ও বহিরাগত হুমকি দূর করার গুরুত্ব স্বীকার করে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করায় গুরুত্ব দিয়েছে তিন দেশ। সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান পুনরায় তুলে ধরেছে তারা।

বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানকে অঞ্চল ও পথ উদ্যোগে যুক্ত করে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় কৌশলগত প্রভাব আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে চীন। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর এটাই ইশহাক দারের প্রথম বেইজিং সফর।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র পরর ষ ট র আফগ ন স ত ন র প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি

আট মাস আলোচনার পর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তাকে ‘অশ্বডিম্ব’ বলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন।

‘জগাখিচুড়ি মার্কা’ কমিশনের সুপারিশের পর পরিস্থিতি জটিলতার দিকে মোড় নেওয়ার দিকটি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আট মাস আলোচনার পর একটা অশ্বডিম্বের মতো একটা অবস্থা।’

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংলাপে ‘পলিটিকস ল্যাব: পাবলিক ডায়ালগ’ শীর্ষক সংলাপে এ কথা বলেন সাজ্জাদ জহির। এ সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।

তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে মতাদর্শভিত্তিক সংলাপ ও গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে জার্মান ফাউন্ডেশন ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস)-এর সহযোগিতায় ‘পলিটিকস ল্যাব’ শিরোনামে চারটি ধারাবাহিক কর্মশালা করেছে সিজিএস। তার সমাপনী অনুষ্ঠান হিসেবে আজকের সংলাপ হয়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। নানা প্রশ্নে বিভিন্ন দলের আপত্তির বিষয়গুলো সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে না থাকা নিয়ে যেমন সমালোচনা হচ্ছে, আবার গণভোটের সময় নিয়েও দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।

এই সংকট তৈরির জন্য ঐকমত্য কমিশনকে দায়ী করে সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘এটার সমাধানটা কী? এই গণভোটের সমাধানটা কী? জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা কিন্তু নেই। মানে একধরনের হাওয়ার ওপরে সবকিছু চলছে। এখানে ৮৪টা পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০টাতে একমত হয়েছে, বাকিগুলোতে একমত হয়নি। তাহলে কোন বিষয়ে ভোটটা হবে।’

জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘আমরা দেখলাম জুলাই সনদে স্বাক্ষর হলো। এরপর সর্বশেষ সংস্কার কমিশন তারা আবার আরেকটা খেলা খেলল এখানে। দেখেন কী অবস্থা! তারা বলছে যে নোট অব ডিসেন্ট কিছুই থাকবে না। ভিন্ন মত থাকবে না। আমার তো ভিন্নমত আছে, কেন থাকবে না?’

গণভোট নিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে কোথাও গণভোটের কোনো বিধান নেই। একটা আছে যেটা ১৪২ ধারা। যেটা নির্বাচিত সংসদে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতভেদ তীব্রতর হয়, তাহলে সেই বিষয়ের ওপরে নির্বাচিত সংসদ জনগণের আহ্বান করতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে গণভোট সংবিধানসম্মত নয়।’

সিপিবির সভাপতি বলেন, এসব জটিলতা এড়াতে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে গত বছরের অক্টোবর মাসে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছিলেন। তবে ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে’ সরকার সেটি শোনেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশের মানুষ ১৭ বছর ধরে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে: সাইফুল হক
  • জুলাই সনদে সই না করা অংশের দায় নেব না: মির্জা ফখরুল
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি