আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের পদত্যাগ চাইলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। 

বিএনপি নেতা ইশরাককে মেয়র ঘোষণা নিয়ে রিট খারিজের খবরের পর বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে ফেসবুকে পর পর দুটি স্ট্যাটাস দেন সারজিস। তার একটিতে তিনি লেখেন, “টাকা আর রাজনৈতিক দলের সুপারিশে অনেক হত্যাকারী আওয়ামী লীগারের জামিন হয়ে যায়। টাকা আর রাজনৈতিক সুপারিশ নাই বলে আওয়ামী আমলে জুলুমের শিকার অনেক মজলুমের জামিন হয় না।”

“শাপলা হত্যাকাণ্ডে হেফাজতের উপরে চাপানো মিথ্যা মামলায় অনেক মজলুম আলেম এখনো আদালতে চক্কর কাটে, কারাগারে বনন্দি থাকে। অথচ এমন অনেক দাগী আসামি বিগত কয়েক মাসে জামিন পেয়েছে যারা বিএনপির সাথে সংযুক্ত হলেও বিএনপির সময়ে তাদের কৃতকর্ম ও অপরাধের জন্য জেলে গিয়েছে। এগুলো কিভাবে হয়? কার সুপারিশে হয়? কোন আইনজীবী এবং বিচারকের প্রত্যক্ষ মদদে হয়।”

তিনি লেখেন, “প্রকাশ্যে হাসিনার নির্দেশে এতগুলো মানুষ খুন হলো, এতগুলো মানুষের রক্ত ঝরলো, তারপরও নয় মাসে একটা বিচারকার্য সম্পন্ন হয় না! একটা খুনের বিচার হয় না! এই দায় আইন উপদেষ্টা হিসেবে আসিফ নজরুল স্যার কি কোনো ভাবে এড়াতে পারে? তাহলে কি আমাদের এখন তার পদত্যাগ চাওয়া উচিত নয়?”

এর আগে গতকাল আইন ও অর্থ উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করাতে বাধ্য হব বলে হুঁশিয়ারি দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) মুখ্য সংগঠক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী।

আগারগাঁও নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। 

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সমালোচনা করে নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, “উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে তাদের পদত্যাগ করাতে বাধ্য হব।”

ইসি পুনর্গঠন ছাড়া এনসিপি কোনও ভোট করতে দেবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

এদিকে, আজ দুপুরে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেট অবৈধ ঘোষণার দাবি এবং তাকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট মামলা খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ নিতে আর কোনো বাধা থাকল না। 

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইন উপদ ষ ট র পদত য গ ন উপদ ষ ট ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএনএ পরীক্ষায় দুই কিশোরের জড়িত থাকার প্রমাণ, অন্য কিশোর ধরা পড়ল যেভাবে

১৫ ও ১৭ বছর বয়সী দুই কিশোরের ডিএনএ পরীক্ষায় পটুয়াখালীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এক শহীদের কলেজপড়ুয়া মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা আলামত পরীক্ষা করে আরেক কিশোরের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পায় পুলিশ।

পটুয়াখালী জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পুলিশের জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে ওই তিন কিশোরের জড়িত থাকার তথ্য উল্লেখ করা হয়। ৬ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুমকি থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী তার ‘ঘনিষ্ঠ’ সহপাঠীর (১৭) মাধ্যমে প্রথমে ধর্ষণের শিকার হয়। ওই ঘটনা দেখে তা ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অভিযুক্ত অন্য দুই কিশোর ভুক্তভোগীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে। পাশাপাশি মুঠোফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ফাঁসের হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়। ধর্ষণের ভিডিও, এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও জব্দ করা আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষায় দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. সাজেদুল ইসলাম সজল প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামির ডিএনএ ও ধর্ষণ-সংক্রান্ত আলামত পরীক্ষায় পাঠানো হয়। এতে এজাহারভুক্ত দুই কিশোরের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযোগপত্রে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া ধর্ষণস্থল থেকে আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা গাছের শুকনা পাতা ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠিয়ে তৃতীয় একজনের আলামত শনাক্ত হয়। পরে এজাহারভুক্ত এক আসামি অন্য কিশোরের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। যে কারণে অভিযোগপত্রে ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, ২৫ মে আদালতে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ওই দিন তৃতীয় কিশোরের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। আদালতের অনুমতি পেলে তৃতীয় কিশোরের ডিএনএ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। বর্তমানে গ্রেপ্তার তিন কিশোর যশোর শিশু সংশোধনাগারে আছে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বাবা ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরে তাঁকে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকিতে দাফন করা হয়। গত ১৮ মার্চ বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে ওই কলেজছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে দুই কিশোরের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করে। এরপর গত ২৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ভুক্তভোগীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২৭ এপ্রিল তার শহীদ বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুনপটুয়াখালীতে জুলাই শহীদের মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় আরও এক আসামি গ্রেপ্তার১১ মে ২০২৫

ভুক্তভোগীর বাবার বাড়ি থেকে নানা বাড়ির দূরত্ব সাত থেকে আট কিলোমিটার। পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বাবার কবর জিয়ারত করে নানা বাড়িতে ফিরছিল ভুক্তভোগী। পথে ভুক্তভোগীর কলেজের ঘনিষ্ঠ সহপাঠীর সঙ্গে দেখা হয়। তখন সহপাঠী ভুক্তভোগীকে ফুসলিয়ে পাশের একটি বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় ভুক্তভোগীর চিৎকারে এজাহারভুক্ত দুই কিশোর ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা ধর্ষণের দৃশ্য দেখে তা ফাঁস করে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখায় ভুক্তভোগীর সহপাঠীকে। তখন এজাহারভুক্ত দুই কিশোরের মুখ বন্ধ রাখতে ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করতে সহায়তা করে ওই সহপাঠী। ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করে দুই কিশোর। ভিডিও ফাঁসের হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীর মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়।

অভিযোগপত্রে পুলিশ উল্লেখ করে, প্রথম দিকে গ্রেপ্তার দুই কিশোরের ডিএনএ ও সংগৃহীত আলামত পরীক্ষায় পাঠানো হলে তারা শনাক্ত হয়। কিন্তু তদন্তকালে ধর্ষণস্থলের আলামত হিসেবে সংগৃহীত গাছের কয়েকটি পাতায় পাওয়া নমুনা পরীক্ষা করে ঘটনায় আরেকজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে তৃতীয় এক কিশোরের নাম জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় এক কিশোর। এ জন্য তৃতীয় আরেক কিশোরকে অভিযোগপত্রভুক্ত করা হয়।

আরও পড়ুনজুলাই শহীদের মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় ৩ কিশোরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র০৮ মে ২০২৫আরও পড়ুনজুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার২৬ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনপটুয়াখালীতে কলেজছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার এক আসামি তিন দিনের রিমান্ডে২৭ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনপটুয়াখালীতে কলেজছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে আটক ১১৯ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ