নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তাঁর শিক্ষক বাবাকে মারধর ও জখম করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত তরুণের নাম মোস্তাকিন (১৯)। গত মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সকালে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মোস্তাকিনকে প্রধান আসামি এবং অজ্ঞাতনামা আরও দুজনকে আসামি করে দুর্গাপুর থানায় মামলা করেন। মোস্তাকিনের বাড়ি একই উপজেলায়।

পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোস্তাকিন এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। প্রায় এক বছর আগে তিনি ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। ওই ছাত্রী তা প্রত্যাখ্যান করলে তিনি স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বিভিন্ন সময়ে তাকে উত্ত্যক্ত ও হয়রানি করে আসছিলেন। এ বিষয়ে একাধিকবার মেয়েটির বাবা মোস্তাকিনকে সতর্ক করেন এবং তাঁর পরিবারের কাছেও অভিযোগ করেন। তাতেও কোনো পরিবর্তন হয়নি।

গত মঙ্গলবার ওই ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। পথে মোস্তাকিন ও তাঁর দুই সহযোগী তাঁদের গতি রোধ করে মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করেন। এ সময় মেয়েটির বাবা প্রতিবাদ করলে তাঁকে মারধর ও কপাল-নাকে ইট দিয়ে আঘাত করেন তাঁরা। পরে স্থানীয় লোকজন মেয়েটির বাবাকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

ছাত্রীর বাবা বলেন, তিনি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মঙ্গলবার পরীক্ষার পর মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মোস্তাকিন ও তাঁর সহযোগী ব্যক্তিরা অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও অঙ্গভঙ্গি করে মেয়েকে উত্ত্যক্ত করেন। প্রতিবাদ করায় তাঁকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারী ব্যক্তিরা তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যান।

এ বিষয়ে মোস্তাকিনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর বাবার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

ফুডপ্যান্ডার ডেলিভারি বয় থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার আবু সালেহ, মাসে আয় কত জানেন

পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। অভাবের সংসারে নিজেকে একরকমের বোঝাই মনে করতেন। কিছু একটা করা দরকার। পরিস্থিতি যেন আবু সালেহ আহমেদকে দিন দিন আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেক স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্নে নিজেকে অটুট রেখেছেন। আর পাড়ি দিতে হয়েছে অনেকটা পথ। ধৈর্য নিয়ে নিজের স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আজ সালেহ নিজেকে বলতেই পারেন একজন সফল ফ্রিল‍্যান্সার। কেননা এখন তিনি মাসে আয় করেন তিন লাখ টাকা।

আবু সালেহ আহমেদ। ডাকনাম আফনান। বাবা মো. কুতুব উদ্দিন শেখ মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার তারাপুর গ্রামের আবু সালেহ আহমেদ এখন অবশ্য এলাকায় থাকেন না। থাকেন ঢাকার কাঁঠালবাগানে। এখান থেকেই আফনান গড়ে মাসিক তিন লাখ টাকা আয় করেন। ছোট্ট একটা অফিসও নিয়েছেন, যেখানে চারজন ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান করেছেন।

২০১৬ সালে সেনগ্রাম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাসের পর ২০২০ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন আবু সালেহ আহমেদ। এখন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে স্থাপত্য বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ছাত্রাবস্থাতেও তাঁর মাসিক আয় কোনো কোনো মাসে পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ২৭ বছর বয়সী আবু সালেহ আহমেদ বিয়ে করেছেন গত বছর। স্ত্রীর নাম ফাতেমা জোহরা।

পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই ছিল কঠিন

আফনান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আসলে মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করে বের হয়েছি। তখন ইচ্ছা থাকলেও আমাদের সামর্থ্য ছিল না ভালো জায়গায় পড়ার। আমার চার বছর যে সম‍য়টা কেটেছে, আসলে খুব কষ্টে কেটেছে। কলেজে আমি এক্সট্রা কারিকুলামে ভালো ছিলাম, ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ছিলাম, বেশ কিছু জায়গায় বিতর্ক করে চাম্পিয়নও হয়েছি। স‍্যারদের চোখে পড়েছি। একসময় আর পেরে উঠছিলাম না, তাই দুই বছর পড়তে পড়তেই টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিতে গিয়েছিলাম। লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকেরা আমার কথা শুনে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। যার ফলে আমি পড়াশোনাটা শেষ করেছি।’

আবু সালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘দিনগুলো কঠিন ছিল। টিউশনি করাতাম। ১ হাজার ৫০০ টাকা পেতাম। ১ হাজার টাকা মেসভাড়া ও ৫০০ টাকায় খাওয়া। সকালে ও রাতে খেতাম। মাসে তা–ও খাওয়ার বিল আসত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। মেসের বাকিরা সেটা দিয়ে দিত। তারপর একদিন ২ হাজার ৫০০ টাকার একটা টিউশনি পেয়ে একটু যেন শক্তি পেলাম। এভাবেই আমার ডিপ্লোমার চার বছর কেটেছে।’

একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায়

২০২০ সালে ডিপ্লোমা পড়া শেষ করেই একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আবু সালেহ আহমেদ। এসেই শুরু করেন আবার জীবনসংগ্রাম। কোথাও কাজ পাচ্ছিলেন না। শেষমেশ ফুডপ্যান্ডায় রাইডার (ডেলিভারি বয়) হিসেবে কাজ নেন তিনি। কিন্তু শুধু ফুডপ্যান্ডায় কাজের আয় দিয়ে তাঁর চলছিল না। তখন থেকেই কাজের পাশাপাশি কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলেন। কিছু জায়গায় খোঁজ নিয়ে ভর্তি হয়ে যান তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটিতে। খাবার ডেলিভারির পাশাপাশি কাজও শিখতেন।

আবু সালেহ আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফুডপ্যান্ডার ডেলিভারি বয় থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার আবু সালেহ, মাসে আয় কত জানেন