আন্দোলনের নগরী ঢাকা: গন্তব্যে পৌঁছাতে ভরসা দুই পা
Published: 22nd, May 2025 GMT
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ঈদের সময় এমন কোনোদিন খুঁজে পাওয়া কষ্টকর, যেদিন রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন হয়নি। ফলে গেল ৯ মাস রাজধানীর বাসিন্দাদের ধৈর্য্যের সীমা ভেঙ্গে গেছে। তারা বিরক্তি প্রকাশ করে সরকারের দুর্বলতাকে দায়ী করছেন।
বৃহষ্পতিবার (২২ মে) সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে আন্দোলন চলছে। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের বাড়তি ভোগান্তি হিসেবে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টি।
বৃহষ্পতিবার সকাল থেকেই শাহবাগ, মৎস ভবন ও কাকরাইল মোড় অবরোধ করে পৃথকভাবে আন্দোলন করেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ফলে এসব এলাকার চারপাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষের গন্তব্যে পৌঁছানোর একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে দুই পা।
আরো পড়ুন:
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট
রাতে থেমে থেমে যানজট, সকালে স্বস্তি মহাসড়কে
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পার্শ্ববর্তী প্রধান দুই সড়ক ও কাকরাইল মোড় এবং মৎস ভবন মোড় অবরোধ করে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রসারণ উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে পদত্যাগের দাবিতে সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের অনুসারীরা।
অন্যদিকে, সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে শাহবাগ মোড় ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
এসব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা শহর। সায়েন্সল্যাব, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়, পান্থপথ, বাংলামোটর, কাওরানবাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণী ইত্যাদি সড়ক বন্ধ থাকার কারণে শত শত যানবাহন সড়কে আটকে আছে। ফলে এসব এলাকার অলি-গলিও যানবাহনের চাপে স্থবির হয়ে পড়েছে।
রাজধানীর শাহবাগের বারডেম হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভর্তি শফিক ইসলামের মা। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমার বাসা রায়েরবাগ। আজ অনেক কষ্ট করে হাসপাতালে আসতে হয়েছে। বেশিরভাগ পথ পায়ে হেঁটে এসেছি। প্রতিদিন এমন আন্দোলন আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য ভোগান্তি। এখন যে কেউ ইচ্ছা করলেই যেকোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা কেউ চিন্তা করে না। সরকারি উচিত এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।”
সদরঘাটগামী পথচারী সাওন সিকদার রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমি সাভার থেকে গাড়িতে রওনা দিয়েছিলাম। কিন্তু গাড়ি সায়েন্স ল্যাবে এসে আটকে গেছে। তাই এত ভারী মালামাল নিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের এই কষ্ট দেখার কেউ নেই। অনেক অসুস্থ মানুষ আটকা পড়ে আছে। কিন্তু গন্তব্যে যেতে পারছে না।”
তিনি বলেন, “যারা হাঁটতে পারে না, তাদের তো এখন গাড়িতে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই সরকারকে বলছি, প্রতিদিন এ রকম আন্দোলন চলতে থাকলে রাজধানীবাসী কি করে চলাচল করবে, সেই পথ দেখিয়ে দিন।”
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সাম্য হত্যার সঠিক বিচার না পেলে এবং মূল ঘাতকদের গ্রেপ্তার করা না হলে রাজপথ ছেড়ে যাব না। আমরা আরো বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাব। আমরা আজ তাদের আবার আহ্বান জানাচ্ছি, দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই বিষয়ের সুরাহা করতে হবে।”
গত ১৩ মে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে একদল দুর্বৃত্ত। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় রাত ১২টার দিকে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাম্যকে মৃত ঘোষণা করেন। এ হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করছে।
সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।
ঢাকা/রায়হান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য নজট ছ ত রদল র শ হব গ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হামাস গাজার ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে: শীর্ষ কর্মকর্তা
হামাস ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার প্রায় ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির এক শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তিনি জানান, গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা কাঠামো ভেঙে পড়ার ফলে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করছে স্থানীয় সশস্ত্র গোত্রগুলো।
ওই কর্মকর্তা বলেন, কয়েক মাস ধরে চলা ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, যা সংগঠনটির রাজনৈতিক, সামরিক ও নিরাপত্তা নেতৃত্বকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
হামাসের ওই শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর প্রথম সপ্তাহে ইসরায়েলি হামলায় আহত হন। এর পর থেকে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে তিনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বিবিসিকে বেশ কিছু ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছেন। ভয়েস মেসেজগুলোতে ওই কর্মকর্তা হামাসের অভ্যন্তরে ভাঙনের এবং গাজাজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রায় পুরোপুরি পতনের একটি চিত্র তুলে ধরেন। সংঘাত শুরুর আগে অঞ্চলটি হামাসের শাসনাধীন ছিল।ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘চলুন বাস্তববাদী হই — নিরাপত্তা কাঠামোর প্রায় কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। নেতৃত্বের প্রায় ৯৫ শতাংশ এখন মৃত... সক্রিয় ব্যক্তিরা সবাই মারা গেছেন। তাহলে ইসরায়েলকে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া থেকে আটকাবে কিসে?’
গত সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ঘোষণা দেন যে, ‘সামরিক কাঠামো হিসেবে হামাস আর অস্তিত্ব নেই। তারা এখন গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত।’
ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তার মতে, চলতি বছরের শুরুতে ইসরায়েলের সঙ্গে ৫৭ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় হামাস তাদের রাজনৈতিক, সামরিক ও নিরাপত্তা পরিষদ পুনর্গঠনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মার্চে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে আবার হামাসের অবশিষ্ট নেতৃত্ব কাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এর ফলে সংগঠনটি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে
আরও পড়ুনআগামী সপ্তাহেই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে: ট্রাম্প০৫ জুলাই ২০২৫হামাসের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলি: এটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। একেবারে শেষ। কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’ তিনি বলেন, ‘মানুষ হামাসের সবচেয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা বাহিনীর (আনসার) কার্যালয় লুট করেছে, যা হামাস গাজা শাসনের জন্য ব্যবহার করত।
ওই কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তা শূন্যতার ফলে গাজায় সশস্ত্র গোষ্ঠী বা গোত্র ‘সর্বত্র’ ছড়িয়ে পড়েছে। ‘তারা আপনাকে থামাতে পারে, হত্যা করতে পারে। কেউ বাধা দেবে না। কেউ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে ইসরায়েল আধ ঘণ্টার মধ্যে বোমাবর্ষণ করে।
গত ২৬ জুন ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় গাজার একটি বাজারে অন্তত ১৮ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হামলার সময় সেখানে দাম বৃদ্ধি ও ত্রাণ লুটের অভিযোগে অভিযান চালাচ্ছিল হামাসের পোশাকবিহীন পুলিশ বাহিনী।
আরও পড়ুনমার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে এসে প্রাণ গেছে ৭৪৩ ফিলিস্তিনির১৪ ঘণ্টা আগেঅন্যদিকে গাজার দক্ষিণে ছয়টি সশস্ত্র গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে, যারা স্থানীয় ক্ষমতাসীন গোত্রের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে যাসের আবু শাবাব নামে এক নেতা পশ্চিম তীরে হামাসের প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য স্থানীয় প্রভাবশালীদের নজর কাড়েন। ইসরায়েল তাঁকে অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে জানা গেছে। হামাস তাঁকে হত্যার জন্য বড় অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
গাজার কয়েকটি সূত্র বিবিসিকে বলেছে, আবু শাবাব ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী একটি যৌথ পরিষদ গঠন করে হামাসকে উৎখাতের পরিকল্পনা করছে।
গাজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতর চরম অবনতি ঘটেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেছে। হামাসের জন্য এখন ইসরায়েলি হামলার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বীরা বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুনইসরায়েলিদের হামলা-নির্যাতন: অতিষ্ঠ বেদুইন পরিবারগুলো ছাড়ছে পশ্চিম তীর০৫ জুলাই ২০২৫