গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ঈদের সময় এমন কোনোদিন খুঁজে পাওয়া কষ্টকর, যেদিন রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন হয়নি। ফলে গেল ৯ মাস রাজধানীর বাসিন্দাদের ধৈর্য্যের সীমা ভেঙ্গে গেছে। তারা বিরক্তি প্রকাশ করে সরকারের দুর্বলতাকে দায়ী করছেন।

বৃহষ্পতিবার (২২ মে) সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে আন্দোলন চলছে। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের বাড়তি ভোগান্তি হিসেবে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টি।

বৃহষ্পতিবার সকাল থেকেই শাহবাগ, মৎস ভবন ও কাকরাইল মোড় অবরোধ করে পৃথকভাবে আন্দোলন করেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ফলে এসব এলাকার চারপাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষের গন্তব্যে পৌঁছানোর একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে দুই পা।

আরো পড়ুন:

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট

রাতে থেমে থেমে যানজট, সকালে স্বস্তি মহাসড়কে 

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পার্শ্ববর্তী প্রধান দুই সড়ক ও কাকরাইল মোড় এবং মৎস ভবন মোড় অবরোধ করে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রসারণ উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে পদত্যাগের দাবিতে সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের অনুসারীরা।

অন্যদিকে, সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে শাহবাগ মোড় ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

এসব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা শহর। সায়েন্সল্যাব, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়, পান্থপথ, বাংলামোটর,  কাওরানবাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণী ইত্যাদি সড়ক বন্ধ থাকার কারণে শত শত যানবাহন সড়কে আটকে আছে। ফলে এসব এলাকার অলি-গলিও যানবাহনের চাপে স্থবির হয়ে পড়েছে। 

রাজধানীর শাহবাগের বারডেম হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভর্তি শফিক ইসলামের মা। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমার বাসা রায়েরবাগ। আজ অনেক কষ্ট করে হাসপাতালে আসতে হয়েছে। বেশিরভাগ পথ পায়ে হেঁটে এসেছি। প্রতিদিন এমন আন্দোলন  আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য ভোগান্তি। এখন যে কেউ ইচ্ছা করলেই যেকোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা কেউ চিন্তা করে না। সরকারি উচিত এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।”

সদরঘাটগামী পথচারী সাওন সিকদার রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমি সাভার থেকে গাড়িতে রওনা দিয়েছিলাম। কিন্তু গাড়ি সায়েন্স ল্যাবে এসে আটকে গেছে। তাই এত ভারী মালামাল নিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের এই কষ্ট দেখার কেউ নেই। অনেক অসুস্থ মানুষ আটকা পড়ে আছে। কিন্তু গন্তব্যে যেতে পারছে না।”

তিনি বলেন, “যারা হাঁটতে পারে না, তাদের তো এখন গাড়িতে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই সরকারকে বলছি, প্রতিদিন এ রকম আন্দোলন চলতে থাকলে রাজধানীবাসী কি করে চলাচল করবে, সেই পথ দেখিয়ে দিন।”

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সাম্য হত্যার সঠিক বিচার না পেলে এবং মূল ঘাতকদের গ্রেপ্তার করা না হলে রাজপথ ছেড়ে যাব না। আমরা আরো বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাব। আমরা আজ তাদের আবার আহ্বান জানাচ্ছি, দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই বিষয়ের সুরাহা করতে হবে।”

গত ১৩ মে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে একদল দুর্বৃত্ত। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় রাত ১২টার দিকে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাম্যকে মৃত ঘোষণা করেন। এ হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করছে।

সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।

ঢাকা/রায়হান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য নজট ছ ত রদল র শ হব গ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে গিয়েছিলেন কক্সবাজারে, ফেরার পথে ট্রাকচাপায় মৃত্যু

বন্ধুদের সঙ্গে জয়পুরহাট থেকে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন মো. মাছুম (৪৫)। ভ্রমণ শেষে চার বন্ধু মিলে দুটি মোটরসাইকেলে চড়ে ফিরছিলেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরের শাহ আমানত সেতুর সংযোগ সড়কে পৌঁছান তাঁরা। এ সময় মাছুমের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয় একটি লবণবোঝাই ট্রাক। এতে সড়কে ছিটকে পড়লে ট্রাকচাপায় নিহত হন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরের শাহ আমানত সেতুর সংযোগ সড়কের তুলাতুলি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মাছুম জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বাসিন্দা। এ ঘটনায় মাছুমের পেছনে বসা আরোহী অক্ষত আছেন। তবে তাঁর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

পুলিশ জানায়, কক্সবাজার থেকে জয়পুরহাটে ফিরছিলেন তাঁরা। তুলাতুলি এলাকার অদূরে একটি লবণবোঝাই ট্রাক মাছুমের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এ সময় মাছুম ছিটকে পড়েন সড়কের ওপরে। তাঁর বন্ধু ও মোটরসাইকেল সড়কের পাশে পড়ে যায়। ট্রাকটি মাছুমকে মাড়িয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, মাছুমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাঁর ওই বন্ধু সেখানেই আছেন। বাকি দুজনকেও খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এলে বিস্তারিত নাম–ঠিকানা পাওয়া যাবে। এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ