প্রায় প্রতি দশকেই বলিউডে এমন একটি ছবি মুক্তি পায়, যা শুধু বিনোদন নয়, মানুষের মন ও মানসিকতা বদলে দেওয়ার সাহস রাখে। ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া আমির খানের ‘তারে জামিন পার’ ছিল তেমনই একটি সিনেমা, যা শিশুর মনস্তত্ত্ব নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করেছিল দর্শকদের। প্রায় ১৭ বছর পর সেই গল্পের উত্তরসূরি হিসেবে হাজির হচ্ছে ‘সিতারে জামিন পার’। আগামীকাল ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। এই ছবিতেও আছেন আমির খান।

গত কয়েক বছর বিশেষ ভালো কাটেনি বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট খ্যাত আমির খানের। ২০২২ সালে মুক্তি পায় এই অভিনেতার সর্বশেষ সিনেমা ‘লাল সিংহ চাড্ডা’; যা বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। জনপ্রিয় হলিউড অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস অভিনীত ‘ফরেস্ট গাম্প’ অবলম্বনে তৈরি ছবির ব্যর্থতার পরে বেশ কয়েক বছর প্রচারের আলো থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন আমির। অভিনয় থেকেও বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরপর হঠাৎ তিনি ঘোষণা করেন নতুন সিনেমায় কাজের কথা। বলা যায় ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘তারে জামিন পার’ ছবির সূত্র ধরেই যেন সাফল্য খুঁজছেন আমির।

‘তারে জামিন পার’ ছবিতে দেখানো হয়েছিল ১০ বছরের খুদেকে, যে কিনা ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত। এবার এই ছবির গল্পের আঙ্গিকেই তৈরি হচ্ছে ‘সিতারে জামিন পার’। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে ডাউন সিনড্রোম-এর মতো বিষয়কে। ‘তারে জামিন পার’-এর মাধ্যমে ডিসলেক্সিয়া রোগটি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে চেয়েছিলেন অভিনেতা। এই ছবিতে তাঁর অভিনীত ‘নিকুম্ভ স্যার’-এর চরিত্রটি আজ গেঁথে রয়েছে দর্শকদের হৃদয়ে।

‘সিতারে জামিন পার’ এমন একটা ছবি, যেখানে ডাউন সিনড্রোমের শিকার মানুষরা কীসের মধ্যে দিয়ে যান, সেটাই তুলে ধরা হয়েছে। খুব স্পর্শকাতর একটি বিষয়। যারা ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত, তারাও বাকি পাঁচজনের মতো ব্যবহার প্রত্যাশা করেন অন্যদের থেকে। ‘সিতারে জামিন পার’ সিনেমায় ১০ জন নতুন মুখ নিয়ে হাজির হয়েছেন আমির। যাদের প্রত্যেকেই বড় পর্দায় অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন। এই ১০ জন হলেন– আরৌশ দত্ত, গোপী কৃষ্ণ ভার্মা, সাম্বিত দেশাই, বেদান্ত শর্মা, আয়ুষ বানসালি, আশীষ পেন্ডসে, ঋষি সাহানি, ঋষভ জৈন, নমন মিশ্র ও সিমরান মঙ্গেশকর। তবে পোস্টারে আমির খানই মুখ্য। তার পরনে বাস্কেটবল জার্সি ও ট্র্যাক প্যান্ট, গলায় ঝুলছে হুইসেল। আমিরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন ১০ জন।

‘সিতারে জামিন পার’ আমির কেবল মূল চরিত্রের অভিনেতাই নন, প্রযোজনাও করছেন। ‘সিতারে জামিন পার’ সিনেমাতে আমিরকে পাওয়া যাবে গুরুর ভূমিকায়। তবে ‘তারে জামিন পার’-এর মতো আর্টের শিক্ষক নয়, এবার তিনি আসছেন বাস্কেটবল কোচ হয়ে। আমিরের চরিত্রের নাম গুলশান। প্যারালিম্পিকের জন্য প্রতিবন্ধীদের একটি দলকে প্রশিক্ষণ দেন তিনি। আমির অভিনীত গুলশান চরিত্রটি তারে জামিন পারের নিকুম্ব চরিত্রের ঠিক বিপরীত। নিকুম্ব ছিলেন হুল্লোড়ে স্বভাবের; আর গুলশান বেশ কড়া মেজাজের, সিনিয়র কোচদের মারধর করে। তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়েও ওঠে প্রশ্ন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একদল মানুষ কীভাবে তাঁকে একজন ভালো মানুষ হতে শেখায়, সেটাই দেখা যাবে সিনেমায়। ‘তারে জামিন পার’ আমির পরিচালনা করলেও এর সিকুয়ালটি পরিচালনা করেছেন আর এস প্রসন্ন। চিত্রনাট্য লিখেছেন দিব্য নিধি শর্মা।

এই ছবি প্রসঙ্গে আমির জানান, ‘সিতারে জামিন পার’ ছবির মূল সুর একই থাকছে। আমির বলেন, ‘আগের ছবিতে আমি ঈশানকে সাহায্য করেছিলাম, এবার বিষয়টা উল্টে যাবে। এই ছবির কাহিনি যেমন হৃদয় ছুঁয়ে যায়, তেমনই এটি তুলে ধরে পিতৃত্ব, সম্পর্ক, দায়িত্ব এবং সমাজে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অবস্থান নিয়ে এক নতুন আলোচনার দরজা।

গত ১৩ মে মুক্তি পায় ‘সিতারে জামিন পার’-এর ট্রেলার। ট্রেলার মুক্তি পেতেই দুর্দান্ত সাড়ো ফেলেছে। ৩ মিনিটের ট্রেলারে দেখা যাচ্ছে যে, আমির একজন বাস্কেটবল কোচ। পুলিশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ার পরে আদালত তাকে শাস্তিস্বরুপ জরিমানা করে যে তাকে মেন্টালি চ্যালেঞ্জ লোকেদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সেখান থেকেই গল্পের শুরু। ট্রেলারটি পোস্ট করে আমির খানের প্রোডাকশন হাউস সিনেমায় লিখেছে, ‘১ টিংগু বাস্কেটবল কোচ, ১০ তুফানি সিতারে এবং ওদের জার্নি।’

‘সাবকা আপনা আপনা নরমাল (সবারই নিজস্ব স্বাভাবিকতা আছে)’ স্লোগান নিয়ে এই চলচ্চিত্রটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের পক্ষে কথা বলে এবং এমন একটি বার্তা তুলে ধরতে চায়, যা দর্শকদের অন্তর ছুঁয়ে যাবে। আমির জানিয়েছেন ‘এই সিনেমার মূল লক্ষ্যই হলো সব ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো এবং প্রতিটি মানুষকে তাঁর নিজস্ব স্বাভাবিকতাসহ গ্রহণ করা।’ আমির বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, সিনেমাটি সব শ্রেণির দর্শকের কাছে ভালো লাগবে।’

বলিউডে বহুমাত্রিক অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা আমির কিছুদিন আগে বলেছেন, তিনি তাঁর কর্মজীবনের শেষ দশকে প্রবেশ করেছেন। তাই কিছুদিন আগে অভিনয়কে বিদায় জানাতে মন সায় দিলেও এখনকার সিদ্ধান্ত হলো কাজের কোনো সীমা তিনি রাখতে চান না। সেই পরিকল্পনা থেকে মিস্টার পারফেকশনিস্ট-খ্যাত এই অভিনেতা এখন ৬টি সিনেমা নিয়ে কাজ করছেন বলে নিজেই জানিয়েছেন। তবে এই ৬টি সিনেমার নাম, বা তিনি কোনটিতে অভিনয় করছেন আর কোনটি নির্মাণ করছেন সেটি প্রকাশ করেননি। ‘সিতারে জামিন পার’ ওই ছয়টি কাজের একটি কিনা সেটিও জানাননি আমির।

 

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম র খ ন ব স ক টবল আম র খ ন চর ত র ন আম র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাস্থ্যে সংস্কারের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের বিষয়গুলো সরকারের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বরং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘স্বাস্থ্য পদ্ধতি সংস্কার: আমরা কোথায়’ শীর্ষক নীতি সংলাপে অর্থনীতিবিদ, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য এই কথা বলেন। বেসরকারি চিন্তক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও নাগরিক সংগঠন ইউএইচসি ফোরাম যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। এ আয়োজনে সহায়তা করে ইউনিসেফ।

সংলাপে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন হয়েছে এবং তারা একটি প্রতিবেদন দিয়েছে, এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা। বাস্তবায়নে বুদ্ধিমত্তা, অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং কোন কাজের পর কোন কাজ বা কোন কাজের সঙ্গে কোন কাজ (সিকোয়েন্সিং) সেই বিষয়গুলো ঠিক করা দরকার।

প্রথম উপস্থাপনায় ইউএসসি ফোরামের সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ মো. আমিনুল হাসান বলেন, সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রথমেই দরকার একটি টাস্কফোর্স তৈরি করা। টাস্কফোর্সের কাজ কী হবে তার বিশদ বর্ণনা করেন তিনি। সংস্কারের শেষ কাজটি হবে স্বাস্থ্য কমিশন গঠন। কমিশন গঠিত হলে টাস্কফোর্সের বিলুপ্তি ঘটবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রতিবেদনে ৬০০ এর বেশি সুপারিশ রয়েছে। সব সুপারিশই সঠিক, সব বাস্তবায়ন করা উচিত। অত্যাবশ্যক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং অত্যাবশ্যক জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কেউ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে এক শ দিনও সময় নেই। যা করার দ্রুত করতে হবে। কেউ বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, সংস্কারকাজ আর এগোবে না। একজন বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্য যেন গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায় তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হওয়া জরুরি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, বিনা মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করতে পারে। একইভাবে স্বাস্থ্য কমিশন অধ্যাদেশের মাধ্যমে গঠন করতে পারে।

আমলাতন্ত্র যেকোনো সংস্কারের সবচেয়ে বড় বাধা—এমন মন্তব্য করে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের অন্য একজন সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হযবরল অবস্থা। এ রকম অগোছালো মন্ত্রণালয় আর একটিও নেই। এখনই বড় কোনো কিছু করার উপযুক্ত সময়।’

অনুষ্ঠানে একাধিক আলোচক বলেন, বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় স্বাস্থ্য খাত নেই।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বিশ্বের যেসব দেশে রাষ্ট্রপ্রধানেরা স্বাস্থ্যের জন্য উদ্যোগী ও সক্রিয় হয়েছেন, সেখানে স্বাস্থ্যে উন্নতি হয়েছে। এ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে তা দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ওষুধ খাত নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফের প্রতিনিধি ছাড়াও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও এবং দেশি এনজিওর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ