দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমন্বয়ক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী নামে এক যুবলীগ নেতা। এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

১৫ জুন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম স্বাক্ষরিত ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমন্বয়ক কমিটি অনুমোদন করা হয়। সমন্বয়ক কমিটিতে প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন সোহেল সাজ্জাদ। সেই সদস্য পদে ৯ নম্বরে নাম রয়েছে ওমর ফারুক চৌধুরীর।

কমিটি গঠনের পর থেকেই ওমর ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। কমিটিতে সদস্য হিসেবে স্থান পাওয়া ওমর ফারুক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ইসবপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

চিরিরবন্দর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জুয়েল রানা জীহাদ জানান, এনসিপির চিরিরবন্দর উপজেলার সমন্বয় কমিটিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতার নাম এসেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তারা কি আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করছে। এটি মেনে নেওয়ার মতো না।

চিরিরবন্দর উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান সমন্বয়ক সোহেল সাজ্জাদ বলেন, এনসিপির কমিটি গঠনের আগে ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। তিনি বহু আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার পর থেকে আর কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। কমিটি গঠনের পর জানা গেল তিনি বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে তাঁকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ওমর ফ র ক চ ধ র ক কম ট কম ট ত র জন ত য বল গ সদস য এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

আফসোসে রেখে গল টেস্ট ড্র

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাজমুল হোসেন শান্তকে তুলাধুনা করা হচ্ছিল গল টেস্ট ড্র মেনে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই। সমর্থকদের কাছে মনে হয়েছে, পঞ্চম দিন সকালে শান্ত মন্থর ব্যাটিং করায় আগেভাগে ইনিংস ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। অধিনায়ক হিসেবে তিনি ম্যাচ জয়ের চিন্তা না করে রক্ষণাত্মক কৌশল নেন নিরাপদ ড্রয়ের লক্ষ্যে। এটিও বলা হয়েছে, অধিনায়কের উদ্দেশ্য ছিল সেঞ্চুরি করা। প্রত্যাশা পূরণ না হলে সমর্থকরা কখনও কখনও হয়ে ওঠেন সমালোচক। গল টেস্ট ড্র করা নিয়ে তাদের সেই আক্ষেপ। অনেক যদি, কিন্তু মেলানো গেলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া টেস্ট ম্যাচটি হয়তো শেষ দুই সেশনে জয়ের জন্য খেলা সম্ভব হতো। শান্তরা সেই যদি, কিন্তু মেলাতে পারেননি মূলত পঞ্চম দিন সকালে এক ঘণ্টা ব্যাটিং করার পর বৃষ্টির কারণে তিন ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকায়। সকালের বৃষ্টিই বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন থেকে ছিটকে দেয়। জয়ের সমীকরণ না মেলার আক্ষেপ থাকলেও ড্র টেস্টও প্রাপ্তিতে ভরপুর। শান্তর জোড়া সেঞ্চুরি, মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি, নাঈম হাসানের পাঁচ উইকেট অর্জনে গল থেকে আত্মবিশ্বাসের বাতাসে ফুসফুস ভরে নেওয়া গেছে কলম্বোর সিরিজ নির্ধারণী টেস্টের জন্য। ২৫ জুন সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট। 

স্কিল, ফিটনেসের সঙ্গে সাহস দেখাতে পারাও ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে সাহসী লোকের ভীষণ অভাব এ মুহূর্তে। টি২০ বিশ্বকাপ থেকেই এই দুর্বলতা বড় হয়ে ধরা দিচ্ছে। সেমিফাইনালের সমীকরণ নিয়ে খেলতে নেমেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মতো তুখোড় বুদ্ধিমান কোচও। গল টেস্টে ফিল সিমন্স, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ড্রেসিংরুমে থেকে নাজমুল হোসেন শান্তর কাছে ইনিংস ঘোষণা করার বার্তা দেওয়ার সাহস করেননি; বরং টেস্ট ম্যাচটি ড্র করার পরিকল্পনায় শান্তকে মন্থর ব্যাটিং করে সেঞ্চুরি করার সুযোগ করে দেন তারা। অথচ অধিনায়ক সেঞ্চুরি না করে লিড দেড়শ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে জয়ের লক্ষ্যে বোলিং করতে পারতেন। আক্রমণাত্মক মেজাজে বোলিং-ফিল্ডিং করে গেলে ম্যাচের শেষটা উত্তাপ ছড়ানো রোমাঞ্চকর হতে পারত। এই জায়গাতেই মুনশিয়ানার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। 

১০ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন শেষ করে ৫৭ ওভার খেলে ৩ উইকেটে ১৭৭ রানে। ১৮৭ রানের লিড নিয়ে পঞ্চম ও শেষ দিন ব্যাট করতে নামেন অপরাজিত জুটি মুশফিক-শান্ত। প্রথম থেকে মন্থর ব্যাটিং করতে থাকেন দু’জন। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ১৯ ওভারে ৬০ রান যোগ করেন তারা। বৃষ্টির কারণে বেলা ১১টা ৬ মিনিটে খেলা হওয়া ম্যাচ তিন ঘণ্টা পর আবার শুরু হয় দুপুর ২টা ৮ মিনিটে। শান্তরা ১১ ওভার না খেলে চাইলে দুই ওভার পরই ইনিংস ঘোষণা করতে পারতেন। তখনও ২৫৫ রানের লক্ষ্য দেওয়া যেত শ্রীলঙ্কাকে। এ ক্ষেত্রে শান্তর সেঞ্চুরি মিস হলেও বোলাররা জয়ের সুযোগ তৈরি করতে পারতেন। সেটি না করে বৃষ্টির পর ১১ ওভার খেলে ৬ উইকেটে ২৮৫ রানে পৌঁছে ইনিংস ঘোষণা করেন তিনি। শান্তর সেঞ্চুরি করতে লেগেছে ১৯০টি বল। তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১২৫ রানে।

টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করার রেকর্ডবুকে নতুন করে নাম তোলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দেশের পর বিদেশেও এক টেস্টে দুই সেঞ্চুরিয়ান তিনি। শান্ত প্রথম জোড়া সেঞ্চুরি করেন ২০২৩ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে। বিদেশের মাটিতে এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেশি তিনি। টেস্ট ম্যাচে দুবার জোড়া সেঞ্চুরি করা দেশের একমাত্র ব্যাটার হলেন শান্ত। তবে দেশের প্রথম জোড়া সেঞ্চুরিয়ান হলেন মুমিনুল হক। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংসে শতক পেয়েছিলেন বাঁহাতি এ ব্যাটার। গল টেস্টের সেরা খেলোয়াড় শান্ত জোড়া সেঞ্চুরিতে ২৪৮ রান করেন। বাংলাদেশ অধিনায়কের জন্য এটি রেকর্ড। ২০১৩ সালে এই গলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মুশফিকের ২০০ রানই ছিল অধিনায়ক হিসেবে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। এদিক থেকে গল টেস্টকে শান্তর টেস্টও বলা যেতে পারে। অধিনায়কের প্রাপ্তির টেস্টে বাংলাদেশের অর্জন ৪ পয়েন্ট। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরের মতো চতুর্থ আসরও পয়েন্ট অর্জনের মধ্য দিয়ে শুরু করা গেছে। এই প্রাপ্তি দেশের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ