সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে: বদিউল আলম
Published: 21st, June 2025 GMT
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী অঙ্গনটাকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। রাজনৈতিক অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। দুর্বৃত্তায়নমুক্ত করতে হবে। টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে। আমাদের নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন শক্তিশালী করতে হবে।’
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন বদিউল আলম মজুমদার।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে হবে। ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করতে হবে। রাজনীতি থেকে দুর্বৃত্তায়ন দূর করতে হবে, টাকার প্রভাব থামাতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করতে হবে। তিনি নাগরিকদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা সক্রিয় হোন, প্রতিবাদী হোন, রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক হিসেবে দায়িত্ব নিন। তাহলেই গণতন্ত্র টিকে থাকবে, নির্বাচন হবে অর্থবহ এবং রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে সঠিক পথে।
অতীতে পরিবর্তনের অনেক সুযোগ নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে বদিউল আলম বলেন, এবার সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের এই সম্ভাবনা কোনোভাবেই বিনষ্ট করা যাবে না। রাজনৈতিক নেতারা এবার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন বলে তিনি আশা করেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমাদের অভূতপূর্ব গণ–অভ্যুত্থানের অর্জন ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। লন্ডনে নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা বৈঠকের পর এখন সরকারের উচিত হবে রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আস্থায় নিয়ে বিচার, সংস্কার ও মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ঘোষণা করা। তিনি সরকারকে তাদের অ্যাজেন্ডা ছোট করে আনার পরামর্শ দেন।
দেশের ভেতরে ও বাইরে অনেকেই অনৈক্যের সুযোগ নিতে ওত পেতে আছে বলে উল্লেখ করেন সাইফুল হক। তিনি বলেন, দেশের মানুষের অধিকার ও মুক্তি অর্জনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আগামী দিনগুলোতেও আপসহীন ধারায় তার সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
এ অনুষ্ঠানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান, রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
গানে–আবৃত্তিতে রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা
জমিদারির কাজে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসরে বহুবার ভ্রমণ করেছিলেন। পদ্মায় বোটে করে ভাসতে ভাসতে দেখেছেন বাংলার সজল সবুজ প্রকৃতি। নদীর দুই পারের মানুষের জীবনযাত্রা। বাউল, ভাটিয়ালি গানের সুরে মোহিত হয়েছে কবির চিত্ত। কবি সেই সব দেখা ও শোনার অভিজ্ঞতা, আবেগ, অনুভব প্রকাশ করেছেন গানে, কবিতায়, গল্পে আর ‘ছিন্নপত্র’ নামের চিঠিতে। কবির প্রয়াণ দিবসের আয়োজনে সেই রচনা থেকে পাঠ আর গানে গানে শ্রদ্ধা নিবেদন করল ছায়ানট।
গতকাল বুধবার ২২ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে ‘অন্তরতর হে-বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। সন্ধ্যা সাতটায় ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সম্মেলক কণ্ঠে ‘অন্তর মম বিকশিত কর অন্তরতর হে’ গানটি দিয়ে। পরে ইফফাত বিনতে নাজি গেয়েছেন ‘চিত্ত পিপাসিতরে গীত সুধার তরে’। গানের ফাঁকে ফাাঁকে পদ্মাপারের জীবনযাত্রা নিয়ে কবির লেখা থেকে পাঠ ও কবিতা আবৃত্তি করেছেন সুমনা বিশ্বাস ও জহিরুল হক খান। এরপর আবার সম্মেলক কণ্ঠের গান ‘হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে’।
একদা পদ্মাঘাটে লেগেছিল কবির বোট। পাশেই গ্রামের কোনো এক বধূকে বিদায় দিতে সমবেত হয়েছিল তাঁর বিভিন্ন বয়সী আত্মীয়স্বজন। নানা কথোপকথনে মেতে উঠেছিলেন তাঁরা। কবি সেই বর্ণনা লিখেছিলেন তাঁর অনন্য কাব্যময় ভাষায়। সেটি পাঠ করা হলো। তারপর দুটি একক কণ্ঠের গান। ‘ওলো সই, ওলো সই আমার ইচ্ছা করে তোদের মতো মনের কথা কই’ গানটি গেয়ে শোনালেন মাসকুরা আখতার। অমেয়া প্রতীতি পরিবেশন করলেন ‘তোমার গোপন কথাটি, সখী, রেখো না মনে’।
এবার এক ধবল জ্যোৎস্নার বর্ণনা। পদ্মার জনমানবহীন, বৃক্ষ–তৃণশূন্য, দিগন্তবিস্তৃত ধু ধু বালুচর। কোজাগর পূর্ণিমার জ্যোৎস্নাস্নাত সেই চর দেখে কবির মন ভরে উঠেছিল ভাবাবেগে। তাঁর রচনা থেকে সে রাতের বর্ণনা পাঠের পর অভয়া দত্ত গেয়ে শোনালেন ‘আজি যে রজনী যায়’। দীপ্র নিশান্ত শোনালেন ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা তুমি আমার সাধের সাধনা।’
অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল পাঠ আবৃত্তি আর গানে গানে। গান নির্বাচন করা হয়েছিল পাঠ ও আবৃত্তির বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। ‘দুই পাখি’ কবিতাটি আবৃত্তির পরে কবিতাটির গান পরিবেশন করেন তাহমিদ ওয়াসীফ। ‘বঁধু মিছে রাগ করো না’ গেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
পূর্ব বাংলায় এসে বাউলগানের সুর, মরমি ভাবধারায় কবি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সে কথা তিনি লিখেছেনও নানা রচনা ও চিঠিতে। তার খানিকটা পাঠ করে শোনানো হলো শ্রোতাদের। তারপর ‘আমি কান পেতে রই’ গানটি পরিবেশন করলেন অভিজিৎ দাস।
কবির অন্তরের যে আধ্যাত্মিক ভাব ও ভাবনা, সেসব নিয়েই তিনি নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো রচনা করছিলেন। এই কবিতাগুলো নিয়ে তখন স্তুতি ও সমালোচনা, চারপাশের নানা রকম কোলাহল। সেসবের কোনো কিছুতেই তিনি বিচলিত বোধ করছিলেন না। বন্ধু বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুকে তাঁর ভাব–ভাবনার কথা জানিয়ে পত্র রচনা করেছিলেন কবি। পত্র থেকে পাঠ করা হলো। পরে ‘কোলাহল তো বারণ হলো’ গানটি গাইলেন মনীষা সরকার। আজিজুর রহমান তুহিন শোনালেন ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’। শেষে সম্মেলক কণ্ঠে ‘আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ পরিবেশনা। আর সমাপ্তি হলো বরাবরের মতোই জাতীয় সংগীত দিয়ে।