সংস্কারে ঐকমত্য না হলে গণভোট চায় জামায়াত
Published: 23rd, June 2025 GMT
মৌলিক সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হলে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী। সোমবার দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের বৈঠকে এ অবস্থান তুলে ধরেছে জামায়াত।
রাজধানীর মগবাজারে জামায়াত কার্যালয়ে বৈঠকের পর দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, হাইকমিশনার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। জামায়াত জানিয়েছে, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রীত্বের সুযোগ না রাখা, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, নির্বাচনে ভোটের অনুপাতে সংসদের আসন বন্টন, ভোটার তালিকায় প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্তের আলোচনা হয়েছে। কিছু বিষয়ে একমত হলেও মৌলিক সংস্কারে এখনও ঐকমত্য হয়নি। দুঃখজনকভাবে যদি তা না হয়, তবে জামায়াত এসব বিষয়ে গণভোটের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে।
জামায়াত সুষ্ঠু নির্বাচন চায় জানিয়ে ডা.
জামায়াত ভোটের প্রতিটি বুথে সিসি ক্যামেরা চায় জানিয়ে ডা. তাহের বলেছেন, এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় অনুদান হিসেবে দিতে কানাডাসহ উন্নয়ন সহযোগী বন্ধুদের আহ্বান জানায় জামায়াত। আর্থিক অনুদানের বিষয়টি জাতিসংঘের মাধ্যমে সমন্বয়ের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন হাইকমিশনার।
আগামী নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু করতে কানাডা কারিগরি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জামায়াত নায়েবে আমির। তিনি জানান, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদারের আশা করা হয়েছে।
বৈঠকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা ছিলেন। ছিলেন কানাডা হাইকমিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিওভান কের এবং নিসার আহমেদ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম ঐকমত য
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের ভিত্তিতে হতে হবে আগামী নির্বাচন: জামায়াত
জামায়াতে ইসলামী মনে করে, অন্তরবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্রে জন–আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হয়নি। একই সঙ্গে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে বলে জানিয়েছে দলটি।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথাগুলো বলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণাকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের দাবির বাস্তবায়ন বলে মন্তব্য করেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের হওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই। তবে তার আগে জুলাই সনদদের আইনি ভিত্তি ও নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সরকার চাইলে এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করে জামায়াত।
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) দাবি জানিয়ে আসছে জামায়াত। পিআর পদ্ধতি ছাড়া জামায়াত নির্বাচন অংশগ্রহণ করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘এটি আমাদের দাবি। আমরা আমাদের দাবির ব্যাপারে আন্দোলন করব। পরবর্তী সময়ে কী হয়, সেটি দেখার বিষয়।’
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা গতকাল যে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন, এই ঘোষণাপত্র একটি অপূর্ণাঙ্গ বিবৃতি। এতে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। ঘোষণাপত্রে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের কথা বলা হলেও ১৯৪৭-এর আজাদীকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ নেই। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাশিক্ষক ও ছাত্র, প্রবাসী ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের ভূমিকার উল্লেখ নেই, যা ইতিহাসের প্রতি অবিচার ও অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ৯ দফা, যা এক দফায় রূপান্তরিত হয়েছিল। সে বিষয়টিও ঘোষণাপত্রে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই সনদ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্রে তার উল্লেখ নেই। ঘোষণায় কখন কীভাবে তা কার্যকর করা হবে, তা উল্লেখ না করে ঘোষণাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। পরবর্তী সরকারের হাতে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়ায় হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই চেতনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।
জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। তা না করায় জাতি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার দীর্ঘদিনের যে ঐতিহ্য, তা উপেক্ষা করে জুলাই ঘোষণার দিনেই নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে। তথাপি জাতীয় স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।’
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন দ্রুত সম্পন্ন করে অধ্যাদেশ, এলএফও বা গণভোটের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি প্রদান করা না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের এই নেতা। তিনি বলেন, তাই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও সংস্থার কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ও প্রশাসনকে স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের সব স্তরে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে যে প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল, তা পূরণ না হওয়ায় জনগণের মধ্যে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারসহ জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে নতুনভাবে উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা কী হবে, তা জাতির কাছে অস্পষ্ট। এমন অবস্থায় তাঁরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, অনতিবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্রে জন–আকাঙ্ক্ষার অপরিহার্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হোক।