মৌলিক সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হলে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী। সোমবার দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের বৈঠকে এ অবস্থান তুলে ধরেছে জামায়াত। 

রাজধানীর মগবাজারে জামায়াত কার্যালয়ে বৈঠকের পর দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, হাইকমিশনার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। জামায়াত জানিয়েছে, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রীত্বের সুযোগ না রাখা, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, নির্বাচনে ভোটের অনুপাতে সংসদের আসন বন্টন, ভোটার তালিকায় প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্তের আলোচনা হয়েছে। কিছু বিষয়ে একমত হলেও মৌলিক সংস্কারে এখনও ঐকমত্য হয়নি। দুঃখজনকভাবে যদি তা না হয়, তবে জামায়াত এসব বিষয়ে গণভোটের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। 

জামায়াত সুষ্ঠু নির্বাচন চায় জানিয়ে ডা.

তাহের বলেছেন, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রয়োজন। আর কেউ যাতে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে; এ বিষয়ে জামায়াত তার উদ্বেগ সরকারকে জানিয়েছে। 

জামায়াত ভোটের প্রতিটি বুথে সিসি ক্যামেরা চায় জানিয়ে ডা. তাহের বলেছেন,  এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় অনুদান হিসেবে দিতে কানাডাসহ উন্নয়ন সহযোগী বন্ধুদের আহ্বান জানায় জামায়াত। আর্থিক অনুদানের বিষয়টি জাতিসংঘের মাধ্যমে সমন্বয়ের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন হাইকমিশনার। 
আগামী নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু করতে কানাডা কারিগরি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জামায়াত নায়েবে আমির। তিনি জানান, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদারের আশা করা হয়েছে। 

বৈঠকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা ছিলেন। ছিলেন কানাডা হাইকমিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিওভান কের এবং নিসার আহমেদ। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম ঐকমত য

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আরও পর্যালোচনা হচ্ছে

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে ‘সংবিধান আদেশ’ জারি ও পরবর্তী সময়ে গণভোটের যে সুপারিশ করা হয়েছিল, তা নিয়ে আরও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানিয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কমিশনকে আবার মতামত দেবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এরপর কমিশনের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের আবার বৈঠক হবে।

বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা আপাতত মুলতবি রয়েছে। আগামী অক্টোবর মাসের শুরুতে মুলতবি আলোচনা শুরু হতে পারে। সেখানে বিশেষজ্ঞদের মতামত আবার তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার মধ্যে গত বুধবার বিশেষজ্ঞদের নতুন পরামর্শ প্রস্তাব সামনে আনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পরামর্শ প্রস্তাবে বলা হয়, মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করতে পারে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এরপর আদেশটি নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যেতে পারে।

তবে এই প্রস্তাব নিয়ে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল দ্বিমত জানায়। সংবিধানের সংশোধন বা সংবিধান আদেশ অন্তর্বর্তী সরকার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ করতে পারবে কি না বা অন্য কোনো উপায়ে এটা করা যায় কি না, এ বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। আরও কয়েকটি দল সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার কথা বলেছে।

তবে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিএনপির এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা জামায়াতের প্রস্তাবের কাছাকাছি। আর এনসিপি জানিয়েছিল, নিজেদের দলে আলোচনা করে পরে তাদের অবস্থান জানাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশেষজ্ঞরা যে পদ্ধতি সুপারিশ করেছেন, তা কার্যকর হলে কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে। সংবিধান আদেশ জারি ও কার্যকর করার পর গণভোটে যদি জুলাই সনদ পাস না হয়, তাহলে কী হবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এর পাশাপাশি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজনৈতিক দলগুলো যে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনটি পদ্ধতির সমন্বয়ে কোনো উপায় বের করা যায় কি না, সেটাও ভাবা হবে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি নিয়ে গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবারও সভা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। জাতীয় সংসদের এলডি হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক।

কমিশনের উপস্থাপন করা সনদের বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সম্ভাব্য সুপারিশমালা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনার সারসংক্ষেপ বিশেষজ্ঞদের অবহিত করা হয়। আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত, পরামর্শ এবং উদ্বেগের দিকগুলো বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়; যাতে বিশেষজ্ঞরা সামগ্রিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে গতকালের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সভায় অংশ নেন।

জানতে চাইলে মনির হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের মনে হয়েছে, বাস্তবায়ন পদ্ধতির যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা আছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। এটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আরও বৈঠক হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজনীতিতে নারীদের এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য
  • দেশকে বিপর্যয়ে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে: ইসমাইল জবিউল্লাহ
  • অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে চাই রাজনৈতিক সমঝোতা
  • কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জেদ ও ভুলের কারণে নির্বাচন হুমকির মুখে পড়তে পারে: এবি পার্টি
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আরও পর্যালোচনা হচ্ছে