১০০ ডলার দেশে পাঠালেই বাড়তি ৩০৭ টাকা বেশি পাবেন
Published: 26th, June 2025 GMT
আপনি কি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন? সেখানে উপার্জন করছেন বা সরকারি ভাতা পাচ্ছেন? বৈধ পথে, অর্থাৎ বাংলাদেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার পাঠালেই সরকার আপনাকে দিচ্ছে আর্থিক প্রণোদনা। ১০০ ডলার দেশে পাঠালে আপনি পাচ্ছেন আড়াই ডলার আর্থিক প্রণোদনা।
ফলে প্রবাসে অবস্থান করা কোনো বাংলাদেশি ১০০ ডলার পাঠালে দেশে তাঁর আত্মীয় পাচ্ছেন ১২ হাজার ৩০০ টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসাবে)। এর সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে এই হিসাবে দেওয়া হয় ৩০৭ টাকা ৫০ পয়সা।
কীভাবে পাঠাবেন
আপনি যে দেশেই থাকেন না কেন, সেই দেশের মুদ্রায় আয় পাঠালে তা ডলার হিসেবে দেশে আসে। ব্যাংকগুলো তা বিতরণ করে বাংলাদেশি টাকায়। যদি কোনো প্রবাসী ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অন্য মাধ্যমে দেশে আয় পাঠান, তাহলে এ প্রণোদনা পাচ্ছেন না। ফলে বৈধ পথে প্রবাসী আয় দিন দিন বাড়ছে। প্রণোদনা পেতে আপনাকে অবশ্যই বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে হবে। এ ছাড়া এখন ব্যাংকে ডলারের দামও ভালো।
বাংলাদেশে বিভিন্ন উপায়ে প্রবাসী আয়ের অর্থ গ্রহণ করা যায়। ব্যাংক হিসাব না থাকলেও প্রবাসী আয়ের অর্থ পাওয়া যায়। যাঁদের ব্যাংক হিসাব রয়েছে, তাঁরা সেই হিসাবে অর্থ নিতে পারেন। পাশাপাশি পিনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে অর্থ নেওয়া যায়। এ পদ্ধতিতে প্রবাসী আয় পাঠানো ব্যক্তির স্বজনের কাছে পিন আসবে। বিদেশ থেকে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানি গ্রামসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ পাঠানো যায়। সেই পিন নিয়ে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানি গ্রাম লেখা ব্যাংক বা এনজিওতে গেলেই প্রাপ্য টাকা দিয়ে দেবে। পিন অনেকটা গোপন নম্বরের মতো। এই পিন নিয়ে ওই রেমিট্যান্স হাউসগুলোয় গেলেই প্রবাসী আয়ের টাকার পাশাপাশি সরকারের প্রণোদনার বাড়তি টাকা দেবে। প্রতি ১০০ ডলারে বাড়তি ৩০৭ টাকা ৫০ পয়সা বেশি পাবেন।
এ ছাড়া মোবাইলে আর্থিক সেবা বিকাশ, রকেট, নগদ হিসাবেও সরাসরি প্রবাসী আয়ের অর্থ গ্রহণ করা যায়। এ জন্য কোনো হিসাব প্রয়োজন হয় না। সাধারণ বিদেশ থেকে অর্থ পাঠানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্বজনের কাছে পৌঁছে যায়। ফলে দেশে প্রবাসী আয়ের অর্থ গ্রহণ করা আগের চেয়ে সহজ হয়েছে।
বিদেশ থেকে প্রবাসীরা প্রায় বছরখানেক ধরে বৈধ পথে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন। মূলত অর্থ পাচার কমে আসায় এবং বিদেশ থেকে অর্থ পাঠানো সহজ হওয়ায় প্রবাসীরা তাঁদের আয় পাঠাতে বৈধ পথকে বেছে নিয়েছেন।
রেমিট্যান্স কত এল
দেশে চলতি জুনের প্রথম ৩ সপ্তাহে ১৯৮ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে শেষ ৩ দিনে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের জুনের প্রথম ৩ সপ্তাহে এসেছিল ১৯১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়। সে হিসাবে চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৪ শতাংশ।
প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান। তাঁরা বলেন, ডলারের দাম নিয়ে অস্থিরতাও কমেছে। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ দর ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাসী আয় কিনছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২১ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ২ হাজার ৩২৯ কোটি ডলারের। তার মানে, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অর থ প ঠ প রব স ব ধ পথ আয় প ঠ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সাগর থেকে মাছ আহরণ বাংলাদেশের কমছে, ভারত-মিয়ানমারে বাড়ছে
বঙ্গোপসাগর থেকে গত তিন বছর বাংলাদেশের মাছ আহরণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ব্যাপকভাবে কমেছে সামুদ্রিক ইলিশ, কাঁকড়া ও চিংড়ি আহরণ। সাগর থেকে মাছ ধরার পরিমাণ কমতে থাকায় সার্বিকভাবে দেশের মাছের জোগানের গতিও কমে গেছে। যদিও ভিন্ন চিত্র প্রতিবেশী দেশগুলোর। বছর বছর সাগর থেকে মাছ ধরা বাড়িয়ে মাছ আহরণে বিশ্বের শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ভারত। এমনকি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারেও প্রতিবছর বাড়ছে সামুদ্রিক মাছ আহরণ।
সাগর থেকে বাংলাদেশের মাছ আহরণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ঘূর্ণিঝড়কে দায়ী করছেন এ দেশের মৎস্য কর্মকর্তারা। তা ছাড়া অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণেও মাছের মজুত কমে আসছে বলে জানান তাঁরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট সামুদ্রিক মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৬ হাজার টন। পরের অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৭৯ হাজার টনে। সর্বশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ২৮ হাজার টনে। অর্থাৎ ২০২২–২৩ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে মাছ আহরণ প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ কমেছে। গত জুনে শেষ হওয়া ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও কমেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এখনো অনুষ্ঠানিকভাবে গত অর্থবছরের তথ্য প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।
সমুদ্র খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে সাগরে অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণে মাছের মজুত কমে গেছে। এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের সামুদ্রিক শাখার সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ২০ বছর আগেও সাগরে বাণিজ্যিক ট্রলারের সংখ্যা ছিল এক শর কম। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৫টিতে। তিনি জানান, সাগরের ৪০ মিটারের ভেতরে মাছ না ধরার কথা থাকলেও এসব নৌযান তা মানছে না। আবার ছোট নৌযানের সংখ্যা এখন ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এসব নৌযানেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তাদের ব্যবহার করার কথা নয়। পাশাপাশি অবৈধ জালও ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি উপকূলের ৫ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে ডিম থেকে নতুন পোনা তৈরির সুযোগ নষ্ট হচ্ছে।
বিশ্বে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ভারত ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ভারতের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১–২২ সালে সাগর থেকে দেশটির মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৪১ লাখ ২৭ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার টন মাছ আহরণ করেছে ভারত।
মিয়ানমারের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ২০২০-২১ সালে সাগর থেকে মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ৯৫ হাজার। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ লাখ ১৪ হাজার টনে। অর্থাৎ গৃহযুদ্ধের মধ্যেও দেশটির সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়ছে।
এদিকে বাংলাদেশে সাগরে সবচেয়ে বেশি আহরণ কমছে ইলিশ ও চিংড়ির। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে ইলিশ আহরণ তার আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ কমেছে। আর চিংড়ির আহরণ কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। কাঁকড়া আহরণও কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি।
সাগর থেকে মাছ আহরণ কমে যাওয়া এবং এ বিষয়ে করণীয় প্রসঙ্গে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপরিচালক মোহাম্মদ শরিফুল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকেই চিংড়ি আহরণ কমে যাওয়ার তথ্য পাচ্ছিলাম। তাই সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালায় চিংড়ি ধরার ট্রলারের লাইসেন্স আর না বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করি। ২০২৮ সাল পর্যন্ত এসব ট্রলাররের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না।’
সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়াতে হলে বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণহীন মৎস্য আহরণকে নজরদারির মধ্যে আনার কথা বলছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচটি ট্রলারে স্যাটেলাইট ট্রেকার বসিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব ট্রলার ডিজিটাল নজরদারির আওতায় আনার পরামর্শ তাঁর।
এদিকে মাছ আহরণ কমতে থাকায় সাগরের ওপর নির্ভরশীল জেলেরাও বিপাকে পড়ছেন। ঋণের দাদনের টাকা শোধ করে লাভের অঙ্ক মিলছে না তাঁদের। কক্সবাজারে পাঁচ হাজারের বেশি মাছ ধরার কাঠের নৌযান আছে। এসব নৌকায় এখন মাছ ধরা পড়ছে কম। কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টানা ছয় থেকে সাত মাস তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। কয়েক বছর ধরেই মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। এক সপ্তাহের জন্য সাগরে গেলে দুই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কিন্তু মাছ কম পাওয়ায় দাদন পরিশোধ করাই এখন কষ্টকর হয়ে গেছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের ব্লু ইকোনমি সেলের পরিচালক মো. সাজদার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে এখন ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। সাগরের তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে। তা ছাড়া জেলিফিশের প্রকোপ বেড়েছে। আর অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের কারণে মাছের মজুত কমছে। তাই মাছ আহরণ আরও কমিয়ে আনতে হবে।
এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির এক সভায় গণমাধ্যমে সঙ্গে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘ভারতের জেলেরা যাতে বাংলাদেশে এসে মাছ ধরতে না পারেন, সেটা আমাদের বন্ধ করতে হবে।’
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে সাগর থেকে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টন মাছ ধরা হয়। যার মধ্যে অর্ধেক মাছ আহরণ করেছে এশিয়ার দেশগুলো। ওই বছর বিশ্বের মোট সামুদ্রিক মাছের ১৪ দশমিক ৮ শতাংশই আহরণ করেছিল চীন, যার পরিমাণ ১ কোটি ১৮ লাখ ১৯ হাজার টন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া ওই বছর আহরণ করেছে ৬৮ লাখ ৪৩ হাজার টন মাছ। আর ভারত আহরণ করেছে ৩৫ লাখ ৯৭ হাজার টন। যেখানে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল বৈশ্বিক মাছ আহরণের মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।