বাংলাদেশে তরুণ-তরুণীর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ অথবা কর্মসংস্থানে নেই। এ হিসাব বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর। বিপুলসংখ্যক নিষ্ক্রিয় জনগোষ্ঠীর অর্ধেককেও কাজে লাগানো গেলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটানো সম্ভব। এ জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প হলো ছোট ছোট উদ্যোগ এবং তার জন্য কার্যকর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন।  
দেশে প্রতিবছর অন্তত ২০ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে আসছে। কিন্তু তাদের অনেকের জন্য আনুষ্ঠানিক খাতে কোনো কাজের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। আবার নিজ উদ্যোগে কিছু করার সুযোগও খুব কম। বিশ্বের অনেক উদীয়মান দেশে বিশেষত পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো তরুণদের দক্ষতা অনুযায়ী প্রশিক্ষিত করে কর্মসংস্থানের বিস্তৃত কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থনীতিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে আছে। 
এ কথা ঠিক, বাংলাদেশে কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসএমই) অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। তবে এখনও এ খাতের সম্ভাবনা অনেকটাই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। অনেক উদীয়মান দেশের মতো বাংলাদেশে এ খাত গোছালো নয়। আনুষ্ঠানিক খাতের বাইরে রয়ে গেছে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোগ। যারা একটু সুযোগ পেলে নিজের এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারত। 
বাংলাদেশ বহির্বিশ্ব থেকে পণ্য আমদানির জন্য যা ব্যয় করে, রপ্তানি করে তার অনেক কম। গত অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছোট ও মাঝারি উদ্যোগে ত্বরণ সৃষ্টি করা গেলে বাণিজ্য উদ্বৃত্তের দেশ হতে পারে বাংলাদেশ। এতে একদিকে আমদানি ব্যয় কমবে, অন্যদিকে রপ্তানি আয় বাড়বে। 
পরিসংখ্যান অনুযায়ী কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দেশে দুই কোটির বেশি মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান রয়েছে। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশ এ খাতে। তবে সে অনুযায়ী জিডিপিতে এ খাতের অবদান উদীয়মান অনেক দেশের চেয়ে কম। বাংলাদেশের জিডিপিতে সিএমএসএমই খাতের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ। শ্রীলঙ্কার জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৫২ শতাংশ। অন্যদিকে চীনে ৬০ শতাংশ, ভারতে ৩৭ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৪৫ শতাংশ, জাপানে ৫০ শতাংশ এবং পাকিস্তানে এ হার ৪০ শতাংশ। সারাবিশ্বেই ছোট ও মাঝারি উদ্যোগই  ব্যবসা-বাণিজ্যের মূলশক্তি। জাতিসংঘের হিসাবে বিশ্বের ব্যবসার ৯০ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের। মোট কর্মসংস্থানের ৭০ শতাংশই এ খাতের। বিশ্ব জিডিপিতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের অবদান অর্ধেক। 
বাংলাদেশে সিএমএসএমই খাতের গুরুত্ব কভিড সময়কালে বেশ উপলব্ধি হয়। ওই সময় ঘরে বসেই প্রচুর নতুন উদ্যোগ গড়ে ওঠে, যারা অনলাইনে পণ্য সরবরাহ করে সংকটকালে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখে। প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত নারীদের জন্য বেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। 
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারির (২০২৪) প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী দেশে ১ কোটি ১৮ লাখ অর্থনৈতিক ইউনিট রয়েছে। বিবিএস এখনও শুমারির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। তবে দেশের অর্থনৈতিক ইউনিটের বেশির ভাগই ক্ষুদ্র উদ্যোগ। অধিকাংশ উদ্যোগে একজন ব্যক্তি সম্পৃক্ত। অর্থনৈতিক ইউনিটের মধ্যে ৬২ লাখ স্থায়ী এবং ৬ লাখ ক্ষণস্থায়ী। পরিবারভিত্তিক অর্থনৈতিক উদ্যোগ রয়েছে ৫০ লাখ। এসব উদ্যোগের প্রায় সবই অনানুষ্ঠানিক। এ কারণে তারা ব্যাংক ঋণ, প্রণোদনা বা অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।  
যেসব সংকট
বিবিএসের অর্থনৈতিক শুমারিতে ছোট উদ্যোক্তাদের নানা সংকটের কথা উঠে এসেছে। ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা তহবিল সমস্যার কথা জানিয়েছেন। ১৯ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা সহজে ঋণ পান না। তারা অবকাঠামো, দক্ষ জনবল, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিসহ আরও অনেক সমস্যার কথা জানিয়েছেন। 
এসএমই ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, আইন মেনে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কর কাঠামোকে প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ৫৭ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তা। আর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন পদ্ধতিকে বাধা মনে করেন ৫৪ শতাংশ। শতকরা ৪৪ ভাগ উদ্যোক্তা বলছেন, সরকারি আইনকানুনের জটিলতাও আইন মেনে ব্যবসা করায় অন্যতম বাধা। 
সম্প্রতি এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের উদ্যোগে এক কর্মশালায় জানানো হয়, এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে গ্রামীণ ও অনানুষ্ঠানিক খাতের এবং নারী উদ্যোক্তাদের স্থাবর সম্পত্তি না থাকায় ব্যবসা শুরু বা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের ২০২০ সালের এক গবেষণা বলছে, শতকরা ৮০ ভাগ এসএমই উদ্যোক্তারই স্থাবর সম্পত্তি থাকে না। ফলে তারা ব্যাংক ঋণ থেকে বঞ্চিত হন। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি, কৃষিপণ্যের মতো অস্থাবর সম্পত্তিকেও জামানত হিসেবে গ্রহণের সুযোগ রেখে সরকার ২০২৩ সালে একটি আইন প্রণয়ন করে। তবে এ আইন সম্পর্কে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে তেমন ধারণা না থাকায় ব্যাংক ঋণ পেতে অসুবিধায় পড়েন এসএমই উদ্যোক্তারা। 
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমএসএমই একটি শ্রমনিবিড় ও স্বল্প পুঁজিনির্ভর খাত। উৎপাদন সময়কাল স্বল্প হওয়ায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এমএসএমইর অবদান অনেক। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও সিএমএসএমই খাতের বিকাশ ও উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। অধিক জনসংখ্যা এবং সীমিত সম্পদের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসএমই খাত অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। 

 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স এমএসএমই এসএমই খ ত র অবদ ন অন য য় র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ২৬ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (৯ থেকে ১৩ নভেম্বর) সূচকের বড় পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেনে বেশ কমেছে। তবে বিদায়ী সপ্তাহে উভয় পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন বেশ কমেছে ২৬ হাজার ৫১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৫৬.২৫ পয়েন্ট বা ৫.৩৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭০২ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৮৯.৩৬ পয়েন্ট বা ৪.৬০ শতাংশ কমে ১ হাজার ৮৫১ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬২.২৬ পয়েন্ট বা ৫.৯৯ শতাংশ কমে ৯৭৬ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ১৮৬.৮৪ পয়েন্ট বা ২০.৪০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭২৮ পয়েন্টে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৯১৫ কোটি ৮৯ লাখ কোটি টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৬ হাজার ৯৪১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৭১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৪২২ কোটি ২৩ লাখ টাকার। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৬৫০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭টির, দর কমেছে ৩৬৩টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩টির। তবে লেনদেন হয়নি ৩০টির।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৫৭.৩১ পয়েন্ট বা ৩.৯৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪০১ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ১.৯১ শতাংশ কমে ১২ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ৩.৪৪ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৩১৮ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ৩.৫১ শতাংশ কমে ৮৪৪ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ১১.৩৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯২ হাজার ১৩০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৫৭২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৮০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৯৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ২৭২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৯টির, দর কমেছে ২৩৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭টির শেয়ার ও ইউনিট দর।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভয়াবহ আগুন কলকাতার বড়বাজারে, ঘটনাস্থলে দমকলের ২০ ইঞ্জিন
  • পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ২৬ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা