ডিএসসিসির বাজেট কমলো ২ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা
Published: 30th, June 2025 GMT
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরে গত অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ৯১৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বাজেট কমেছে।
সোমবার ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে সপ্তম করপোরেশন সভায় ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়। এর আগে গত বছর সাবেক মেয়র তাপস ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন।
সভার শুরুতে গত ৫ মে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ করপোরেশনের সভার কার্য বিবরণী বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। পরবর্তীতে সভার আলোচ্যসূচি অনুযায়ী আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (অতি.
বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ ও অনুমোদন দেওয়ায় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে ডিএসসিসি’র প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাজেট কেবল গাণিতিক সংখ্যা নয়। এই বাজেট আমাদের কাছে সম্মানিত করদাতাদের আমানত। এই বাজেট সফলভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে আমাদের সবার প্রিয় এই নগরীর ব্যবস্থাপনা এবং আমাদের দৈনন্দিন নাগরিক সমস্যার সমাধান।’
সভায় ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাসকারী নগরবাসীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্প-২ পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ডিএসসিসি এবং বিদ্যমান প্রকল্পের আওতায় সেবা প্রদানকারী এনজিওগুলোর মধ্যে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে, অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত সাময়িক শ্রমিকের মজুরি ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, মন্ত্রীপাড়ায় অবস্থিত অস্থায়ী মসজিদটিকে ডিএসসিসি একটি তিনতলা বিশিষ্ট নান্দনিক মসজিদে রূপান্তরের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ সব বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাহাত্তরের ‘সরব কণ্ঠ’ বীর উত্তম জিয়াউদ্দিন, নীরবেই চলে গেলেন
৫ আগস্ট, মঙ্গলবার, ঢাকার আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। থেমে থেমে বৃষ্টির পানিতে ভিজছিল রাজপথ। গত বছর এই দিনেই ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এই দিনকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবস’ ঘোষণা করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
এই দিনে প্রায় সব টেলিভিশনের পর্দায় গত বছর এই সময়ে চলা হাসিনা সরকারের পেটোয়া বাহিনীর নৃশংসতার ছবি ও বর্ণনা ভেসে উঠছিল, যা দেখে চোখ ভিজছিল বারবার।
বিকেলে একটি দুঃসংবাদে সেই চোখের পানি বৃষ্টির মতোই নেমেছে সম্মুখ রণাঙ্গনের একদল লড়াকু মুক্তিযোদ্ধার চোখে। তাঁদের মুক্তিযুদ্ধকালীন অধিনায়ক বা কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ (বীর উত্তম) (৮৩) ৫ আগস্ট ২০২৫ বিকেলে সবাইকে ছেড়ে পরলোকে যাত্রা করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই পশ্চিম পাকিস্তানের ঝিলাম থেকে শিয়ালকোট হয়ে জীবন বাজি রেখে ভারত হয়ে বাংলাদেশের দিকে যাত্রা করেছিলেন তৎকালীন মেজর জিয়াউদ্দিন, যিনি সম্প্রতি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ক্যাপ্টেন পাটোয়ারী, মেজর তাহের, স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ মেজর মঞ্জুর এবং একজন বাঙালি সৈনিক। উল্লেখ্য, তাঁদের মধ্যে স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে তাহেরকে কর্নেল পদে থাকাকালে কথিত অভ্যুত্থানচেষ্টার দায়ে সামরিক আদালতের মাধ্যমে ফাঁসি দেওয়া হয়। আর মঞ্জুর মেজর জেনারেল অবস্থায় প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যাকাণ্ড ঘটান এবং পরবর্তী সময়ে জিয়াপন্থী একদল সেনার হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
সদ্য প্রয়াত জিয়াউদ্দিনসহ এই দুঃসাহসী দল ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই রাতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে জীবন বাজি রেখে কাশ্মীর অঞ্চলে পাকিস্তান–ভারত সীমান্তের দিকে যাত্রা করেন। মেজর মঞ্জুরের বাচ্চাদের ঘুমের ওষুধ দিয়ে প্রায় অচেতন করে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যান জিয়া ও তাঁর সঙ্গীরা।
কাশ্মীর সীমান্তে মোতায়েন দুর্ধর্ষ রেঞ্জারস, কমান্ডো ও অন্য সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিতে পাহাড়, নিচু খাদ, জঙ্গল ও ফসলের মাঠে কখনো হামাগুড়ি দিয়ে, আবার কখনো হাঁটুতে ভর করে পাড়ি দেন দীর্ঘ এক বিপৎসংকুল দুর্গম পথ। সারা রাত জীবনমৃত্যুর দোলাচলে দুলে এবং দুবার নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে ভোরের প্রথম আলোতে ভারতের সীমান্তে প্রবেশ করেন এই জিয়া ও তাঁর সঙ্গীরা। তাঁদেরই একজন ক্যাপ্টেন পাটোয়ারী তথা পরবর্তী সময়ে কর্নেল বজলুল গনি পাটোয়ারী (বীর প্রতীক) এই দুঃসাহসিক যাত্রা ও পরবর্তী সময়ে তাঁদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘শত্রুভূমি থেকে সম্মুখসমরে’ শীর্ষক একটি বই লেখেন।
জিয়াউদ্দিন তখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল। তাঁর মতো বহু মুক্তিযোদ্ধা এমন চুক্তিকে দেশের জন্য ক্ষতিকর ও স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের জন্য অবমাননাকর বলে মনে করেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের তৎকালীন ইমেজ, সার্বভৌম ক্ষমতা এবং তাঁর রাজনৈতিক মতানুসারীদের আকাশচুম্বী ক্ষমতার কারণে এ ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই ছিলেন নীরব, নিথর। কিন্তু গর্জে উঠেছিলেন একজন, তিনিই জিয়াউদ্দিন। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নেন গণমাধ্যমকে।আমার সৌভাগ্য, কিছু বিচ্ছিন্ন নোট সম্পাদনা করে এমন একটি বই রচনার সঙ্গে আমি সংযুক্ত ছিলাম। ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রথমা প্রকাশন বইটি প্রকাশ করে। তখন কর্নেল পাটোয়ারীর মুখে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়ার বীরত্বগাথা ও দেশপ্রেমের এক অনন্য উপাখ্যান জানতে পেরেছিলাম। আবেগ আর শ্রদ্ধা নিয়ে সামরিক হাসপাতালে অসুস্থ বীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াকে দেখতেও গিয়েছিলাম। সেই স্মৃতি আজও মনে পড়ে।
পশ্চিম পাকিস্তানের ঝিলাম ছেড়ে তৎকালীন মেজর জিয়াউদ্দিন ও তাঁর দল ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবে প্রবেশ করেন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের সহায়তায় পরবর্তী সময়ে তাঁদের নেওয়া হয় দিল্লিতে। দিল্লির ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা, বিশেষত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করা সমরবিদ ও গোয়েন্দারা, তখন ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অধিকৃত পূর্ব পাকিস্তান (পরে বাংলাদেশ) ভূখণ্ডকে শত্রুমুক্ত করতে চূড়ান্ত আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ঠিক তখন জিয়া, মঞ্জুর, তাহের ও পাটোয়ারী পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিষয়ে বিশদ বর্ণনা ও তাদের গোপনীয় সব পরিকল্পনার তথ্য জানিয়ে যৌথ বাহিনীর চূড়ান্ত আক্রমণ–পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।
দিল্লির পর্ব শেষে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্নেল (পরে জেনারেল) এম এ জি ওসমানী সঙ্গে দেখা করেন। ওসমানীর নির্দেশেই মেজর জিয়াউদ্দিন সিলেট বৃহত্তর সিলেট ও ময়মনসিংহ সীমান্তে যুদ্ধরত প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। আর প্রথম ইস্ট বেঙ্গলের ডি কোম্পানির অধিনায়ক ও উপ–অধিনায়কের দায়িত্ব পান ক্যাপ্টেন বজলুল গনি পাটোয়ারী। ক্যাপ্টেন হাফেজ (বিএনপি নেতা), লেফটেন্যান্ট মাহবুব, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট লিয়াকত প্রমুখ আগে থেকেই এই সেনাদলের সঙ্গে যুদ্ধরত ছিলেন। তাঁদের চিকিৎসক ছিলেন ক্যাপ্টেন মুজিব, যিনি পরবর্তী সময়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন। লেফটেন্যান্ট আকাশসহ আরও কিছু সাহসী অফিসার কর্নেল জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে পরবর্তীকালে মরণপণ লড়াই করেছিলেন বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ (বীর উত্তম)