ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরে গত অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ৯১৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বাজেট কমেছে। 

সোমবার ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে সপ্তম করপোরেশন সভায় ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়। এর আগে গত বছর সাবেক মেয়র তাপস ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। 

সভার শুরুতে গত ৫ মে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ করপোরেশনের সভার কার্য বিবরণী বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। পরবর্তীতে সভার আলোচ্যসূচি অনুযায়ী আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (অতি.

দা.) আলী মনসুর। পরবর্তীতে পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩ হাজার ৮৪১ দশমিক ৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করেন।

বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ ও অনুমোদন দেওয়ায় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে ডিএসসিসি’র প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাজেট কেবল গাণিতিক সংখ্যা নয়। এই বাজেট আমাদের কাছে সম্মানিত করদাতাদের আমানত। এই বাজেট সফলভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে আমাদের সবার প্রিয় এই নগরীর ব্যবস্থাপনা এবং আমাদের দৈনন্দিন নাগরিক সমস্যার সমাধান।’

সভায় ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাসকারী নগরবাসীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্প-২ পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ডিএসসিসি  এবং বিদ্যমান প্রকল্পের আওতায় সেবা প্রদানকারী এনজিওগুলোর মধ্যে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরবর্তীতে, অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত সাময়িক শ্রমিকের মজুরি ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, মন্ত্রীপাড়ায় অবস্থিত অস্থায়ী মসজিদটিকে ডিএসসিসি একটি তিনতলা বিশিষ্ট নান্দনিক মসজিদে রূপান্তরের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ সব বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড এসস স ড এসস স

এছাড়াও পড়ুন:

জাবির বাজেটে ফের উপেক্ষিত গবেষণা ও চিকিৎসা খাত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২৫—২৬ অর্থবছরের জন্য ৩২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বাজেটে ৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা বাড়লেও ফের উপেক্ষিত হয়েছে গবেষণা ও চিকিৎসা খাত। 

শনিবার বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত ৪২তম বার্ষিক অধিবেশনে উপস্থাপিত বাজেট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব বাজেট উপস্থাপন করেন। সিনেটরদের আলোচনার পর তা পাস করা হয়। 

২০২৫-২৬ সালের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং পেনশন ও অবসর সুবিধার পেছনে মোট ব্যয় ২২০ কোটি ৬৩ লাখ, যা মোট বাজেটের ৬৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয় রাখা হয়েছে বেতন-ভাতায়। এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১৮১ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটি বাজেটের ৫৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। পেনশন ও অবসর সুবিধা খাতে এতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ, যা বরাদ্দের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এই খাতে বাজেটের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে। এই দুই খাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও বাজেটের ৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে সেবা খাতে- ৭৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ খাতে বাজেটের ২৪ দশমিক ১৫ শতাংশ খরচ হবে। 

ফের উপেক্ষিত চিকিৎসা ও গবেষণা খাত
গত ২২ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসাইন মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যুর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স তিনি যথাসময়ে পাননি এমন অভিযোগ তুলে সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র সংষ্কারের দাবিতে ‘মেডিকেল ঘেরাও’ কর্মসূচি পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের সার্বিক উন্নয়নসহ বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তারা। তবে বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৪৫ লাখ টাকা, যা বাজেটের মাত্র ০.১৪ শতাংশ। গত অর্থবছরেও মাত্র ০.১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। 

গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি বাজেটের আকার। নতুন বাজেটে প্রস্তাবিত বরাদ্দ রয়েছে ৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত বছর এটি ছিল ৭ কোটি ২২ লাখ, যা বরাদ্দের ২ দশমিক ২৬ শতাংশ। এছাড়া যানবাহন ক্রয় বাবদ ২ কোটি ২৮ লাখ, তথ্য ও যোগাযোগ ব্যয় ২ কোটি  ২০ লাখ, যন্ত্রপাতি খাতে ব্যয় ৫ কোটি ৭২ লাখ এবং অন্যান্য ব্যয় ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। 

২০২৫-২৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের আয়ের খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বা সরকারি মঞ্জুরি ২৭৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, ছাত্রছাত্রীদের থেকে প্রাপ্ত ফিস বাবদ ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ভর্তি ফর্ম বিক্রি থেকে আয় ২৩  কোটি ৪৫ লাখ ৬০  হাজার টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন চার্জ থেকে ৩  কোটি ৭১ লাখ ২১  হাজার টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি থেকে আয় ৩৩ লাখ টাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উৎস হতে আয় ১০  কোটি ১৫ লাখ ৪৯  হাজার টাকা। ইউজিসির বরাদ্দ বাদে সব মিলিয়ে নিজস্ব আয় ৪৪ কোটি টাকা।

পাঁচ দশকে বাজেট ঘাটতি ১০০ কোটি টাকা
প্রতিষ্ঠার পর প্রায় পাঁচ দশকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমপুঞ্জিত বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কোষাধ্যক্ষের বক্তব্য থেকে জানা গেছে- চলতি অর্থবছরে সর্বনিম্ন আনুমানিক ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। সে হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০ জুনের পর বাজেট ঘাটতি পৌঁছাবে ১০০ কোটিতে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ঘাটতি বাজেট ছিল ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ও ২০২১—২২ অর্থবছরে ঘাটতি ৩ কোটি ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

বাজেটের বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব বলেন, ২০২৪-২০২৫ সনের সংশোধিত বাজেটের জন্য ৪১৫ কোটি ৭৮ লাখ ১ হাজার টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ সনের ৪৩৪ কোটি ৪৬ লাখ ১৯ হাজার টাকার মূল বাজেট ইউজিসিতে পাঠানো হয়। ইউজিসি ২০২৪-২০২৫ সনের সংশোধিত বাজেটে ৩৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ সনের মূল বাজেটে ৩২৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিলে ঘাটতির পরিমাণ ৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরে সর্বনিম্ন আনুমানিক ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। এরূপ আর্থিক চাপের মধ্যে একটি কল্যাণমুখী বাজেট প্রস্তুত করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

আগামী বছরের শুরুতে হতে পারে জাবির সপ্তম সমাবর্তন: উপাচার্য
আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সপ্তম সমাবর্তন। শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের ৪২তম বার্ষিক অধিবেশন এ তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান। 

অধিবেশনে লিখিত ভাষণে উপাচার্য বলেন, ২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আগামী বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে সপ্তম সমাবর্তন আয়োজন করতে আগ্রহী। এ বিষয়ে সকলের পরামর্শ ও মতামত প্রত্যাশা করছি।

উপাচার্য আরও জানান, বিগত শিক্ষাবর্ষে ১ হাজার ৬৭ জন শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান), ১ হাজার ১৮২ জন শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর, ৩ জন এমফিল ও ৪৭ জন গবেষক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। 

আওয়ামী লীগপন্থি সিনেটরদের প্রবেশে বাঁধা 
এ দিকে দুপুর আড়াইটার দিকে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আওয়ামী লীগপন্থি সিনেটরদের প্রবেশ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলের প্রবেশপথে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিক-উর-রহমান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক যুগল কৃষ্ণ দাস এবং বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিগার সুলতানা পসিনেট হলে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্দেশে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তারা সিনেট হল ত্যাগ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জবিতে ২৯৮ কোটি টাকার বাজেট পাস
  • কুলাউড়া পৌরসভায় ৭০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
  • রাসিকের বাজেট ৮০৬ কোটি টাকা
  • ১১ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করবে পিকেএসএফ
  • রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা
  • জাবির বাজেটে ফের উপেক্ষিত গবেষণা ও চিকিৎসা খাত
  • কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করবে এনবিআর
  • জাবিতে ৩২৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
  • রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি