বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-কে তৃণমূল পর্যায়ে আরও শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরঞ্জের নাসিক ১নং ওয়ার্ডে সদস্য নবায়ন ও প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।

বুধবার (২ জুলাই) বিকাল ৪টায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন নাসিক ১ নং ওয়ার্ড মিজমিজি বাতেনপাড়া কেনাল-পাড় সংলগ্ন একটি মাঠে  ওয়ার্ড বিএনপি আয়োজিত এই কর্মসূচিকে ঘিরে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।

বিপুল সংখ্যক নতুন কর্মী সদস্য ফরম পূরণের মাধ্যমে দলে যোগদান করেন এবং পুরাতন কর্মীরা তাদের সদস্যপদ নবায়ন করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে, সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, তৃণমূল কর্মীরাই দলের প্রাণ। দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে নতুন ও পুরাতনদের সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য দলকে শক্তিশালী করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় গৌরব বাংলাদেশের মধ্যে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে আমাদের প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার ওপরে আর কোন নেতা নাই। সকলের উপরে আমাদের নেত্রীর নেতৃস্থান। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ নেতা তিনি। বাংলাদেশের মানুষকে দুঃসময়ে পথ দেখিয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আন্দোলন সংগ্রামের শিক্ষা দিয়ে গেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

এখনো যদি কেউ দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করে ছিনিমিনি খেলতে চায় আমাদের নেত্রী তা হতে দেবেন না। তিনি একাই যথেষ্ট। তিনি যখন ডাক দেবে এদেশের রাজপথকে প্রকম্পিত করে আবার দেশের মানুষ ছুটে আসবে। কোন ষড়যন্ত্রকারী সেদিন পালিয়ে যাওয়ার ও সুযোগ পাবে না। তাই ষড়যন্ত্র ছেড়ে দেন। এদেশের মানুষ কোন ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দেয়নি। এখনো যারা স্বপ্ন দেখেন।

বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন নেন নির্বাচনকে প্রভাবিত করবেন এই স্বপ্ন আপনারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। 

আমি বর্তমান সরকারকে বলতে চাই আপনাদের প্রধান দায়িত্ব হল সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোট অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে সঠিকভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়া।

তিনি আরো বলেন,  আমরা বলবো ফ্যাসিস্ট স্বৈরা- শাসকের শেষ দিনের কথা।  আপনারা ভুলে যান নাই সেই স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে জনগণ রাস্তায় নেমে যাওয়ার কথা। আপনাদের বুক নিশ্চয়ই কেঁপে উঠবে শিহরণ জাগবে। ৪ আগস্ট, চৌঠা আগস্ট শেখ হাসিনা দেশের সশস্ত্র বাহিনী প্রধান সহ পুলিশ ও বিজিবি থেকে শুরু করে সকল বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে মিটিং করেছিল।

তিনি সেখানে নির্দেশ দিয়েছিল যত মানুষকে হত্যা করতে হয় বুলেট ছাড়তে হবে। কত বড় নর-ঘাতক হলে এই কথা বলতে পারে। এত বড় নর-ঘাতক পৃথিবীর ইতিহাস আর নাই। এই কারণে গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এই নজির পৃথিবীতে নাই ।

অনেক সইরা শাসক গণঅভ্যুত্থানে গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন রকম তৈরি হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়েছে এবং দুই দিন আগে তার  বংশধরদের পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এরপরে সে যেন টিকে থাকতে পারে তার বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে জনগণকে নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করার জন্য। এরপরে সে পালিয়েছে। তার মন্ত্রী পরিষদ, বংশধর, জেলা, থানা এবং ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ পালিয়েছে ।

মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জেম পালিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পালিয়েছে, সাংবাদিকরা ও যারা তার দিকনির্দেশনে জড়িয়ে ছিল তারাও পালিয়েছে, ব্যবসায়ীদের ঊর্ধ্বে যারা পর্দা দিয়েছিল তারাও পালিয়েছে, পুলিশে, বিডিআরে, বি জি পিতে উচ্চ পদে যারা ছিল তারাও পালিয়েছে।

এমন কোন স্থানের সন্ত্রাসী বাহিনী নাই যে শেখ হাসিনার পদ বহনকারী বাহিনী নাই যারা না পালিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম ইতিহাস হয়নি। এমন ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছে ঐতিহাসিক এক ঘটনা তৈরি করে দিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এক বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে দিয়েছে। স্বৈরাচার যত বড়ই হোক বুকের রক্ত যতই নেক বাংলাদেশের মানুষ কখনো মাথা নত করে না। 

স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বুক খুলে দেয় বুকের মধ্যে গুলি নেয়। এই সাহসিকতা পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক জাতির নাই।  এই গৌরব আমাদের এসেছে। জুলাই- আগস্ট বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে।

নাসিক ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি  রওশন আলীর সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, সহ সভাপতি ও নাসিক সাবেক কাউন্সিলর জিএম সাদরিল, থানার সাবেক সভাপতি আব্দুল হাই রাজু, সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম জুয়েল, ১নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, তরুণ দলের জেলার সভাপতি টিএইচ তোফ, যুবদলের সিনিয়র নেতা শাহজালাল কালুসহ প্রমুখ। 
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন মহানগর যুবদলের সদস্য শহিদুল ইসলাম।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ব এনপ ন র য়ণগঞ জ গণতন ত র ষড়যন ত র ব এনপ র অন ষ ঠ আম দ র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

‘দেখেছ, আগেই তো ভালো ছিলাম’—এই খেলাই তো চলছে

পুঁথি ঘেঁটে সপ্তদশ শতকে রোসাঙ্গরাজের অভিষেক অনুষ্ঠানের বিবরণ দিয়েছেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। সেখানে রাজসভার যে ছবি পাওয়া যায়, তাতে দেখি, অভিষিক্ত রাজা সবার সামনে অঙ্গীকার করছেন, তিনি প্রজাদের সন্তানের মতো দেখভাল করবেন, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করবেন না, নিয়ম মেনে রাজ্য চালাবেন, দুর্বলকে সবল করে তুলবেন। 

মজলিস পরি দিব্য বস্ত্র আভরণ

সমুখে দাণ্ডাই আগে দঢ়াএ বচন।

পুত্রবৎ প্রজারে পালিবা নিরন্তর

না করিবা ছলবল লোকের উপর।

শাস্ত্র-নীতি রাজকার্যে হৈবা ন্যায়বন্ত

নির্বলীরে বল না করৌক বলবন্ত।

একুশ শতকে এসেও আমরা এমন ছবি দেখি। সরকারপ্রধান ও তাঁর মন্ত্রীরা শপথ নেন। তাঁরা ঘোষণা দিয়ে বলেন, অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সবাইকে সমান চোখে দেখবেন, সংবিধান মেনে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, সমাজের অনগ্রসর শ্রেণিকে মূলধারায় আনবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই ছবি আমরা দেখি টেলিভিশনে, শুনি তাঁদের মধুর বচন।

তারপর কী হয়? শপথ পাঠের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় শপথভঙ্গের তোড়জোড়। সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যা খুশি তা করার দৌড়। আর দেখি শিষ্টের দমন ও দুষ্টের পালন। বেছে বেছে সন্ত্রাসীদের স্থানীয় সরকারের পদে বসানো, মেম্বার-কাউন্সিলর বানানো। মুখে যা বলেন, কাজ করেন ঠিক তার উল্টো। আমাদের দেশের রাষ্ট্র পরিচালনা আর রাজনীতির ইতিহাস হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে প্রতারণার ইতিহাস। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার শ্লোক আওড়ে বলতে পারি— চুয়ান্ন বছর কাটল, কেউ কথা রাখেনি।

একটা দৃশ্য কল্পনা করুন। আপনি আপনার বাড়ি পাহারা দেওয়ার এবং ঘর সাফ রাখার জন্য দারোয়ান কিংবা চাকরবাকর রেখেছেন। আর সেই দারোয়ান কিংবা চাকর আপনার ওপর হম্বিতম্বি করছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে রাষ্ট্র পরিচালনার এই রীতি চালু হয়েছিল। আমরা এখনো সেটি টিকিয়ে রেখেছি। কিন্তু ভণ্ডের মতো আস্তিন গুটিয়ে গলা ফুলিয়ে বলি, আমরা স্বাধীন। এই আমরা কারা?

একসময় দেশটা ছিল ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান। মাওলানা ভাসানী পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বলেছিলেন, এ দেশের মানুষের চাওয়া খুবই সামান্য, খুব সহজেই তা মেটানো যায়। মানুষ চায় দুবেলা শুধু পেট ভরে ডালভাত খেতে। পাকিস্তান রাষ্ট্র তার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি।

একসময় দেশ স্বাধীন হয়। দেখা যায়, দেশে একমাত্র সরকারই স্বাধীন। মানুষ আর স্বাধীন হতে পারল না। সরকার শক্তিমান হলে মানুষ দুর্বল হয়। এ দেশে সেটাই হয়েছে। এখানে সরকার আছে, দল আছে। দল থাকলে দলাদলি থাকে। আর আছে কর্মচারীদের বাহিনী। তারা ক্রমেই শক্তিশালী হয়েছে। নাগরিক শক্তি হয়েছে ক্রমশ হীনবল।

আরও পড়ুনপেশা যখন রাজনীতি১৮ জুলাই ২০২৫

আমরা কথায় কথায় বলি, আমাদের সামরিক বাহিনী সার্বভৌমত্বের প্রতীক, আমাদের জাতীয় সংসদ সার্বভৌম, আমাদের সরকার সার্বভৌম। সার্বভৌমত্ব নেই কেবল জনগণের।

বিশ শতকের শেষ দিকে এসে সভ্য দুনিয়ায় সার্বভৌমত্বের ধারণা পাল্টে গেছে। সেসব দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জনগণের সরকার। জনসমাজ যত শক্তিশালী হবে, সরকার আকারে তত ছোট এবং দায়িত্বে তত বড় হবে। আমাদের দেশে সরকারের আকার দিন দিন বাড়ছে, নাগরিক শক্তি ছোট হয়ে আসছে।

সরকার ও তার ধামাধরারা নাগরিক সমাজের একটা ব্যঙ্গাত্মক নাম দিয়েছে—সুশীল সমাজ। সরকারের কর্তারা প্রায়ই বিদ্রূপ করে বলেন, এসব সুশীল-টুশীল দিয়ে কাজ হবে না। পশ্চিমের যে দেশগুলোতে আমাদের কর্তারা তাঁদের সন্তানদের মানুষ করতে পাঠান, সেসব দেশে নাগরিক সমাজকে নিয়ে ট্রল করার স্পর্ধা কেউ দেখান না। কারণ, সেসব দেশে নাগরিকেরাই রাষ্ট্র চালান। সরকারকে চলতে হয় নাগরিকদের মন জুগিয়ে। আমাদের দেশে হয় ঠিক তার উল্টো। এখানে সরকার হচ্ছে নাগরিকদের মালিক, দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। মানুষ হয়েছে দাস, তার ট্যাক্সের টাকায় পোষা লোক হয়েছে তার স্যার।

আরও পড়ুনএবারের নির্বাচনী ইশতেহারও কি ফাঁকা বুলিই থেকে যাবে০১ অক্টোবর ২০২৫

আমরা প্রায়ই একটা কথা শুনে থাকি, রাষ্ট্রের হাত অনেক লম্বা। এখানে রাষ্ট্র মানে তার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা, যেমন সচিবালয়, বিচারালয়, বিভিন্ন বাহিনী। নাগরিকের ট্যাক্সের টাকায় সরকার গোয়েন্দা পোষে। সেই গোয়েন্দার কাজ হলো নাগরিকের পেছনে ফেউয়ের মতো লেগে থাকা —সে কোথায় যায়, কী বলে, কী করে।

একটা দৃশ্য কল্পনা করুন। আপনি আপনার বাড়ি পাহারা দেওয়ার এবং ঘর সাফ রাখার জন্য দারোয়ান কিংবা চাকরবাকর রেখেছেন। আর সেই দারোয়ান কিংবা চাকর আপনার ওপর হম্বিতম্বি করছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে রাষ্ট্র পরিচালনার এই রীতি চালু হয়েছিল। আমরা এখনো সেটি টিকিয়ে রেখেছি। কিন্তু ভণ্ডের মতো আস্তিন গুটিয়ে গলা ফুলিয়ে বলি, আমরা স্বাধীন। এই আমরা কারা?

এ দেশের শাসকদের মধ্যে কয়েকটি সিন্ডিকেট আছে। কিছু আছে পারিবারিক আর কিছু আছে অলিগার্ক। তাদের আছে নানান লোগো, নানান পরিচিতি। একটা বিদায় হলে আরেকটা এসে জোটে। সহজে কি বিদায় হয়? তার জন্য অনেক ঘাম, অনেক রক্ত ঝরাতে হয়।

আরও পড়ুনভোটকেন্দ্র পাহারা দিয়ে নির্বাচন আর কতকাল২২ আগস্ট ২০২৫

বিদায় হওয়ার পর পরাজিত পক্ষের মুখে একটাই মন্ত্র উচ্চারিত হয়—আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। তাদের ভাবখানা এমন, সব ঠিকঠাক চলছিল। দেশ শনৈঃশনৈ উন্নতির দিকে এগোচ্ছিল। উন্নয়নের জোয়ারে দেশ ভাসছিল। মানুষের সুখের সীমা ছিল না।

হঠাৎ একদল লোক বসে ছক কষল—আমাদের এত সুখ সহ্য হচ্ছে না। চলো, আমরা এদের বিদায় করে দিই। তারপর তারা আন্দোলনের নাটক সাজাল, বিদেশিরা ষড়যন্ত্রের জাল বিছাল, জনগণ নির্বোধের মতো তাদের ফাঁদে পা দিল। সরকার বদলে গেল। সিন্ডিকেটগুলো কিছু তোতাপাখি পোষে। তারা দিনের পর দিন এসব মুখস্থ আওড়ে যায়।

এদিকে নতুন যারা মসনদে বসে, কদিন যেতে না যেতেই তারা তাদের সুচালো নখ আর ধারালো দাঁত বের করে। তাদের খবরদারি অতীতের শাসকদেরও ছাড়িয়ে যায়। তখন অতীতচারীরা আওয়াজ তোলে—দেখেছ, আগেই তো ভালো ছিলাম। পিলো পাসিংয়ের মতো এই খেলা চলছে ৫৪ বছর ধরে।

আরও পড়ুন আমাদের উন্নয়ন দর্শন নিয়ে কিছু প্রশ্ন১৬ অক্টোবর ২০২৪

আমাদের ভাষায় ক্ষমতা মানে গদি। আমাদের গদির ওপর লোভ বেশি। ক্ষমতা পেলে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। ক্ষমতা যে দায়িত্ব, এটা বুঝে আসে না।

আমাদের এক নেতা ৫৫ বছর আগে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘চুয়ান্ন সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই’। গদিতে বসার এই অদম্য বাসনা তাদের অস্থি-মজ্জায়, মগজে। একেকটা নির্বাচন আসে, তারা নতুন নতুন ফন্দি হাজির করে। বলে, এবার ক্ষমতায় যেতে পারলে আমরা হেন করেঙ্গা তেন করেঙ্গা। দেশটা সোনায় মুড়ে দেব। তারপর কী হয়? ১৯৭০ সালে এক ভরি সোনা পাওয়া যেত ১২০ টাকায়। সেটি এখন প্রায় দুই লাখ টাকা। টাকায় ষোলোটা ডিম পাওয়া যত। এখন ষোলো টাকায় একটা। 

বেশ কিছুদিন ধরে নির্বাচনের হাওয়া বইছে। প্রস্তুতি চলছে। শিগগিরই সবাই কোমর বেঁধে নেমে যাবেন। নতুন নতুন ইশতেহার তৈরি হবে। প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভেসে যাবে দেশ, জনপদ। শুধু জিজ্ঞেস করুন, এই প্রতিশ্রুতি কীভাবে, কত দিনে, কত টাকায়, কাকে নিয়ে পূরণ করবেন? কোথায় আপনার সেই রোডম্যাপ?

এর মধ্যে আছে নানান তত্ত্বের তড়পানি, নানান ডিসকোর্সের ডঙ্কা। কেউ চান গণতন্ত্র, কেউ চান বিপ্লব, কেউ চান খিলাফত। একজন আরেকজনেরটা মানেন না। ছোট–বড় দোকান খুলে সবাই ফেরি করছে নিজ নিজ পণ্য —আমার কাছে আছে সর্বরোগের মহৌষধ। আমারটা নিন। এটা এস্তেমাল করলে সব মুশকিল আসান হবে।

তাদের কি বিশ্বাস করা যায়? আজতক কেউ তো কথা রাখেনি!

মহিউদ্দিন আহমদ লেখক ও গবেষক

*মতামত লেখকের নিজস্ব

[ ৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে এ লেখা ‘চুয়ান্ন বছর কাটল, কেউ কথা রাখেনি’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘দেখেছ, আগেই তো ভালো ছিলাম’—এই খেলাই তো চলছে
  • মনোযোগ জুলাই সনদে, আছে নির্বাচনী ঐক্যের চিন্তাও
  • সক্ষমতাহীন ও নামসর্বস্ব সংস্থাগুলো বাদ দিন
  • কুমিল্লায় ড্যাবের এক নেতার বিরুদ্ধে আরেক নেতার অনুসারীদের মানববন্ধন
  • জুলাই সনদের দ্রুত আইনি ভিত্তি দিতে হ‌বে: মাওলানা ইমতিয়াজ
  • গণঅভ্যুত্থানে হত্যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করার প্রতিবাদে বিক
  • এমন মানুষও আছে, যারা বলছে ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন
  • স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের
  • জনগণের দাবি অবজ্ঞা করবেন না: খেলাফত মজ‌লিস
  • পিআরের নামে জামায়াত ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে: কায়সার কামাল