বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে সংস্কারের বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি এ পর্যন্ত সংস্কারের কত প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে, সেটারও একটা হিসাব দিয়েছেন।

আজ বুধবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সামনে এ হিসাব তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

বিএনপি সংস্কারের বিষয়ে একমত নয়—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন প্রচারিত হচ্ছে; এমন একটা প্রেক্ষাপটে সালাহউদ্দিন আহমদ সংস্কারের বিভিন্ন প্রস্তাবের মধ্যে কতগুলোতে তাঁরা একমত হয়েছেন, সেটা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছি। শতভাগ প্রস্তাবে যদি একমত হতে হয়, তাহলে আলোচনার তো আর দরকার নেই।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সংসদের চারটি প্রধান স্থায়ী কমিটির নেতৃত্বসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে আসনসংখ্যার ভিত্তিতে বিরোধী দলকে সভাপতির পদ দেওয়ার বিষয়ে দলটি একমত হয়েছে। এই প্রস্তাব বিএনপির পক্ষ থেকেই এসেছে এবং আলোচনা থেকে তা গৃহীত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন দেশে স্বৈরাচার পুনরুৎপাদিত না হয়, সে জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থায় একটি ভারসাম্য বজায় রাখার পক্ষে আমাদের দল একমত হয়েছে। আমরা চাই এমন সরকারব্যবস্থা, যেখানে ক্ষমতার কেন্দ্রীভূত হবে না।’

প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি যাতে আপিল বিভাগের দুই জ্যেষ্ঠ বিচারপতির মধ্য থেকেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন, এ বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা একমত হয়েছেন।

দুদক–সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের ৪৭টি সুপারিশের মধ্যে ৪৬টিতে বিএনপি একমত হয়েছে। একটি প্রস্তাবের বিষয়ে সামান্য ভিন্নমত জানানো হয়েছে। দুদকের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিএনপির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের ২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১২৭টির বিষয়ে সরাসরি একমত হয়েছে বিএনপি। ১৬টির বিষয়ে মতামতসহ সামান্য ভিন্নমত প্রকাশ করা হয়েছে এবং বাকিগুলোর মধ্যে অল্প কয়েকটিকে কার্যত গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়নি।

বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের ৮৯টি সুপারিশের মধ্যে ৬২টিতে বিএনপি সরাসরি একমত বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘লোয়ার জুডিশিয়ারি কিছু বিষয়ে মতভেদ থাকলেও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আমরা একমত।’

এ ছাড়া নির্বাচনব্যবস্থা–সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিশনের ২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে ১৪০টির বেশি প্রস্তাবে একমত হয়েছে বিএনপি। ভোটার তালিকা, আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আইন), পর্যবেক্ষক আইনসহ ১৭টি আইনের ব্যাপারে বিএনপি আলাদা প্রস্তাব দিয়েছে বলেও জানান সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘যতবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছি, আমাদের দলের পক্ষ থেকে, আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোর পক্ষ থেকে আমরা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করে আসছি।’

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ। সেটি নির্ধারণের প্রস্তাব বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে এবং নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে এসেছে বলেও জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন বলেন, ‘আপনারা জানেন যে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের ক্ষেত্রে এখানে একটা প্রস্তাব এসেছে, আমরাই নিজস্ব উদ্যোগে বলেছি যে কত মেয়াদ এবং কতবার সে বিতর্কে না গিয়ে, বছরের মধ্যে আসেন। এটা প্রস্তাবে আসা যায় কি না যে একজন ব্যক্তি তাঁর জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ কত বছর প্রধানমন্ত্রীতে বহাল থাকতে পারবেন। সে বিষয়ে আমরা আমাদের দল থেকে আলোচনা করে এ প্রস্তাবের ভিত্তিতে আমরা পরে এটা অনুমোদন করিয়েছি। কোনো ব্যক্তি জীবদ্দশায় ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল থাকবেন না।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বিএনপিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। আলোচনার শুরুতে জুলাই শহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আলোচনা সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য) মনির হায়দার। এ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ ন স ল হউদ দ ন প রস ত ব র ব এনপ র প ব চ রপত ত হয় ছ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

জামায়াতের সঙ্গে জোট ও পিআরে একমত নুর

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সারাদেশে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩৫৪ জন, যার মধ্যে কন্যাশিশু ও কিশোরী ২৬৯ জন এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারী ৮৫ জন। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৬ জন, যার মধ্যে শিশু-কিশোরী ৬২ জন। বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮১৯ নারী ও ৭৩৬ শিশু ও কিশোরী।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বিবৃতিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদ ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান তৈরি করে। 

বিবৃতিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু জানান, কেবল জুনে ১১৬ নারী ও ৮৭ জন কন্যাসহ ২০৩ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার ৬৫ জনের মধ্যে কন্যাশিশু ৪৩ জন। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৮ জন, এদের মধ্যে ৫ জন কন্যা। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩ জনকে, যার মধ্যে ২ জন কন্যা। ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ৭ কন্যাশিশু।

উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন ৫ জন নারী ও কন্যা; যার মধ্যে ২ জন আত্মহত্যা করেছেন। এ ছাড়া ১৩ জন কন্যাসহ ৬৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ২ জন কন্যাসহ ১১ জনের মৃত্যু রহস্যজনকভাবে ঘটেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন ৩ নারী, যাদের মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। এসিডদগ্ধ হয়েছেন ১ জন নারী। ৩ জন নারী অগ্নিদগ্ধ (যার মধ্যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে), যৌতুক নির্যাতনের শিকার ১ নারী এবং পারিবারিক সহিংসতায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬ জন। আত্মহত্যা করেছেন ৬ কন্যাসহ ২২ জন। অপহরণ হয়েছে ২ কন্যা, সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন ১ জন এবং বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে দুটি।

সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে নির্যাতনের শিকার ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশুর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৭ জনকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৪ কিশোরী। এদের মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১২৭ জনকে। যৌন নিপীড়নের শিকার ৫১ জন। ৩১ জনকে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে। উত্ত্যক্তকরণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন। ২১ নারী ও কন্যাশিশু পাচার হয়েছেন। একজন এসিড সন্ত্রাসের শিকার। ৬১ কন্যাসহ হত্যার শিকার হয়েছে ৩২০ নারী ও কন্যাশিশু। 

সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম সমকালকে বলেন, এ পরিসংখ্যান শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনার ওপর ভিত্তি করে। বাস্তবে সংখ্যাটা আরও বেশি। বিশেষ করে কন্যাশিশুর ওপর সহিংসতা ও দলবদ্ধ ধর্ষণের সংখ্যা উদ্বেগজনক। এটি সমাজের জন্য অ্যালার্মিং।

তিনি বলেন, ছয় মাসে হাজারের বেশি নারী-কন্যা নির্যাতনের শিকার হলেও মহিলা মন্ত্রণালয় বা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আছিয়া ধর্ষণ মামলায় তড়িঘড়ি করে বিচার হয়েছে, কিন্তু ভালো তদন্ত না হওয়ায় পরিবার সন্তুষ্ট নয়। এ ধরনের বিচারে দ্রুততা নয়, নির্ভুলতা জরুরি। তিনি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান এবং রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তত্ত্বাবধায়ক সরকারে একমত, গঠন প্রক্রিয়ায় ভিন্নমত
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকারে একমত, রূপরেখা নিয়ে মতভিন্নতা
  • লন্ডন বৈঠকের পর সংস্কার প্রস্তাব বিএনপিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে: চরমোনাই পীর
  • সংস্কারে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছে বিএনপি: সালাহউদ্দিন
  • নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ ও তত্ত্ববধায়কের বিষয়ে একমত জামায়াত
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব দল একমত: অধ্যাপক আলী রীয়াজ
  • জামায়াতের সঙ্গে জোট ও পিআরে একমত নুর
  • সাবেক ‘শত্রু’ ক্লপের সঙ্গে একমত গার্দিওলা, তবে...
  • অপরাধের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাসম্ভব দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা