‘জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ’—বহু পুরোনো এই বাগ্‌ধারাই বলে দিচ্ছে, এ দেশে স্মরণাতীতকাল থেকেই কুমিরের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু জলের কুমির পাহাড়চূড়ায় বসবাসের খবর যে কাউকে চমকে দিতে পারে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার পাহাড়চূড়ায় সত্যিই দেখা মিলবে কুমিরের। তা–ও এক-দুটি নয়, কয়েক হাজার।

তুমব্রুর পাহাড়চূড়ায় রয়েছে দেশের একমাত্র বাণিজ্যিক কুমিরের খামার। ২৫ একরের ওই একটি খামারে আছে ছোট–বড় মিলিয়ে ৩ হাজার কুমির। রাস্তার পাশে একাধিক বেষ্টনীতে দেখা মেলে বাচ্চা কুমিরের লাফালাফি। কিছু বেষ্টনীতে গাছের গুঁড়ির মতো নিশ্চল পড়ে আছে কুমিরের দল। কিছু কুমির মুরগি খেতে ব্যস্ত। পাহাড়ের নিচে একাধিক জলাধারেও রয়েছে কুমির। খামারে নিয়মিত ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। ঘুরে ঘুরে কুমির দেখেন। কুমিরের জীবনচক্র জানার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ পাহাড়চূড়ায় খামার গড়ার ইতিহাস, কুমিরের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।

সম্প্রতি নাইক্ষ্যংছড়ির ওই খামার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এখানকার কর্মীরা জানালেন, বিদেশে কুমির রপ্তানির উদ্দেশ্যে খামারটি গড়ে তোলা হয়। তবে এখনো মেলেনি রপ্তানির অনুমতি। এ জন্য খামারটি লাভের মুখ দেখতে পারেনি এখনো।

খামার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এপ্রিল মাস থেকে কুমিরের প্রজনন মৌসুম শুরু হয়। এখনো মৌসুম চলছে। এর মধ্যে ডিম ফুটে বেশ কিছু ছানারও জন্ম হয়েছে। এ মৌসুমে প্রায় ২০০টি ছানার জন্ম হয়েছে। আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত আরও ১৫০টি ছানা হবে। সব মিলিয়ে খামারে কুমিরের সংখ্যা দাঁড়াবে তিন হাজারের কাছাকাছি।

খামারের একটি কুমির। প্রতিদিন এসব কুমির দেখতে প্রচুর দর্শনার্থী হাজির হন। সম্প্রতি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ধুমধুমের পাহাড়ে দেশের একমাত্র কুমির প্রজনন খামারে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পাশ্ববর্তী দেশের জেলেদের আগ্রাসন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

মৌসুমের শুরুতে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারনে কাঙ্খিত ইলিশের দেখা পাচ্ছিলেন না পটুয়াখালীর জেলেরা। গত কয়েকদিন ধরে জেলেদের জালে মিলতে শুরু করেছে রূপালী ইলিশ। এরই মধ্যে প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় আজ মধ্যরাত থেকে নদী ও সাগরে শুরু হচ্ছে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। ফলে জেলেদের মুখের হাসি ম্লান হয়েছে। 

জেলেদের দাবি, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে পাশ্ববর্তী দেশের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরতে শুরু করে। তাদের এই আগ্রাসন ঠেকাতে সমুদ্রে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে। পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

আরো পড়ুন:

পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা

মৌসুম শেষে খালি ট্রলার নিয়ে কূলে ফিরছেন জেলেরা

মা ইলিশের বাঁধাহীন প্রজননের জন্য ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন বঙ্গোপসাগরসহ সব নদ-নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মৎস্য বিভাগ। এসময় নদী ও সামুদ্রিক মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত ও বাজারজাতকরণসহ ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। 

এদিকে, অবরোধের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলাজুড়ে মাইকিং করা হয়েছে। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকাল থেকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ট্রলার তীরে ফিরতে শুরু করেছে। মৎস্য বন্দর পটুয়াখালীর মহিপুর ও আলীপুরের শিববাড়িয়া নদীতে নোঙ্গর করে রাখা হয়েয়েছে হাজারো মাছ ধরার ট্রলার। এসব ট্রলারের জেলেরা বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

অবরোধের কারণে আগামী ২২ দিন বেকার থাকবেন জেলেসহ ও এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্তরা। বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও জেলার ৬৫ হাজার জেলেকে দেওয়া হবে ২৯ কেজি করে চাল। সরকারি এ প্রণোদনা চাহিদার তুলনায় খুবই কম বলে দাবি জেলেদের। 

জেলে আবুল হোসেন ফরাজী বলেন, “২২ দিনে মাত্র ২৯ কেজি চাল পাব, এতে কোনভাবে সংসার চলবে না। যদি সরকার চাল একটু বাড়িয়ে দিত, তাহলে পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারতাম।” 

আলী হোসেন নামের অপর জেলে জানান, “সাগরে প্রশাসন টহল না বাড়ালে ভারতের জেলেরা আমাদের দেশে ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যাবে। বিগত বছরগুলোতে এ ধরনের ঘটনা অসংখ্যবার ঘটেছে। অবরোধের পর সাগরে গিয়ে আমরা মাছ পাইনি। তাই এবছর আমরা সাগরে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি অনুরোধ জানাচ্ছি।”

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, “এক সপ্তাহের মধ্যে জেলেদের প্রণোদনা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। সমুদ্র ও নদীতে অবরোধ শতভাগ সফল করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাশ্ববর্তী দেশের জেলেদের আগ্রাসন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি