অসহায় প্রবীণদের ‘বাবা–মায়ের’ মতো যত্ন করেন রফিকুল-কল্পনা দম্পতি
Published: 6th, July 2025 GMT
‘আমার মা-বাপ বাইচ্চা থাকলে তো তাঁদের পালতাম। আমি ছুডুবেলাই মা-বাপ হারাইছি, মা-বাপের সেবা করতে পারি নাই। তাই রাস্তায় ফালায় যাওয়া মা-বাপরে নিজের বাপ-মা মনে কইরা পালতাছি।’ কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার প্রত্যন্ত চরকামটখালী গ্রামে গড়ে তোলা ‘মাতৃছায়া সমাজকল্যাণ সংস্থা ও বৃদ্ধাশ্রম’-এর পরিচালক মো.
রফিকুল ইসলাম ছোটবেলাতেই মা–বাবাকে হারিয়েছেন। সেই না-পাওয়ার কষ্ট থেকেই যেন শুরু তাঁর এই ভিন্নধর্মী পথচলা। হাসপাতালে দুই দশক চাকরির সুবাদে দেখে এসেছেন কীভাবে বার্ধক্যে মানুষ হয়ে পড়েন একাকী। কেউ পড়ে থাকেন হাসপাতালের বারান্দায়, কেউ রাস্তায়। সেই মানুষগুলোকেই তিনি মনে করেন নিজের মা-বাবা। শুরু করেন তাঁদের আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা।
২০১৮ সালে নিজের ৮ শতাংশ জমিতে টিনশেড ঘরে রফিকুল শুরু করেন আশ্রয়কেন্দ্রের কার্যক্রম। ২০১৯ সাল থেকে এখানে আশ্রয় পেতে শুরু করেন বিভিন্ন স্থানে ফেলে যাওয়া বা পরিচয়হীন প্রবীণেরা। পরে ২০২২ সালে অ্যাপেক্স ক্লাব অব ময়মনসিংহ আধা পাকা একটি ঘর তৈরি করে দেয় আশ্রয়কেন্দ্রটির জন্য।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৩৩ জন প্রবীণ আশ্রয় পেয়েছেন ‘মাতৃছায়া’য়। এর মধ্যে ১২ জন মারা গেছেন, ৪ জন ফিরে গেছেন পরিবারের কাছে। বর্তমানে সেখানে আছেন ১৪ জন নারী, ২ জন পুরুষ ও ১ শিশু।
মায়ার টানে লালনসম্প্রতি আশ্রমে গিয়ে কথা হয় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছোটবেলায় মা-বাবা হারানোর আক্ষেপ থেকে পরিচয়হীন বা সন্তানদের ফেলে যাওয়া বাবা–মায়েদের আশ্রয় দিতে শুরু করেন। মানুষের কাছ থেকে হাত পেতে খাবার আর ওষুধ সংগ্রহ করেন। যত দিন বাঁচবেন, তাঁদের সেবা করবেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সন্তান এই মানুষগুলোর সেবা করবে।
‘মাতৃছায়া সমাজকল্যাণ সংস্থা ও বৃদ্ধ আশ্রয়কেন্দ্রে’ থাকা নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের তারার মা। সম্প্রতি তোলাউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর প্রতিভা বিকশিত হতে দেয় না
সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তরুণ সাহিত্যিক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন উম্মে ফারহানা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তিনি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানিয়েছেন পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্বরলিপি
ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন।
ধন্যবাদ। লেখক হিসেবে এটি আমার প্রথম পুরস্কার। তাই অনুভূতি খুবই নতুন। অবশ্যই আমি অত্যন্ত আনন্দিত। একে নিজের লেখক পরিচয় নিয়ে আরেকটু আত্মবিশ্বাসী হওয়ার ধাপ বলে মনে করছি।
আপনি প্রথম এই পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদ কীভাবে জানলেন?
‘সমকাল’ থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। ৪ জুলাই সন্ধ্যায় ঘোষণা দেওয়ার আগে কাউকে বলার কথা নয়। শুধু পরিবারের লোকজন, মানে আমার বাচ্চারা আর ভাইবোনকে জানিয়েছিলাম।
এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি কেমন অর্থ বহন করে?
পুরস্কার মানে এক ধরনের স্বীকৃতি, সম্মান আর অর্থমূল্যটিও নগন্য নয়। আমি পেশায় শিক্ষক, ১৪ বছর চাকরি করার পরেও আমার বেতন এক লক্ষে পৌঁছেনি। কাজেই হঠাৎ এক লাখ টাকা পেয়ে যাওয়া অপ্রত্যাশিত আনন্দ দিয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
আপনি কী লক্ষ্য করেছেন এই পুরস্কারের তরুণ ক্যাটাগরীতে বেশ কয়েকবছর ধরে নারীরা বেশি পুরস্কৃত হচ্ছেন, বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?
লক্ষ্য করলে দেখবেন ফিকশনে নারীদের সাফল্য গত কয়েক দশক ধরে ধারাবাহিক হয়ে গেছে সারা বিশ্বেই। নোবেল পেলেন হান কাং, বুকার পেলেন গীতাঞ্জলি শ্রীর পর বানু মুশতাক। এলিফ শাফাক, চিমামান্দা আদিচি ছাড়াও অনেক নারী লেখকদের নাম বলা যাবে যারা খুব ভালো আখ্যান লিখছেন। এখন আর সেই পুরুষ প্রাধান্য জগতের কোথাও নেই। হ্যাঁ, লৈঙ্গিক বৈষম্য রয়েছে, চিরকালই ছিল। কিন্তু সেজন্য সৃজনশীলতাকে তো দমিয়ে রাখা যায় না। পৃথিবীর প্রাচীনতম কবিদের একজন হলেন শ্যাফো, কেমিস্ট্রিতে দুইবার নোবেল পেয়েছেন মেরি কুরি। কোন ক্ষেত্রে আপনি নারীদের অবদান কিংবা প্রতিভার প্রকাশকে অস্বীকার করবেন? এতো দিন আমরা নারীদের দেখিনি কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর প্রতিভা বিকশিত হতে দেয় না।
বেড়ে ওঠার সময় সাহিত্যের অনুকূল পরিবেশ কতটা পেয়েছেন?
‘সাহিত্যচর্চা’র মতো ভারী কথা আমি ব্যবহার করতে চাই না। আমি লেখালেখি করি স্কুল পাস করার পর থেকেই। মা-বোন-ভাইয়ের কাছ থেকে সবসময় উৎসাহ পেয়েছি। বন্ধু আর সহকর্মীরাও সবসময় লেখালেখির ব্যাপারে সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমার প্রয়াত স্বামীও আমার প্রথম বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন। ৫টি বইয়ের চারটির অথর ফটো তাঁর তোলা। আমি খুবই প্রভাবিত আর অনুপ্রাণিত আমার প্রিয় লেখকদের দিয়ে। অনেকেই আছেন এই তালিকায়। অরুন্ধতী রয়, টনি মরিসন, অমিতাভ ঘোষ, রোহিন্তন মিস্ত্রি, এলিফ শাফাকসহ আরও অনেকের কাজ আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
সাহিত্যের ভাষা বিনির্মাণে কোন বিষয়কে বেশি গরুত্ব দেন?
ভাষা হচ্ছে নদীর মতো, নিজের গতিতে চলে। ভাষার ব্যাপারে প্রুডারি আমার অপছন্দ। কলকাতার চাপিয়ে দেওয়া তথাকথিত শুদ্ধ ভাষায় আমি বিশ্বাসী নই। ভাষাকে হতে হবে লেখকের নিজস্ব। মনে করুন শাহীন আখতারের ‘সখী রঙ্গমালা’, নোয়াখালীর ভাষাই এই উপন্যাসের সৌন্দর্য। আমি ময়মনসিংহের কলোক্যাল প্রায়ই ব্যবহার করি যেখানে দরকার বলে মনে হয়। তাই বলে ঢাকার সেটিঙে লেখা গল্পে ময়মনসিংহের ডায়লগ জোর করে জুড়ে দিই না। এতো গেল প্রমিত আর অপ্রমিতের আলাপ। এ ছাড়াও গদ্যের ভাষায় যা জরুরি বলে মনে করি তা হলো সাবলীলতা। গদ্যের ভাষা অর্গ্যানিক না হলে পড়া মুশকিল।
তারা//