ময়মনসিংহে সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে নির্বিঘ্নে চলাচল করছে এসব যানবাহন। ফলে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের মিছিল।
যাত্রীদের অভিযোগ, স্থানীয় বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের লোক দেখানো অভিযান ও নীরবতার কারণে এসব অবৈধ পরিবহন ব্যবস্থার কোনো স্থায়ী সমাধান আসছে না। ময়মনসিংহের মহাসড়কে সাম্প্রতিক অধিকাংশ দুর্ঘটনার পেছনেই সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে।
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ৪৭(২) ধারা অনুযায়ী মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। এই ধারায় ‘সড়ক বা মহাসড়কে চলাচলের অনুপযোগী’ যানবাহনের সজ্ঞায় নসিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক, মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান এবং সরকার বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়ে সময়ে নিষিদ্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করা অনুরূপ যানবাহনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ময়মনসিংহে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে এসব অবৈধ যানবাহন।
এসব অবৈধ যানবাহনের চালকদের অধিকাংশই অদক্ষ, লাইসেন্সবিহীন এবং ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা তাদের মধ্যে প্রকট। দ্রুতগতিসম্পন্ন বাস, ট্রাক ও অন্যান্য ভারী যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার কারণে এবং মহাসড়কে হঠাৎ ইউটার্ন নেওয়া, উল্টোপথে প্রবেশ, ওভারটেকিংয়ের চেষ্টা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলোর চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংশ্লিষ্টতা উদ্বেগজনকহারে বেশি, যেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অটোরিকশার যাত্রীরা আহত হচ্ছেন অথবা প্রাণ হারাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে মহাসড়কে অবৈধ অটোরিকশা চলাচল বন্ধে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
হাসপাতাল ও পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩৮ জন নিহত হয়েছেন। একই সময়ে দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের অধিকাংশই সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী।
ময়মনসিংহ বিআরটিএ অফিসের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৯৯৮টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে বেশির ভাগই নষ্ট বা সংস্কার হয়ে অন্য জেলায় চলে গেছে। আর ২০২৫ সালে মাত্র ২৫টি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, ময়মনসিংহ নগরীর ব্রিজ মোড়, শম্ভুগঞ্জ মোড়, ঢাকা বাইপাস, রহমতপুর বাইপাস, টাউনহল মোড়, চড়পাড়া ও মাসকান্দা থেকে প্রতিদিন লাইসেন্সবিহীন পাঁচ-ছয় হাজার অবৈধ অটোরিকশা চলাচল করে।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করা হলেও, তা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী কোনো ফল বয়ে আনছে না। অভিযান শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি আবার আগের মতো হয়ে যায়, যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, এই অভিযানগুলো কেবল সাময়িক পদক্ষেপ মাত্র। অনেক ক্ষেত্রে অভিযানের খবর আগে থেকেই চালকদের কাছে পৌঁছে যায়, ফলে তারা অভিযান চলাকালীন সময়ে মহাসড়ক এড়িয়ে চলেন এবং অভিযান শেষে আবার পুরোদমে চলাচল শুরু হয়।
বিআরটিএ ময়মনসিংহ অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈমের ভাষ্য, তাদের কাছে আবেদন এলে রেজিস্ট্রেশন দিতে বাধা নেই। আর মহাসড়কের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের ব্যাপারে আইনে নিষেধ আছে। এ জন্য প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা। চালকরা খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের রুটগুলো এড়িয়ে চলাফেরা করেন। সামনের সপ্তাহ থেকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জনমনে ধারণা, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক ও চালকদের যোগসাজশ রয়েছে। তাদের মধ্যে উৎকোচ লেনদেন হওয়ায় অবৈধ অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। এতে সরকারের সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক কঠোর নীতিমালা ও আইনগুলো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকছে, বাস্তব রূপ পাচ্ছে না।
আবার চালকদের দিক থেকে জীবিকার প্রশ্নও ওঠে। তারা দাবি করেন, তাদের জীবিকার প্রধান উৎস এই অটোরিকশা এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবে তারা বাধ্য হয়েই এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন।
অটোরিকশা চালক আব্দুর রহমান বলেন, ‘পেটের দায়ে ঝুঁকি নিই, উপায় নাই ভাই! গ্রামে আর কাজ নাই, শহরেও কাজ নাই। এই সিএনজি চালিয়েই বউ-বাচ্চা নিয়ে কোনোরকম টিকে আছি। পুলিশ মাঝেমধ্যে ধরপাকড় করে, মামলা দেয়, টাকাও নেয়। ভয়ে ভয়ে থাকি, কিন্তু উপায় কী?’ চালক জব্বার মিয়া বলেন, ‘যাত্রীরাই তো চায়, আমরা কী করব? নিয়মের মধ্যে যদি আমাদের চলার অনুমতি দিত, তাহলে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমত আর আমাদেরও একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হতো।’
হাইওয়ে পুলিশ সুপার কাজী মোহাম্মদ ছোয়াইব দাবি করেন, পুলিশ অবৈধ যানবাহন আটক ও জরিমানা করছে। অটোরিকশার আমদানি ও উৎপাদন বন্ধ করতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক দ র ঘটন চ লকদ র ব যবস থ হ সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর প্রতিভা বিকশিত হতে দেয় না

সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তরুণ সাহিত্যিক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন উম্মে ফারহানা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তিনি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানিয়েছেন পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্বরলিপি

ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন। 

ধন্যবাদ। লেখক হিসেবে এটি আমার প্রথম পুরস্কার। তাই অনুভূতি খুবই নতুন। অবশ্যই আমি অত্যন্ত আনন্দিত। একে নিজের লেখক পরিচয় নিয়ে আরেকটু আত্মবিশ্বাসী হওয়ার ধাপ বলে মনে করছি। 

আপনি প্রথম এই পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদ কীভাবে জানলেন?

‘সমকাল’ থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। ৪ জুলাই সন্ধ্যায় ঘোষণা দেওয়ার আগে কাউকে বলার কথা নয়। শুধু পরিবারের লোকজন, মানে আমার বাচ্চারা আর ভাইবোনকে জানিয়েছিলাম।

এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি কেমন অর্থ বহন করে?

পুরস্কার মানে এক ধরনের স্বীকৃতি, সম্মান আর অর্থমূল্যটিও নগন্য নয়। আমি পেশায় শিক্ষক, ১৪ বছর চাকরি করার পরেও আমার বেতন এক লক্ষে পৌঁছেনি। কাজেই হঠাৎ এক লাখ টাকা পেয়ে যাওয়া অপ্রত্যাশিত আনন্দ দিয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।

আপনি কী লক্ষ্য করেছেন এই পুরস্কারের তরুণ ক্যাটাগরীতে বেশ কয়েকবছর ধরে নারীরা বেশি পুরস্কৃত হচ্ছেন, বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?

লক্ষ্য করলে দেখবেন ফিকশনে নারীদের সাফল্য গত কয়েক দশক ধরে ধারাবাহিক হয়ে গেছে সারা বিশ্বেই। নোবেল পেলেন হান কাং, বুকার পেলেন গীতাঞ্জলি শ্রীর পর বানু মুশতাক। এলিফ শাফাক, চিমামান্দা আদিচি ছাড়াও অনেক নারী লেখকদের নাম বলা যাবে যারা খুব ভালো আখ্যান লিখছেন। এখন আর সেই পুরুষ প্রাধান্য জগতের কোথাও নেই। হ্যাঁ, লৈঙ্গিক বৈষম্য রয়েছে, চিরকালই ছিল। কিন্তু সেজন্য সৃজনশীলতাকে তো দমিয়ে রাখা যায় না। পৃথিবীর প্রাচীনতম কবিদের একজন হলেন শ্যাফো, কেমিস্ট্রিতে দুইবার নোবেল পেয়েছেন মেরি কুরি। কোন ক্ষেত্রে আপনি নারীদের অবদান কিংবা প্রতিভার প্রকাশকে অস্বীকার করবেন? এতো দিন আমরা নারীদের দেখিনি কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর প্রতিভা বিকশিত হতে দেয় না।

বেড়ে ওঠার সময় সাহিত্যের অনুকূল পরিবেশ কতটা পেয়েছেন? 

‘সাহিত্যচর্চা’র মতো ভারী কথা আমি ব্যবহার করতে চাই না। আমি লেখালেখি করি স্কুল পাস করার পর থেকেই। মা-বোন-ভাইয়ের কাছ থেকে সবসময় উৎসাহ পেয়েছি। বন্ধু আর সহকর্মীরাও সবসময় লেখালেখির ব্যাপারে সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমার প্রয়াত স্বামীও আমার প্রথম বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন। ৫টি বইয়ের চারটির অথর ফটো তাঁর তোলা। আমি খুবই প্রভাবিত আর অনুপ্রাণিত আমার প্রিয় লেখকদের দিয়ে। অনেকেই আছেন এই তালিকায়। অরুন্ধতী রয়, টনি মরিসন, অমিতাভ ঘোষ, রোহিন্তন মিস্ত্রি, এলিফ শাফাকসহ আরও অনেকের কাজ আমাকে অনুপ্রাণিত করে। 

সাহিত্যের ভাষা বিনির্মাণে কোন বিষয়কে বেশি গরুত্ব দেন?

ভাষা হচ্ছে নদীর মতো, নিজের গতিতে চলে। ভাষার ব্যাপারে প্রুডারি আমার অপছন্দ। কলকাতার চাপিয়ে দেওয়া তথাকথিত শুদ্ধ ভাষায় আমি বিশ্বাসী নই। ভাষাকে হতে হবে লেখকের নিজস্ব। মনে করুন শাহীন আখতারের ‘সখী রঙ্গমালা’, নোয়াখালীর ভাষাই এই উপন্যাসের সৌন্দর্য। আমি ময়মনসিংহের কলোক্যাল প্রায়ই ব্যবহার করি যেখানে দরকার বলে মনে হয়। তাই বলে ঢাকার সেটিঙে লেখা গল্পে ময়মনসিংহের ডায়লগ জোর করে জুড়ে দিই না। এতো গেল প্রমিত আর অপ্রমিতের আলাপ। এ ছাড়াও গদ্যের ভাষায় যা জরুরি বলে মনে করি তা হলো সাবলীলতা। গদ্যের ভাষা অর্গ্যানিক না হলে পড়া মুশকিল।

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক হলেন জাহাঙ্গীর কবির
  • ময়মনসিংহে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
  • বাস চাপায় শিশুর মৃত্যু, মা-বাবা গুরুতর আহত
  • শ্বাসরোধে হত্যার পর সুফিয়ার লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয় রোহান: পুলিশ
  • ময়মনসিংহে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত
  • পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর প্রতিভা বিকশিত হতে দেয় না
  • তিন বিভাগে ৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে
  • অসহায় প্রবীণদের ‘বাবা–মায়ের’ মতো যত্ন করেন রফিকুল-কল্পনা দম্পতি
  • টানা পাঁচদিন সারাদেশে বৃষ্টির বার্তা