ময়মনসিংহে সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে নির্বিঘ্নে চলাচল করছে এসব যানবাহন। ফলে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের মিছিল।
যাত্রীদের অভিযোগ, স্থানীয় বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের লোক দেখানো অভিযান ও নীরবতার কারণে এসব অবৈধ পরিবহন ব্যবস্থার কোনো স্থায়ী সমাধান আসছে না। ময়মনসিংহের মহাসড়কে সাম্প্রতিক অধিকাংশ দুর্ঘটনার পেছনেই সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে।
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ৪৭(২) ধারা অনুযায়ী মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। এই ধারায় ‘সড়ক বা মহাসড়কে চলাচলের অনুপযোগী’ যানবাহনের সজ্ঞায় নসিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক, মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান এবং সরকার বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়ে সময়ে নিষিদ্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করা অনুরূপ যানবাহনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ময়মনসিংহে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে এসব অবৈধ যানবাহন।
এসব অবৈধ যানবাহনের চালকদের অধিকাংশই অদক্ষ, লাইসেন্সবিহীন এবং ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা তাদের মধ্যে প্রকট। দ্রুতগতিসম্পন্ন বাস, ট্রাক ও অন্যান্য ভারী যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার কারণে এবং মহাসড়কে হঠাৎ ইউটার্ন নেওয়া, উল্টোপথে প্রবেশ, ওভারটেকিংয়ের চেষ্টা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলোর চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংশ্লিষ্টতা উদ্বেগজনকহারে বেশি, যেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অটোরিকশার যাত্রীরা আহত হচ্ছেন অথবা প্রাণ হারাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে মহাসড়কে অবৈধ অটোরিকশা চলাচল বন্ধে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
হাসপাতাল ও পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩৮ জন নিহত হয়েছেন। একই সময়ে দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের অধিকাংশই সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী।
ময়মনসিংহ বিআরটিএ অফিসের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৯৯৮টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে বেশির ভাগই নষ্ট বা সংস্কার হয়ে অন্য জেলায় চলে গেছে। আর ২০২৫ সালে মাত্র ২৫টি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, ময়মনসিংহ নগরীর ব্রিজ মোড়, শম্ভুগঞ্জ মোড়, ঢাকা বাইপাস, রহমতপুর বাইপাস, টাউনহল মোড়, চড়পাড়া ও মাসকান্দা থেকে প্রতিদিন লাইসেন্সবিহীন পাঁচ-ছয় হাজার অবৈধ অটোরিকশা চলাচল করে।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করা হলেও, তা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী কোনো ফল বয়ে আনছে না। অভিযান শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি আবার আগের মতো হয়ে যায়, যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, এই অভিযানগুলো কেবল সাময়িক পদক্ষেপ মাত্র। অনেক ক্ষেত্রে অভিযানের খবর আগে থেকেই চালকদের কাছে পৌঁছে যায়, ফলে তারা অভিযান চলাকালীন সময়ে মহাসড়ক এড়িয়ে চলেন এবং অভিযান শেষে আবার পুরোদমে চলাচল শুরু হয়।
বিআরটিএ ময়মনসিংহ অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈমের ভাষ্য, তাদের কাছে আবেদন এলে রেজিস্ট্রেশন দিতে বাধা নেই। আর মহাসড়কের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের ব্যাপারে আইনে নিষেধ আছে। এ জন্য প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা। চালকরা খবর পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের রুটগুলো এড়িয়ে চলাফেরা করেন। সামনের সপ্তাহ থেকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জনমনে ধারণা, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক ও চালকদের যোগসাজশ রয়েছে। তাদের মধ্যে উৎকোচ লেনদেন হওয়ায় অবৈধ অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। এতে সরকারের সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক কঠোর নীতিমালা ও আইনগুলো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকছে, বাস্তব রূপ পাচ্ছে না।
আবার চালকদের দিক থেকে জীবিকার প্রশ্নও ওঠে। তারা দাবি করেন, তাদের জীবিকার প্রধান উৎস এই অটোরিকশা এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবে তারা বাধ্য হয়েই এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন।
অটোরিকশা চালক আব্দুর রহমান বলেন, ‘পেটের দায়ে ঝুঁকি নিই, উপায় নাই ভাই! গ্রামে আর কাজ নাই, শহরেও কাজ নাই। এই সিএনজি চালিয়েই বউ-বাচ্চা নিয়ে কোনোরকম টিকে আছি। পুলিশ মাঝেমধ্যে ধরপাকড় করে, মামলা দেয়, টাকাও নেয়। ভয়ে ভয়ে থাকি, কিন্তু উপায় কী?’ চালক জব্বার মিয়া বলেন, ‘যাত্রীরাই তো চায়, আমরা কী করব? নিয়মের মধ্যে যদি আমাদের চলার অনুমতি দিত, তাহলে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমত আর আমাদেরও একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হতো।’
হাইওয়ে পুলিশ সুপার কাজী মোহাম্মদ ছোয়াইব দাবি করেন, পুলিশ অবৈধ যানবাহন আটক ও জরিমানা করছে। অটোরিকশার আমদানি ও উৎপাদন বন্ধ করতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক দ র ঘটন চ লকদ র ব যবস থ হ সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

জিল হোসেন মারা গেছেন, আদালতে তাঁর লড়াই শেষ হবে কবে

জিল হোসেনের ৭২ বছরের জীবনের ৪৭ বছরই কেটেছে আইনি লড়াইয়ে। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা পাসের সনদ পেতে, এরপর ক্ষতিপূরণের দাবিতে তাঁর এই দীর্ঘ লড়াই। লড়াই এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যেই মারা গেছেন জিল হোসেন।

জিল হোসেনের মৃত্যুর পর তিন বছর ধরে লড়াইটা করে যাচ্ছেন স্ত্রী ও তাঁর সন্তানেরা। কিন্তু পরিবারটির বিচারের অপেক্ষা শেষ হয়নি।

পরিবার ও মামলার নথিতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, জিল হোসেনের জন্ম ১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি। ১৯৭১-৭২ শিক্ষাবর্ষে তিনি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের (কৃষি) পরীক্ষার্থী ছিলেন। এই পরীক্ষা হয় ১৯৭৩ সালে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ফলাফলে তাঁকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে। ফলাফল পুনর্বিবেচনা চেয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আবেদন করেন জিল হোসেন। কিন্তু সেই আবেদনে কাজ হয়নি।

১৯৭৫ সালে জিল হোসেন আবার পরীক্ষায় অংশ নেন, কিন্তু তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এসবের প্রতিকার চেয়ে ১৯৭৫ সালের ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহের প্রথম মুনসেফ আদালতে তিনি মামলা করেন। মামলায় তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর প্রাপ্ত নম্বরের (১৯৭৩ সালে দেওয়া পরীক্ষায়) সঙ্গে ভগ্নাংশ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নম্বরের সঙ্গে ভগ্নাংশ যোগ না করে তাঁকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে।

সেই আইনি লড়াইয়ের শুরু। নিম্ন আদালত পেরিয়ে বছরের পর বছর উচ্চ আদালতেও ছুটেছেন তিনি। সিরাজগঞ্জ সদরের চিলগাছা গ্রামে পরিবার নিয়ে থাকতেন জিল হোসেন। ছোটখাটো ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। সংসারে স্ত্রী এবং চার ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। আইনি লড়াই নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মারা যান জিল হোসেন। এর পর থেকে মামলায় পক্ষ হয়ে তাঁর স্ত্রীসহ উত্তরাধিকারীরা লড়াই করে যাচ্ছেন।

বাবা উচ্চ আদালতের রায় দেখে যেতে পারেননি। বাবা নেই, বুকে চাপা কষ্ট হয়। বাবার কাছে শুনেছি, মামলা চালাতে গিয়ে জমিসহ অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে বাবার জীবন ধ্বংস হয়েছে, আমাদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।নূর হোসেন, বাদী জিল হোসেনের ছোট ছেলে

জিল হোসেনের ছোট সন্তান নূর হোসেন গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা উচ্চ আদালতের রায় দেখে যেতে পারেননি। বাবা নেই, বুকে চাপা কষ্ট হয়। বাবার কাছে শুনেছি, মামলা চালাতে গিয়ে জমিসহ অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে বাবার জীবন ধ্বংস হয়েছে, আমাদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

আরও পড়ুনশিক্ষাসনদ নিয়ে ৪৮ বছরের আইনি লড়াই: ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রায় বাস্তবায়নে বাধা নেই০৮ অক্টোবর ২০২৩

নূর হোসেন আরও বলেন, ‘মা এবং ভাইবোনেরা এখন মামলা চালাচ্ছি। মায়ের বয়স ৬৯ বছর। তিনিও নানা রোগে ভুগছেন। তিনিও চূড়ান্ত রায় দেখে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভ টু আপিল এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে। বাবা মারা যাওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো অনুশোচনা নেই, এটা কষ্টের।’

আইনি লড়াই

জিল হোসেন যখন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (কৃষি) দ্বিতীয় পর্বের চতুর্থ বর্ষের পুরোনো পাঠ্যক্রমের চূড়ান্ত পরীক্ষার্থী ছিলেন, তখন তাঁর বয়স ২৩ বছর। ময়মনসিংহের মুনসেফ আদালতে করা মামলায় জয়ী হন তিনি। আদালত ১৯৭৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ভগ্নাংশ নম্বর যোগ না করে তাঁকে অকৃতকার্য করাকেও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

তবে জিল হোসেনের লড়াই তখনো বাকি। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জজ আদালতে যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালের ৩১ জানুয়ারি এই আদালতের দেওয়া রায়েও জিল হোসেনের বহিষ্কারাদেশ বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

একই বছর হাইকোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হাইকোর্ট ১৯৭৬ সালের ২৪ আগস্ট মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য প্রথম মুনসেফ আদালতে পাঠান। এরপর ১৯৭৮ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রথম মুনসেফ আদালত ভগ্নাংশ নম্বর যোগ করে ৩০ দিনের মধ্যে জিল হোসেনের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুনসেবাদাতা বা গ্রহীতাদের সন্তুষ্টির মূল্যায়ন হয়নি২৮ এপ্রিল ২০২২

এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার জেলা জজ আদালতে আপিল করে, যা নামঞ্জুর হয়। পরে হাইকোর্টে আপিল করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর ওপর ১৯৮৩ সালের ১৬ জানুয়ারি রায় দেওয়া হয়। এ রায়ে বিচারিক আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।

অতঃপর সনদ, ক্ষতিপূরণ মামলা

পরিবার ও মামলাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাইকোর্টের রায়ের পর ১৯৮৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জিল হোসেনের একটি আবেদন গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে তাঁকে পাস নম্বর দিয়ে ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর নম্বরপত্রের সনদ দেওয়া হয়। তখন জিল হোসেনের বয়স ৪৭ বছর। তখন তাঁর সরকারি চাকরির বয়সসীমা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।

লিভ টু আপিল বিচারাধীন উল্লেখ করে একের পর এক সময় নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টর স্থগিতাদেশ না থাকায় মামলা চলতে আইনগত বাধা নেই। অথচ মামলাটি চলছে না, যা জিল হোসেনের পরিবারের জন্য ভোগান্তির।চঞ্চল কুমার বিশ্বাস, বাদীপক্ষের আইনজীবী

এরপর ২০০০ সালের ১৮ অক্টোবর ক্ষতিপূরণ দাবি করে অধস্তন আদালতে মামলা করেন জিল হোসেন। মামলায় অভিযোগ করেন, হাইকোর্টের রায় ১৪ বছর ৯ মাস পরে কার্যকর করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কাজে তাঁর জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে সরকারি চাকরির সম্ভাবনাও।

ক্ষতিপূরণের এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৬ আগস্ট রায় দেন ময়মনসিংহের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে জিল হোসেনকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২ কোটি টাকা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

১৪ বছর পর নিষ্পত্তি

বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৪ জুন হাইকোর্ট শর্ত সাপেক্ষে ময়মনসিংহের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ স্থগিত করেন। শর্ত হিসেবে ২ কোটি টাকার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ২৫ লাখ টাকা ৩ মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয়। এতে ব্যর্থ হলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়ে যাবে বলেও ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবী জানান, জিল হোসেন মারা যাওয়ার পর আপিল শুনানির জন্য উঠলে ১৩ বছর আগে হাইকোর্ট ২ কোটি টাকার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা সামনে আসে। এ অবস্থায় হাইকোর্ট আপিলকারী পক্ষকে ২৫ লাখ টাকা জমা দিয়ে আসতে বলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালে ৪ নভেম্বর ওই অর্থ জমা দেয়।

বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। বিচারাধীন থাকলে নিম্ন আদালতে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম স্থগিত থাকে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তও আছে। আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুত আছি।এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে নিয়োগ দেওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা আপিল খারিজ করে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট। ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় সংশোধন সাপেক্ষে বহাল রাখেন হাইকোর্ট। রায়ের দিন থেকে ওই অর্থের বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে তারা (জিল হোসেনের পরিবার) লভ্যাংশ পাবেন বলেও জানানো হয়। অবশ্য এর আগে শর্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জমা করা ২৫ লাখ টাকা ওই অর্থ থেকে বাদ যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভ টু আপিল

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে লিভ টু আপিল করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনটি ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে সেদিন তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন। লিভ টু আপিল ক্রম অনুসারে শুনানি হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় লিভ টু আপিলটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের গত ৩১ আগস্টের কার্যতালিকায় ৫০৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

জিল হোসেনের পরিবারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি পরিচালনার জন্য ২০২৩ সালের ৯ মার্চ আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস নিয়োগ পান। তাঁকে নিয়োগ দেয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। চঞ্চল কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিম্ন আদালতে অর্থ আদায়ে জারি মামলার (২০০৯ সালে করা) কার্যক্রম অগ্রসরের জন্য বাদীর উত্তারাধিকারীকারেরা আবেদন করেন।

আরও পড়ুনসনদ ও ক্ষতিপূরণের জন্য ৪৭ বছরের আইনি লড়াই ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

চঞ্চল কুমার বিশ্বাস বলেন, লিভ টু আপিল বিচারাধীন উল্লেখ করে একের পর এক সময় নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ না থাকায় মামলা চলতে আইনগত বাধা নেই। অথচ মামলাটি চলছে না, যা জিল হোসেনের পরিবারের জন্য ভোগান্তির।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে নিয়োগ দেওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। বিচারাধীন থাকলে নিম্ন আদালতে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম স্থগিত থাকে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তও আছে। আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুত আছি।’

আরও পড়ুন৩৩ বছর কেটে গেছে, কাজল কথা রেখেছেন০৫ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মহাসড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ
  • ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ 
  • জিল হোসেন মারা গেছেন, আদালতে তাঁর লড়াই শেষ হবে কবে
  • ময়মনসিংহে সিলিন্ডার লিকেজে হোটেলে অগ্নিকাণ্ড 
  • অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড় ধসের শঙ্কা