বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ভর করছে দলগুলোর ওপর
Published: 9th, August 2025 GMT
জুলাই জাতীয় সনদ বা রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে আনা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে নিজ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেবে না জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তারা বলেছে, সংস্কার প্রস্তাবের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ভর করছে বিশেষজ্ঞ মতামত ও রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। এ জন্য আগামী সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে কমিশন। ওই আলোচনার ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের তৃতীয় পর্বের আলোচনা হবে।
গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ কথা জানান। জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বের আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদ কবে নাগাদ স্বাক্ষরিত হতে পারে, সেটাও মূলত নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর।
সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, আগামীকাল রোববার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সদস্য, আইন ও রাজনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের এ আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হবে।
সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তৈরি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে।গত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো প্রতিবেদন দেয়। পরে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়।
পরে ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি অংশে ছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন বাদে বাকি পাঁচটি কমিশনের ১৬৫টি ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশ। এগুলো বাস্তবায়নে কাজ চলছে। আরেকটি অংশে ছিল ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ। এগুলো নিয়ে প্রথম পর্বে ৩৩টি দলের সঙ্গে (২০ মার্চ-১৯ মে) আলাদাভাবে আলোচনা হয়। প্রথম পর্বে ঐকমত্য না হওয়া ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ৩০টি দলের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বে (৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই) আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। দুই পর্বের আলোচনায় বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হলেও এসব বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।
যেসব সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। ইতিমধ্যে এই সনদের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার দুই বছরের মধ্যে এসব সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে। বিএনপি এ বিষয়ে একমত। তবে শুধু এমন অঙ্গীকার করা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কিছু দলের আপত্তি আছে। তারা জুলাই সনদকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার এবং সংস্কার বাস্তবায়নের পদ্ধতি ঠিক করার দাবি করছে।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রথম পর্বের আলোচনায় ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়। দ্বিতীয় পর্বে ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ১১টিতে সব দলের ঐকমত্য ও ৯টিতে নোট অব ডিসেন্টসহ (ভিন্নমত) সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা দরকার। আলী রীয়াজ সহসভাপতি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনবাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে হবে আলোচনা
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত ও প্রত্যাশিত স্বাক্ষরিত সনদের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা দরকার। সেই লক্ষ্যে কমিশন এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আলোচনা করবে। ওই আলোচনার আলোকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনায় বসবে কমিশন। আশা করা যায়, এ প্রক্রিয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই উপযুক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, প্রস্তাব বাস্তবায়নের ব্যাপারে ঐকমত্য কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এটা বাস্তবায়নের পথ কী হবে, তা বিশেষজ্ঞদের কাছে জানতে চাওয়া হবে। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানের বিষয়ও আছে। ফলে বাস্তবায়নের পথ কী হবে, তা রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ওপর নির্ভর করবে। কমিশন পূর্বনির্ধারিত কোনো অবস্থান থেকে বাস্তবায়নের কোনো পদ্ধতি সুপারিশ করবে না।
কিছু মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবের সিদ্ধান্তে কোনো কোনো দলের ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) আছে। সেগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, এ বিষয়ে তাঁরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলবেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা কী। তিনি বলেন, নোট অব ডিসেন্টের যেমন গুরুত্ব আছে, তেমনি ব্যাপকসংখ্যক দল যখন কোনো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়, সেটারও গুরুত্ব আছে। এটা বিবেচনা করতে হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, সবাই সব বিষয়ে একমত হবে না। কমিশন যত দূর সম্ভব ঐকমত্যের জায়গায় আসার চেষ্টা করেছে। অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশনের সাফল্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, সাফল্য বিষয়টা সব সময় আপেক্ষিক। কমিশন দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এটা একটা বড় রকমের অর্জন। সে জন্য অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ দিতে হবে। কমিশন এখানে অনুঘটকের কাজ করেছে।
রাজনৈতিক দলগুলো যা বলছে
আলোচনায় জন্য ডাকলে বিএনপি যেতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করুক, দেখুক না, জুলাই সনদের বাস্তবায়নের আইনি ও সাংবিধানিক বৈধ কোনো প্রক্রিয়া আছে কি না। আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি। আমরা মনে করি, এই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ও সাংবিধানিক বৈধতা দিতে পারে পরবর্তী সংসদ।’
তবে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রথম আলোকে বলেন, এখন রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয় সংস্কারে একমত হয়েছে, সরকারের উচিত সেগুলোর আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং বাস্তবায়ন করা। সংস্কারের মাধ্যমেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। তাই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন দ্রুত সম্পন্ন করে অধ্যাদেশ, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক বা গণভোটের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি প্রদান করা না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে।
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরুর আগেই তারা পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে সংস্কার বাস্তবায়নের দিকে নীতিগতভাবে একরকম ঝুঁকে গেছে বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন অবস্থায় আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। তবে আমরা মনে করি, জুলাই সনদকে একটা আইনি ভিত্তি দিতেই হবে।’
ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ রোধ
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সাতটি উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছিল। এর অন্যতম ছিল, সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র রোধ ও ক্ষমতার ভারসাম্য আনা। যাতে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার উত্থান না হয়। কিন্তু এ–সংক্রান্ত কিছু মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে সব দল একমত হয়নি। এ ক্ষেত্রে সে উদ্দেশ্য কতটা পূর্ণ হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল। কিছু ক্ষেত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেবল সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রশ্নকে বিবেচনা করলে হবে না। জাতীয় সংসদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে বিরোধী দলের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার কারণে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার ওপর একধরনের চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে।
আলী রীয়াজ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকালের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। আবার অধিকাংশ দলের বক্তব্য হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী যেন একই সঙ্গে দলের প্রধান না হন। কমিশন আশা করছে, এটাও যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে এই প্রক্রিয়াগুলোর বাইরে আরও কিছু বিষয় আছে, সেগুলো আসলে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ রোধ করার চেষ্টা করবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, কেবল একটা নির্বাচন বা সংবিধান ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পুনরুত্থান বন্ধ করতে পারবে না। এ জন্য একাদিক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পরিবর্তন প্রয়োজন, বিধি–ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থারও পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও একটা পরিবর্তন করা দরকার।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন আশা করে, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে যে কাঠামোগত পরিবর্তনগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য সরকারকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
আলী রীয়াজ বলেন, গত ১৪–১৫ বছরে একটা বড় সংকট ছিল, নির্বাচনব্যবস্থাটা ভেঙে পড়া এবং পরিকল্পিতভাবে সেটাকে ধ্বংস করা। সেটাকে পুনর্গঠন করার ক্ষেত্রে সংস্কারটা জরুরি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, কোনো কোনো দল জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের কথা বলছে। নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে ঐকমত্য কমিশন যুক্ত নয়।
কমিশনের পরিচালন ব্যয়
ঐকমত্য কমিশনের পরিচালন ব্যয় প্রকাশ করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, পরিচালন ব্যয় নিয়ে নিশ্চয় সরকারের অডিট (নিরীক্ষা) হবে। কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা আইন মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয় থেকে দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে হিসাব আছে। যখন অডিট হবে, নিশ্চয় পরিচালন ব্যয় কত, তা জানা যাবে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার জানান, কমিশন নিজে কোনো অর্থ খরচ করে না। সাচিবিক সহায়তার দায়িত্বে থাকা দুই সচিবালয় কমিশনের যাবতীয় খরচ নির্বাহ করে।
সংসদ ভবনে এলডি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো.
যেসব বিষয়ে ঐকমত্য
গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় ঐকমত্য ও সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
প্রথম পর্ব
৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এর মধ্যে আছে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক দলকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনা, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, আইনজীবীদের আচরণবিধি, গণহত্যা ও ভোট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন, তথ্য অধিকার আইনের সংশোধন, দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন, নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে সংশোধন, দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার নিয়োগ পদ্ধতি, আয়কর আইনের সংশোধন ইত্যাদি।
দ্বিতীয় পর্ব
দ্বিতীয় পর্বে ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
ভিন্নমত ছাড়া ১১ বিষয়ে ঐকমত্য
১. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, ২. নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, ৩. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান, ৪. বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ—(ক) সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, (খ) উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণ, ৫. জরুরি অবস্থা ঘোষণা, ৬. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, ৭. সংবিধান সংশোধন, ৮. প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, ৯. নির্বাচন কমিশন গঠন, ১০. পুলিশ কমিশন গঠন, ১১. নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ-সম্পর্কিত প্রস্তাব।
ভিন্নমতসহ সিদ্ধান্ত ৯ বিষয়ে
১. সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ সংশোধন, ২. প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, ৩. সরকারি কর্ম কমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান-সম্পর্কিত, ৪. সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব (সংখ্যা বৃদ্ধি, নির্বাচন পদ্ধতি ইত্যাদি, ৫. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট (উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি), ৬. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, ৭. তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ৮. রাষ্ট্রের মূলনীতি, ৯. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ল ক স স ক র প রস ত ব ঐকমত য ও স দ ধ ন ত স স ক র প রস ত ব র ন র ব চনব যবস থ জ ল ই জ ত য় সনদ দ ব ত য় পর ব ক ন দ র করণ প রথম পর ব র য় জ বল ন ব যবস থ র র ষ ট রপত জ ল ই সনদ সরক র র ক ষমত র গঠন কর প রক র ন র ভর ত হয় ছ সদস য র আইন সনদ র র ওপর অবস থ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আরও পর্যালোচনা হচ্ছে
জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে ‘সংবিধান আদেশ’ জারি ও পরবর্তী সময়ে গণভোটের যে সুপারিশ করা হয়েছিল, তা নিয়ে আরও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানিয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কমিশনকে আবার মতামত দেবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এরপর কমিশনের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের আবার বৈঠক হবে।
বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা আপাতত মুলতবি রয়েছে। আগামী অক্টোবর মাসের শুরুতে মুলতবি আলোচনা শুরু হতে পারে। সেখানে বিশেষজ্ঞদের মতামত আবার তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার মধ্যে গত বুধবার বিশেষজ্ঞদের নতুন পরামর্শ প্রস্তাব সামনে আনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পরামর্শ প্রস্তাবে বলা হয়, মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করতে পারে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এরপর আদেশটি নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যেতে পারে।
তবে এই প্রস্তাব নিয়ে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল দ্বিমত জানায়। সংবিধানের সংশোধন বা সংবিধান আদেশ অন্তর্বর্তী সরকার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ করতে পারবে কি না বা অন্য কোনো উপায়ে এটা করা যায় কি না, এ বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। আরও কয়েকটি দল সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার কথা বলেছে।
তবে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিএনপির এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা জামায়াতের প্রস্তাবের কাছাকাছি। আর এনসিপি জানিয়েছিল, নিজেদের দলে আলোচনা করে পরে তাদের অবস্থান জানাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশেষজ্ঞরা যে পদ্ধতি সুপারিশ করেছেন, তা কার্যকর হলে কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে। সংবিধান আদেশ জারি ও কার্যকর করার পর গণভোটে যদি জুলাই সনদ পাস না হয়, তাহলে কী হবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এর পাশাপাশি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজনৈতিক দলগুলো যে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনটি পদ্ধতির সমন্বয়ে কোনো উপায় বের করা যায় কি না, সেটাও ভাবা হবে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি নিয়ে গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবারও সভা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। জাতীয় সংসদের এলডি হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক।
কমিশনের উপস্থাপন করা সনদের বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সম্ভাব্য সুপারিশমালা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনার সারসংক্ষেপ বিশেষজ্ঞদের অবহিত করা হয়। আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত, পরামর্শ এবং উদ্বেগের দিকগুলো বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়; যাতে বিশেষজ্ঞরা সামগ্রিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে গতকালের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সভায় অংশ নেন।
জানতে চাইলে মনির হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের মনে হয়েছে, বাস্তবায়ন পদ্ধতির যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা আছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। এটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আরও বৈঠক হতে পারে।