বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, সংসদের উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) নিয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। যারা করছে, তারাও জানে এই পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। তা সত্ত্বেও একটি চক্র দেশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে।

ওয়ার্ল্ড ফার্মাসিস্ট ডে উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সোসাইটি অব ফার্মাসিস্টস আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন।

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইসরায়েলসহ যে দেশগুলোয় পিআর পদ্ধতি আছে, সেখানেও এটি বিতর্কিত। আপনি আপনার ভোট দিয়ে যে প্রতিনিধিকে নির্বাচন করবেন, তার নিজ এলাকায় কাজ করার সুযোগ না থাকলে সেই পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

পার্শ্ববর্তী একটি দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই এই অযথা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। জুলাই অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গত ১৬ বছরে এত মানুষ শহীদ হলো, গুম হলো—সেই গণতন্ত্রকে বিপন্ন করার জন্য একটি গোষ্ঠী কাজ করছে। তাদের উদ্দেশ্য কী, পেছনের শক্তি কারা—তা আমাদের ভাবতে হবে।’

বাংলাদেশের ওষুধশিল্পে ফার্মাসিস্টদের অবদান উল্লেখ করে ডা.

রফিক বলেন, বাংলাদেশের ওষুধশিল্প আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। এই অর্জনের অন্যতম দাবিদার দেশের ফার্মাসিস্টরা। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের চিকিৎসা ব্যয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীদের নিজেদের পকেট থেকে খরচ হয়। ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার যেমন রোগীদের খরচ বাড়াচ্ছে, তেমনি চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনের বাইরে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এক ভয়াবহ সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে।’

এ সংকট সমাধানে এ-গ্রেডের ফার্মাসিস্টদের স্বাস্থ্য খাতে অন্তর্ভুক্ত করে একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্যনীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. আবদুর রশিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির সহদপ্তরবিষয়ক সম্পাদক মো. মনির হোসেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল-বিএমইউয়ের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুন্সী, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ডেন্টাল ফ্যাকাল্টির ডিন ডা. শাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সোহেল রানা প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের

প্রাচীন গ্রিসে ক্ষুদ্র অসংখ্য নগররাষ্ট্র ছিল। সেখানে নগরের অধিবাসীকেই বলা হতো নাগরিক, যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল নাগরিকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা সেই সব ব্যক্তিকে নাগরিক বলব, যাদের আইন প্রণয়ন ও বিচারিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের ক্ষমতা আছে।’ তাঁর মতে, যে ব্যক্তি নগররাষ্ট্রের শাসনকাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে অক্ষম, তিনি প্রকৃত নাগরিক নন।

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা নাগরিককে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে—যেকোনো রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন, রাষ্ট্র প্রদত্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করেন এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য ন্যায়ের সঙ্গে পালন করেন, তাঁকেই নাগরিক বলা যায়। একই সঙ্গে নাগরিককে অবশ্যই অন্য মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন না করার ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে।

প্রতিটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো সৎ, যোগ্য ও নীতিবান নাগরিক। রাষ্ট্রের কাঠামো ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে নাগরিকের চরিত্র ও আচরণের ওপর। তাই রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন সচেতন নাগরিক—যিনি নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত। এ জ্ঞান ও সচেতনতাই রাষ্ট্রকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে বলা হয় জনগণের অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের কল্যাণে পরিচালিত শাসনব্যবস্থা; কিন্তু প্রশ্ন হলো যদি জনগণ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন থাকেন, তবে কি গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ অক্ষুণ্ণ থাকে? বাস্তবতা হলো নাগরিকের অজ্ঞতা ও উদাসীনতাই স্বৈরতন্ত্রকে জন্ম দেয়।

প্রথমত, যেখানে মানুষ নিজের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ, সেখানে শাসকগোষ্ঠী সহজেই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে। ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন—এসব বিষয়ে নাগরিক উদাসীন থাকলে শাসকের জবাবদিহি বিলীন হয়ে যায়, তখন গণতান্ত্রিক কাঠামো টিকে থাকলেও এর প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, নাগরিকেরা ভয়, অজ্ঞতা বা উদাসীনতার কারণে যখন অন্যায় ও অনিয়ম মেনে নেন, তখনই স্বৈরতন্ত্র শিকড় গাড়ে। শাসকের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত তারা অন্ধভাবে মেনে নিলে সরকার জবাবদিহি এড়িয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে; কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—শক্তিশালী শাসকের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয় কেবল তখনই, যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। জার্মানি থেকে পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের অতীত—সবখানেই দেখা যায়, নাগরিক–সচেতনতার অভাবেই স্বৈরতন্ত্রের বিস্তার ঘটেছিল।

তৃতীয়ত, নাগরিক সমাজ দুর্বল হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন কিংবা নাগরিক সংগঠনগুলোও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। তখন শাসকেরা সহজেই বিকল্প কণ্ঠরোধ করে ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অর্থাৎ, নাগরিকের নীরবতাই শাসকের জন্য সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রে পরিণত হয়।

অতএব, স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নাগরিক শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতা। পরিবার থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে মানুষকে জানতে হবে তাদের অধিকার, কর্তব্য ও রাষ্ট্রের কাছে দাবি করার উপায়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হতে হবে সত্য প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম, তোষণ বা প্রোপাগান্ডার যন্ত্র নয়। মনে রাখতে হবে—অধিকার চর্চা না করলে অধিকার হারিয়ে যায়। তাই প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হলো নিজের অধিকার সম্পর্কে জানা ও তা প্রয়োগ করা।

সবশেষে বলা যায়, নাগরিকের অধিকার বিষয়ে অসচেতনতা কোনো ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়; বরং তা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর। সচেতন নাগরিক সমাজই পারে জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র গড়ে তুলতে আর অসচেতন নাগরিক সমাজই সৃষ্টি করে স্বৈরতন্ত্রের জন্মভূমি।

ইসরাত জাহান

শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এমন মানুষও আছে, যারা বলছে ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন
  • স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের
  • ১২ দিনের নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত
  • পিআরের নামে জামায়াত ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে: কায়সার কামাল
  • ১ থেকে ১২ অক্টোবর নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত