গণহত্যার দায়ে আ.লীগ ও জাপাকে নিষিদ্ধের দাবি
Published: 27th, September 2025 GMT
গণহত্যা, রাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস এবং দেশের সম্পদ বিদেশে পাচারের দায়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পলিটিক্যাল থিঙ্কার্স (বিপিটি) নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করে এ দাবি জানিয়েছেন বিপিটির নেতারা।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ ভারতের চক্রান্তে এবং বর্তমান একজন উপদেষ্টার সহযোগিতায় নীলনকশার নির্বাচনে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে।
সোলায়মান চৌধুরী বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় বাক্স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার হরণ এবং প্রশাসনে দলীয়করণ করে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের সহচর হিসেবে ছিল আরেক স্বৈরাচার (এইচ এম) এরশাদের জাতীয় পার্টি। দেশ ধ্বংসের এই দুই স্বৈরাচারী দলকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে এবং দল হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিপিটির সমন্বয়ক নুর নবী বলেন, ‘গণতন্ত্র আর আওয়ামী লীগ একসঙ্গে চলে না। সেটা শুধু স্বাধীনতা–পরবর্তী শেখ মুজিব কিংবা হাসিনার শাসনামল নয়, বরং সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতীয় রাজনীতিবিদদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রমাণিত।’
বিপিটির সমন্বয়ক বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রতিটি খাত ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাকাণ্ড, ২০১৩ সালে হেফাজতের শাপলা হত্যাকাণ্ড, ২০১৪ সালে (মাওলানা) সাঈদীর রায়–পরবর্তী হত্যাকাণ্ড এবং সর্বশেষ ২০২৪–এর হত্যাকাণ্ড—প্রতিটি একেকটি গণহত্যা। প্রতিটি গণহত্যার ঘটনায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা এবং তাদের দোসর জাতীয় পার্টির বিচার হতে হবে।
মানববন্ধনে অন্য বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার জন্য ভারতের নির্দেশে পাশে থেকে সাংবিধানিক বৈধতা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। সুতরাং গণহত্যা, দেশের শাসনকাঠামো ধ্বংস এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগার চুরির দায়ে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সহচর জাতীয় পার্টির বিচার ও দল হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
মানববন্ধনে অন্যদের বক্তব্য দেন উপাধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান, ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী শরীফ আহমেদ, অধ্যাপক গোলাম মোর্তজা, বিপিটির সদস্য রায়হান চৌধুরী, ডিবেট ফর বাংলাদেশের সভাপতি মশিউর রহমান প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড গণহত য আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলায় কেমন আছেন শহিদুল আলম?
মানবিক সামগ্রী নিয়ে গাজার অবরোধ ভাঙার শপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ফিলিস্তিনের ‘মৃত্যু উপত্যকার’ দিকে ছুটছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি নৌযান, যেটিতে রয়েছেন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম।
গাজায় গণহত্যা উন্মুখ ইসরায়েলের হানাদার বাহিনী বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকালের মধ্যে সুমুদ ফ্লোটিলার বেশিরভাগ নৌযান তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে সেসব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের, যাদের মধ্যে সুপরিচিত একজন হলেন জলবায়ুকর্মী গ্রেটা টুনবার্গ।
আরো পড়ুন:
সুমুদ ফ্লোটিলার একটি ছাড়া সব নৌযান জব্দ
ফ্লোটিলা থেকে শহিদুল আলম, ‘সামনে কী, বোঝার চেষ্টা করছি’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে আসছে, ফ্লোটিলার নৌযানগুলো আটক করতে তাদের পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে অনেকে জানতে চাইছেন এই ফ্লোটিয়া অংশ নেওয়া বাংলাদেশের একমাত্র অধিকারকর্মী শহিদুল আলমের খবর।
দুই দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন বাংলাদেশের বিশ্বনন্দিত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তার পোস্টগুলো মুহূর্তেই ভাইরাল হচ্ছে; সেই সঙ্গে হাজারো মানুষের আবেগঘন মন্তব্য পড়ছে, সবাই জানতে চাইছেন তিনি কেমন আছেন।
ফেসবুক বন্ধু ও পরিচিতদের বাইরে শহিদুল আলম এই দুই দিনে অসংখ্যা বাংলাদেশিদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন, সেটি বুঝতে পেরে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছন তিনি। মাতৃভূমির মানুষের উদ্বেগকে সম্মান জানিয়ে বার্তাও পাঠিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৫ মিনিটের দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের শারীরিক অবস্থা এবং ফ্লোটিলার পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য দেন শহিদুল আলম।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, “অনেকে জানতে চাইছেন আমি কেমন আছি। দুঃখিত, আপনাদের প্রত্যেককে আলাদাভাবে উত্তর দিতে পারছি না। আজকে আমি বমি করেছি এবং পরে পড়েও গিয়েছিলাম, তবে তেমন গুরুতর কিছু নয়। জাহাজে ২০ জন চিকিৎসক ও নার্স থাকার কারণে চিকিৎসার দিক থেকে আমরা সম্ভবত অন্য যেকোনো জাহাজের যাত্রীদের চেয়ে সবচেয়ে ভালো যত্ন পাচ্ছি। আমি যে এত মনোযোগ পেয়েছি, তা ভীষণ উপভোগ করেছি। আমার ভাগ্নি মৌলি হলে হয়তো বলত, সব কিছুতেই আমার বাড়াবাড়ি। অবশ্য গাজা থেকে আরেকটি দিনের দূরত্বে আছি।”
আলজাজিরার খবর অনুযায়ী, গাজার অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে ৪৬টি দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ৪৯৮ জন অধিকারকর্মী ৪৪টি নৌকা নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গাজার পথে যাত্রা শুরু করে।
গাজায় গণহত্যা নিয়ে নীবরতা ভেঙে ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ করে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে আসতে চাপ দিতে থাকে বিভিন্ন দেশ, যার ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমের উন্নত দেশগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়; আরো অনেক দেশ এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে রাজনীতি-কূটনীতির জটিল প্যাঁচ পাশ কাটিয়ে বিশ্বের অধিকারকর্মীদের একটি গ্রুপ গাজায় ইসরায়েলের নজিরবিহীন অবরোধ ভাঙার অঙ্গীকার করে নৌযানের বহর নিয়ে গাজার দিকে যাত্রা করে দুদিন আগে।
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে নৌযানগুলোর অবস্থান গাজার উপকূল বা তার কাছাকাছি এসে পৌঁছায়। তবে আন্তর্জাতিক জলসীমাতেই সেগুলোর বেশিরভাগের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি হানাদার বাহিনী, যারা অন্তত ৩৫০ জন অধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে বলে খবর রয়েছে।
আলজাজিরার জানায়, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে তারা একটি বাদে সব নৌযান জব্দ করে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
শহিদুল আলমদের নৌযানটি যেহেতু এখনো যাত্রা অব্যাহত রেখেছে এবং সেই নৌযানের অবস্থা সম্পর্কে মাঝে মাঝে তথ্য দিচ্ছেন তিনি, সেহেতু আটক না হওয়া নৌযানটিতেই রয়েছেন তারা।
এর আগের পোস্টে ঝঞ্ঝামুখর সাগরে তাদের নৌযানের অবস্থার বর্ণনা দিয়েছিলেন শহিদুল আলম। সেখানেও শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থতা বোধ করার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার সেই পরিস্থিতি নৌযানে থাকা অন্য চিকিৎসকদের সহায়তায় কাটিয়ে উঠার তথ্য দিলেন তিনি।
ইসরায়েলের গণহত্যা অভিযানে গাজার অন্তত ৬৬ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, গুরুতর আহত হয়ে জীবনের সঙ্গে লড়ছেন প্রায় দেড় লাখ। বহু শিশু অনাহার-অর্ধাহারে মায়ের কোলে মারা যাচ্ছে, কঙ্কালসার সন্তান প্রসব করছেন গাজার মায়েরা। আর সব বয়সি মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্যে ধুকছে।
শুরুর দিকে বিশ্ব সম্প্রদায় নিশ্চুপ থাকলেও কয়েক মাস হলো ইউরোপ, এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিক ও আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের পক্ষে সোচ্চার হয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সহ অনেক দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। এ নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থনে এখনো গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। শহিদুল আলমের মতো বিশ্বের ৪৬টি দেশের অধিকারকর্মীরা যখন গাজা ফ্লোটিয়া নিয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন এবং অধিকাংশ দেশ যখন এই ফ্লোটিলার পক্ষে রয়েছে, তখনো গাজায় নরহত্যা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েল।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, বুধবারও (১ অক্টোবর) গাজায় ৯৩ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
অবশ্য গাজা ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি হানার প্রতিবাদে দেশে দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। এরই মধ্যে আর্জেন্টিনা ও ইতালিতে বিশাল র্যালি হয়েছে। মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলাসহ অনেক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ইসরায়েলের নিন্দা করে অধিকারকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কলম্বিয়া থেকে ইসরায়েলের সব কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং কালবিলম্ব না করে তাদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কলম্বিয়া সরকার।
ঢাকা/রাসেল