জোহরান মামদানি—নিউইয়র্ক শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র। ১৮৯২ সালের পর শহরটির সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র। এসব কিছুর কারণে তাঁর ভূমি কাঁপানো রাজনৈতিক উত্থান প্রদীপের সব আলো একাই নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কিছুটা দেরিতে হলেও তাঁর উত্থানের পেছনের আলোকস্তম্ভগুলো ধীরে ধীরে রোশনাই ছড়াতে শুরু করেছে। এই রকম একটি আলোকস্তম্ভ তাঁর মা মীরা নায়ার। তিনি অবশ্য অনেক আগে থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দ্যুতি ছড়াচ্ছিলেন।

তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন মীরা নায়ার। পর্দায় (স্ক্রিন) দক্ষিণ এশিয়ার পরিচয় কীভাবে তুলে ধরা হবে, তাঁর ধারাবাহিক কাজ সেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে। এখন যেহেতু তাঁর ছেলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন, তাই মীরা তিলে তিলে যে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার গড়ে তুলেছেন, তা পরবর্তী প্রজন্মে প্রতিধ্বনিত হবে বলে মনে হচ্ছে।

আমার মা-বাবা: আপনারাই আমাকে আজকের এই মানুষে পরিণত করেছেন। আপনাদের সন্তান হতে পেরে আমি খুব গর্বিত।জোহরান মামদানি, নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে জয়ের পর প্রথম ভাষণে

ভারতে জন্ম নেওয়া এবং দিল্লি ও হার্ভার্ডে পড়াশোনা করা মীরা নায়ার নিজেকে প্রতিনিয়ত বিশ্বের নানা সংস্কৃতির রূপ ও রসে সমৃদ্ধ করেছেন। এই সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও মানসিক মিশ্রণই তাঁর গল্পের প্রাণ।

তাঁর পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রথম সিনেমা ‘সালাম বম্বে’! মুক্তি পায় ১৯৮৮ সালে। ‘গার্ডিয়ান’–এর এক সমালোচনায় এটাকে ‘ভয়াবহ রকমের নিরাবেগ, কিন্তু প্রাণশক্তিতে ভরপুর’ চলচ্চিত্র বলে আখ্যায়িত করা হয়। এতে ভারতের পথশিশুদের দগদগে জীবন শক্তিশালীভাবে উঠে এসেছে। এই ছবি মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতার স্বীকৃতি পান।

আত্মপরিচয়, অভিবাসন এবং কোনো সমাজে সব শ্রেণি ও লিঙ্গের মানুষের অঙ্গীভূত হওয়া নিয়ে মীরা নায়ারের দীর্ঘ দিনের অস্বাভাবিক সূক্ষ্ম অনুসন্ধানের সূচনা হয়েছিল ‘সালাম বম্বে!’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এখন দেখা যাচ্ছে, এসব বিষয় তাঁর ছেলে জোহরানের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে।সালাম বোম্বে (১৯৮৮) চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পবিরোধী জনমত আগের চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে

ট্রাম্পবিরোধী জনমত আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। এত দিন তা বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছিল; কিন্তু গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের মেয়র, নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচনের ফল সে চিত্রই তুলে ধরেছে। বিষয়টি রিপাবলিকান পার্টির নেতা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন। তিনি এখন এসব নির্বাচনে নিজের ভূমিকা খাটো করে দেখাচ্ছেন।

তিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির তিন প্রার্থীর কাছে হার রিপাবলিকান পার্টির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি নির্বাচনটা দেখেছি। তবে এসব ব্যাপারে আমি তেমনভাবে জড়িত ছিলাম না।’ নির্বাচনে প্রার্থীদের সমর্থন করার কথাও অস্বীকার করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্রার্থীকে সমর্থন করিনি। নিউ জার্সির প্রার্থীকেও খুব একটা সহায়তা করিনি। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমি বলেছিলাম—আপনি কি একজন “ঠগ” চান, নাকি একজন “বামপন্থী”?’

ট্রাম্প নিজেকে যতই দূরে রাখার চেষ্টা করুন না কেন, মঙ্গলবারের নির্বাচনে জনগণ আসলে তাঁর বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছেন। বলা চলে, ভোটের ব্যালটে ট্রাম্পের নাম না থাকলেও এর আগে কখনো কোনো নির্বাচনে এতটা স্পষ্টভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিতে দেখা যায়নি।

ট্রাম্পপন্থী ভোট কমেছে

এ সপ্তাহে সবচেয়ে বড় লক্ষণীয় বিষয় হলো, ট্রাম্পবিরোধী ভোট আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে এবং ট্রাম্পপন্থী ভোট আগের চেয়ে কমেছে। নির্বাচনের আগেই গত সোমবার সিএনএনের করা এক সমীক্ষায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, নিবন্ধিত ভোটারদের ৪১ শতাংশ কংগ্রেস নির্বাচন হলে ট্রাম্পের বিরোধিতা জানানোর জন্য ভোট দেওয়ার কথা বলেন। অপর দিকে মাত্র ২১ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থনের কথা বলেন; অর্থাৎ ট্রাম্পবিরোধী ভোট প্রায় দ্বিগুণ। এটা স্বাভাবিক নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্টরা এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু সিএনএনের সমীক্ষা অনুযায়ী, গত প্রায় ২০ বছরে এ রকম বড় ফারাক আর দেখা যায়নি।

এর আগে ২০০৬ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন ৩৬ শতাংশ মানুষ আর মাত্র ১৫ শতাংশ বলেছিলেন তাঁর পক্ষে। ২০১৮ সালের ট্রাম্পের প্রথম মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেও এই ব্যবধান এতটা বড় ছিল না। তখন ট্রাম্পবিরোধী ছিলেন ৩৮ শতাংশ। ট্রাম্পপন্থী ছিলেন ২৫ শতাংশ।

এত দিন সমীক্ষায় ট্রাম্পবিরোধী ভোট বাড়ার কথা বলা হলেও গত মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফলও সেটা প্রমাণ করেছে। সারা দেশে ভোট না হলেও, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির বুথফেরত জরিপের তথ্য বলছে, ট্রাম্পবিরোধী ভোটের ব্যবধান বেড়েছে।

২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ায় ট্রাম্পবিরোধী ও ট্রাম্পপন্থী ভোটের ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (৩৪%-১৭%), এবার তা বেড়ে ২২ পয়েন্টে (৩৮%-১৬%) দাঁড়িয়েছে। নিউ জার্সিতে ব্যবধান আরও বেড়েছে। ২০১৭ সালে ট্রাম্পবিরোধী ও ট্রাম্পপন্থী ভোটের ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (২৮%-১১%)। এবার ২৮ পয়েন্টে (৪১%-১৩%) পৌঁছেছে।

‘নো কিংস’

ট্রাম্পবিরোধী ভোট বেড়ে যাওয়ার দুটি কারণ উঠে এসেছে। একটি হচ্ছে ‘নো কিংস’ আন্দোলন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গত মাসে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলন ঘিরে যে সমাবেশ হয়েছিল সেগুলো নিছক কাকতালীয় ছিল না। এসব ট্রাম্পবিরোধী আন্দোলন এখনো আগের মতোই শক্তিশালী, আশাব্যঞ্জক এবং সক্রিয়। এই আন্দোলনের সদস্যরা হয়তো এখন ডেমোক্রেটিক পার্টিতে খুব আস্থাশীল নন, কিন্তু তাঁরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাননি; বরং ভোট দিতে প্রস্তুত।

দ্বিতীয় বিষয় হলো, ট্রাম্পের রাজনৈতিক আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও তাঁর মূল ভোটারগোষ্ঠী এখন তেমন উৎসাহী নন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্পবিরোধী জনমত আগের চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে
  • মামদানিকে ঠেকাতে নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলছেন রিপাবলিকানরা, তা কি সম্ভব
  • ডেমোক্র্যাটরা সাবধান! ট্রাম্প প্রতিশোধের ছক কষছেন
  • আমার সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মামদানি
  • নিউইয়র্কের মেয়রের নতুন ঠিকানা কি গ্রেসি ম্যানশন
  • এক কক্ষের বাড়ি থেকে ‘রাজপ্রাসাদে’
  • জোহরান মামদানি কেন নিজ এলাকা কুইন্সে কম ভোট পেলেন
  • কারো চোখে পানি, ফেলছেন স্বস্তির শ্বাস: মামদানির জয়ে কী বললেন গার্ডিয়ানের পাঠকেরা
  • যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের একচ্ছত্র ক্ষমতা ম্লান হলো মাত্র দুই দিনেই