জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া একটি উদ্ধারকারী নৌকা (রেসকিউ বোট) রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বেওয়ারিশের মতো পড়ে থাকায় নৌকাটির গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ খোয়া যাচ্ছে।

বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষকে দ্রুততম সময়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়া ও ত্রাণসহায়তা পৌঁছে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নৌকাটি বরাদ্দ দেয়। নৌকাটি বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভেসে থাকে। আবার শুকনো মৌসুমে নদের পাড়ে তীরে ওপর পড়ে থাকে। এভাবেই নষ্ট হচ্ছে নৌকাটি। এরই মধ্যে অনেকটাই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে নৌকাটি। কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে নষ্ট হচ্ছে সরকারের অর্ধকোটি টাকার সম্পদ বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের ফৌজদারি এলাকার জামালপুর জিলা স্কুলের পেছনে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে নৌকাটি পড়ে রয়েছে। শহর রক্ষা বাঁধের সি বি ব্লকের ওপর নৌকাটি। নৌকাটির ওপরের ছাউনি নেই। নৌকাটির মধ্যে পানি জমে রয়েছে। নৌকাটির জানালা ভাঙা। নৌকাটির চারপাশে ঝোপঝাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা নৌকাটির ভেতরেও। নৌকার নোলাহার বিভিন্ন অংশে মরিচা ধরেছে। ইঞ্জিনসহ মূল নৌকার ভেতরে পানি জমে রয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত এবং উপকূলীয় জেলার জন্য ৬০টি উদ্ধারকারী নৌকা তৈরি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালে আটটি নৌকা বিভিন্ন জেলায় হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে জামালপুরসহ আরও ৫২টি জেলায় নৌকাগুলো হস্তান্তর করে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। নৌকাগুলোর দৈর্ঘ্য ৫৪ ফুট ও প্রস্থ ১২ দশমিক ৫০ ফুট। ৮০ জন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নৌকাটি ঘণ্টায় ৭ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। এর মাধ্যমে বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষকে দ্রুত সময়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়া যায়।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে নৌকাটি নদের তীরে পড়ে রয়েছে। পানি বাড়লে ভেসে থাকে। আর শুকনো মৌসুমে শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লকের ওপর পড়ে থাকে। কখনো নৌকাটি ব্যবহার করতে দেখা যায় না। এভাবেই এখন নৌকাটি একরকম বিকল হয়ে গেছে মনে হয়। সরকারি জিনিস এভাবেই নষ্ট হয়। এত বড় সুন্দর একটি নৌকা ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে নিশ্চয় নৌকাটি ভালো থাকত। সরকারের নজর দেওয়া দরকার দিয়েছিল। এখন আর এই নৌকা হয়তো কেউ খোঁজখবর নেন না। ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় ফিরোজ আহম্মেদ নামের এক মধ্যবয়সী ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই এ পথে হাঁটাহাঁটি করি। প্রায় দুই বছর ধরে নৌকাটি এখানেই দেখতেছি। কোনো সময় ব্যবহার হয়েছে বলে মনে হয় না। পড়ে থেকেই নৌকাটি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। নৌকার অনেক যন্ত্রাংশও হয়তো চুরি বা খোয়া গেছে। যদি ব্যবহার বা যত্ন নেওয়া হতো, তাহলে সরকারি সম্পত্তিটি রক্ষা পেত।’

জামালপুরের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই নৌকাটি দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে কয়েকবার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে দেখেছি। তারপর কয়েক বছর ধরে ওই জায়গায় নৌকাটি পড়ে রয়েছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ অযত্নে নষ্ট করা হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। এটাও একধরনের অপরাধ। দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌকাটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন।’

বিষয়টি নজরে আনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নৌকাটি মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র সরক র শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ট্রেলিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট শুরু, আলোচনায় জীবনযাত্রার ব্যয় ইস্যু

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এর বামপন্থী অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি পুনরায় জয়ের চেষ্টা করছে। আর তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন।

নির্বাচনে বড় ইস্যু: এবারের নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসন ব্যয় নিয়েও ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল আসতে কয়েক দিন, এমনকি সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। তবে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই দেশটির ইলেকটোরাল কমিশন অনানুষ্ঠানিক প্রাথমিক ফল ঘোষণা শুরু করবে। মূলত এই প্রাথমিক ফল থেকেই ধারণা পাওয়া যাবে যে কে দেশটির পরবর্তী সরকার গঠন করবেন।

নির্বাচনে শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে না, বরং বিদেশে থাকা দেশটির ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারেন, সেজন্য ৮৩টি দেশে ১১১টি কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে। এর মধ্যে বার্লিন, হংকং, লন্ডন ও নিউইয়র্কে বিপুল সংখ্যক অস্ট্রেলিয়ানের বসবাস রয়েছে।

দেশটির ভোটারদের জন্য ভোট দেয়ার কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৮ বছর বয়সী সবার জন্য ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক। কেউ ভোট দিতে ব্যর্থ হলে তাকে ১৩ ডলার জরিমানা গুনতে হবে। প্রতিনিধি পরিষদের ১৫০টি আসনের সবকটিতেই এবং সিনেটের ৭৬টির মধ্যে ৪০টি আসনে আজ নির্বাচন হচ্ছে।

দেশটিতে প্রধান রাজনৈতিক দল দুটি: অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি এবং রক্ষণশীল লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন। কোনও দলের সরকার গঠনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদের অন্তত ৭৬টি আসন পেতে হবে। সেটি সম্ভব না হলে দলগুলো বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী বা ছোট দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

দেশটিতে কয়েক দশক ধরেই রাজ্য ও ফেডারেল সরকার নির্বাচনে ছোট দলগুলো ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২২ সালের নির্বাচনে প্রতি তিনজন ভোটারের একজন দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের বাইরে অন্যদের ভোট দিয়েছিলেন। লেবার, দ্যা লিবারেল, দ্যা ন্যাশনালস এবং দ্যা গ্রিন মোটামুটি আলোচনায় থাকে। যদিও আসলে ১২টি দল সিনেটে আর আটটি দল প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।

সিনেটর পলিন হানসন ১৯৯৭ সালে ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত ওয়ান ন্যাশন পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। হানসন প্রায়ই নানা বিতর্কের কেন্দ্রে থাকেন। তিনি সিনেটে বুরকা পড়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছিলেন। তার দলের নীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। দ্য ন্যাশনালসের সাবেক সদস্য বব কাট্টের প্রায় ৫০ বছর ধরে এমপি এবং তিনি তার বক্তৃতার স্টাইলের জন্য পরিচিত। ২০১৭ সালে সমলিঙ্গের বিয়ের বিষয়ে গণভোটের সময়ে তিনি এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।

বিলিওনিয়ার ক্লাইভ পালমারের দলের নাম ছিলো ইউনাইটেড অস্ট্রেলিয়া পার্টি। গত নির্বাচনে প্রায় ৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেও মাত্র একটি আসন পেয়েছিলেন সিনেটে। এবার পালমার ট্রাম্পেট অফ প্যাটরিওটস পার্টিকে সমর্থন দিচ্ছেন। এছাড়া সেন্ট্রাল এলায়েন্স দলের একমাত্র এমপি হলেন রেবেকা শারকি। ইতোমধ্যেই তিনি কোয়ালিশন নেতা পিটার ডাটনের সাথে যোগসূত্র রাখবেন বলে জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য সেবা ইস্যু
বিবিসির টিফানি টার্নবুল দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া থেকে লিখেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতির সূচনা হয়েছে প্রায় চার দশক আগে। সেখানে মেডিকেয়ার নামে একটি জনবীমা প্রকল্প চালু আছে। এর আওতায় উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা নাগরিকদের জন্য মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু বিষয়টি প্রায়ই জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়। কারণ প্রয়োজনের সময় অনেককেই এই সেবা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বলতে গেলে সর্বজনীন এই স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি অনেকটাই খুঁড়িয়ে হাঁটছে। সরকার যে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে তা যথেষ্ট হচ্ছে না। জেনারেল প্রাকটিশনারসহ স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট দেখা যাচ্ছে। সেবাপ্রার্থীদের জন্য অপেক্ষার সময় ক্রমশ দীর্ঘতর হচ্ছে। রোগীদের খরচও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দেশটিতে অনেকেই বিবিসিকে বলেছেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

অভিবাসন আলোচনায় কেন
অস্ট্রেলিয়ার জনগোষ্ঠীর তৃতীয় বৃহত্তম অংশেরই জন্ম দেশটির বাইরে। দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির পরিচিত 'মাইগ্রেশন ন্যাশন' হিসেবে, যেখানে অভিবাসীরা নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। এর মূল কারণ হলো বাসস্থান খরচ বাড়ছে। পিটার ডাটন বলেছেন তিনি অভিবাসীরা যেন সহজেই ভোট দিতে পারেন সেজন্য ফাস্ট ট্রাক সিটিজেনশিপ চালু করবেন। গত বছর প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সীমিত করার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি পাশ হয়নি।

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এর বামপন্থী অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি পুনরায় জয়ের চেষ্টা করছে। আর তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ