দেশব্যাপী নারীর ওপর সহিংসতা, ধর্ষণ, নিপীড়ন, শ্লীতাহানি ও সামাজিক হেনস্তার প্রতিবাদ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গোল চত্বর থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘নারীর পীড়ন যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’, ‘ধর্ষকদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘গোলামী না আজাদী, আজাদী’, ‘রাজশাহীতে ধর্ষণ হয়, ইন্টেরিম কি করে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

মিছিল পরবর্তী বিক্ষোভ সমাবেশে শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী পলাশ বখতিয়ার বলেন, “জুলাইয়ের রক্তের ওপর যে সরকার দাঁড়িয়েছে, এ সরকার নারীর ওপর ধর্ষণ ও নিপীড়নকে বন্ধ করতে পারছে না। আমরা  স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, ধর্ষণের শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে আপনার একদিনও আর ক্ষমতা ভোগ করার দরকার নেই।”

“আপনাকে ক্ষমতা ভোগ করার জন্য সেখানে বসানো হয়নি।  জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বসানো হয়েছে। রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতির পাশাপাশি নারীদের শ্লীলতাহানির সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের ও সকল কুশীলবকে দ্রুতই আইনানুগ বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফাঁসি মঞ্চে নিয়ে যেতে হবে,” যুক্ত করেন তিনি।

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী মালিহা নুসরাত বলেন, “আমি চাই জাতীয় দিবসগুলোতে ফুল দিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে, ক্লাস শেষে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে। আমি আমার মৌলিক অধিকারটুকু চাই। কিন্তু যে দেশে একটি শিশু মাতৃভাষা দিবসের ফুল কুড়ানোর সময় ধর্ষিত হয়, সে দেশে থাকতে আমার ভয় হয়। কিন্তু কেন হবে এ ভয়?  আমি অন্তবর্তী সরকারের কাছে এর জবাব চাই।”

তিনি বলেন, “নারীর হওয়ার কারণে আমাকে অবলা হিসেবে কেন আচরণ করা হচ্ছে, কেন ধর্ষণকে সাধারণ করা হচ্ছে, কেন ধর্ষকরা শাস্তি পাচ্ছে না? শাস্তি পাচ্ছে না বলেই ধর্ষণের মত ঘটনা সাধারণ ঘটনায় রূপান্তর হচ্ছে। কেন বোনদের ধর্ষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে আমাদের ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট। সবগুলো জবাব আমাদের জানতে হবে।”

এ সময় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার লুবনার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেরাব সাদাত, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ফয়সাল হোসেন, ইংরেজী বিভাগের নাজনীন লিজা, মুরারিচাঁদ কলেজের (এমসি কলেজ) শিক্ষার্থী তানজিনা বেগম প্রমুখ।

ঢাকা/ইকবাল/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ