অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এর বামপন্থী অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি পুনরায় জয়ের চেষ্টা করছে। আর তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন।

নির্বাচনে বড় ইস্যু: এবারের নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসন ব্যয় নিয়েও ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল আসতে কয়েক দিন, এমনকি সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। তবে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই দেশটির ইলেকটোরাল কমিশন অনানুষ্ঠানিক প্রাথমিক ফল ঘোষণা শুরু করবে। মূলত এই প্রাথমিক ফল থেকেই ধারণা পাওয়া যাবে যে কে দেশটির পরবর্তী সরকার গঠন করবেন।

নির্বাচনে শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে না, বরং বিদেশে থাকা দেশটির ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারেন, সেজন্য ৮৩টি দেশে ১১১টি কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে। এর মধ্যে বার্লিন, হংকং, লন্ডন ও নিউইয়র্কে বিপুল সংখ্যক অস্ট্রেলিয়ানের বসবাস রয়েছে।

দেশটির ভোটারদের জন্য ভোট দেয়ার কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৮ বছর বয়সী সবার জন্য ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক। কেউ ভোট দিতে ব্যর্থ হলে তাকে ১৩ ডলার জরিমানা গুনতে হবে। প্রতিনিধি পরিষদের ১৫০টি আসনের সবকটিতেই এবং সিনেটের ৭৬টির মধ্যে ৪০টি আসনে আজ নির্বাচন হচ্ছে।

দেশটিতে প্রধান রাজনৈতিক দল দুটি: অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি এবং রক্ষণশীল লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন। কোনও দলের সরকার গঠনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদের অন্তত ৭৬টি আসন পেতে হবে। সেটি সম্ভব না হলে দলগুলো বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী বা ছোট দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

দেশটিতে কয়েক দশক ধরেই রাজ্য ও ফেডারেল সরকার নির্বাচনে ছোট দলগুলো ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২২ সালের নির্বাচনে প্রতি তিনজন ভোটারের একজন দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের বাইরে অন্যদের ভোট দিয়েছিলেন। লেবার, দ্যা লিবারেল, দ্যা ন্যাশনালস এবং দ্যা গ্রিন মোটামুটি আলোচনায় থাকে। যদিও আসলে ১২টি দল সিনেটে আর আটটি দল প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।

সিনেটর পলিন হানসন ১৯৯৭ সালে ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত ওয়ান ন্যাশন পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। হানসন প্রায়ই নানা বিতর্কের কেন্দ্রে থাকেন। তিনি সিনেটে বুরকা পড়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছিলেন। তার দলের নীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। দ্য ন্যাশনালসের সাবেক সদস্য বব কাট্টের প্রায় ৫০ বছর ধরে এমপি এবং তিনি তার বক্তৃতার স্টাইলের জন্য পরিচিত। ২০১৭ সালে সমলিঙ্গের বিয়ের বিষয়ে গণভোটের সময়ে তিনি এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।

বিলিওনিয়ার ক্লাইভ পালমারের দলের নাম ছিলো ইউনাইটেড অস্ট্রেলিয়া পার্টি। গত নির্বাচনে প্রায় ৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেও মাত্র একটি আসন পেয়েছিলেন সিনেটে। এবার পালমার ট্রাম্পেট অফ প্যাটরিওটস পার্টিকে সমর্থন দিচ্ছেন। এছাড়া সেন্ট্রাল এলায়েন্স দলের একমাত্র এমপি হলেন রেবেকা শারকি। ইতোমধ্যেই তিনি কোয়ালিশন নেতা পিটার ডাটনের সাথে যোগসূত্র রাখবেন বলে জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য সেবা ইস্যু
বিবিসির টিফানি টার্নবুল দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া থেকে লিখেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতির সূচনা হয়েছে প্রায় চার দশক আগে। সেখানে মেডিকেয়ার নামে একটি জনবীমা প্রকল্প চালু আছে। এর আওতায় উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা নাগরিকদের জন্য মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু বিষয়টি প্রায়ই জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়। কারণ প্রয়োজনের সময় অনেককেই এই সেবা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বলতে গেলে সর্বজনীন এই স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি অনেকটাই খুঁড়িয়ে হাঁটছে। সরকার যে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে তা যথেষ্ট হচ্ছে না। জেনারেল প্রাকটিশনারসহ স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট দেখা যাচ্ছে। সেবাপ্রার্থীদের জন্য অপেক্ষার সময় ক্রমশ দীর্ঘতর হচ্ছে। রোগীদের খরচও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দেশটিতে অনেকেই বিবিসিকে বলেছেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

অভিবাসন আলোচনায় কেন
অস্ট্রেলিয়ার জনগোষ্ঠীর তৃতীয় বৃহত্তম অংশেরই জন্ম দেশটির বাইরে। দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির পরিচিত 'মাইগ্রেশন ন্যাশন' হিসেবে, যেখানে অভিবাসীরা নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। এর মূল কারণ হলো বাসস্থান খরচ বাড়ছে। পিটার ডাটন বলেছেন তিনি অভিবাসীরা যেন সহজেই ভোট দিতে পারেন সেজন্য ফাস্ট ট্রাক সিটিজেনশিপ চালু করবেন। গত বছর প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সীমিত করার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি পাশ হয়নি।

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এর বামপন্থী অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি পুনরায় জয়ের চেষ্টা করছে। আর তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ট র ড টন র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কন্যা ফাতিমাকে নবীজির ৫ উপদেশ

ইসলামে চারজন নারীকে নিখুঁত নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়: বিবি মরিয়ম, আসিয়া, খাদিজা (রা.) এবং ফাতিমা (রা.)। ফাতিমা ছিলেন নবীজির প্রিয় কন্যা। ইসলামের প্রাথমিক দিনগুলোতে তিনি ছিলেন শিশু। ধীরে ধীরে তিনি একজন কন্যা, স্ত্রী ও মা হিসেবে ইসলামের আদর্শ নারীর নিখুঁত উদাহরণ হয়ে আবির্ভূত হন।

নিখুঁত নারী হিসেবে ফাতিমা (রা.)

ফাতিমা (রা.) ইসলামের মহান নারীদের একজন। তিনি তাঁর পিতার নবুওয়তের মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং নারীদের জন্য একটি আদর্শ রোল মডেল। কোরআনে নবী–পরিবারের পবিত্রতা সম্পর্কে বলা হয়েছে: ‘তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান করো এবং জাহিলিয়া যুগের মতো প্রদর্শনী করো না...আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে, হে নবীর পরিবার, সব অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের পবিত্র ও নিষ্কলঙ্ক করতে।’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ৩৩)

শৈশব থেকেই তিনি তাঁর পিতামাতার ওপর কুরাইশদের নিপীড়ন ও অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেছেন। এমনকি তিনি নিজেও কখনো কখনো কুরাইশদের উপহাসের শিকার হয়েছেন। শক্তিমান নারী

তিনি যখন খুব ছোট, মাত্র পাঁচ বছর বয়স, তখন নবীজি (সা.) মক্কার হিরা গুহায় প্রথম ওহি পান। শৈশব থেকেই তিনি তাঁর পিতামাতার ওপর কুরাইশদের নিপীড়ন ও অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেছেন। এমনকি তিনি নিজেও কখনো কখনো কুরাইশদের উপহাসের শিকার হয়েছেন। আজকের শিশুদের মতো যারা খেলার মাঠে উৎপীড়ন বা সামাজিক চাপের মুখোমুখি হয়, তেমনই ফাতিমা (রা.) শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক কষ্ট সহ্য করেছেন।

কাবায় নবীজি সিজদায় থাকা অবস্থায় একজন বিরোধী তাঁর ওপর ময়লা নিক্ষেপ করেছিল। কান্নাভেজা চোখে ফাতিমা (রা.) তাঁর পিতার শরীর পরিষ্কার করেন। নবীজি তাঁর প্রিয় কন্যাকে শান্ত করেন। (ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নববিয়্যাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা, ২০০৪, খণ্ড ১, পৃ. ২৮৯)

শৈশবের কঠিনসব অভিজ্ঞতা তাকে নবীজির জীবনে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল।

আরও পড়ুনসাহাবি আবু উবাইদা (রা.)–র উপদেশ০৬ মার্চ ২০২৪বিবাহ

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাঁকে আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হয়। এই বিবাহ মদিনায় অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ হিসেবে বর্ণিত। যদিও ফাতিমা (রা.) তাঁর বোনদের মধ্যে একমাত্র, যিনি কোনো ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিবাহ করেননি। নবীজি (সা.) এই বিবাহের পক্ষে ছিলেন; কারণ, তিনি জানতেন আলী (রা.) একজন ধর্মভীরু মুসলিম এবং তিনি ফাতিমা (রা.)-এর যত্ন নেবেন।

ফাতিমা (রা.) বিবাহিত জীবনে সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর স্বামীকে পরিবারের জন্য রিজিক সংগ্রহে সহায়তা করতেন। কঠোর পরিস্থিতিতেও তিনি হাসান ও হুসাইন নামে দুই পুত্রসন্তানের মা হন। তিনি একজন স্নেহময়ী কন্যা, অনুগত স্ত্রী ও যত্নশীল মা ছিলেন। তিনি জীবনের কষ্ট সহ্য করেছেন কোনো অভিযোগ ছাড়াই। আজকের নারীদের মধ্যে কতজন এমনটি করতে পারেন?

ফাতিমার মতো কন্যা গড়ে তোলা

আধুনিক সংস্কৃতি প্রায়ই নারীর বাহ্যিক সৌন্দর্যের ওপর জোর দেয়। কিন্তু ইসলাম শেখায় যে অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। মুসলিম নারীরা দরিদ্রদের সাহায্য করে, স্বামীর বোঝা কমায়, সন্তানদের বিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলে, পিতামাতাকে ভালোবাসে এবং তাদের ক্যারিয়ার, শখ বা আগ্রহের মাধ্যমে নিজেকে উন্নত করে। তাদের প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

পৃথিবীর নারীদের মধ্যে তোমাদের অনুসরণের জন্য মারিয়াম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া যথেষ্ট।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৭৮

আজকের মুসলিম কন্যারা কি ফাতিমা (রা.)-এর আচরণ ও ইমানের কাছাকাছি বড় হচ্ছে? তিনি শৈশবে নিপীড়ন ও সহিংসতার মুখোমুখি হয়েও ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী নারী হয়ে উঠেছিলেন।

নবীজি বলেছেন: ‘পৃথিবীর নারীদের মধ্যে তোমাদের অনুসরণের জন্য মারিয়াম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া যথেষ্ট।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৭৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,০৯০)

তিনি আরও বলেছেন, ‘ফাতিমা জান্নাতের নারীদের প্রধান।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)

আরও পড়ুনরাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের ৭ উপদেশ৩০ জুলাই ২০২৫তাকে দেওয়া নবীজির উপদেশ

নবীজি (সা.) বিভিন্ন সময়ে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন, যা প্রত্যেক আদর্শ বাবার জন্য স্মরণে রাখা কর্তব্য।

১. কষ্টসহিষ্ণু হতে বলা

আলী (রা.) বলেন, একবার নবীজির কাছে এসে ফাতিমা গৃহকর্মের কষ্টের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে তিনি হাতে জাঁতা দিয়ে শস্য পিষতে পিষতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন এবং গৃহকর্মে সাহায্যের জন্য একজন খাদেম চান।

নবীজি তখন তাঁকে কোনো দাস না দিয়ে একটি বিশেষ আমল শিখিয়ে দেন, যা তাঁর জন্য দাসের চেয়েও উত্তম। তিনি বলেন, ‘তোমাকে কি এমন কিছু শিখিয়ে দেব না, যা তোমার জন্য দাসের চেয়েও উত্তম? যখন তুমি ঘুমাতে যাবে, তখন ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলবে। এটি তোমার জন্য দাসের চেয়েও উত্তম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,১১৩, ৫,৩৬১, ৬,৩১৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭২৭)

২. আল্লাহভীরু হতে বলা

নবীজি তার প্রিয় কন্যাকে বলেছেন, ‘হে ফাতিমা, আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর নির্দেশ পালন করো।’ এই উপদেশ তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি প্রায়ই বলতেন। এমনকি তিনি বলেছেন, ‘আমি ফাতিমাকে তার প্রভুর (আল্লাহর) বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ থেকে রক্ষা করতে পারব না যদি সে তাকওয়া (খোদাভীতি) অবলম্বন না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৪৩৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,০৬৩)

৩. ধৈর্য ও সন্তুষ্টির উপদেশ

ফাতিমা (রা.)-এর জীবন ছিল অত্যন্ত সাধারণ এবং তিনি প্রায়ই দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করতেন। নবীজি তাঁকে ধৈর্য ধরতে ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে উপদেশ দিয়েছেন। ফাতিমা (রা.) যখন তাঁর দারিদ্র্য ও কষ্টের কথা উল্লেখ করেন, নবীজি তাঁকে বলেন, ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে তুমি জান্নাতের নারীদের সরদার হবে?’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)

ফাতিমা, তুমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, কারণ এটি তোমার পাপ মোচন করবে এবং তোমাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করবে।মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৬২২

৪. আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা

নবীজি ফাতিমা (রা.)-কে প্রায়ই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, ‘ফাতিমা, তুমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, কারণ এটি তোমার পাপ মোচন করবে এবং তোমাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৬২২)

তিনি তাঁকে শিখিয়েছেন যে জিকির ও নামাজ মানুষের হৃদয়কে শান্তি দেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক। একটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে তিনি ফাতিমা (রা.)-কে বলেছেন, ‘তুমি নিয়মিত নামাজ আদায় করো এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করো।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ১,৩০৪)

৫. স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পালন

হজরত ফাতিমা ও আলী (রা.)-এর পারিবারিক জীবন ছিল সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার একটি আদর্শ। একটি বর্ণনায় এসেছে যে নবীজি তাঁদের ঘরে গিয়ে দেখতেন যে তারা একসঙ্গে গৃহকর্ম ভাগ করে নিয়েছেন। ফাতিমা ঘরের কাজ করতেন, আর আলী (রা.) বাইরের কাজে সহায়তা করতেন। নবীজি এই ব্যবস্থার প্রশংসা করেছেন।

তিনি ফাতিমা (রা.)-কে তাঁর স্বামী হজরত আলী (রা.)-এর প্রতি দায়িত্বশীল হতে উপদেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘সর্বোত্তম নারী সেই, যে তার স্বামীকে খুশি করে এবং তার আনুগত্য করে যখন সে তাকে ন্যায়সংগত কিছু আদেশ করে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৮৫৭; সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৩,২৩১)

ফাতিমা (রা.) ছিলেন একজন স্নেহময়ী কন্যা, অনুগত স্ত্রী ও যত্নশীল মা, যিনি জীবনের কষ্ট সাহসের সঙ্গে সহ্য করেছেন। তিনি ইসলামের নিখুঁত নারীদের একজন এবং আধুনিক মুসলিম নারীদের জন্য একটি আদর্শ।

আরও পড়ুনজান্নাতে নারীদের সরদার হজরত ফাতিমা (রা.)০৮ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভুল রেলস্টেশনে নামা তরুণীকে ধর্ষণের মামলায় একজন গ্রেপ্তার
  • পাবনায় মসজিদের নির্মাণকাজ নিয়ে সংঘর্ষে আহত আরও একজনের মৃত্যু
  • গয়নার দোকান থেকে গুজবের বাজার—তামান্না অবশেষে মুখ খুললেন রাজ্জাক প্রসঙ্গে
  • আবুল হাসানকে নিয়ে নতুন গল্পগাছা ও পূর্বাপর
  • সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করেই ছাড়ব: মির্জা আব্বাস
  • অচলায়তন ভেঙে সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় কোয়াব
  • রক্তাক্ত ৪ আগস্ট: ফেনীতে গুলিতে ঝরে যায় ৭ তরুণের প্রাণ
  • হাতকড়াসহ নৌকা থে‌কে হাওরে ঝাঁপ দি‌য়ে আওয়ামী লীগ নেতার পলায়ন
  • ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা: সাদিক কায়েম
  • কন্যা ফাতিমাকে নবীজির ৫ উপদেশ