ঝুঁকিপূর্ণ বাণী ভবনে জীবন পার জবি কর্মচারীদের
Published: 3rd, May 2025 GMT
জরাজীর্ণ ভবনের ছাদে বিস্তর ফাটল, পলেস্তারা ক্ষয়ে যাওয়া দেয়াল, স্যাঁতসেতে মেঝে, আর জানালার শিকে মাকড়সার জালের আধিপত্য। এটা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শতবর্ষী পুরাতন বাণী ভবনের চিত্র।
এ দুরবস্থার মধ্যেই বছরের পর বছর ধরে বসবাস করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মচারী। তাদের প্রধান দাবি, নিরাপদ আবাসন ও ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা। তবে মে দিবস আসে যায়, কিন্তু তাদের কথা কেউ ভাবে না; পরিবর্তন হয় না ভাগ্যেরও।
আইসিটি সেলের কর্মচারী সজীব বলেন, “বাণী ভবনটি ১০০ বছরের পুরাতন। দোতলার ছাদে বড় ফাটল ধরেছে, একপাশে ছাদ ভেঙে গেছে। ওইপাশে কেউ থাকে না। তবুও ঝুঁকি নিয়েই আমরা থাকছি।”
আরো পড়ুন:
সুনামগঞ্জের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি, শ্রমিকদের দুর্গতি
চা শ্রমিকদের জীবন: সামান্য বেতনে বেঁচে থাকার সংগ্রাম
এই ভবনে নেই বিদ্যুতের সংযোগও। প্রায় দুই দশক আগে বিল বকেয়া থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
সজীব বলেন, “কলেজ থাকাকালে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়নি। আমরা এখন সৌর লাইট দিয়ে রাত পার করি। আগে যারা ছিলেন, তারা মোমবাতি জ্বালিয়ে থাকতেন।”
ভবনের বাসিন্দা অধিকাংশ কর্মচারীই অস্থায়ী এবং হাজিরাভিত্তিক চাকরিতে নিযুক্ত। স্বল্প বেতন হওয়ায় ইচ্ছা না থাকলেও সেখানে তাদের থাকতে হচ্ছে অনেকটা বাধ্য হয়েই।
তারা জানান, মাসে শুক্র ও শনিবারসহ সরকারি ছুটির কারণে প্রকৃত আয় ১০-১২ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কখনও তা আরও কমে যায়।
অর্থ-হিসাব সহকারী হিসেবে কর্মরত এক কর্মচারী জানান, ঈদ বা বড় ছুটির সময় মাসে মাত্র ৫-৬ হাজার টাকা পান তারা। এ টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে শহরে থাকা সম্ভব নয়।
সমাজকর্ম বিভাগের অফিস সহায়ক কাজী মুহিন বলেন, “খুব অল্প বেতনে চাকরি করি। তাই খরচ কমাতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই থাকছি। প্রশাসন ভবন ছাড়তে বললেও যাওয়ার জায়গা নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মী ওমর আলী মাঝি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাদের নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করে, তাহলে উপকার হতো।”
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
ন্যূনতম মজুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আইন না দেখে কিছু বলা যাবে না। তবে আমরা সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি। বাজেট সীমিত হলেও অস্থায়ী কর্মচারীদের কাঠামোর আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগের হয়ে নির্যাতন চালাতেন ‘ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা’, দিলেন অনেকের পরিচয়
‘হলে থাকার কারণে ছাত্রশিবিরের যে ছেলেগুলো সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগ করত, তারা মূলত আইডেনটিটি ক্রাইসিস (আত্মপরিয়ের সংকট) থেকে উতরানোর জন্য কিছু ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে জড়াত। সেটা নিজেকে ছাত্রলীগ প্রমাণের দায় থেকে।
ছাত্রলীগ যে নিপীড়ন-নির্যাতন চালাত, তারা সেগুলার অংশীদার হতো, লীগের কালচারই চর্চা করত।’ এ কথা বলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের।
রোববার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন আবদুল কাদের। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ছাত্রলীগের হয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন–নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন হলের বেশ কয়েকজনকে ছাত্রশিবিরের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে আবদুল কাদের লিখেছেন, ‘শিবির করে আসা ছেলেরা নিজেকে ছাত্রলীগ প্রমাণ করার জন্য উগ্রবাদী।’ ছাত্রলীগের হয়ে নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো এমন কয়েকজনের বিষয়ে শিবিরের তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম ফোন দিয়ে তদবির করেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
যাঁদের বিষয়ে বললেন আবদুল কাদেরআবদুল কাদের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি রাতে বিজয় একাত্তর হলের শাহরিয়াদ নামের ২০১৯-২০ সেশনের (শিক্ষাবর্ষের) এক শিক্ষার্থীকে রাতভর মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। সেখানে নেতৃত্বে ছিলেন মাজেদুর রহমান নামের একজন। যিনি আমার পাশের এলাকার। একই মাদ্রাসায় পড়ার সুবাদে জানতাম, তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ক্যাম্পাসে এসে বনে গেলেন ভয়ংকর নিপীড়ক, নির্যাতক।
‘ছাত্রলীগের ঢাবি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) শাখার সর্বশেষ কমিটির দপ্তর সম্পাদক ২০১৭-১৮ সেশনের মুসাদ্দিক বিল্লাহ আমার জেলার, যাঁর পরিবার জামাত, যিনি শিবিরের সাথি ছিলেন; কিন্তু পদ–পদবির জন্য তিনি হয়ে গেলেন কট্টর ছাত্রলীগ।
ইতিপূর্বে কোনো কমিটিতে না থেকেও তিনি সরাসরি ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন। তাহলে চিন্তা করেন, তাঁকে কতটা বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে হইছে, কতটা ছাত্রলীগের চরিত্র ধারণ করতে হইছে!’
আবদুল কাদের লিখেছেন, জসীমউদ্দীন হলের ২০১৬-১৭ সেশনের আফজালুন নাঈম। গেস্টরুমে তাঁর দুর্ব্যবহার, নিপীড়নের জ্বালায় হলের ছেলেরা অতিষ্ঠ ছিলেন।
নাঈমের দুর্ব্যবহারের কথা হলের ছেলেদের মুখে মুখে। অথচ এই নাঈম এখন জামাত–শিবিরের আইকন শিশির মনিরের বিশেষ সহকারী! মুজিব হলের জুনিয়রদের কাছে এক ত্রাসের নাম ছিল ২০১৬-১৭ সেশনের ইলিয়াস হোসাইন। সঞ্জিতের রাজনীতি করতেন ইলিয়াস, হল ক্যান্ডিডেট ছিলেন। মিছিল–মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে সর্বোচ্চ ফোর্স করতেন, গেস্টরুমে অসহ্য মেন্টাল টর্চার করতেন, ছাত্রলীগের পদও পেয়েছিলেন। ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে এই ইলিয়াস শিবিরের বড় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন, চলাফেরা করেন এখন শিবিরের ইমামদের সঙ্গে!
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা আবদুল কাদের বলেন, ২০১৭ সালে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ইসলামিক পেজে লাইক দেওয়ায় শিবির সন্দেহে পাঁচ শিক্ষার্থীকে রাতভর ভয়াবহ নির্যাতনের মাধ্যমে রক্তাক্ত করে হলছাড়া করা হয়। এ ঘটনায় ১৩ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। মুহসীন হলের সাবেক ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ওরফে সোহেল ভুক্তভোগীর মোবাইল চেক করেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই অতর্কিত হামলা চালান। এই শাহাদাত আবার শিবির হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত ছিলেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই মামলা হওয়ার পরে শাহাদাতকে নিয়ে একজন পোস্ট করেন। পরবর্তী সময়ে ওই পোস্টকারীর সঙ্গে শিবিরের তৎকালীন সভাপতি সাদিক কায়েম যোগাযোগ করেন। শাহাদাত ভালো মানুষ, তাঁকে যেন এসবের সঙ্গে না জড়ান!
শিবিরের স্ট্র্যাটেজির (কৌশল) জায়গা থেকে তাঁরা ছাত্রলীগের বড় পদ নিতেন উল্লেখ করে আবদুল কাদের লেখেন, ‘হল ক্যান্ডিডেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্ডিডেট হওয়ার কারণে তাকে ছাত্রলীগ যে স্টাইলে কার্যক্রম পরিচালনা করে, ঠিক সেই স্টাইল ফলো করা লাগত। শিক্ষার্থীদের গণরুম, গেস্টরুম, জোরপূর্বক মিছিল–মিটিংয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার কাজটা একিনের সঙ্গে করতেন তাঁরা। উদ্দেশ্য একটাই, পদ পাইতেই হবে।
ছাত্রলীগের হল ক্যান্ডিডেটদের পেছনে আবার কিছু গুপ্ত শিবির থাকত। এরা তেলবাজি আর চাটুকারিতায় ছিল অনন্য। এরা সব কিছু আগবাড়িয়ে আনজাম দিত। ভাই কখন কোথায় আসবে, কখন ভাইটাল প্রোগ্রাম, সেটার তাগিদ দিয়ে জোরপূর্বক ছেলেপেলেদেরকে হাজির করার দায়িত্ব নিত এই প্রকৃতির শিবিররা। এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত একজন হচ্ছেন জহু হলের ২০২১-২২ সেশনের হাসানুল বান্না, যিনি ৫ আগস্টের পরে শিবিরের সদস্য সম্মলনে গিয়ে নিজেকে সদস্য হিসেবে প্রকাশ করেন। আবার এই বান্না এখন শিবিরের জহু হল শাখার বড় নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।’
আবদুল কাদের লিখেছেন, স্যার এ এফ রহমান হলের ২০১৮-১৯ সেশনের রায়হান উদ্দিন। যিনি ছাত্রলীগের অ্যাকটিভ (সক্রিয়) কর্মী ছিলেন। মেধাবী হওয়ার দরুন হল ক্যান্ডিডেটের বক্তব্যগুলা যিনি নিজে লিখে দিতেন, সারাক্ষণ ক্যান্ডিডেটের আগে–পিছে থাকতেন, কাউকে ভিড়তে দিতেন না। এফ রহমান হলের কুখ্যাত ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজের একনিষ্ঠ অনুসারী এই রায়হান ৫ তারিখের পরে শিবিরের বড় নেতা হিসেবে হাজির হয়েছেন। আগের ফেসবুক আইডি বাদ দিয়ে এখন নতুন আইডি চালান। তবে আগের আইডি এবং তার কৃতকর্ম মুছে ফেলতে পারেননি। এখনো আছে।
আবদুল কাদের আরও লেখেন, ‘৫ তারিখের পরে শিবিরের যে সব ছেলে ছাত্রলীগের ভেতরে থেকে ছাত্রলীগের মতো আচরণ করেছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে জনাব সাদিক কায়েমের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। ৫ তারিখের পরে হলে হলে ছাত্রলীগের নিপীড়কদের তালিকা হচ্ছিল। একদিন ফোনে এই বিষয়ে কথা বলার পরিপ্রেক্ষিতে সাদিক ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম, একাত্তর হলের হাসান সাঈদী, এফ রহমানের তানভীর হাসান শান্তর মতো শিবিরের যারা লীগের আমলে অপকর্ম করেছে, তাদেরকে মামলা দিবেন না? প্রতি–উত্তরে উনি বললেন, “তোমরা দাও।” আমি বললাম, আমরা আর তোমরা দেওয়ার কী আছে! লিস্ট তো আমরা–আপনারা মিলেই করতেছি। এ বিষয়ে সাদিক ভাইয়ের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়; কিন্তু শেষে আর হাসান সাঈদী কিংবা শান্তদের নাম মামলার তালিকায় উঠল না!
‘এই সাঈদী ছিল শিবিরের সাথি। পরে একাত্তর হল ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। এমন কোনো অপকর্ম নেই যে সে করেনি। ও একাত্তর হলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী আবু ইউনুসের রাজনীতি করত। শিবিরসংশ্লিষ্টতার কারণে তারে পোস্ট–পদবি দেয়নি দীর্ঘদিন। সে হতাশায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। নিজেকে লীগার প্রমাণ করার জন্য সে আরও উগ্রপন্থা বেছে নিল। একে তো শিবিরসংশ্লিষ্টতা, তার ওপর নিজের নাম সাঈদী হওয়ার কারণে পদ–পদবী পাচ্ছে না, সে জন্য কাগজপত্রে নাম পরিবর্তন করে সাঈদ বানিয়েছেন তিনি! অবশেষে সে হীন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, একাত্তর হল ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক হয়। তারপর সৈকতের রাজনীতি করা শুরু করে, হল ক্যান্ডিডেট ছিল।’
আবদুল কাদের লিখেছেন, ‘চব্বিশ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে এই সাঈদীসহ আরও কয়েকজন ছাত্রলীগার মিলে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নিয়ে এসে মুহসীন হলে তিন দিন আটকে রাখেন। ওই ঘটনায় সাঈদী গ্রেপ্তার হয়, বহিষ্কৃতও হয় ছাত্রলীগ থেকে। কিন্তু বের হয়ে সে তার অপকর্ম এবং ছাত্রলীগের রাজনীতি চালিয়ে যায়। জুলাইয়ের ১৫ তারিখে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হওয়া শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে গেলে সাঈদী সেখানে গিয়েও আহত ব্যক্তিদের ওপর হামলা করে! যার ভিডিও ফুটেজ এখনো আছে। অথচ এই সাঈদী ৫ তারিখের পরে আইনের আওতার বাইরে ছিল, ফেসবুকে শিবিরের গুণগান গাওয়া শুরু করে দিয়েছিল। এরপর সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সাঈদী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
‘সাঈদী এফবিএস এর ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে ক্যাম্পাসের বাইরে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ানোর ব্যবস্থা করে। সেখানকার শিক্ষার্থীরা দেখে ফেলার পরে তারা এই সাঈদীকে আটক করে। কিন্তু সাঈদীকে আটক করার পরে শিক্ষার্থীদের কাছে শিবিরের তৎকালীন ঢাবি সভাপতি সাদিক কায়েম ফোন দিয়ে তদবির করেন, যেন সাঈদীকে ছেড়ে দেওয়া হয়! শিক্ষার্থীরা সাদিক কায়েমের তদবির শোনেন নাই, থানায় নিয়ে আসে সাঈদীকে। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও মামলা নিতে চান না। ওই সময়টাতে শিবিরের আরেক দায়িত্বশীল নাকি প্রক্টরের সঙ্গেও একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। নিজ এলাকার, নিজ সংগঠনের সাঈদীকে বাঁচানোর জন্য। অবশেষে শিক্ষার্থীদের অনমনীয়তার মুখে সাঈদীকে মামলার আওতায় নেয় থানা–পুলিশ। কিন্তু এই সাঈদী সবাইকে অবাক করে দিয়ে এক সপ্তাহের মাথায় জেল থেকে বের হয়ে আসে! অথচ জুলাইয়ের মামলার আসামির নাকি জামিন হয় না সহজে! তাহলে চিন্তা করলাম, এদের লিংক–লবিং কোন পর্যায়ে! ছাত্রলীগের ভেতরে ঢুকে ছাত্রলীগের কালচার চর্চা করা এমন গুপ্ত শিবিরের সংখ্যা কিন্তু কম ছিল না।’
৫ আগস্টের পরে হলে হলে ব্যাচ প্রতিনিধি হয়, শৃঙ্খলা কমিটি হয় শিবিরের ‘প্রেসক্রিপশনে’, এমন অভিযোগ করে আবদুল কাদের লিখেছেন, ‘৫ আগস্টের পরে হলে হলে ব্যাচ প্রতিনিধি হয়, শৃঙ্খলা কমিটি হয়, এটা কার প্রেসক্রিপশনে হয়, সেটা প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক পরিচয় দেখলেই বোঝা যায়। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে ভোটাভুটি করে অধিকাংশ ব্যাচ প্রতিনিধি শিবির নিজেদের লোকজনকে নির্বাচিত করে। এই ব্যাচ প্রতিনিধিরাই পরবর্তী সময়ে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে, একপ্রকার ছায়া প্রশাসন হিসেবে হলে ফাংশন করে। এই ব্যাচ প্রতিনিধিরাই আবার ৫ তারিখের পরে ছাত্রলীগের নামের তালিকা তৈরির দায়িত্ব নেয়। স্বাভাবিকভাবেই তারা নিজেদের সাথি ভাইদেরকে তালিকার বাইরে রাখে।’
৫ আগস্টের পরে জুলাইয়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুটি মামলা হয় জানিয়ে আবদুল কাদের লেখেন, ‘মাহিম সরকার ও আরমান হোসেন বাদী হয়ে এই দুইটা মামলা করেন। এই দুই মামলার বাদীর সঙ্গেই শিবিরের সাদিক কায়েম সরাসরি দেখা করে কয়েকজন ব্যক্তির ব্যাপারে তদবির করেন। মাহিন ও আরমানকে একটা তালিকাও দেন, যেন এই ব্যক্তিগুলার নাম মামলা থেকে কেটে দেয়, সেই বিষয়ে সাদিক কায়েম সরাসরি তদবির করেন। আরমান পরবর্তী সময়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন, সাদিক কায়েম যে নামগুলা দিছেন, তাঁরা শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে একজম আসামি আরমানের কাছে স্বীকারও করছেন, তিনি শিবির করেন, তাঁর নাম যেন মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়!’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম বর্তমানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক। আবদুল কাদেরের ফেসবুক পোস্ট ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাদেরের সঙ্গে এসব বিষয়ে আমার কোনো কথা হয়নি। তিনি ফেসবুকে যেগুলো লিখেছেন, সেগুলো সত্য নয়। মামলার বিষয়ে আমি আরমানকে মেসেজ দিয়েছিলাম খোঁজ নিয়ে দেখতে, যেন কোনো নির্দোষ শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার না হন।’
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে গত বছর আন্দোলনের সময় পরিচিত হয়ে ওঠা আবদুল কাদেরের অভিযোগ, এই তদবির–কাণ্ডের কারণে জুলাইয়ের অঙ্গীকার রক্ষা করা যায়নি। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘সবাই সবার দলীয় মানুষজনকে বাঁচিয়ে দিতে গিয়ে জুলাইয়ের সন্ত্রাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে দিছে। শিবির অস্বীকার করতেছে, তাদের কোনো নেতা–কর্মী গুপ্তভাবে লীগের ভেতরে ঢুকে লীগের কালচার চর্চা করেনি। তারা আমাদের কাছে প্রমাণ চাচ্ছে; কিন্তু শিবির তাদের বিগত এক যুগের হল কমিটি এবং ঢাবি শাখার কমিটি প্রকাশ করুক। তাহলেই তো মানুষজন ক্লিয়ার হতে পারে, শিবির ছিল কি ছিল না। বর্তমানের হল কমিটিও তো প্রকাশ করতে পারে। ৫ তারিখের পর তাদের ভয় কিসের? নাকি তাদের কৃতকর্ম প্রকাশিত হয়ে যাবে, সেই ভয়ে প্রকাশ করতেছে না! হলে হলে এখন শিবিরের হয়ে মাদবরি করা মানুষের পূর্বের চেহারা প্রকাশ হয়ে যাবে!’