হত্যা, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ করে অবৈধভাবে বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইসলামী যুব আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নগরের অশ্বিনী কুমার টাউন হলে এ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শুরুর আগে ঢাকার সোহাগ হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নগরী প্রদক্ষিণ করে। 

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম এ সময় বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের চরিত্র একই। দল দুটির নেতাকর্মীরা খুনি, ধর্ষক। হাতে তাদের রক্তমাখা থাকে। লোক দেখানো বহিষ্কার নয়, রাজধানীতে পাথর ছুড়ে প্রকাশ্যে যুবক হত্যার দায় দায়িত্ব বিএনপিকে নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যারা রাজনীতিকে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার বানাচ্ছে তারাই অতীতে দেশকে দুর্নীতিতে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে। ঢাকায় সোহাগ হত্যার ঘটনাটি পুলিশ ভিন্নখাতে নিতে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। 

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন- ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের মুহতারাম কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি মানসুর আহমাদ সাকী।

মহানগর সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম, যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ আলামিন, মাওলানা মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মাদ লোকমান হাকিম, সহ-সভাপতি শেখ শামসুল আলম মিলন, সেক্রেটারি মাওলানা আবুল খায়ের আশ্রাফী, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মাদ কাওছারুল ইসলাম প্রমুখ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর শ ল ল কর ম ব এনপ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

সুইমিংপুলে মৃত্যু: কুষ্টিয়ায় রাবি ছাত্রীর দাফন, কাঁদছেন স্বজন-সহপাঠীরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সোমবার (২৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কুষ্টিয়া পৌরসভার ঢাকা এলাকা দিয়ে মহাসড়কের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। সবার চোখে পানি, শোকে মুহ্যমান তারা।

তাদের মধ্যে কয়েকজন গেলেন ডান পাশের গোরস্থানে। একটি কবরের বেড়া ধরে কাঁদলেন। বলছিলেন, তারা তাদের সহপাঠীকে এখানে রেখে যাচ্ছেন চিরদিনের মতো। এই সহপাঠী রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালেও ক্যাম্পাসে তাদের সঙ্গে ছিলেন।

আরো পড়ুন:

যবিপ্রবি প্রক্টর ওঠা মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন

ড্যাফোডিল-সিটি ইউনিভার্সিটি সংঘাত, ক্ষতিপূরণ পাবে সিটি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে পানিতে ডুবে রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে কু্ষ্টিয়ার ঢাকা এলাকার মেয়ে সায়মা হোসেনের মৃত্যু হয়।

সোমবার দুপুরে জানাজা শেষে এলাকার সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় আত্মীয়স্বজনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তার সহপাঠীরা উপস্থিত ছিলেন। তিনি রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

সহপাঠী আহসান হাবীব বলছিলেন, “সায়মা খুবই মেধাবী ছিল। পড়াশোনার পাশপাশি বিএনসিসি করত, সাঁতার জানত। খেলাধুলা পারদর্শী ও সাংস্কৃতিমনা ছিল। এক কথায় বহুগুণ ছিল তার। তাকে এভাবে রেখে যেতে হবে, ভাবতেই পারছি না।”

কবরের বেড়া ধরে কাঁদছিলেন সায়মার চাচাতো বোন সৌহরিয়া আফরিন। তাকে সান্তনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন সায়মার এক বান্ধবী। সৌহরিয়া বলছিলেন, “অন্ধকার কবরে তুই কী করে থাকবি।”

বাইপাস সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা সায়মার অন্তত ৮০ জন সহপাঠী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বাসে করে চলে যান তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে। যাওয়ার সময় সায়মার ছোট বোন ফারজানা হোসেনকে সান্তনা দেন তারা।

সায়মার বাবার নাম আবুল হোসেন। মায়ের নাম শিরীনা খাতুন। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সায়মা ছিলেন দ্বিতীয়। সবার ছোট বোন এবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। বড় ছেলে স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। দুই মেয়েকে পড়াশোনা করাতে খুবই কষ্ট করেছেন আবুল হোসেন।

সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, আধাপাকা ঘরের ভেতর চৌকিতে শুয়ে আছেন সায়মার মা শিরীনা খাতুন। তার পাশে স্বজনেরা বসে ছিলেন।

শিরীনা বললেন, “মেয়েদের কীভাবে পড়ালেখা করাচ্ছি, তা শুধু আল্লাহ জানে। আমার মেয়ের (সায়মা) প্রাথমিকে, মাধ্যমিকে কখনো রোল নম্বর এক থেকে দুইয়ে যায়নি। এলাকাতেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়েছে। মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এত মেধা সব চলে গেল।”

বাবা আবুল হোসেন বলছিলেন, “মেয়েকে প্রতিদিন সকালে ফোন করে খোঁজখবর নিই। কিন্তু রবিবার সকালে মেয়ে ফোন করে বলে, ‘বাবা কেমন আছ।’ আমি তো চমকে উঠি। আজ কেন সে ফোন দিল। কোনো সমস্যা নেই বলে জানায়। এরপর আর কথা হয়নি। পরে জানতে পারি, সে পানিতে ডুবে মারা গেছে।”

তিনি বলেন, “আমার মেয়েকে পড়াশোনা করানোর সামর্থ্য ছিল না। মেয়ের মেধা ছিল। আত্মীয়-স্বজন সহায়তা করত। ভরা খেতে আগুন লেগে গেল। সব শেষ হয়ে গেল। মেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করার কথা বলত। সব শেষ, এসব বলে আর কী হবে!”

সায়মার চাচা মোহাম্মদ সুলতান বলেন, “কয়েক সপ্তাহ আগে ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি স্মার্টফোন কিনে দিলাম। মেয়ে বলেছিল, ‘আর মাত্র ৬ মাস পরেই বের হব। চাকরি করে তোমাদের দেব। কিন্তু সেই চলে গেল।”

বাড়ির বাইরে চেয়ারে বসে কাঁদছিলেন সায়মার ভাই ইসরাইল হোসেন। তিনি বলেন, “কিছুই বলার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেছেন, তদন্ত করবেন। তারা যা ভালো মনে করেন, করুক।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ