পাবনার ঈশ্বরদীতে বালুমহাল দখল নিতে আবার এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১২ জুলাই) সকালে ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া ও ইসলামপাড়া ঘাটে এ ঘটনা ঘটে। এলোপাতাড়ি গুলিতে সোহান মোল্লা নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
সোহান মোল্লা ঈশ্বরদীর মাজদিয়া চৌধুরীপাড়ার সাহাবউদ্দিন মোল্লার ছেলে। তাকে প্রথম ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পুলিশ, বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাবনার ঈম্বরদী, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, দৌলতপুর, নাটোরের লালপুর, পাবনার ঈম্বরদীসহ বিভিন্ন এলাকার বালুমহলের নিয়ন্ত্রণ করছেন লালপুরের সন্ত্রাসী বাহিনীখ্যাত ‘কাকন বাহিনী’। অধিকাংশ ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিলেও সাড়া ঘাটের বৈধ ইজারাদার থাকায় সেটি নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়। এই ঘাটে গত ৫ জুন গুলি চালায় কাকন বাহিনী। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার সকালে আবারও গুলি চালায় এ বাহিনী। এ সময় ঘাস কাটতে যাওয়া সোহান হোসেন গুলিবিদ্ধ হন।
ঈম্বরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প বন
এছাড়াও পড়ুন:
মায়ের হাতের রান্না
স্কুল থেকে বাসায় ফিরলে আম্মা বলতেন, ‘খেতে আয়; আজকে খুব ভালো জিনিস রান্না করেছি।’
আমি বলতাম, ‘বুঝেছি, তোমার ভালো জিনিস মানে তো লাউ না হলে টাটকিনি মাছ।’
আম্মা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন। তাঁর ধৈর্যের কমতি ছিল না। কত কিছু রান্না করে আমাকে খুশি করতে চাইতেন। এরপর কলেজে উঠতে না উঠতেই আম্মা মারা গেলেন। ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলীতে আমাদের বাড়িটা ফাঁকা হয়ে গেল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হলে চলে এলাম।
অল্প দিনেই আম্মার হাতের রান্না লাউ–চিংড়ি, লাউ–শোল মাছ, লাউয়ের টক, টাটকিনি মাছ ভুনা, ইলিশ মাছের ঝোল, ইলিশ পোলাও, বেগুনভাজা, শিম দিয়ে মাগুর–শিং মাছের ঝোল, চিতল মাছের কোফতা, চিংড়ি মাছের মালাইকারি, মাছের ঝোলে ডালের বড়ি, বেগুনখাসি, কচুর লতি দিয়ে ইলিশ মাছের মাথা, কচুর গোড়ার শক্ত অংশ ভেজে নারকেল দিয়ে রান্না, নারকেলভর্তা, ডাল চচ্চড়ি, থানকুনিপাতা ভাজা, কুমড়া ফুলের বড়া, মচমচে পরোটা, কোরবানির গরুর ভুঁড়ি রান্না মিস করতে শুরু করলাম।
আম্মা মজার দুধ–চা বানাতেন। তাঁর চা বানানোর একটা ছোট্ট হাঁড়ি ছিল; রান্নার ফাঁকে ফাঁকে চা বানিয়ে খেতেন। মাঝেমধ্যে সকালের নাশতায় ডালপুরি বানাতেন; এখনো সেই ডালপুরির স্বাদ মুখে লেগে আছে। এই পৃথিবীতে তা আর কখনো পাব না! নারকেল, শর্ষেবাটা আর লাউপাতা দিয়ে ‘ভেদা’ নামের খাবারটা রান্না হলে ছোটবেলা স্কুল থেকে ফিরে আমি খুশি হতাম। গরম ভাত দিয়ে ভেদা খেতে কী যে স্বাদ, বোঝাব কী করে!
শীতের দিনে মজা করে পাঙাশ মাছ রান্না করতেন। তখন আমি পাঙাশ একদমই পছন্দ করতাম না। এখন বুঝি কী অমৃত হারিয়েছি। রুই–কাতলা মাছও খেতাম না; কেমন একটা গন্ধ লাগত। এ কারণে আমাদের পুকুরের রুই–কাতলা মাছ আম্মা তেঁতুল ও চিনি দিয়ে টক–মিষ্টি করে রান্না করে দিতেন, যা ছিল সুস্বাদু।
আমড়া আর নারকেলের দুধ দিয়ে একটা মিষ্টি মিষ্টি স্বাদের টক রান্না করতেন। শীতের দিনে বানাতেন খেজুর রসে ভেজানো দুধ–চিতই পিঠা। এরপর ভেজানো পিঠার ওপর দুধের সর দিয়ে পরিবেশন করতেন। আমি শুধু সর খেতাম; পিঠা খেতাম না।
সকালের নাশতায় বানাতেন ভাপা পিঠা, ধোঁয়া ওঠা সেই পিঠা ফুঁ দিয়ে খেতে কী যে মজা লাগত। মা কোরানো নারকেল বেটে কড়াইতে দিয়ে নেভানো চুলায় বসিয়ে রাখতেন। তাতে যে তেল হতো, সেটা আমরা চুলে দিতাম আর তেলের নিচে বাদামি রঙের একটা ক্ষার জমত, যেটা দিয়ে গরম ভাত খেতে খুব উপাদেয় ছিল।
আরও কত রকমারি রান্না করতেন—খেজুরের রসের পায়েস আর নালি গুড়, চাল কুমড়ার মোরব্বা, বরই শুকিয়ে গুড় দিয়ে মিষ্টি আচার। একবার আম্মা এক কড়াই চালতার আচার বানিয়ে মিটসেফে রেখেছিলেন। আচারের আসল মসলাটা তখনো দেওয়া হয়নি। পরের দিন আসল মসলা বানিয়ে মেশানোর জন্য মিটসেফ খুলে দেখেন কড়াইয়ে কোনো আচার নেই। আমরা সব খেয়ে ফেলেছি।
আম্মাকে হারিয়েছি অনেক বছর আগে; কিন্তু আম্মার হাতের রান্নার স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। আগে বুঝিনি আম্মার সব রান্নায় ‘ভালোবাসা’ নামের যে মসলাটা মেশাতেন, তার উৎস কোথায়। তখনই বুঝেছি, যখন আমার মেয়ে বলেছে, ‘আম্মু, তুমি না রান্না করলে আমি গরুর মাংস খাব না।’ কিংবা যেদিন ওর বন্ধুদের দাওয়াত করে বলেছে, ‘তোমাদের আমার আম্মুর হাতের চিকেন বিরিয়ানি খাওয়াব’ অথবা যেদিন স্কুল থেকে এসে বলেছে, ‘আমার বন্ধুরা বলেছে তোমার আম্মুর বানানো স্যান্ডউইচ খুব মজা হয়।’ আমি আসলে রান্না শিখেছিই আমার ছেলেমেয়ের জন্য। আমি যখন বুঝেছি ওরা আমার হাতের রান্না আগ্রহ নিয়ে খায়, আমি তখন থেকে রান্নাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।
আমার ছেলেমেয়েও আমার মতোই খাওয়া নিয়ে ওদের আম্মুকে জ্বালায়। প্রতিদিনের স্বাভাবিক খাবার, যেমন ভাত, মাছ, সবজি, ডাল ইত্যাদি একেবারেই খেতে চায় না; খায়ও না। ওরাও আমার মতোই ওদের আম্মুকে বলে, ‘তোমার কাছে ভালো খাবার মানে কী, তা আমরা জানি। এগুলো কি কোনো ভালো খাবার হলো!’ এ জন্যই মেয়েকে বিদেশে পড়তে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু মেয়ে যখন ফোন করে বলে, ওর এখন বাসার খাবার খেতে খুব ইচ্ছা করে, আমার চোখে পানি চলে আসে—আমার মতো আমার মেয়েও মায়ের হাতের রান্না মিস করে।