প্রায় চার বছর নষ্ট পড়ে থাকার পর অবশেষে চালু হলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রোগীদের একমাত্র ভরসার এমআরআই (ম্যাগনেটিং রিজোন্যান্স ইমেজিং) যন্ত্রটি। শনিবার থেকে এটি পুরোদমে সচল হয়েছে। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছে গরিব-অসহায় রোগীদের মাঝে। 

যন্ত্রটি সচল করতে গত চার বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অন্তত ৪২ বার চিঠি দেয় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপরও নানা জটিলতায় বছরের পর বছর ধরে নষ্ট পড়ে ছিল যন্ত্রটি। এ নিয়ে গত ২৬ এপ্রিল সমকালের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘একমাত্র এমআরআই যন্ত্র ঠিক করতে ৪২ বার চিঠি’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আসার পর এটি সচলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। 

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন সমকালকে বলেন, দীর্ঘদিন অচল পড়ে থাকা এমআরআই যন্ত্রটি সচল হয়েছে। চীন থেকে উচ্চ ক্ষমতসম্পন্ন ব্যাটারিসহ যন্ত্রটিতে আরও বেশ কিছু নতুন যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়েছে। এরপর প্রকৌশলীরা টানা কয়েক দিন পরীক্ষামূলকভাবে এটির কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তারা বেশ কয়েকজন রোগীর এমআরআই পরীক্ষা করেও দেখেছেন। রিপোর্ট আসা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়ায় মেশিনটি এখন পুরোপুরি রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। 

পরিচালক আরও বলেন, এখন থেকে কম খরচে রোগীরা আবারও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে পারবেন। অনেক দিন পর হলেও অত্যন্ত জরুরি এই যন্ত্রটি সচল হওয়ায় রোগীদের মতো আমরাও আনন্দিত। এজন্য গণমাধ্যমকেও আমরা ধন্যবাদ দিতে চাই। প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা খরচে যন্ত্রটি সচল করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 
সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার চিঠি পাঠানোর পরও এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ফাইল যেতে বিলম্ব হয়। এ ছাড়া অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নানা ছলচাতুরী, দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে যন্ত্রটি এত বছর ধরে নষ্ট পড়ে ছিল। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালে ১০ কোটি টাকা মূল্যের জাপানি হিটাচি ব্র্যান্ডের এমআরআই যন্ত্রটি চমেক হাসপাতালে বরাদ্দ দেয়। তিন বছরের ওয়ারেন্টির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ২০২০ সালের অক্টোবরে এটি অচল হয়ে পড়ে। ২০২১ সালের মে মাসে এটি মেরামত করা হলেও এর এক মাস না যেতেই ফের অকেজো হয়ে পড়ে। সেই থেকে এতদিন অচল পড়ে ছিল লাখো মানুষের ভরসার একমাত্র এই যন্ত্রটি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র এমআরআই পর ক ষ র বছর

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলি সামরিক নীতির প্রতিফলন ইরানযুদ্ধ

ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় শত্রু ইরান। প্রায় দুই দশক ধরে দেশটির সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়িয়ে চলেছে তেল আবিব। ইসরায়েলি চোখ রাঙানির মধ্যেই ফিলিস্তিনের গাজায় সশস্ত্র সংগঠন হামাস সরকার গঠন করে। দক্ষিণ লেবাননে ইরানসমর্থিত হিজবুল্লাহ শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

দুই সংগঠনের সঙ্গে ইসরায়েলের অস্বস্তিকর সম্পর্ক চলতে থাকে। কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার ঘটনার পর থেকে তারা কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি তাদের হাতে চলে আসে। একের পর এক হামলা করে হামাস ও হিজবুল্লাহকে দুর্বল করে ফেলা হয়। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলি সামরিক নীতি (মিলিটারি ডকট্রিন) প্রতিষ্ঠা পায়। তা হলো, যুদ্ধে ধ্বংসাত্মক পন্থা অবলম্বন করার নীতি। 

গত সোমবার বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন, ‘আমরা মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দিচ্ছি। এর ফলে ইরানের ভেতরেই সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আসতে পারে।’ তবে আপাতত দ্বিতীয় দাবিটি অপ্রমাণিত। কারণ, ইসরায়েলের হামলায় ইরান দুর্বল হলেও পারমাণবিক কর্মসূচিতে দেশটি পরিবর্তন আনবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া সরকার পরিবর্তনের পরিকল্পনাও পূরণ হওয়ার নয়। তবে ধ্বংসাত্মক পন্থায় নেতানিয়াহু হামাস ও হিজবুল্লাহর ক্ষমতা খর্ব করে দেখিয়েছেন। সিরিয়ায় ইরানসমর্থিত আসাদ সরকারের পতনেও একই কৌশল কাজে দিয়েছে। এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল আরও শক্তিশালী হয়েছে, যা এই অঞ্চলে ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। 

ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল আমোস ইয়াদলিন মনে করেন, ‘হামাসের ওই হামলার আগের ২০ বছর বাইরের হুমকিকে গুরুত্ব দিইনি আমরা। এতে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা সঠিক গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করতে পারেনি। হামাসের ওই হামলা আমাদের মানসিকতাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। অতীতে যে ঝুঁকি আমরা নিতে ভয় করতাম, এখন তা অনায়াসে করছি। কারও আক্রমণের জন্য ইসরায়েল আর অপেক্ষা করবে না। 

ইসরায়েল পলিসি ফোরামের ফেলো নিমরোদ নোভিক বলেন, গাজার মতো ইরানেও খেলা দ্রুত শেষ করতে হবে। সময়ই বলে দেবে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ