৫ আগস্টের পর গত ৯ মাসে কমপক্ষে ৩৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরে। এ নিয়ে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্টচেক, মিডিয়া গবেষণা ও বিশ্লেষণী উইং ‘বাংলাফ্যাক্ট’ পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। রোববার বাংলাফ্যাক্ট এ-সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার মোহম্মদপুরে আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক জসিম উদ্দিন হাওলাদার। এর ১০ দিন পর ২৯ জুলাই হাসপাতালে মারা যান তিনি। গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকীতে দাফন করা হয় তাকে। বাবার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে গত ১৮ মার্চ ধর্ষণের শিকার হন শহীদ জসিমের ১৭ বছর বয়সী মেয়ে। দীর্ঘ মানসিক পীড়নে ভোগার পর তিনি গত ২৬ এপ্রিল আত্মহত্যা করেন। দৈনিক সমকাল এ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। শহীদ জসিমের স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রতিবেদককে বলেন, ‘দুর্বিষহ ঘটনার পর মেয়েকে একলা ছাড়িনি। এতদিন লগে লগে রাখছি। জামাই গেল, মাইয়ারেও বাঁচাইতে পারলাম না।’ 

এতে আরও বলা হয়, এ ঘটনার ঠিক পরদিন নোয়াখালীর মাইজদীতে জুলাই আন্দোলনের আরেক শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোট ভাই ১৬বছর বয়সী শাহরিয়ার হাসানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। হামলার ঘটনা নিয়ে দৈনিক প্রথম আলোতে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কিশোর গ্যাংটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক রয়েছে। শহীদ জসিম এবং শহীদ রিজভীর পরিবার একা নন।’
 
বাংলাফ্যাক্ট জানায়, গত ৯ মাসে বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৩৬ হামলার মধ্যে ৩৩ ঘটেছে আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সঙ্গে। বাকি তিনটি ঘটেছে জুলাইয়ে শহীদ পরিবারের সঙ্গে। শহীদ পরিবারের সঙ্গে ঘটা তিনটি হামলার মধ্যে শাহরিয়ার হাসানের ওপর হামলা ছাড়া বাকি দুটি ঘটনার ক্ষেত্রে হামলাকারীদের সরাসরি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়াও জুলাইয়ের শহীদদের কবরে হামলার একাধিক ঘটনার গণমাধ্যমে এসেছে। 

বাংলাফ্যাক্ট আরও জানায়, ৩৬ হামলায় জড়িতদের সবচেয়ে বড় অংশ আওয়ামী লীগ অথবা এর অঙ্গ সংগঠনের (ছাত্রলীগ বা যুবলীগ) নেতাকর্মীরা। ৩৬ ঘটনার মধ্যে ১৩ টিতেই তাদের যোগসূত্র ছিল। গত ২৫ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করে পুলিশে দেওয়ার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কের ওপর হামলা করে দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় দুজন সাংবাদিকও আহত হন। একইভাবে গত বছরের ২১ ডিসেম্বরের ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোবারক হোসেন অভিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর পর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ নোমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর পরেই আছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। তারা ৯টি ঘটনায় জড়িত ছিলেন। গত ১৬ এপ্রিল স্থানীয় বিরোধের জের ধরে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবুকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে গড়াইটুপি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। 

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোর হামলা বাদে আরও ৯টি হামলার ঘটনায় এখনও সরাসরি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে হামলার ধরন ও পারিপার্শ্বিক আলামত দেখে ধারণা করা যায়, হামলাগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বর্শবর্তী হতে পারে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে হামলাকারীদেরকে সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত অথবা ছিনতাইকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

বাংলাফ্যাক্টের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য মতে, ৩৬ ঘটনায় কমপক্ষে ৮৯ জন আহত হয়েছেন। মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে কেবল আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িকেন্দ্রিক সংঘর্ষের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায়। এই ঘটনায় ১৭ জন আহত হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল কাসেম (২০) নামের এক যুবক মারা যান।

বাংলাফ্যাক্টের সিনিয়র অ্যানালিস্ট নাজমুন নাকিব সমকালকে বলেন, অনলাইনে বা সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা গবেষণাটি করেছি। এর বাইরে আরও ঘটনা রয়ে যেতে পারে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই গণহত য ন হত পর ব র র ঘটন র আওয় ম ঘটন য় র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

নাঈমের ফাইফারে লিড পেল বাংলাদেশ

নাজমুল শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে গল টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে করা ৪৯৫ রানের শক্ত জবাব দিচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় দিনের শেষ বেলায় ডাবল সেঞ্চুরির পথে থাকা পাথুম নিশাঙ্কাকে তুলে নিয়ে লাগামে টান দেয় বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন সকালে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কুশল মেন্ডিস ফিরলেও কামিন্দু মেন্ডিসে লিডের পথে ছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু দিনের দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে তাদের আউট করে ১০ রানে লিড নিয়েছে বাংলাদেশ। 

শ্রীলঙ্কা ১২৪ ওভারে ৬ উইকেটে ৪৬৫ রান নিয়ে লাঞ্চে গিয়েছিল। বাংলাদেশের চেয়ে ৩০ রানে পিছিয়ে ছিল। কামিন্দু মেন্ডিস ৮৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। ওই মেন্ডিস ৮৭ রানে ফেরেন। শ্রীলঙ্কা ৪৮৫ রানে অলআউট হয়। অর্থাৎ লাঞ্চের পর ২০ রান যোগ করে ৪ উইকেট হারিয়েছে তারা।

কামিন্দুর সেঞ্চুরি মিস, নাঈমের ফাইফার: চতুর্থ দিনের শুরুতে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কুশল মেন্ডিস আউট হওয়ায় হাতে খুলে খেলতে শুরু করে কামিন্দু মেন্ডিস। তিনি সেঞ্চুরির পথে ছিলেন। তবে ৮৭ রান করে আউট হন। বাংলাদেশের ডানহাতি অফ স্পিনার নাঈম হাসান ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন। লাঞ্চের পরে লঙ্কানদের হারানো ৪ উইকেটের তিনটিই নিয়েছেন তিনি। 

কামিন্দু-ধনাঞ্জয়ার জুটি ভাঙলেন নাঈম: পাথুম নিশাঙ্কা আউট হওয়ার পর নির্ভার ব্যাটিং করে তৃতীয় দেন শেষ করেন কামিন্দু মেন্ডিস ও অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। কামিন্দু ৩৭  ও ডি সিলভা ১৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। চতুর্থ দিন সকালে লঙ্কান অধিনায়ককে তুলে নেন নাঈম হাসান। তিনি ২ রান যোগ করতে পারেন। পরেই হাসান মাহমুদ কুশল মেন্ডিসকে আউট করেন। তিনি ৫ রান করেন।

নিশাঙ্কার ডাবলের স্বপ্ন ভঙ্গ: লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কার ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন ভেঙেছেন বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদ। সাজঘরে ফেরার আগে নিশাঙ্কা দাপুটে ব্যাটিং করেছেন। তিনি ২৫৬ বলে ১৮৭ রান করে বোল্ড হন। ২৩ চার ও এক ছক্কায় ইনিংস সাজান। ৭৩.০৫ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন তিন ফরম্যাটে দারুণ ছন্দে থাকা এই ব্যাটার। তার ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশকে পাল্টা জবাব দিয়েছে স্বাগতিকরা। সেঞ্চুরির পরই অবশ্য নিশাঙ্কাকে আউটের সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। চান্দিমাল আউট হওয়ার পরের ওভারে ১১৯ রানে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি।

মুমিনুলের শিকার ম্যাথুস: ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলছেন অ্যাঞ্জেল ম্যাথুস। বিশ্বকাপে তাকে টাইমড আউট করেছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাথুসকে গার্ড অব অনার দেয় টাইগাররা। ক্রিজে এসে ৬৯ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৩৯ রান করে মুমিনুলের বলে আউট হয়েছেন তিনি।

চান্দিমালকে ফেরালেন নাঈম: নিশাঙ্কা ও চান্দিমাল ১৫৭ রানের জুটি গড়েন। ওই জুটি ভাঙেন নাঈম হাসান। ১১৯ বলে চারটি চারের শটে ৫৪ রান করেন লঙ্কান এই ব্যাটার। দলের হয়ে প্রথম উইকেটটি নেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তিনি ওপেনার লাহিরু উদারাকে ২৯ রানে আউট করেন।

পাঁচশ’ হলো না বাংলাদেশের: গল টেস্টের দ্বিতীয় দিন ৯ উইকেটে ৪৮৯ রান নিয়ে শেষ করেছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন সকালেই ইনিংস ঘোষণার সম্ভাবনা ছিল। তবে ব্যাটিংয়ে নামেন পেসার হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা। তারা মাত্র ৩.৪ ওভার টিকতে পারেন, যোগ করেন ৬ রান। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ৪৯৫ রানে বড় অবদান মুশফিকুর রহিম, নাজমুল শান্ত ও লিটন দাসের। এর মধ্যে মুশফিক ৩৫০ বল খেলে ১৬৩ রান করেন। শান্ত ১৪৮ রান করে ফিরে যান। সেঞ্চুরির আক্ষেপে পুড়তে হয় লিটন দাসকে (৯০)। প্রথম ইনিংসে লঙ্কান পেসার আসিথা ফার্নান্দো ৪টি এবং মিলান রত্নায়েকে ৩ উইকেট নেন। স্পিনার থারিন্দু রত্নায়েনে নেন ৩ উইকেট। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ