বিদেশগামী শ্রমিকদের পকেট কেটেছে সিন্ডিকেট, প্রমাণ মিলেছে তদন্তে
Published: 6th, May 2025 GMT
বিদেশগামী বাংলাদেশি শ্রমিকদের পকেট কেটে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া টিকিট কেলেঙ্কারির প্রমাণ মিলেছে সরকারি তদন্তে। ১১টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স, তাদের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) এবং অন্তত ৩০টি ট্রাভেল এজেন্সি এ সিন্ডিকেটে জড়িত বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এই সিন্ডিকেটের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় আছেন গ্যালাক্সি ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের (এমওসিএটি) গঠিত নয় সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিএসএ হিসেবে সৌদিয়া, কাতার এয়ারওয়েজ, সালাম এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার এবং থাই এয়ারওয়েজের টিকিটের নিয়ন্ত্রণ নেন ওয়ালিদ। তার প্রতিষ্ঠান যাত্রীদের নাম ছাড়াই গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে টিকিট মজুত করে, পরে সেগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দ্বিগুণ বা তিন গুণ দামে বিক্রি করে।
ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নির্ধারিত ৭ শতাংশ কমিশনের বাইরে বাড়তি দাম নির্ধারণ করে বাজার ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা করেছে। এমনকি, কিছু প্রতিষ্ঠান সাব-এজেন্টদের মাধ্যমে ‘ব্লক টিকিট’ বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে সিন্ডিকেট চালিয়েছে।
এজেন্সিগুলোর মধ্যে আছে—কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সিটিকম ইন্টারন্যাশনাল, কিং এয়ার এভিয়েশন, আরবিসি ইন্টারন্যাশনাল, মেগা ইন্টারন্যাশনাল, মাদার লাভ এয়ার ট্রাভেলস, জেএস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, সাদিয়া ট্রাভেলস, হাশেম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, নারিয়া ট্রাভেলস, এলহাম কর্পোরেশন এবং আল গাজি। সবাইকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়ে শুনানিতে ডাকা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কর ফাঁকির অভিযোগে ওয়ালিদ ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তাদের প্রতিষ্ঠান ইডিএস শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশি মদ বাজারজাত করছে বলেও তদন্তে উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে ডিউটি ফ্রি ব্যবসার আড়ালে চালানো এই কর্মকাণ্ডে শুল্ক গোয়েন্দারা কয়েকবার অভিযান চালিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওয়ালিদের এই উত্থান মূলত পতিত সরকারের ছত্রছায়াতেই। গত ১৭ বছরে প্রায় ৮টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের জিএসএ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন তিনি। অভিযোগ আছে, সালমান এফ রহমান তার গোপন অংশীদার। এসব ব্যবসার আয়ের একটি অংশ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন নেতার পকেটে যায় বলেও তদন্তে উল্লেখ আছে।
এ বিষয়ে কর কমিশনার মো.
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, টিকিট বিক্রির নামে কোনো সিন্ডিকেট বা শোষণ সহ্য করা হবে না। প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গত জানুয়ারিতে আটাবের (অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ) অভিযোগের পর ১১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যাত্রীর নাম ও পাসপোর্ট অনুলিপি ছাড়া কোনো টিকিট বুক করা যাবে না।
এই নির্দেশনার ফলে অনেক মজুতকৃত টিকিট গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে (জিডিএস) ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় এয়ারলাইন্সগুলো, ফলে দাম কমে আসে এবং স্বচ্ছতা ফিরে আসে। বর্তমানে ঢাকা-সৌদি রুটে টিকিটের দাম ৪৮ থেকে ৫০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে, যা আগে ছিল প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার টাকা।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ বলেছেন, জিএসএ-দের কারণে প্রকৃত ট্রাভেল এজেন্সিগুলো টিকিট পায় না। তারা ঘুষের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
সরকারের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, শুধু লাভের কথা না ভেবে জনসেবার দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে এয়ারলাইন্সগুলোকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
তবে, এখনো কারসাজির হোতাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতেও এমন সিন্ডিকেট গড়ে উঠবে।
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব যবস থ ট র ভ লস জ এসএ তদন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের যে পাতায় সই করেছি, তা বাদ দিয়ে অন্য পাতা ঢোকানো হয়েছে
জুলাই সনদে প্রতারণার অভিযোগ তুলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘বৃষ্টিতে ভিজে সংসদ ভবনের জুলাই সনদে সই করেছি। কিন্তু যে সনদে আমি সই করেছি, আর যেটি প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া হয়েছে—দুটি এক নয়। আমরা যে পাতায় সই করেছি, তা বাদ দিয়ে সেখানে অন্য পাতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি স্পষ্ট প্রতারণা ও অন্যায়।’’
রবিবার (৯ অক্টোবর) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৯ নম্বর রায়পুর ইউনিয়নের আয়োজনে ভাউলার হাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন।
আরো পড়ুন:
নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিএনপি বিজয়ী হবে: ফখরুল
গণভোট-সনদ জনগণ বোঝে না: মির্জা ফখরুল
অবিলম্বে তফসিল ঘোষণা করে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘‘কয়েকটি দল মিলে নির্বাচনকে দেরি করার চেষ্টা করছে। কারণ তারা নির্বাচনকে ভয় পায়। তাই তারা নির্বাচন পেছাতে চায়। কিন্তু, আমাদের কথা খুব পরিষ্কার। নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসের একদিন বেশি হলে জনগণ তা মেনে নেবে না। সবাই এখন ভোট দিতে চায়, পরিবর্তন চায়; গণতন্ত্র ফিরে পেতে চায়।’’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দেশে এখন একটি নাটকীয় অবস্থা তৈরি হয়েছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা জানাতে চাই-জনগণ আর প্রতারিত হবে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন—বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ১৫ মাসের মধ্যে এক কোটি বেকারের কর্মসংস্থান করা হবে। আর আমাদের ঘোষিত ৩১ দফা দাবি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।’’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘আমরা এমন একটি সরকার গঠন করতে চাই—যেখানে থাকবে জনগণের ক্ষমতা, মানুষের অধিকার ও কথা বলার স্বাধীনতা। দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করাই এখন বিএনপির প্রধান লক্ষ্য।’’
ঢাকা/হিমেল/রাজীব