উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর নারী কমিশনের রিপোর্টসহ নারীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরে প্রেসনোট করার দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। একইসঙ্গে নারীবিদ্বেষী বক্তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বামপন্থী জোটটি। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়। 

সমাবেশে হেফাজতে ইসলাম এবং উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর নারীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়।

সমাবেশে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে হেফাজত-জামায়াতসহ উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠির নারীবিদ্ধেষী ও উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং সংস্কার কমিশনের সদস্যদের অশ্লীল গালিগাজের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

বামজোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শম্পা বসু, সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী প্রমুখ। পরিচালনা করেন বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নজরুল ইসলাম।

গত সোমবার বিকেলে বাসদ (মার্ক্সবাদী) কার্যালয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সভায় আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ সমাবেশের সিদ্ধান্ত হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সম ব শ ব ম গণত ন ত র ক জ ট

এছাড়াও পড়ুন:

ওজুর ফরজ কয়টি

ওজু ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং অন্যান্য ধর্মীয় কাজের জন্য পবিত্রতার পূর্বশর্ত। কোরআনে আল্লাহ ওজুর ফরজ কাজগুলো স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। তবে ওজু শুধু শারীরিক পবিত্রতাই নিশ্চিত করে না, বরং এটি মানুষের মনকে আধ্যাত্মিকভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যের জন্য প্রস্তুত করে।

নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ওজু করে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তার গুনাহ তার শরীর থেকে ঝরে পড়ে, এমনকি তার নখের নিচ থেকেও।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৫) আরেকটি হাদিসে আছে, ‘ওজু হলো ইমানের অর্ধেক।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৪৮৯)

ওজুর ফরজ কয়টি

ওজুর ফরজ চারটি, যা কোরআন (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬) এবং হাদিসে সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত। এগুলো হলো—

১. মুখমণ্ডল ধোয়া: পুরো মুখ, অর্থাৎ কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক পর্যন্ত এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত ধুয়ে ফেলা। এটি ওজুর প্রথম ফরজ।

২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাতের হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত ধোয়া, যাতে কোনো অংশ বাদ না যায়।

৩. মাথায় মাসেহ করা: মাথার সামনের অংশে ভেজা হাত দিয়ে মাসেহ করা। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই যথেষ্ট।

৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পায়ের পাতা থেকে টাখনু পর্যন্ত ধোয়া, যাতে আঙুলের ফাঁকসহ পুরো অংশ ভিজে।

আরও পড়ুনপবিত্রতায় অজু ও গোসলের বিকল্প তায়াম্মুম২৪ ডিসেম্বর ২০২১ওজুর ফরজের বিস্তারিত ব্যাখ্যা

ফরজগুলো সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক, কেননা, স্পষ্ট বিধান জানা না থাকায় অনেকের ভুল হয়ে যায়।

১. মুখমণ্ডল ধোয়া: মুখ ধোয়ার সময় কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। এর মধ্যে মুখের ভেতরে কুলি করা বা নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ফরজ নয়, তবে এগুলো সুন্নত। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় পুরো মুখমণ্ডল ধুয়েছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)

২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাত ধোয়ার সময় হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। হানাফি মাজহাবে কনুই পর্যন্ত ধোয়া ফরজ এবং কনুইয়ের ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত, নবীজি (সা.) ওজু করার সময় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৬)

৩. মাথা মাসেহ করা: মাথায় মাসেহ করার জন্য ভেজা হাত দিয়ে মাথার সামনের অংশে মাসেহ করতে হবে। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই ফরজ আদায় হয়। শাফিই মাজহাবে পুরো মাথা মাসেহ করা ফরজ। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় দুই হাত ভিজিয়ে মাথায় মাসেহ করতেন। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১১১)

৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পা ধোয়ার সময় পায়ের আঙুলের ফাঁক থেকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলতে হবে। টাখনুর ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘যারা ওজুতে পা টাখনু পর্যন্ত না ধুয়ে বাদ দেয়, তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬৫)

আরও পড়ুনঅজু করার নিয়ম কানুন১৯ ডিসেম্বর ২০২৩কয়েকটি পরামর্শ

ওজু পালন করার জন্য ব্যবহারিক কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:

সময় ব্যবস্থাপনা: ওজুতে সাধারণত দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগে। নামাজের আগে পরিকল্পনা করে ওজুর জন্য সময় রাখা যায়।

পানি সংরক্ষণ: নবীজি (সা.) অল্প পানি দিয়ে ওজু করতেন। আধুনিক সময়ে পানির অপচয় এড়িয়ে ওজু করা পরিবেশের জন্যও উপকারী। একটি হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) এক মুদ (প্রায় ৬২৫ মিলিলিটার) পানি দিয়ে ওজু করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০০)

কর্মক্ষেত্রে ওজু: অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওজুর জন্য ওয়াশরুম বা নির্দিষ্ট স্থান ব্যবহার করা যায়। অনেক মসজিদ ও প্রতিষ্ঠানে ওজুর ব্যবস্থা থাকে।

ওজুর ক্ষেত্রে সতর্কতা

পূর্ণতা নিশ্চিত করা: ফরজ অংশগুলোর কোনোটি বাদ দেওয়া যাবে না। যেমন পায়ের আঙুলের ফাঁক বা কনুইয়ের কিছু অংশ বাদ দেওয়া হলে ওজু পূর্ণ হবে না।

ক্রম বজায় রাখা: হানাফি মাজহাবে ফরজ কাজগুলো ক্রমানুসারে করা ওয়াজিব।

পানির ব্যবহার: পানি অপচয় না করে সুন্নত অনুযায়ী অল্প পানি ব্যবহার করা।

নিয়ত: মনে মনে ওজুর নিয়ত করা সুন্নত, যা ওজুকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে।

(আল-ফিকহুল মুয়াসসার, মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, পৃষ্ঠা: ৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা: ২০১৫)

ওজুর ফরজগুলো পালনের মাধ্যমে মুমিন নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ওজু পালন করা সহজ হয়েছে। নবীজি (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে ওজু করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ইবাদতকে আরও পরিপূর্ণ করতে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

আরও পড়ুনঅজু ভাঙার কারণ: পবিত্রতা অর্জনে সতর্কতা১০ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ