“সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জে গুম-খুন-সন্ত্রাসের প্রতীক ছিলো না”
Published: 9th, May 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেত্রী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলন, নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম সুজন। শুক্রবার (৯ মে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি এই নিন্দা জানান।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জে গুম-খুন-সন্ত্রাসের প্রতীক ছিলো না। এমনকি গত ১৭ বছরে বিএনপি কিংবা বিরোধী মত হিসেবে আমরা যারা আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে জানবাজি রাখা লড়াই চালিয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১ টি মামলাও করে নাই। প্রতিপক্ষকে নির্মূল কিংবা দমন-পীড়ন আইভীর রাজনীতি ছিলো না।
২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আইভীকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেওয়া হয় নাই। আইভী সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামীলীগের প্রার্থী শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। মনোনয়ন না দেবার কারণ হিসেবে শেখ হাসিনা বলেছিল ' আইভী বিএনপিসহ আওয়ামী বিরোধীদের প্রতিহত করতে পারবে না।
বিএনপিসহ বিরোধী মতকে প্রতিহত করতে শামীমকে লাগবে।' সেই নির্বাচনে আইভী কেবল শামীম ওসমানের বিরুদ্ধেই লড়ে নাই, তার নিজের দল আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধেও লড়তে হয়েছে। হাসিনা যখন দেখেছে আইভী লক্ষাধিক ভোটে তার দলীয় প্রার্থীকে হারিয়েছে এবং নারায়ণগঞ্জের জনসমর্থন আইভীর দিকে তখন দলীয় পদ ফিরিয়ে দিয়েছে।
গত আওয়ামী রেজিমে আইভী বিএনপি-জামাত তো দুরের কথা, বিরোধী জনমতের বিপক্ষে দাঁড়ায় নাই। নারায়ণগঞ্জ একটা গুম-খুন সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়েছিল। সেই জনপদে আইভী সন্ত্রাসের বিপক্ষে ছিল। বিরোধী দলমত দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ছিল। উল্টো বলা যায়, এই জনপদে আওয়ামীলীগের যে অংশ গুম-খুনের সাথে যুক্ত ছিল, আইভী তাদের ব্যাক্তিগত শত্রুতে পরিণত হয়েছিল। তারা একাধিকবার আইভীকে হত্যার পরিকল্পনাও করেছিলও।
আইভীর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৪ টা মামলা এবং সদর থানায় ১ টা ছাত্র-জনতা হত্যা'র মামলা আছে। আমরা সকলেই জানি, এসকল হত্যা মামলার ভবিষ্যৎ কতদুর! এসব মামলায় কারা টাকা নিয়ে প্রকৃত আসামীদের যুক্ত না করে মামলা বাণিজ্য করেছে। কারা নির্বাচন থেকে দুরে রাখতে, কারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এসব মামলায় আসামী হিসেবে নাম যুক্ত করেছে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কেউ দেখাতে পারবে না আইভী এসে আন্দোলনে বাঁধা দিছে কিংবা ছাত্র-জনতার উপর দমন-পীড়ন, গুলি চালিয়েছে। তার দল আওয়ামীলীগ গণহত্যাসহ সমস্ত অপরাধে যুক্ত থাকলেও ব্যাক্তি হিসেবে আইভী এসবের উর্ধে ছিল।
মিথ্যা খুনের মামলা দিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে জড়িতদের "মজলুম" বানিয়ে রাজনৈতিক ভাবে আওয়ামীলীগকে পুর্নবাসন করার চেষ্টার বিরোধীতা করি। ঢালাও খুনের মামলা বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনবে, এবং আওয়ামী লীগের প্রতিই সহানুভূতি তৈরি করবে।
যারা ছাত্র-জনতার হত্যার সাথে যুক্ত তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ফৌজদারী অপরাধকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে হবে, যথাযথ বিচার করতে হবে। বিচারকে অবশ্যই ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। প্রতিপক্ষকে নানান হয়রানী-গায়েবী মামলা দিয়ে দমন-পীড়ন, নির্মূল করার নাম নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নয়।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: শ ম ম ওসম ন ব এনপ ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ আওয় ম ল গ র ন র য়ণগঞ জ ছ ত র জনত র জন ত ক আইভ র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
অভিযান শুরুর ৬ ঘণ্টা পর আইভীকে গ্রেপ্তার
অভিযান শুরুর সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত সোয়া ১১টায় শহরের দেওভোগ এলাকায় অবস্থিত সাবেক এই মেয়রের বাড়িতে পুলিশ অভিযান শুরু করে। খবর পেয়ে বাড়ির বাইরে অবস্থা নেয় এলাকাবাসী। পরে সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করে বাড়ির চারপাশে ঘিরে রাখে। অভিযান শুরুর সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর শুক্রবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় সেখানে তাঁর বিপুলসংখ্যক সমর্থক অবস্থান করছিলেন। গাড়িবহর নিয়ে পুলিশও ছিল সতর্ক অবস্থানে।
স্থানীয়রা জানায়, ৫ আগস্টের পর এই প্রথম বিপুল সংখ্যক পুলিশের একটি বহর সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাড়িতে আসে। এই খবর জেনে বাড়ির চারপাশে অবস্থান নিতে শুরু করে এলাকাবাসী। এসময় আশপাশের মসজিদগুলোয় পুলিশ আসার খবর প্রচার করা হয়। কয়েক শ মানুষ কয়েকটি স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক অবরোধ করে।
এলাকাবাসী জানায়, সাবেক মেয়র আইভী স্থানীয়দের কাছে দলমত নির্বিশেষে নারায়ণগঞ্জ নগরীর নানা উন্নয়ন করেছে। তাই স্থানীয়রা এই পুলিশি অভিযান প্রতিহত করতে সড়কে নেমেছেন।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় হত্যা ও হত্যার চেষ্টাসহ পাঁচটি মামলায় আসামি করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে। এসব মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ বিলুপ্ত করা হলে বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন আইভী।