ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পর আলোচনায় সিন্ধু পানিচুক্তি
Published: 11th, May 2025 GMT
যুদ্ধবিরতি নিয়ে ভারত–পাকিস্তানের সমঝোতার পর দুই দেশেই জনমনে স্বস্তি ফিরছে। সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোয় ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ, খুলছে দোকানপাট। তবে পাল্টাপাল্টি হামলা থামলেও সিন্ধু পানিচুক্তি এখনো স্থগিত রেখেছে ভারত। বিষয়টি নিয়ে একটি সুরাহায় পৌঁছাতে চায় পাকিস্তান। চুক্তিটি নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশটির নেতারা।
গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তার পরপরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করে নয়াদিল্লি। তখন দুই দেশ পাল্টাপাল্টি নানা পদক্ষেপ নিলেও পানিচুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। কারণ, ১৯৬০ সালে চুক্তি হওয়ার পর এই প্রথম কোনো পক্ষ সেটি স্থগিত করল।
গতকাল শনিবার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও পানিচুক্তি যে স্থগিত থাকছে—সূত্রের বরাতে এমন খবর সামনে আনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। পরে আজ রোববার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জিও নিউজকে বলেন, সিন্ধু পানিচুক্তি, কাশ্মীর সংকট ও নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তাঁরা। তবে ওই আলোচনার দিনক্ষণ স্পষ্ট করেননি তিনি।
সিন্ধু পানিচুক্তি নিয়ে ভারতকে চাপ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও বলছেন পাকিস্তানের বিশেষজ্ঞরা। যুদ্ধবিরতিতে মার্কিন প্রশাসনের বড় ভূমিকার পর পাকিস্তানের পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য জাওয়াইদ লতিফ সংবাদমাধ্যম ডনকে বলেন, চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত থেকে ভারতের সরে দাঁড়ানো নিশ্চিত করতে সরকারের উচিত দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিষয়টি তোলা।
আজ ভোরে শ্রীনগরের একটি বেকারির সামনে ভিড় করেছিলেন অনেকে। সেখানে রুটি কেনার জন্য সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা শাকিলা জান বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির খবরে আমি খুব খুশি।’পাকিস্তানের কৃষিকাজ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জন্য সিন্ধু নদের পানি গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিজমিতে এই নদের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। ৫ মে ডনের খবর অনুযায়ী, চুক্তির আওতায় থাকা চেনাব নদীর পানি ভারত বন্ধ করায় নদীটির পাকিস্তান অংশে পানি সরবরাহ কমে আসে। যদিও পরদিনই আবার পানি খুলে দেয় ভারত সরকার। পরে আজ পাকিস্তানের পাঞ্জাব সরকারের এক কর্মকর্তার বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, চেনাব, ঝিলাম, সিন্ধুসহ সব নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক আছে।
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান চলমান সংঘাতে লাভবান চীন ১০ মে ২০২৫যুদ্ধবিরতির পর জম্মু অঞ্চলের পুঞ্চ জেলায় নিজ বাড়িতে ফিরছে একটি পরিবার। আজ ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র পর
এছাড়াও পড়ুন:
থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের
থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।
থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এফএওর সূচক কমেছেপ্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের
অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।